#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
শান্তা আগেই বলেছিলো শ্যামা প্রেম করে কিন্তু রিপন সেই কথা কানে তুলেনি,সে বিশ্বাস করেনি তার বোন প্রেম করতে পারে।তাছাড়া সে আর স্বপন ইসলাম শ্যামাকে এতো কড়া শাসনে রেখেছে যে প্রেম করার ফুসরত দেয়নি।কিন্তু এখন কি নিজের চোখকে অবিশ্বাস করবে?রিপনের কথা শুনে শ্যামা দাঁড়িয়ে গিয়েছে।রিপনের সন্দেহ গাঢ় হয়।
“কিরে!কথা বলিস না কেনো?”
শ্যামা ভাবতেও পারেনি আজকে রিপনের সামনে পরবে।ভ,য়ে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে,গলা শুকিয়ে চৌচির।কি বলবে ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারে না।কোনোমতে বললো,
“ভাইয়া..”
“কই গিয়েছিলি?”
শ্যামা বুঝতে পারে এই মূহুর্তে কথা না বলে চুপ থাকলে আরো বেশী বি,পদ হবে।সে আস্তে করে বললো,
“বাথরুম থেকে যাওয়ার সময় দেখলাম কে জানি দৌড় দিলো।আমি ভাবলাম চোর নাকি তাই একটু এগিয়ে সামনে গিয়ে দেখলাম দুইটা শিয়াল।”
রিপন তার বোনের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।শ্যামার কথা শুনে মনে হচ্ছে সে মিথ্যা বলছেনা।সে অনুসন্ধানী চোখে তাকিয়ে বললো,
“সত্যি কথা?”
“হ্যাঁ ভাইয়া।”
“তুই একা একা চোরের পিছু নিলি যদি সত্যিই চোর হতো।”
“তাহলে আমি চিৎকার করে তোমাদের ডাকতাম।”
রিপন শ্যামাকে একটা ধমক দেয়।
“চুপ।আর কখনো রাতের বেলা কোনোদিকে যাবি না,বেশী সাহস হয়ে গেছে তাই না?”
শ্যামা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ে।সে যে রুমে নেই এটা তার ভাই বেশীক্ষণ হবেনা টের পেয়েছে।টের পেলে এই সাজানো কথাগুলো বিশ্বাস করতো না।রিপন বাথরুমের দিকে চলে গেলে শ্যামা বুকে হাত দিয়ে শ্বাস ছাড়ে।আজকে বুঝি ভাগ্যও তার প্রতি সদয় ছিলো তাইতো চূড়ান্ত ধোলাই থেকে প্রানে বেঁচে গেছে।
এই কথাটা রিপন সকালে ঘরের সবার সামনে তুললো,শ্যামা যে কতো বীর তা বললো।রিপনের কথা শুনে সবাই শ্যামাকে আচ্ছামতো বকা দিলো।শ্যামা অবুজ চেহারা করে বললো,
“আমি বুঝতে পারিনি যে বিপদ হতে পারতো।”
***
আজকে ফারিয়ার গায়ে হলুদ।প্রিয় বান্ধুবীকে ছাড়া গায়ে হলুদ করার মতো ইচ্ছা তার নেই।যেভাবেই হোক শ্যামাকে তার বাড়িতে তার পাশে চাই ই চাই।ফারিয়া সেই চিন্তাভাবনা থেকে দুপুরেই শ্যামাকে নিতে চলে এসেছে।শ্যামার মা ফাতেমা বেগম তো কোনোভাবেই রাজী না।উনার এক কথা বিয়ের দিন সকালে গেলেই হয় কিন্তু ফারিয়াও নাছোড়বান্দা।স্বপন ইসলাম বিরোধ করে, মেয়ে মানুষ আরেকজনের বাড়িতে গিয়ে রাত কাটানো উনার পছন্দ না।কিন্তু ফারিয়ার আবদারের কাছে রাজী না হয়ে পারলো না।শ্যামা ব্যাগ গুছিয়ে না হওয়া শশুড় বাড়ির উদেশ্যে বেরিয়ে যায়।সে ফারিয়ার বিয়েতে যেতে পেরে যতোটা খুশী এর চেয়ে বেশি খুশী অনেকটা সময় ফিরোজের আশেপাশে থাকতে পারবে বলে।
ফারিয়াদের বাড়ি গিয়ে শ্যামা কাপড় পালটে নেয়।হলুদের শাড়ি পড়ে,ইচ্ছেমতো সাজে।লাল টুকটুকে লিপস্টিক দিয়ে সাজটা আরো গাঢ় করে।এখানে আসার পর থেকেই দেখছে ফিরোজ কাজ করছে,কোথায় কি হবে সে সব তদারকি করতে ব্যস্ত অবশ্য কয়েকবার দুজনের চোখাচোখি হয়েছে।শ্যামা ফিরোজকে দেখে মুচকি হাসলেও ফিরোজের মুখভঙ্গি ছিলো গম্ভীর,ধারালো দৃষ্টি ফেলে শ্যামাকে দেখেছে।হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পরে অনেক ছেলেই শ্যামার সাথে ভাব জমাতে চেয়েছে,কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু শ্যামা সবাইকে এড়িয়ে গিয়েছে।সবাই তার সাজের প্রশংসা করলেও শ্যামার অন্তর ঠান্ডা হয় না,যাকে দেখাবে বলে সাজলো সে,সে তো একবারো প্রশংসা করলো না,মুগ্ধ চোখে তাকালো না;এই বিরহে শ্যামার মুখের হাসি কমে যায়।চঞ্চল চোখে বারবার ফিরোজকে খুঁজে।রাত যখন দুইটা তখন অনুষ্ঠান শেষ।ফারিয়া রুমে গিয়ে মেকাপ তুলে তখন তার বর মাহিনের ফোন আসে।মাহিনের ফোন দেখে ফারিয়ার মুখটা লজ্জায় আরক্ত হয়।তখন শ্যামা ছাড়া আর কেউ নেই ফারিয়ার রুমে।ফারিয়া তার সাজগোছ তুলে ফেললেও শ্যামা তুলেনি,তার প্রিয় পুরুষ যে এখনো তাকে মন ভরে দেখেনি!।ফারিয়াকে এমন হাসোজ্জল হয়ে কথা বলতে দেখে শ্যামার ভালো লাগে শ্যামাকে আরো ভালো লাগায় ডুবাতে তার ফোনে ছোট একটা মেসেজ এলো,
“ছাদে অপেক্ষায় আছি।”
পাষান পুরুষের মন গলেছে,সারাদিনে এতোক্ষণে এই অবুজ প্রেমিকাকে স্বরণ করেছে।ফারিয়া তার বরের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত শ্যামা আস্তে করে বেরিয়ে যায়।পা টিপে টিপে ছাদে উঠে।নিঝুম রাত,আশেপাশের ঝি ঝি পোকার ডাক অতিক্রম করে শ্যামার বুকের ধিমধিম শব্দ যেনো বেশী শব্দ করছে।ছাদে পা রেখে আশেপাশে চোখ বুলায়।ফিরোজ দূরে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।শ্যামার লজ্জা হয়,ফিরোজ এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকানোতে সে আড়ষ্ট হয়ে যায়।ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় প্রাণভোমরার কাছে।হ্যাঁ ফিরোজ তার প্রাণ ভোমরা এই প্রাণ ভোমরা না দেখলে সে একটুও বাঁচবেনা।এই যে সারাটাক্ষন মনম,রা হয়ে ছিলো সব কষ্ট অভিমান নিমিষেই দূর হয়ে যাচ্ছে।ফিরোজের কাছে যেতে হয়না ফিরোজই বড়ো বড়ো কদম ফেলে শ্যামার দিকে আসে।ফিরোজের চোখজোড়া আজকে অন্যরকম,নেশালো।শ্যামা আর আগাতে পারেনা বরং পিছিয়ে যায়।পিছাতে পিছাতে চিলেকোঠার দেয়ালের সাথে মিশে যায়।মন্ত্রমুগ্ধের মতো ফিরোজের দিকে তাকিয়ে আছে,দুজনে কথা না বললেও চোখে চোখে হাজারো না বলা কথার আদান প্রদান হচ্ছে।
ফিরোজ ভাবে মেয়েটা তাকে নির্ঘাত মে,রে ফেলার পায়তার করছে তা না হলে এমন সাজ দিয়ে সামনে আসবে কেনো?এই প্রথম শ্যামাকে এমন রূপে দেখেছে।দেখে যেনো চোখের তৃষ্ণা বেড়ে গেছে,ইচ্ছে করছিলো আজকেই বিয়ে করে পুতুলটাকে সারাক্ষণ তার সামনে বসিয়ে রাখে।নিঝুম রাতে প্রিয় রমিনীকে কাছে পেয়ে ফিরোজের দেহে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।অনুভূতির প্রখরতায় হাত পা ঝিমঝিম করে উঠে।হাত বাড়িয়ে শ্যামার গাল ছুঁয়ে দেয়।ফিরোজের হাতের স্পর্শে শ্যামা কেঁপে উঠে।কিশোরী মনে ঝড় বয়।ফিরোজ শ্যামার সবকিছুই খেয়াল করছে।বারংবার কেঁপে উঠা,শ্বাস ভারী হয়ে পড়া যেনো তাকে আরো মাতাল করে দেয়।শ্যামার দীঘির মতো গভীর চোখের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“কি সমস্যা? “
“কোনো সমস্যা নেই তো।”
“সমস্যা না থাকলে আমাকে মে,রে ফেলার ধান্দা করছো কেনো?”
“কিভাবে?”
“এতো সেজেছো যে তাই।”
ফিরোজের মুগ্ধ দৃষ্টি শ্যামাকে শান্তি দিলো।সে ফিরোজের মতোই ফিসফিস করে বললো,
“আপনার জন্যই সাজলাম।”
ফিরোজ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
“সুন্দর লাগছে।একদম বউয়ের মতো লাগছে।”
শ্যামা লজ্জা পায়।মাথা নামিয়ে চোখ এপাশ ওপাশ ঘুরায়।ফিরোজ চেপে দাঁড়ায়।আঙ্গুলের ভাজে আঙ্গুল রেখে বললো,
“ইচ্ছে করছে বিয়ে করে ফেলি।তুলতুলে পুতুলটাকে সারাক্ষণ চোখের সামনে বসিয়ে রাখি,যখন তখন চুমু দেই,গভীর রাতে মিষ্টি আলিঙ্গনে পিষে ফেলি।কি বালিকা বিয়ে করবে?”
ফিরোজের এমন বেশামাল কথায় শ্যামা খুব লজ্জা পায়।উশখুশ করে বললো,
“কেউ দেখে ফেলবে নিচে যাই?”
ফিরোজ যেনো কথাগুলো শুনেনি এমন করে বললো,
“লিপস্টিক দিয়েছো কেনো ?”
ততক্ষণে ফিরোজের হাতের আঙ্গুল শ্যামার ঠোঁটের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছে।শ্যামা কোনো কথা বলতে পারে না।ঠোঁট কাঁপছে।হাত পা শিরশির করে ;তার কেমন ব্যাকুল লাগছে।সে কোনোমতে বললো,
“এমনি।”
ফিরোজ গাঢ় স্বরে বললো,
“ভদ্র প্রেমিক হতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি তার সুযোগ দিচ্ছ না।মাথা নষ্ট করে দিয়েছো।আমি সত্যিই আর ভদ্র থাকতে পারছিনা।”
শ্যামা অপলক ফিরোজের দিকে তাকিয়ে আছে।ফিরোজ শ্যামার কানের কাছে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বিরবির করে বললো,
“আজকে একটু অভদ্র হই?বেশী না একটু।”
শ্যামার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।এই ফিরোজ তার কাছে অপরিচিত,গম্ভীরমুখো ফিরোজের মুখে এমন কথা কাম্য ছিলো না।সে নড়াচড়া করতে পারছে না তার হাত ফিরোজের হাতে।
সে কিছু বলার আগে ফিরোজ এই প্রথম তার পুরুষালি ঠোঁট প্রিয়তমার কোমল ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।একবার ছুঁয়িয়ে ক্ষান্ত হয় না,পরপর কয়েকবার ছুঁয়ে দেয়।শ্যামার হাত পা কাঁপছে,এই প্রথম কোনো পুরুষের মিষ্টি আদর পেলো।চোখের দৃষ্টি ফিরোজের দিকে।ফিরোজ তার খুব কাছে।নিঃশ্বাস শ্যামার মুখে পড়ছে।শ্যামার দিকে তাকিয়ে ফিরোজ কাতর স্বরে বললো,
“প্লিজ।”
শ্যামা কিছু না বললেও তার চোখের ভাষা ফিরোজ বুঝে নিলো।ফিরোজ ঠোঁটে ঠোঁট রাখতেই শ্যামা চোখ বন্ধ করে ফিরোজের বলিষ্ঠ শরীর আঁকড়ে ধরে।নিকষ কালো নিঝুম রাত,দুজনের শ্বাস প্রশ্বাস বেশামাল ভাবে পড়ছে।কিছুক্ষণ পরে ফিরোজ বললো,
“আসলেই মধুরানী।”
চলবে……