#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
শ্যামা উজ্জ্বল মুখে ফারিয়ার রুমে ফিরে যায়,আজকে আরেক নতুন সুখের উন্মোচন হয়েছে,যা তাকে ফিরোজের প্রতি আরো ব্যাকুল করছে।ফিরে আসার আগে ফিরোজ বলেছে,
“খুব শীঘ্রই বিয়ে করে নেবো।”
শ্যামা লাজুক হাসে।গ্রীষ্মের কড়া রোদে যেমন আচমকা ঝরঝরিয়ে বৃষ্টি নামে তেমনি ফিরোজের বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে শ্যামার মুখে একরাশ লজ্জা ভর করে।মাথা নিচু করে ফিরোজের সামনে থেকে পালিয়ে আসে।
রুমে এসেও শ্যামার মুখের লাল রাঙ্গাভাব যায় না,চোখের তারায় খুশীর ঝিলিক সরে না কিন্তু ফারিয়ার সামনে নিজের এসব ভাবভঙ্গীমা প্রকাশ করা যাবে না সে যতোটা সম্ভব নিজের মনের ভাব লুকানোর চেষ্টা করে।ফারিয়া বিছানায় আসাম করে বসে আছে।শ্যামা ফারিয়াকে দেখে হাসে।বিছানায় বসে বললো,
“কথা শেষ?”
ফারিয়া কথা বলেনা।তীর্যক চোখে শ্যামার দিকে তাকিয়ে আছে।ফারিয়াকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শ্যামা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
“কি হয়েছে?”
ফারিয়া গম্ভীর গলায় বললো,
“কবে থেকে এসব চলছে?”
শ্যামা হকচকিয়ে যায়।চোখের তারায় বিষ্ময় জেগে উঠে।ফারিয়ার প্রশ্নের মানে হলো ফিরোজের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে সে জেনে গেছে।শ্যামা না বুঝার বান করে বললো,
“কোন সব?”
শ্যামার এমন ভাব ফারিয়ার মেজাজ খারাপ করে দেয়।চোখ বড়ো বড়ো করে বললো,
“ছাদে যে চুম্মা দেওয়া হচ্ছিলো ওইসব।”
শ্যামার মুখ লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায়।ফারিয়া দেখেছে?ইশ!কি লজ্জার ব্যাপার।সে কোনোরকম বললো,
“কি বলিস এসব?”
ফারিয়া কাছে আসে।হাত খাঁমচে ধরে বললো,
“একদম ভাব নিবি না।শয়তান মেয়ে।কবে থেকে এসব চলছে সেটা বল।”
শ্যামা তারপরও স্বীকার যায় না।করুণ স্বরে বললো,
“কোনো কিছু চলছে না।”
ফারিয়া চোখ পাকিয়ে তাকায়।
“ঢং করবিনা।আমি নিজ চোখে দেখেছি।”
আর কোনো উপায় না দেখে শ্যামা ফারিয়াকে জানাতে বাধ্য হয় তবে প্রেমের সঠিক বয়সটা জানায় না।বোকা বোকা হেসে বললো,
“এক মাস হলো।”
ফারিয়া চোখ গোল গোল করে তাকায়।
“এক মাস!কিভাবে হজম করলি?একবারও আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না?”
শ্যামা মাথা নেড়ে বললো,
“জানাতাম তো তার আগেই তুই জেনে গেলি।”
ফারিয়ার মন খারাপ হয়।শ্যামার থেকে এমন লুকোচুরি সে আশা করেনি।সে মন খারাপ করে বললো,
“তুই আমাকে এতো পর ভাবিস?”
শ্যামা ফারিয়ার মন খারাপের আঁচ টের পায়।ফারিয়ার হাত ধরে বললো,
“তুই ভুল বুঝিস না প্লিজ।তোকে আপন মনে করি বলেই তো পারমানেন্ট তোদের বাড়িতে আসার চেষ্টা করছি।”
ফারিয়া কথা বলেনা।চুপচাপ অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।শ্যামা ফারিয়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু ফারিয়া নিশ্চুপ।শ্যামা ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“প্লিজ ফারু কথা বল।আমার ভুল হয়েছে।”
তারপরও ফারিয়া কথা বলেনা।শ্যামা ফ্লোরে দাঁড়িয়ে কানে ধরে বললো,
“এই কানে ধরছি আমার খুব ভুল হয়েছে।তুই চাইলে তোর মাসুম ভাইকে ছ্যাকা দিয়ে চলে আসবো।”
শ্যামার কথা বলার ধরনে ফারিয়া হেসে ফেলে।
“হুহ।প্রেমের জালে আটকিয়ে এখন ছ্যাকা দেবে।এতো ঢং জানিস?”
রুপা অসহায় গলায় বললো,
“তুই বললে দেবো।তুই আমার জানে জিগার না?”
“হয়েছে।”
“কালকে বিয়ে আজকে এভাবে মন খারাপ করে থাকিস না প্লিজ।”
ফারিয়া মাথা দুলিয়ে বললো,
“আচ্ছা,আমার বিয়ে বলে ছাড়া পেলি।”
শ্যামা মুচকি হাসে।
ফারিয়া বিছানায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে বললো,
“কিভাবে পটালি আমার গম্ভীর ভাইকে?”
শ্যামা ফারিয়ার সামনে শুয়ে বললো,
“পটে গেলো।”
“কিভাবে?”
শ্যামা লজ্জা পায়।বিছানায় মুখ ডুবিয়ে বললো,
“প্রপোজ করলাম আর তোর ভাই রাজী হয়ে গেলো।”
ফারিয়া অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে বললো,
“এতো সহযে ভাই রাজী হলো?”
“হ্যাঁ।”
“কিভাবে করলি এটা?”
“হয়ে গেলো।”
ফারিয়া গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার মতো ফিসফিস করে বললো,
“এই;চুমু খেতে কেমন রে?”
শ্যামা ফারিয়ার হাতে আলতো থাপ্পড় দিয়ে বললো,
“ছিহ!সর।”
“আরে বল না আমার তো কোনো এক্সপেরিয়েন্স নাই।”
“কালকে রাতেই সব অভিজ্ঞতা হবে।”
“আচ্ছা।”
শ্যামা ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আমি খুব সরি।তোকে বলা উচিত ছিলো।”
“আমার ভাইকে আমি খুব ভালোবাসি,ভাইয়ের কথা ভেবে তোকে ক্ষমা করে দিলাম।যা।”
খুব সুন্দরভাবে ফারিয়ার বিয়েটা অনুষ্ঠিত হয়।ফিরোজ এক মূহূর্তের জন্যও দাঁড়াতে পারেনি,সারাদিন ব্যস্ত ছিলো।শ্যামা একটু পর পর ফিরোজকে দেখছে,কাজ করা অবস্থায় ফিরোজকে কি সুন্দর লাগে,তখন এতো সুদর্শন মনে হয় ইচ্ছে করে বুকে চলে যেতে।মেয়েরা যাকে একবার মন দেয়,ভালোবাসার গোপন কুঠরিতে জায়গা দেয় তাকে তার চোখে সারাজীবনের জন্য সুন্দর লাগে এখন সে যে অবস্থাতেই থাকুক না কেনো।
ফিরোজের কাজের মাঝে শ্যামার চোখে চোখ পড়লে মুচকি হাসি দিয়ে চলে যাচ্ছে,এই টুকুই শ্যামাকে এক আকাশ পরিমান সুখ দিচ্ছে।
ফারিয়াকে বিদায় করতে করতে রাত নয়টা বেজে যায়।ফারিয়াকে বিদায়ের পরে শ্যামা বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়ে যায়।তাকে ফিরোজ এগিয়ে দিতে আসে।সারা রাস্তা দুজনেই চুপচাপ হেটে আসে।ফিরোজ থেমে শ্যামার হাত ধরে বললো,
“আজকে থেকে গেলেই পারতে।”
কাল রাতের মধুর স্মৃতি মনে হতেই শ্যামা লজ্জা পায়,আজকে থাকলে আজকেও ফিরোজ পাগলামি করবে।তাছাড়া ফারিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে সে কার সাথে থাকবে?আর থাকাটাও সুভনীয় না।
“না।”
বাড়ির কাছে এসে ফিরোজ শ্যামাকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বললো,
“আস্তে আস্তে তুমি আমার সবটা জুড়ে নিজের আধিপত্য ছড়িয়ে দিয়েছো,কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না,তোমাকে পেয়ে আমার জীবনের রঙ পালটে গেছে।”
শ্যামা ফিরোজের বুকে মাথা রেখে বুঝতে পারে গম্ভীরমুখো ছেলেটা তার জন্য কতোটা ব্যাকুল।শ্যামা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
“কখনো ছেড়ে যাবোনা।”
একটু দূর হতে টর্চ লাইটের আলো এসে দুজনের উপরে পরে।হঠাৎ আলো আসাতে দুজন ছিটকে দূরে সরে যায়।টর্চ লাইট নিয়ে রিপন এগিয়ে আসে।শ্যামার কাছে এসে ঠান্ডা কন্ঠে বললো,
“বাড়ি চল।”
ঠান্ডা কন্ঠ শুনে শ্যামার গলা শুকিয়ে যায়।বাড়ি এসে রিপন স্বপন ইসলামের কাছে যায়।শান্ত কন্ঠে বলে,
“আব্বা শ্যামার বিয়ে উনারা ভাঙ্গেনি কিন্তু অন্যকেউ ভেঙ্গেছে আর কে ভেঙ্গছে তা জানতে পেরেছি।”
স্বপন ইসলাম উত্তেজিত হয়ে বললো,
“কে?”
শ্যামার সারা শরীর থরথর করে কাঁপে।আজকে কি করে রক্ষা পাবে?
চলবে…..
গল্প না দেয়ার মূল কারণ ছিলো ইবুক লেখা।আলহামদুলিল্লাহ লেখে জমা দিয়েছি যা দুই তিন দিনের মাঝেই প্রকাশ হবে।
আশা করি আমার আগের গল্পগুলোর মতো এই গল্পটাও আপনাদের মন ছুঁয়ে যাবে।