#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
আজকে শ্যামার দিনটা আগের থেকে অনেক বেশি রঙ্গিন মনে হচ্ছে।সুখে সুখে ডানা ঝাপটাতে ইচ্ছে করেছে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যে কতোরকম অঙ্গভঙ্গি করেছে তা শ্যামা ছাড়া কেউ জানে না।ঠোঁটের কার্নিশে রিনরিনে সুরে সারাক্ষণ গান বাজে,মুখে মুচকি হাসি লেগেই থাকে।গতকাল রাতের মধুর স্মৃতি মনে হয়ে গা শিরশিরে অনুভূতি হচ্ছে অথচ তাদের মাঝে খারাপ কিছু হয়নি হয়েছে ভাবেব আদান-প্রদান।এই ভাবের আদান প্রদানেই সে হাজারো অনুভূতির বহর লুকিয়ে আছে যা শ্যামাকে ক্ষনে ক্ষনে লজ্জা দিচ্ছে;কাঁপিয়ে দিচ্ছে ফিরোজের পাখির সর্বাঙ্গ।শ্যামা চোখ বন্ধ করে বিছানায় পরে থাকে চোখে ভাসে গতোকালের মূহুর্তেগুলো।
ফিরোজ রয়েসয়ে বলে,
“ভালোবাসি আমার গেঞ্জিচোর।”
শ্যামা বোধহয় এতোটাও অবাক হতোনা যতোটা অবাক হয়েছে ফিরোজের এই স্বীকারোক্তি শুনে।অবাকের পাশাপাশি লজ্জা চেপে ধরে তাকে।এতোদিন যাকে পাগলের মতো একান্ত নিজের করে চেয়েছে তার কাছে থেকে একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ডাঙ্গায় উঠা মাছের মতো ছটফট করেছে আজকে সেই কাংখিত মানুষটার মুখ দিয়ে ভালোবাসার শব্দগুলো শোনার পরে লজ্জায় শ্যামার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে;একি সাথে খুশীতে পেখম মেলে মন।কোনো কথা বলার শক্তি হারিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।ফিরোজ আস্তে করে বললো,
“কি হলো?”
শ্যামা নিজেকে ধাতস্থ করে,এখন চুপ থাকার সময় না এখন কথা বলার সময়।সে বুঝে পায় না তার এতো লজ্জা আসলো কই থেকে।শুকনো ঠোক গিলে গলা ভিজাতে চায় তারপর থেমে থেমে বললো,
“সত্যি?”
“আমাকে কি মিথ্যুক মনে হয়?”
“না।”
“এতোদিন তো এটা শোনার জন্যই বেশ কসরত করেছো এখন এই সত্য-মিথ্যা যাচাই করছো?”
শ্যামা মাথা নেড়ে না করে।
“যাচাই করবো কেনো?আমার আসলে বিশ্বাস হচ্ছে না মনে হচ্ছে কল্পনা তাই জিজ্ঞেস করেছি।”
ফিরোজ একটা গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।মাথাটা কাত করে শ্যামাকে দেখে বললো,
“বাড়ি যাও গিয়ে একটা ঘুম দাও।সকালে স্বপ্ন না বাস্তব টের পাবে।”
শ্যামা যায় না।পা গুলো পাথরের মতো ভারী মনে হচ্ছে।শ্যামার কোনো নড়চড় নেই দেখে ফিরোজ আবারো বললো,
“যাও।”
শ্যামার মোটেই বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না তার এখন ভ,য়ংকর সব ইচ্ছে করছে।ভ,য়ংকর ইচ্ছটা হচ্ছে, ফিরোজ;তার সদ্য স্বীকৃতি দেয়া প্রেমিক-পুরুষকে শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সাহসে কুলোচ্ছেনা।সেই বার জড়িয়ে ধরাতে যে থাপ্পড় দিয়েছিলো এখনো মনে হলে তার কান টনটন করে উঠে।তাই সে আর ইচ্ছা পূরণের দিকে গেলো না,যদি এই সুখের মূহুর্তে আবারো কান ব্যাথা বানিয়ে দেয়।এই পুরুষের সাথে বিশ্বাস নেই।সে তার ইচ্ছা নিভিয়ে দেয়,আস্তে করে বললো,
“বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না।”
ফিরোজ সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
“কেউ দেখতে পেলে কি অবস্থা হবে জানো?”
শ্যামা কথা বলেনা।চুপচাপ তাকিয়ে আছে।সে নিজেও জানে রাতে দেখা করা খারাপ মানুষ দেখলে কথা রটাতে দেরী করবে না।ফিরোজ চুপ থেকে বললো,
“বাড়ি যাও,ফোন দেবো।অকে?”
শ্যামা মাথা নেড়ে সায় দেয়।শ্যামা বাড়ির দিকে হেটে গেলে ফিরোজও তার বাড়িতে চলে যায়।তার কেমন যেনো লাগছে,কেমন ফাঁকা ফাঁকা অনুভূতি।শ্যামা চোখ বন্ধ করে শুনতে পেলো কাঠের দরজায় ধুমধাম শব্দ করে ফারিয়া সমানতালে ডেকে যাচ্ছে।ফারিয়া এই সময় কেনো?সে উঠে দরজা খুলে দেয়।ফারিয়া হাসিমুখে ভেতরে এসে শ্যামার মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বললো,
“দিনদুপুরে দরজা লাগিয়ে কি করিস?”
শ্যামার মুখে লাজুক হাসি।সে এতোদিন সবকিছু লুকিয়ে রাখতে পারলেও এখন আর লুকিয়ে রাখতে পারছেনা।তার মুখে লাজুক হাসি দেখে ফারিয়ার ভ্রুকুঞ্চন হয়ে যায়।
“এই তুই প্রেম করিস নাতো?”
শ্যামা ভাবলো ফিরোজকে না জানিয়ে কাউকে বলা ঠিক হবেনা।সে মাথা নেড়ে বললো,
“আরে না না।ভালো লাগছিলো না তাই শুয়ে ছিলাম।”
“আচ্ছা।চল মার্কেটে যাবো।কিছু কিনার আছে।”
শ্যামা ফারিয়ার কথামতো রেডি হয়ে মার্কেটে চলে যায়।
“হঠাৎ মার্কেটে যাচ্ছিস কেনো?”
“দরকার আছে।আগে হোটেলে চল টাকা আনবো।”
শ্যামা ভাবে।যদি ফিরোজ থাকে তো!তার কেনো জানি ফিরোজের সামনে যেতে লজ্জা লাগছে কিন্তু দেখার লোভ সামলাতে পারলো না।ধীর পায়ে ফারিয়ার পিছু পিছু হোটেলে গেলো।ভাগ্য বুঝি আজকে শ্যামার পক্ষে ছিলো,ফিরোজ ক্যাশিয়ারে বসে আছে।অন্যদিনের মতো ফারিয়া কাছে গেলেও শ্যামা যায় না।কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকে আর আড়চোখে ফিরোজকে দেখে।
ফিরোজ মুচকি হাসে।শ্যামার এই রূপ তার কাছে অপরিচিত।শ্যামা সবসময় তার সামনে উড়নচণ্ডী ,বেশামাল কিন্তু আজকে এই রূপ,যেনো লাজুকলতা।খারাপ লাগছে না,মুখের লাজুক আভা তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে কাল রাতেই সে নিজ হাতে ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায় রচনা করে এসেছে।আজকে সারাদিন ইচ্ছে করেই ফোন দেয়নি,কেনো জানি দিতে ইচ্ছে করেনি।সারাক্ষণ কথা বললেই কি ভালোবাসা বাড়ে কিংবা দুজনের অনুভূতির মিলন হয়?তার মনে হয় পাঁচমিনিট কথা বললেও তো হয়,প্রেমের আদান প্রদান।সারাক্ষণ কানে ফোন ধরে রাখার মতো পুতুপুতু প্রেমিক সে না।ফারিয়া মোগলাই আনতে ভেতরে গেলো,ফিরোজ এই ফাঁকে ইশারায় শ্যামাকে কাছে ডাকে।
“এই যে আপু!এদিকে!এদিকে আসেন না।”
ফিরোজের কথা বলার স্টাইলে শ্যামা মুচকি হাসে।দুজন দুজনের দিকে তাকায়।
“কি অবস্থা?স্বপ্ন থেকে বেরিয়েছেন?”
“জ্বী।”
“সত্যি ছিলো? “
শ্যামা গাল ভরে হাসে।
“জ্বী।”
ফিরোজ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে অপলক শ্যামাকে দেখছে।ফিরোজের এই চোখের দৃষ্টির সাথে শ্যামা অপরিচিত।আগে কখনো ফিরোজ এভাবে তাকায়নি,সবসময় রাগী চোখে তাকিয়ে শ্যামাকে মে,রে ফেলতে চেয়েছে আজকেও মে,রে ফেলছে কিন্তু ভালোবাসার ম,রণ।এমন গভীর চোখের দৃষ্টি সরিয়ে শ্যামা হোটেলের বাহিরে চলে আসে।সাথে সাথেই ফোনটা তীক্ষ্ণ স্বরে চেচিয়ে উঠে।রিসিভ করার পরে ফিরোজ বললো,
“চলে গেলে কেনো?”
“আপনি…. “
শ্যামা সবটা কথা শেষ করতে পারে না তার আগে ফিরোজ বললো,
“আমি!আমি কি?”
“এভাবে তাকাচ্ছিলেন কেনো?আমাকে কি আজকেই প্রথম দেখলেন?”
“প্রেমিকা হিসেবে আজকেই প্রথম দেখা।”
“হুম।”
ফিরোজ কেমন ঘোর লাগা গলায় বললো,
“বলেছিলাম না শ্যামা আমি ভ,য়ংকর প্রেমিক হবো।”
শ্যামা হেসে বললো,
“আমি এমনই চাই।শুধু আমি কেনো সব মেয়েরই এক চাহিদা প্রেমিক ভ,য়ংকর রকম ভালোবাসুক।”
“তাই নাকি?আচ্ছা দেখা যাক সামনে কি হয়।”
“আচ্ছা।”
শ্যামা চুপ করে থাকে।ফিরোজ কিছু বলছেনা দেখে সে পিছু ফিরে দেখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।সে ফিসফিস করে বললো,
“লাভিউ।”
ফিরোজ হাসে।মিষ্টি করে হেসে বললো,
“আচ্ছা।”
ফিরোজের হাসিতে শ্যামা বরাবরের মতো মুগ্ধ।কিন্তু আচ্ছা তো তার উত্তর না।মনটা অন্যকিছু শোনার জন্য মুখিয়ে আছে।সে আবার বললো,
“আই লাভ ইউ।”
“আচ্ছা।”
“এটার উত্তর এটা না তো।”
“কোনটা?”
“আপনি জানেন না?”
“না তুমি শিখিয়ে দেবে?”
শ্যামা বুঝতে পারে ফিরোজ দুষ্টুমি করছে।সে।রাগ দেখিয়ে বললো,
“আচ্ছা বলতে হবে না।”
ফিরোজ বললো,
“আরে রাগ করলে নাকি?কিসের উত্তর দেবো বলো।”
“লাভিউউ। “
ফিরোজ কেমনতর কন্ঠে জানো বললো,
“লাভিউ টু পাখি।”
এমন মায়াময় কণ্ঠ শুনে নিজেকে ঠিক রাখা যায়?শ্যামার ইচ্ছে হলো ম,রে যেতে
।সুখে সুখে দূর আকাশে উড়ে যেতে।ইশ ভালোবাসায় এতো শান্তি কেনো!ফিরোজটা এতো আদুরে কেনো?শ্যামার বুকটা এতো কাঁপছে কেনো?প্রেমে পড়লে কি সবারই এমন হয়?ফারিয়া এসে বললো,
“দোস্ত আগুন গরম এনেছি খেতে যা লাগবে না,খেলে শেষ হয়ে যাবি।”
শ্যামা পিছনে ফিরে ফিরোজকে আরেকবার দেখে নেয়।হাটতে হাটতে মনে মনে বলে,
‘তোর ভাইয়ের প্রেমের আগুনেই তো আমি শেষ মোগলাই আর কি শেষ করবে?’
চলবে…..
(কারেন্ট না থাকার কারনে দেরী হলো।)