#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
শান্তা আড়চোখে শ্যামার দিকে তাকায়,মেয়েটা এমন থম মে,রে আছে কেনো?ও কি ভেবেছিলো শান্তাকে ফাঁকি দিয়ে নাগরের সাথে দেখা করবে!তা তো হলোনা শান্তা সারাটাক্ষন বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো।শ্যামা শহীদুল স্যারের সাথে গিয়েছে আবার উনার সাথেই ফিরে এসেছে সুতরাং নাগরের সাথে দেখা হওয়ার কোনো চান্সই নেই।শান্তার খুব আনন্দ লাগে।সে শ্যামার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
“তুই কি ভাবিছিলি,ফিরোজের সাথে দেখা করবি?আমি থাকতে তা সম্ভব না,আম্মা আমারে বুঝেই পাঠিয়েছে।”
আজকে কি হয়ে গেলো!
শ্যামা এখনো ধাক্কাটা সামলে নিতে পারেনি।আকস্মিক হয়ে যাওয়া বিয়েটায় যেনো শ্যামার মুখের কথা কেড়ে নিয়েছে। তার মনে হচ্ছে সুখ দুঃখের মাঝামাঝি অবস্থান করছে।শরীর মৃদু কাঁপছে।শান্তার কথায় হাসার কথা কিন্তু শ্যামা হাসে না,শান্তা নাকি তাকে দেখা করতে দেয়নি পাহারা দিয়েছে কিন্তু সে জানে না ;তার এই সুচারু পাহারার মাঝেই দেখার চেয়েও ভ,য়ংকর কাজ করে ফেলেছে।শ্যামার কথা বলতে ইচ্ছে করে না সে চুপচাপ বসে থাকে।তার কাছে এখনো সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে যেনো কেউ ডাকলেই ঘুম ভেঙ্গে যাবে।শ্যামার নিজেকে কেমন হালকা লাগছে।সে এখন ফিরোজের বউ।হোকনা গোপন বিয়ে,গোপন সম্পর্ক কিন্তু সে তো জানে ফিরোজ সারাজীবনের জন্য তার,মধুরাজা শুধুমাত্র তার মধুরানীর।সে গোপনে নিঃশব্দে শ্বাস ফেলে।
শান্তা ভ্রু কুঁচকে ঝগড়াটে ননদের দিকে তাকিয়ে থাকে।শ্যামা প্রতিবাদ করেনি, এটা যেনো বেশ আশ্চর্যের কাজ।শ্যামা তার বইগুলো পরম যত্নে বুকে আগলে রেখেছে।শান্তা বললো,
“বইগুলো এভাবে রেখেছিস কেনো?চিঠি মিঠি আছে নাকি?”
শ্যামা হকচকিয়ে যায় কিন্তু সাহস করে শান্তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“নাও,চ্যাক করো।”
শান্তা মাথা ঘুরিয়ে নেয়।শ্যামার প্রাণপাখি আরেকটু হলে উড়ে যেতো।বইগুলো এমন করে বুকে চেপে রাখার কারন হলো,এই বইয়ের মাঝে একটা বই ফিরোজের দেয়া,সেই বইয়ের ভেতরে একটা মোবাইল আছে।আর মোবাইলের মাপে বইয়ের পৃষ্ঠা কেটে জায়গা করা হয়েছে।উপর থেকে কখনো বুঝা যাবে না যে ভেতরে মোবাইল আছে।যেহেতু ফিরোজের সাথে যোগাযোগের কোনো রাস্তা নেই সুতরাং এটাই ভরসা।
বাড়ি এসে শ্যামা শুনতে পায় পাত্রপক্ষ না করে দিয়েছে।শ্যামা অজু করে যোহরের নামাজে বসে।নামায শেষে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়ে দুই রাকাত নফল নামায আদায় করে।মোনাজাতে ডুকড়ে কেঁদে উঠে।জ্ঞানী শ্যামা জানে সে যা করেছে তা সম্পূর্ণ ভুল কিন্তু সে নিরুপায় ছিলো।এই খবর বাবা মায়ের কাছে গেলে উনারা তাকে আস্ত রাখবেনা আর নিজেরাও খুব কষ্ট পাবে।কিন্তু শ্যামা কি করবে?প্রেমে পাগল মনকে তো আটকানো যাচ্ছিলো না পাগলের মতো বাবা মায়ের কাছে নিজের মানুষটাকে ভিক্ষা চেয়েছে কিন্তু কেউ তার কথা শুনেনি,তাকে বোঝার চেষ্টা করেনি।পরপর দুই দুটা খুশীর খবর শুনে শ্যামা খুশী হয়।প্রাণভরে আল্লাহর কাছে দোয়া চায় যেনো এই বিয়ের কথা জানার আগেই তার আব্বা আম্মা আর ফিরোজের আব্বা নরম হয়।
শ্যামা নামায পড়ে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমায়,অনেকদিন পরে এতো শান্তি মনে শ্যামা ঘুমাচ্ছে।ঘুম থেকে উঠে মনে পড়ে সে বিবাহিত।আজকে তার বিয়ের প্রথম দিন,সে ফিরোজের স্ত্রী।শ্যামা লজ্জায় বালিশে মুখ গুজে নেয় যদিও ফিরোজ তার কাছে আসতে পারবেনা কিন্তু শ্যামা লজ্জা পায়।
ফাতেমা বেগম বললো,
“শান্তা ও কি কোথাও যাওয়ার জন্য বলেছিলো?”
“না আম্মা।”
“তুমি খেয়াল রেখেছো তো?”
“হ্যাঁ আম্মা।আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।”
ফাতেমা বেগম নিশ্চিত হন।একটু আগে মেয়েকে দেখে এসেছেন,ঘুমাচ্ছে।ফিরোজের ভূত মাথা থেকে নেমে গেলেই হয়।
শহীদুল ফিরোজের ছোট।ইংরেজীতে ভালো বলে কলেজে চাকরী পেয়েছে অবশ্য ফিরোজ একটু সুপারিশ করে দিয়েছিলো,শহীদুলের সাথে ফিরোজের আলাদা একটা সম্পর্ক,শহীদুল ছোট হলেও দুজনের খুব মিল।তাইতো আজকে ফিরোজ মনের গোপন বাসনা জানানোর পরে সে আপত্তি করেনি,রিক্স হলেও সহযোগিতা করেছে।সারদিন ফিরোজ ক্লাবে কাজ করেছে।ইদানীং মানসিক টেনশনের সাথে কাজের চাপও বাড়ছে।দুটোয় তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে সে হিমশিম খাচ্ছে।সারাদিন কাজ করে কাটিয়ে দিলেও সন্ধার পরে শুরু হয় নতুন এক অশান্তি।শ্যামা নামের পাখির কাছে যাওয়ার জন্য শরীরের প্রতিটা নিউরণ আন্দোলন করে উঠে।সদ্য বিবাহিত বউয়ের কাছে যাওয়ার জন্য মনটা আনচান করে।আজকে তাদের বিয়ের প্রথম রাত হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু পরিস্থিতি এতোটাই জঘন্য যে চোখের দেখাই দেখতে পারছেনা।এতো অশান্তি তার এর আগে কখনো লাগেনি। ফিরোজ চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছে, শ্যামার মেসেজ পাঠানোর কথা কিন্তু পাঠাচ্ছে না কেন?
রাত দশটা।ফাতেমা বেগম লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।শ্যামা আগেই শুয়ে পড়েছে। উনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এই গরমে কাথা গায়ে দিয়েছিস কেনো?”
শ্যামা কাথা সরিয়ে মাথা বের করে বললো,
“শীত লাগছে আম্মা আবার মনে হয় জ্বর আসবে।”
ফাতেমা বেগম আর কোনো কথা না বলে ওই পাশে ফিরে ঘুমিয়ে যায়।উনার নিঃশ্বাসের ভারী শব্দ কানে আসলে শ্যামা মোবাইলটা হাতে নেয়।সুইচ অন করে নেট চালু করে কানে হেডফোন লাগায় তারপর ফিরোজকে ফোন দেয়।ফিরোজ বলেছে সে ফোন দিলে শ্যামা মেসেজ করবে আর ফিরোজ কথা বলবে।ফিরোজ রিসিভ করলে শ্যামা মুচকি হাসে লেখে,
“আসসালামু আলাইকুম,মধুরাজা।”
শ্যামার মেসেজ পেয়ে ফিরোজ হেসে খুশী খুশী গলায় বললো,
“ওয়ালাইকুম সালাম বিবিজান।”
শ্যামা হাসে।ফিরোজের গলার স্বর এতো ভালো লাগে যে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে,প্রেমে পড়লে বুঝি সবই ভালো লাগে।আজকে দু’জন কাছে থাকলে পা,গলের পা,গালামি দেখতে পারতো।
“ভালো আছেন?”
ফিরোজ হেসে বললো,
“একটুও ভালো নেই,বউ কাছে না থাকলে বিবাহিত পুরুষরা ভালো থাকতে পারে না।”
শ্যামা হাসে তার ফাঁকে কাথা সরিয়ে তার আম্মাকে দেখে নেয়।গরমে সারা শরীর ঘেমে একাকার।সে লেখলো,
“তো বাড়িতেই নিয়ে যেতেন।”
ফিরোজ গম্ভীর গলায় বললো,
“তুমি আমার বউ।যোগ্য সম্মান দিয়ে বাড়ি আনবো,এমনি আনলে সবাই ছোট ভাববে।”
শ্যামা ছোট করে লেখে,
“হুম।”
ফিরোজ হঠাৎ নিভু নিভু আগুনে কেরোসিন ঢেলে দেয়।আদুরে গলায় বললো,
“পাখি কি আমাকে মিস করছে?”
ফিরোজের এমন আদরমাখা কন্ঠ শুনে শ্যামার এতোক্ষণ চেপে রাখা কান্না বুক ফেঁটে বেরিয়ে আসে।কাঁপা কাঁপা হাতে লেখে,
“ভিষণ।”
ফিরোজ চুপ করে থাকে তার কেনো যানি মনে হচ্ছে শ্যামা কাঁদছে।নিশ্চুপ থেকে যেনো দু’জন দুজনের মনের অলিগলি ঘুরে বেড়াচ্ছে।ছুঁয়ে দিচ্ছে একে অপরকে।ফিরোজ আস্তে করে বললো,
“বউ!”
শ্যামার মন ভালো লাগায় ভরে উঠে।
“হুম।”
ফিরোজ নিজেকে আটকে রাখতে পারে না।
“আমি একটু আসি?দেখা করতে পারবেনা?”
এমন আদর করে আবদার করে কেনো ছেলেটা! বুঝে না তার বউয়ের কষ্ট হয়।শ্যামারও ইচ্ছে করে দেখা করতে কিন্তু তার আম্মা পাশে দেখা করার উপায় নেই।
“আম্মা পাশে তো।”
“বাহিরে আসতে পারবেনা?”
শ্যামার খুব অসহায় লাগে।
“না।”
“টয়লেটে যাও না তখন কিভাবে যাও?”
“তখন তো যাই আর আসি।”
“তাহলে এভাবেই আসো।আমি তোমাদের ঘরের সামনে এসে ফোন দেবো।”
শ্যামা না করতে পারলো না।ফিরোজ যেমন ছটফট করছে সে ও তো একি য,ন্ত্রণায় ছটফট করছে।শ্যামা সায় দেয়,স্বামীর প্রথম আবদার ফেলতে পারে না।কিছুক্ষণ পরে ফোন আসলে ধুকপুক বুকে নিঃশব্দে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।আশেপাশে তাকিয়ে সোজা গোসলখানায় ঢুকে পরে।
ফিরোজ আগেই সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো শ্যামাকে দেখে হাসে।
হাত বাড়িয়ে গাল টেনে দেয়।ফিসফিস করে বললো,
“থাকার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তুমি চুম্বকের মতো টেনে আনলে।আজকে বাসর না বাসরে বউ ছাড়া থাকলে ভুতে ধরে।”
ফিরোজের কথায় শ্যামা হাসে।
“ধরুক।”
“তোমাকে আদর করবে কে তাহলে?”
“আপনি।”
ফিরোজ শ্যামার দীঘির মতো টলটলে চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি কিন্তু খুব খারাপ শ্যামাপাখি।”
শ্যামা ফিরোজের গা ঘেষে দাঁড়ায়।
“তো।”
ফিরোজ নিমিষেশ তাকিয়ে থাকে।
“কিছু না।”
“আমরা একে অপরের স্বামী স্ত্রী আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না।”
“এভাবেই আমরা একে একে সব করে নেবো।তুমি শুধু আমার উপরে ভরসা রেখো।”
“আচ্ছা।”
ফিরোজ বললো,
“মধুরানী কি জানে তার রাজা তাকে কতো ভালোবাসে?”
শ্যামা মাথা দুলায়।শ্যামা ফিরোজের হাসিহাসি মুখের দিকে তাকিয়ে ফিরোজকে জড়িয়ে ধরে।আদুরে,তুলতুলে বিড়ালের মতো ফিরোজের বুকে মিশে যেতে চায়।ফিরোজের ইচ্ছে করে বিড়ালটাকে বুকে পুড়ে নিতে,তাহলে যখন তখন আদর করা যাবে,শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখা যাবে।সে বললো,
“আজকে তো একটু বেশী আদর পাওনা ,আফটারঅল তুমি আমার বউ।”
ফিরোজের মুখে বউ ডাকটা শুনে শ্যামার সারা দেহে অজানা কাঁপন বয়। সে কথা বলে না।
ফিরোজ শ্যামার মুখটা উপরে তুলে অধরের ভাজে অধর মিলিয়ে দেয়।ভালোবাসার মধুর সুধা অধরের ভাজে টেনে নেয়ার চেষ্টা করে।
কিছুক্ষণ পরে ফিরোজ নিজেই নিজেকে বললো,
“কন্ট্রোল ফিরোজ কন্ট্রোল!”
ফিরোজের কাজে শ্যামা হেসে বললো,
“পাগল।”
ফিরোজ শ্যামার কোমড়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে বললো,
“তোমারই তো বর।”
চলবে…..
*****রুপা হাসে।কান্নাভেজা চোখে মাহাবুবকে বড়োই সুদর্শন মনে হয়।মাহাবুব তার শরীর দিয়ে রুপার ছোট শরীরটা চেপে ধরে।কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়।গাঢ় স্বরে বললো,
“আমি বোধহয় ভারসাম্য হারাচ্ছি।”
মাহাবুবের সাথে সাথে রুপার শ্বাস ভারী হয়।কাঁপা-কাঁপা ঠোঁট সামলে বললো,
“না।”
মাহাবুব মরিয়া হয়ে উঠে।
“আবার কি?”
(রোমান্টিক এই গল্পটি পড়েছেন তো?না পড়লে এখনি মাত্র ৩৮ টাকায় পড়ে ফেলুন একরাজ্য পরিমাণ ভালোবাসার এই গল্পটি।মেলার আর মাত্র ২ দিন বাকি তারপর কিন্ত ৫০ টাকায় কিনতে হবে সুতরাং সময় থাকতে জলদি কিনে নিন।)