#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
শ্যামা সকালের নাস্তা খেতে বসেছে।শান্তা শ্যামার পাশে বসে বললো,
“শ্যামা।”
শ্যামা খেতে খেতেই বললো,
“কি।”
“তুই কি প্রেম করিস?”
শান্তার কথায় শ্যামার চমকানোর কথা থাকলেও সে চমকায় না।হাসিমুখে বলে,
“না।”
শান্তা নাছোড়বান্দা সে শ্যামার মুখ থেকে কথা বের করবেই।
“মিথ্যা বলিস কেনো? “
“মিথ্যা কেনো বলবো?প্রেম করলে আর কেউ না জানলেও তুমি জানবে।”
“তাহলে রাতে কার সাথে গুনগুন করে কথা বলিস?”
শ্যামা থমথমে মুখে শান্তার দিকে তাকায়।সে কালকে রাতে ফিরোজের সাথে অনেকক্ষন কথা বলেছে।আর অবশ্যই নিচু স্বরে ফ্যানের শব্দে কথা বাহিরে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না তাহলে শান্তা জানলো কি করে?
“তুমি জানলে কি করে?গোয়েন্দা,গিরি করছো নাকি?”
শান্তা মাথা নেড়ে বললো,
“বাথরুমে যাচ্ছিলাম তখন শুনলাম।এখন বল কথা কি সত্যি?”
“না আমি কোনো প্রেম করিনা।রাতে ঘুম আসছিলো না তাই গান শুনছিলাম আর সাথে গুনগুনিয়ে গাইছিলাম,তুমি বোধহয় সেটাই শুনেছো।”
শান্তা হাসিমুখে বললো,
“অহ!আচ্ছা আচ্ছা।”
শ্যামা আবারো খাবার খেতে শুরু করে কিন্তু শান্তার মুখ থেকে কুটিল হাসি যায় না সে ননদকে দেখতে দেখতে হাসে।
রিপন আর স্বপন ইসলাম একসাথে নাস্তা খেতে বসে।বাবা ভাইকে দেখে শ্যামার কেমন জানো লাগে,সারাক্ষণ মনে হয় যেনো সব জেনে যাবে,নিকষ কালো অন্ধকারে সুখের মূহুর্তগুলো মুখ লুকাবে।স্বপন ইসলামের মেজাজ প্রচন্ড চওড়া হয়ে আছে।এই সাতসকালে এতো রেগে যাবার কারণ কারো বোধগম্য হলোনা।ফাতেমা বেগম স্বামীর সামনে খাবার দিয়ে বললো,
“কি।হয়েছে?”
স্ত্রীর কথায় স্বপন ইসলাম রাগে ফুসফুস করে বললো,
“কি হবে!এলাকা আবর্জনায় ভরে গেছে।এই সাতসকালে মুরব্বি দেখলে কই মার্জিত আচরন করবে তা না।দেখলে না সালাম না দোয়া।হাতের আঙ্গুলে সিগারেট নিয়ে ভুসভুস করে টানে মনে হয় ওরে আমিই সালাম দিতে হবে।”
রিপন ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কার কথা বলেন আব্বা?”
“কে আবার?ফিরোজের কথা বলি।চূড়ান্ত বেয়াদব হয়ে গেছে।”
ফাতেমা বেগম বললো,
“তোমাদের কাছে বেয়াদব লাগলেও মানুষের কাছে ভালোই।সেদিন তো মুনিয়ার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিলো ফিরোজ রাজী হয়নি বলেই বিয়ে হয়নি।মুনিয়ার বাবা চোখ বন্ধ করে রাজী।”
স্বপন সাহেব নাক কুচকে বললো,
“ওই ছেলের মাঝে কি এমন আছে যে এতো পাগল হতে হবে।বদঅভ্যাস ছাড়া আর কিছুই তো নেই।বেয়াদব ছেলে।আমাকে যদি বলে সব সম্পত্তি লিখে দিয়ে মেয়ে নেবে আমি তারপরও দেবো না।মুনিয়ার বাবা কেনো রাজী হয়েছে কে জানে!”
শ্যামা মাথা নিচু করে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করে।ইতোমধ্যে সে ফিরোজের সাথে একটা মধুর সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে আল্লাহ চাইলে সেটা বিয়ে পর্যন্ত গড়াবে কিন্তু ফিরোজ যদি প্রধান অবিভাবকের সামনে এমন আচরণ করে তাহলে আদো কি কেউ রাজী হবে?উত্তাল ঝড়ো বাতাসে শ্যামার প্রেমে পড়া মন তিরতির করে কেঁপে উঠে।খাবার গলা দিয়ে নামতে চায় না সে জোড় করে পানি দিয়ে খাবার খায়।
আজকে ফারিয়াকে দেখতে আসবে।ছেলে সোনালী ব্যাংকে চাকরি করে।ফারিয়ার খালার দেবরের ছেলে।সবার জানাশোনায় এমন লক্ষীমন্ত ছেলে পেয়ে কেউ আর রা করেনি।সবসময় মেয়েদের ভালো বিয়ে আসেনা এখন যেহেতু এসেছে তাহলে দেখা শোনা হোক।আর দেখা শোনা হলেই যে বিয়ে হয়ে যাবে এমন তো কোনো কথা নেই।ফারিয়াকে মতামত জিগ্যেস করলে ফারিয়া বলেছে বাবা মায়ের পছন্দই তার পছন্দ।দিনক্ষণ ঠিক করে আজকেই পাত্রপক্ষ আসছে।ফারিয়া গিয়ে শ্যামাকে নিয়ে এসেছে।ফারিয়ার আম্মা রোজিনা’ই নিয়ে আসতে বলেছে।ফারিয়ার মুখে আজকে আলাদা জ্যোতি ঝিলিক দিচ্ছে,শ্যামা ফারিয়ার বাহুতে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“বেশী খুশী নাকি?”
ফারিয়ার আসলেই লজ্জা লাগছে।কখনো সে কোনো সম্পর্কে জড়ায়নি আজকেই প্রথম কোনো পাত্রপক্ষর সামনে যাবে।অচেনা অজানা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে।সে গোছলে যাবে।হাতে কাপড় নিয়ে বাথরুমে যেতে যেতে বললো,
“লজ্জা লাগছে।”
শ্যামা ফারিয়াকে ঠেলে বাথরুমে ঢুকিয়ে বললো,
“গোসল কর।পানির সাথে সব লজ্জা ধুয়ে চলে যাবে।”
“ধুর।”
ফারিয়া দরজা বন্ধ করার পরে শ্যামা ফিরোজকে ফোন দেয়।একমাত্র বোনকে দেখতে আসবে তাই আজকে সব কাজ ফেলে সে বাসায়ই আছে।কিছুক্ষণ আগে তার হৃদয়-হরণকারীকে দেখেছে।দেখেই বুকে কেমন টনটনে ব্যাথা অনুভব হয়েছে।আজকাল তার সাথে এমন হচ্ছে মেয়েটাকে দেখলেই বুক জুড়ে সুখময় ব্যথায় সে অচেতন হয়ে যাচ্ছে।পাগল পাগল সব ইচ্ছে মাথায় ছুটুছুটি করে তার শরীর অবস করে দিচ্ছে।অথচ এতোদিন এসব ইচ্ছে হয়নি,শরীরে এমন অসুখ হয়নি,সবটা শ্যামার দোষ।শ্যামাকে দেখলে যেমন ফিরোজ কেঁপে উঠে তেমনি এখন হাতের ফোনটা কেঁপে উঠলো।ফিরোজের পুরুষালি ঠোঁট প্রসস্থ হয়ে সেখানে সুন্দর করে একটু হাসি জায়গা করে নেয়।মোবাইল কানে ঠেকিয়ে অভস্ত্য গলায় বললো,
“বলো।”
শ্যামা আস্তে করে নিচু স্বরে বললো,
“কথা ছিলো সময় হবে?”
ফিরোজ মিহি গলায় বললো,
“আমার মহারানী বললে তো কথা বলতেই হবে।”
“আচ্ছা বলি শুনেন।”
“ছাদে আসো তোমার গুরুত্বপূর্ণ কথা
গুরুত্বের সাথেই শুনি।”
শ্যামা ইতস্তত করে বললো,
“কেউ দেখলে?”
“আমি সামলে নেবো।আসো।”
“আচ্ছা।”
“আমি আগে যাচ্ছি তুমি আমার পরে আসো।”
“আচ্ছা।”
ফিরোজ ছাদে যাওয়ার পরে শ্যামা ছাদে যায়।সবাই কাজে ব্যস্ত কেউ তাকে খেয়াল করেনি।ফিরোজের সামনে যেতে আজকাল শ্যামার খুব লজ্জা লাগে।আগেও এমন লজ্জা লাগতো না, কিংবা কাছে যেতে সংকোচ হতো না ফিরোজ তার প্রেমিকরূপে আবির্ভাব করার পর থেকেই এসব হচ্ছে।আর ফিরোজও এখন কেমন করে তাকায়,দেখলেই মুচকি হাসে এই সব শ্যামাকে আরো রাঙ্গিয়ে দেয় ;লজ্জায় ডুবিয়ে দেয়।ফিরোজ চিলেকোঠার দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।শ্যামাকে দেখে স্বভাবসুলভ মিষ্টি করে হাসে।শ্যামা দূরে দাঁড়িয়ে ফিরোজের সুন্দর হাসিটা দেখে মুগ্ধ হয়।সে ফিরোজের কাছে গিয়ে দড়ায়।মাথা তুলতেও কেমন সঙ্কোচ হচ্ছে।ফিরোজ শ্যামার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,
“কি বলবে..”
শ্যামা কথা গুলিয়ে ফেলে।যা বলতে এসেছিলো তা ভুলে যায়।ফিরোজের গা থেকে ভুরভুর করে পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে যা শ্যামাকে মাতাল করে দিচ্ছে।সে আস্তে করে বললো,
“হুম।”
ফিরোজ শ্যামার নিচু মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“লজ্জা পাচ্ছো নাকি?”
শ্যামা আরো বেশী লজ্জা পায়।এতোদিন যে এই লজ্জা কোথায় ছিলো!তাছাড়া ফোনে কথা বলতেও তো এমন লাগে না সামনে আসলেই এমন হয়।সে মাথা তুলে ফিরোজের দিকে তাকায়,সর্বপ্রথম চোখ যায় ফিরোজের থুতনিতে।ইশ কি সুন্দর!এতো সুন্দর হতে হবে কেনো?ফিরোজ কেমন দুষ্টু চোখে তাকিয়ে আছে।শ্যামা বললো,
“লজ্জা পাবো কেনো?”
“শশুড় বাড়ি এমন হুটহাট চলে আসছো লজ্জা লাগছে না।”
“না।”
“আমি তো দেখছি মহারানীর গাল লজ্জায় টমেটো হয়ে গেছে।”
শ্যামা নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
“আপনি আমাকে ভালোবাসেন তো?”
“ভালো না বাসলে পিচ্ছিকে সময় দিচ্ছি?”
“ভালোই যদি বাসেন তাহলে এমন করেন কেনো?”
“কি করলাম?”
“আপনি আগে বলেন আমাকে চান নাকি সিগারেট চান।”
ফিরোজ স্থির চোখে শ্যামার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমাকেই বেশী চাই।”
“তাহলে সিগারেট ছেড়ে দেন।”
“হঠাৎ আমার এই অবলা বন্ধুটার পিছনে লাগলে কেনো?”
“আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান না? “
ফিরোজ শ্যামার হাত ধরে বললো,
“চাই।খুব বেশী।”
“তাহলে আব্বার সামনে সিগারেট খান কেনো?একটু ভালোমতো চলাফেরা করা যায় না?”
ফিরোজ হেসে বললো,
“শশুড় আব্বা নালিশ করেছে নাকি?”
“আব্বা এসব পছন্দ করে না।”
“তো আমাকে কি করতে হবে?”
শ্যামা ফিরোজের হাতটার দিকে তাকিয়ে বললো,
“সিগারেট ছেড়ে দিতে হবে।”
“দিলাম।”
“ভালো ছেলে হয়ে চলাচল করতে হবে।”
“করলাম।”
শ্যামা চুপ করে থাকে।ফিরোজ বললো,
“আমার মধুরানীর আর কোনো আবদার?আজকে আপনার রাজার দয়ার ভান্ডার খুলেছে,যা বলবেন তাই কবুল।”
শ্যামা লাজুক হাসে।
“আমাকে খুব ভালো বাসতে হবে।”
ফিরোজ শ্যামাকে দেয়ালের সাথে দাঁড় করিয়ে বললো,
“তা তো বাসবোই।আপনার কল্পনার থেকেও বেশী।”
শ্যামা চুপ করে থাকে।ফিরোজ শ্যামার লজ্জামাখা চেহারার দিকে তাকিয়ে শ্যামার সামনে এসে দাঁড়ায়।দুজনের মাঝে কিঞ্চিৎ ফাঁকা রেখে, মোহিনীয় গলায় বললো,
“শ্যামা পাখি!আমার মধুরানী কি এখন মধুমাসে যাবে?”
শ্যামা মাথা নেড়ে না করে।ফিরোজ শ্যামার দিকে নেশাভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বললো,
“কেনো?আগে তো খুব লাফাতে।এখন তোমার মধুরাজা রাজী; চলো মধুমাস থেকে ঘুরে আসি।”
শ্যামা আজকে কথা বলতে পারছেনা।ফিরোজ যে এতো দুষ্টু এটা সে ভাবতেই পারেনি।শ্যামাকে চুপ থাকতে দেখে ফিরোজ আবার বললো,
“মধুমাস মানে কি জানো?”
শ্যামা জানে।তারপরও ইচ্ছে করে বললো,
“না।”
ফিরোজ ঠোঁট চেপে হাসে।
“জানো না?সমস্যা নেই শ্যামা পাখি,চলো আজকে তোমার ক্লাস নেই,মধুমাস কি শিখিয়ে দেবো।”
শ্যামা ফিরোজের থেকে ছাড়িয়ে চলে যেতে চায় আর বলে,
“আমি ক্লাস করবো না।”
ফিরোজ শ্যামার জুটি করে বাধা চুল আঁকড়ে ধরে বাধা দেয়।চুলে টান পড়াতে শ্যামা থেমে যায়।ফিরোজ কাছে এসে বললো,
“আমিতো ক্লাস করবোই।খুব জ্বালিয়েছো সোনা।সুদে আসলে সব উশুল করবো। “
চলবে…..
(দেরী হওয়ার জন্য দুঃখিত।জ্বর ছিলো তাই দেরী হলো)
সবাই ভালোমন্দ মন্তব্য করে যাবেন।