মধুমাস পর্ব ৪
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
শ্যামার মা ফাতেমা বেগম রাতে শ্যামাকে খাইয়ে দিচ্ছে।মেয়েটার পরিক্ষার আর মাত্র তিনদিন বাকি।সারাবছর টইটই করে ঘুরে পরিক্ষার আগে পুরো বই পানি দিয়ে গিলে ফেলার বৃথা চেষ্টা করছে।মেয়েটা পড়ায় এতোই ব্যস্ত যে রাতের খাবারও নাকি খাবে না।অগ্যতা ফাতেমা বেগমই খাবার নিয়ে শ্যামার রুমে আসে।শ্যামা বিরবির করে পা নাড়িয়ে পড়ছে আর ফাঁকে ফাঁকে খাবার মুখে নিচ্ছে।ফাতেমা বেগম মেয়ের দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকায়।শ্যামার যেনো হঠাৎ করেই গায়ে গতরে কেমন ভরাট ভাব এসে গেছে।অতিরিক্ত ফর্সা না হলেও উজ্জ্বল শ্যামলা শ্যামা যে কারো নজর কাড়তে সক্ষম।বড়ো চোখদুটো দিয়ে যখন চারদিকে মায়া মায়া চোখে তাকায় তখন কি যে মিষ্টি লাগে।মেয়েটার জন্য ইদানীং খুব বেশি সমন্ধ আসছে।ফাতেমা বেগম উনার স্বামীকে বলেছেন চুপিসারে পাত্রের খোঁজ খবর নিতে,সবসময় ভালো ঘর থেকে সমন্ধ আসে না।তাছাড়া মেয়েদের এই বয়সেই বেশী উজ্জ্বল লাগে তাই এই সময়েই বিয়ে দিয়ে দেয়াই ভালো।আজকালকার মেয়ে তো বলা যায় না কখন কি করে ফেলে এমনিতে এখনো শ্যামার এমন কোনো কিছু চোখে পড়েনি।
শ্যামা পড়ার ফাঁকে মায়ের দিকে তাকায়;তার আম্মাকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
“কি দেখো মা?”
ফাতেমা বেগম বললো,
“কিছুনা।কলেজে যাওয়ার সময় এখন থেকে নিকাব লাগিয়ে যাবি।”
শ্যামা অবাক হয়ে বললো,
“কেনো?”
ফাতেমা বেগম মিষ্টি করে হাসেন।
“মানুষের নজর খারাপ জিনিস।”
শ্যামা হেসে ফেলে।
“তোমার মেয়ে কি এতোই রূপবতী যে নজর লাগবে।”
ফাতেমা বেগম থু থু দিয়ে বললো,
“তো কি?ধবধবা সাদা হলেই সে সুন্দর হয়না,সুন্দর হওয়ার জন্য মায়াবী একটা মুখ থাকলেই যথেষ্ট।”
শ্যামা হাসে।সে নিজেও জানে সে সুন্দর,সবার নজর কাড়তে সক্ষম।কিন্তু সে এই সৌন্দর্যের কোনো ফায়দা লুটতে পারছেনা।ফিরোজের যেনো শ্যামার সৌন্দর্য,ভালোলাগার দৃষ্টি কিছুই চোখে পড়ছেনা।এতো অবহেলা কেনো তার প্রতি?শ্যামা ভাবে ফিরোজ কি তাকেই এমন অবজ্ঞা করে নাকি সব মেয়েদেরই?আচ্ছা ফিরোজের কোনো গালফ্রেন্ড আছে?শ্যামার মাথায় নতুন পোকা কিলবিল করে উঠে।যদি ফিরোজের প্রেমিকা থাকে তো?শ্যামার নরম মন এই ব্যাপারটা মানতে পারে না।নিজের আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে কোনো রকম সত্যতা যাচাই না করেই অবুজ বালিকার চোখ ভরে পানি আসে।ব্যাকুল যন্ত্রণায় ছটফটিয়ে উঠে হৃদয়।মোবাইল হাতে নিয়ে ফিরোজের ফেসবুক প্রোফাইলে ডুকে।মাথার কাছে সবুজ বাতিটার জ্বলজ্বল লক্ষ করে বুক ভর্তি সাহস নিয়ে সে মেসেজ করলো,
“ফিরোজ ভাই……”
ফিরোজ তখন বাইকে।মেসেজের শব্দে পায়ের সাথে লাগোয়া মোবাইল ভাইব্রেট করে উঠে সে পাত্তা দেয় না,এমন কতোশতো মেসেজ প্রতিদিন আসে।বেশীরভাগ আসে মেয়েদের,মেয়েরা যেনো তাকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করতে চায় কিন্তু সে বিকর্ষণ করে।মেয়েদের জাতটাই খারাপ,ছেলে দেখলে এদের মাথা ঠিক থাকেনা।বাসায় এসে হাতমুখ ধুয়ে রাতের খাবার খেতে টেবিলে যায়।ঘড়িতে রাত বারোটা বাজতে চললো সবাই এতোক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে।ফিরোজের হঠাৎ কেমন একা একা লাগছে,সারাবেলা একাকী কাটানো মনটা কারো সঙ্গ চাইছে।আচ্ছা ওই মহিলাটা যদি আজকে থাকতো তাহলে কি ছেলে না ফিরার আগেই ঘুমিয়ে পড়তে পারতো?কখনোই না সে জেগে থাকতো তার অপেক্ষায় বসে থাকতো খুব বেশী দেরী হলে ফোন দিয়ে নিজের উৎকন্ঠা জানাতো।কিন্তু ওই মহিলাটা ঠিক ফিরোজের মা ছিলো না উনি পথভ্রষ্ট এক নারী ছিলো যার নেশা ছিলো অন্য পুরুষ।চুপচাপ খাবার খেয়ে বাকি খাবার ফ্রিজে রেখে আসে।বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।কি মনে করে আবারো মোবাইলটা হাতে নেয়।শ্যামার মেসেজ দেখে ভ্রু কুঁচকে যায়।এই প্রথম শ্যামা তাকে মেসেজ পাঠিয়েছে।মেয়েটার সাহস দিনকেদিন বেড়েই যাচ্ছে।আজকাল ফিরোজ ইচ্ছে করেই শ্যামাকে দেখা দেয় না,শ্যামার আসার সময় হলে ফিরোজ আড়ালে চলে যায়,মেয়েটা কিন্তু ঠিক অপেক্ষা করে চঞ্চল চোখে আশেপাশে তাকিয়ে তাকে খুঁজে কিন্তু ফিরোজ সামনে আসে না।আচ্ছা সে কি শ্যামার নদীর মতো শান্ত চোখের তাকানো ভয় পায়?যদি ভয়ই না পায় তাহলে এতো লুকোচুরি কেনো?কেনোইবা মেয়েটার সামনে যেতে ইচ্ছে করেনা।মোবাইলের স্কিনে হাত চালিয়ে লিখলো,
“কি?”
কঠিন মনের মানুষের থেকে মেসেজের উত্তর পাওয়া শ্যামার কল্পনার বাহিরে ছিলো।সে ভেবেছিলো ফিরোজ ভুলেও উত্তর দেবে না কিন্তু তার ভাবনাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ফিরোজ পাল্টা মেসেজ করেছে।কাঁপা কাঁপা হাতে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে তুলে নেয়।
“ভালো আছেন?”
কিছুক্ষণ পরে জবাব এলো,
“ভালো।”
শ্যামা সাহস করে বললো,
“আপনাকে ইদানীং দেখি না কেনো?”
ফিরোজের মুখের ভাব কঠিন হয়ে যায়।বাচ্চা একটা মেয়ে তাকে প্রশ্ন করে?কৈফিয়ত চায়?এতো স্পর্ধা!
“আমাকে দেখা কি জরুরী?”
“এমনিতেই।”
“শ্যামা বেশী বাড়াবাড়ি আমি পছন্দ করিনা।”
শ্যামা কিছুক্ষণ পরে লেখলো,
“একটা কথা জিজ্ঞেস করি।”
ফিরোজ যেনো খসখসে গলায় হুংকার দিয়ে লিখলো,
“না।আর একটাও যদি মেসেজ করেছো চটকানা দিয়ে গাল লাল করে ফেলবো।”
শ্যামার ভিষন অভিমান হয়।এক গ্রামে থেকেও কতোদিন ধরে দেখা হয় না কথা হয় না,আজকে সামান্য মেসেজ করাতে এভাবে কথা বলতে পারছে?তাকে থাপ্পড়ের ভয় দেখায়?গাল ফুলিয়ে লেখলো,
“আপনি এত্তো খারাপ।বদ লোক।”
“তাতে তোমার কি?এই খারাপকে দেখার জন্যই তো রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকো।বাজে মেয়ে।তোমার বড়ো বড়ো কথা বলা বাপ জানে এসব?নাকি আমি বলবো তার মেয়ের উন্নতির কথা।ফালতু মেয়ে।”
শ্যামা কিছুক্ষণ মেসেজটার দিকে তাকিয়ে থাকে।বুকটা টনটন করে কান্না আসে।সে আসলেই বাজে।ফিরোজকে এতো জ্বালায় যে
সে বাজে,ফালতু,অসভ্য সবকিছুতেই উপাধি দিয়েছে।হাত চালিয়ে লিখলো,
“একদিন বুঝবেন এই বাজে মেয়েটা কি।”
ফিরোজের রাগ হয়।মেয়েটা আকাড়ে ইঙ্গিতে কিসের দিকে নির্দেশ করে তা অতি বুদ্ধিমান ফিরোজের বুঝতে অসুবিধা হয় না।
রাগের তোপে মেসেঞ্জারে শ্যামাকে ব্লক করে রাখে।
শ্যামার সামনে পরিক্ষা কিন্তু এই লোক তাকে ব্লক করার সাহস কই পায়?একটু রিলাক্স মুডে পড়বে তা না ফিরোজের চিন্তা মাথায় ঝেকে বসে আছে।ভোর সকালেই সে ফারিয়াদের বাড়িতে যায়।ফারিয়াকে রেডি হওয়ার জন্য তাড়া দিয়ে সে বেরিয়ে আসে।বারান্দা দিয়ে তাকিয়ে দেখে ফিরোজ বেরিয়ে যাচ্ছে।শ্যামা দৌড়ে সামনে যায়।কতোদিন ধরে দেখেনা,মোবাইলে ছবি দেখে আজকাল তৃষ্ণা মিটে না,এই লোকটা এতো খারাপ সহযে ধরা দিতে চায়না।শ্যামাকে দৌড়ে আসতে দেখে ফিরোজ দাঁড়ায়।বিষভরা চোখে তাকিয়ে বললো,
“পিছনে পিছনে দৌড়াচ্ছো কেনো?”
শ্যামা কাছে এসে দাঁড়ায়।এই লোকটা নির্ঘাৎ কোনো যাদু টোনা যানে না জানলে কাছে আসলেই কেনো বুক কাঁপবে?শরীরে শিরশিরে অনুভূতির জোয়ার বয়ে যাবে কেনো?সে আস্তে করে বললো,
“আমাকে ব্লক করেছেন কেনো?”
ফিরোজ পকেটে দু’হাত দিয়ে দাঁড়ায়।শান্ত চোখে শ্যামাকে পর্যবেক্ষণ করে বললো,
“তো কি হয়েছে? আমার ফেসবুক,আমার মেসেঞ্জার আর ইচ্ছা আমি যাকে মন চায় তাকেই ব্লক করতে পারি।”
শ্যামা ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে আছে।
“আমি একটা জরুরী কথা বলতেই নক করেছিলাম।”
“কি কথা।”
শ্যামা কাচুমাচু করে ফিরোজের দিকে তাকায়।গলার স্বর নমনীয় করে বললো,
“আপনার প্রেমিকা আছে?সত্যি করে বলবেন।”
ফিরোজ শ্যামার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ত্রিশ বছরের একটা ছেলে সিঙ্গেল থাকবে না এটা একটা বাচ্চাও বুঝার কথা।”
শ্যামার পৃথিবী দুলে উঠে।চোখ ভরে পানি আসে।বিচলিত কন্ঠে বললো,
“মানে?”
শ্যামার অবস্থা দেখে ফিরোজের হাসি পায় কিন্তু গলার স্বর রুক্ষ্ম করে বললো,
“আমার গালফ্রেন্ড আছে,সাত বছরের সম্পর্ক।ছোট বোন হিসেবে তোমাকে বললাম।কাউকে বলোনা। কেমন?”
শ্যামার দম বন্ধ হয়ে আসে।বুকে কেউ হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে যায়।কই এতোদিন তো কিচ্ছু জানতে পারেনি কিংবা ফারিয়াও কিছু জানায়নি।শ্যামার বিশ্বাস হতে চায়না।বেহায়া চোখ যেনো ফিরোজের সামনেই পানি ঝড়ানোর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।শ্যামা ছটফট চোখে এদিক ওদিক তাকায়।হাত দিয়ে শক্ত করে জামা আঁকড়ে ধরে বললো,
“তাই নাকি?বিয়ে কবে করছেন?”
ফিরোজ সন্ধানী চোখে শ্যামাকে দেখে বললো,
“কিছুদিন পরেই।”
শ্যামা হাসার চেষ্টা করে বললো,
“আচ্ছা।”
“কি আচ্ছা?”
শ্যামা কথা বলতে পারছেনা গলায় কান্না দলা পাকিয়ে আছে।মাথা নেড়ে বললো,
“কিছুনা।”
শ্যামা ধীরপায়ে চলে যাচ্ছে তার যাওয়ার পানে ফিরোজ তাকিয়ে আছে হঠাৎ শ্যামা পেছনে ফিরে বললো,
“সবগুলো কথা মিথ্যা ছিলো তাই না?”
ফিরোজ কিছু বলে না শ্যামা আস্তে করে বললো,
“আমাকে কষ্ট দেয়ার জন্যই এসব বলেছেন তাই না ফিরোজ ভাই?”
ফিরোজ মাথা নেড়ে না জানায় মুখে বললো,
“বিয়ের দাওয়াত পেলেই বুঝবে সত্যি না মিথ্যা”
শ্যামাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে বাইকে বসে বাইক স্টার্ট দেয়।সাই সাই করে শ্যামাকে পেছনে রেখে সে সামনে এগিয়ে যায়।দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে শ্যামা বাড়ির দিকে ছুটে।আজকে সে কলেজে যাবেনা,বিষাদে মন ছেঁয়ে আছে।এতো কষ্ট নিয়ে লেখাপড়া করা যাবে না।
শ্যামা আর ভুল করেও ফিরোজদের বাড়ি এলোনা আর না জোড় করে ফিরোজের দিকে তাকালো কিংবা কথা বলার চেষ্টা করলো।উদাশী মন নিয়ে সবগুলো পরিক্ষা দিয়ে শেষ করলো যদিও একটা পরিক্ষাও ভালো হয়নি।সারাক্ষণ ফুলো ফুলো চোখ নিয়ে ঘুরে বেড়ালো,সাপ্তাহ খানেকের মধ্যে গায়ে ভিষণ জ্বর নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো,নিস্তেজ দেহ,কোনো কথা বলেনা শুধু চোখ দিয়ে টুপটাপ পানি পড়ে।ফারিয়া বান্ধুবীর এই আচমকা পরিবর্তনের কারণ খুঁজে পেলো না।শ্যামার মা ফাতেমা বেগম মেয়ের এই অবস্থায় বিচলিত হয়ে পড়ে।
ফারিয়া খাবার টেবিলে কথাটা বললো,
“বুঝলাম না শ্যামা হঠাৎ করে এতো অসুস্থ হলো কেনো।”
রোজিনা বেগম বললো,
“ওষুধ পত্র খাচ্ছে না নাকি?”
“খাচ্ছে কিন্তু কোনো পরিবর্তন নেই।সারাক্ষণ কাঁদে।”
তামিম ঠাট্টা করে বললো,
“অকারনেই কাঁদে?দেখ তোর বান্ধুবী ছ্যাকা খাইছে বোধহয়।”
ফারিয়া জোড়ে মাথা নেড়ে বললো,
“শ্যামা এমন মেয়ে না।”
ফিরোজ খাওয়ার মাঝেই সবার কথা এতোক্ষন মনযোগ দিয়ে শুনছিলো।তামিম কথাটা মজা করে বললেও ফিরোজের অসস্থি লাগলো।খাওয়ার গতী কমে এলো।বুকের ভেতর কেমন জ্বালাপোড়া করে মনটা ফিসফিস করে তার কানেকানে বলে গেলো,
“তোর কারণেই শ্যামা অসুস্থ।”
ফিরোজের কেমন অনুভূতি হয়,বুক থেকে ব্যাথারা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।এই প্রথম সে অনুভব করে শ্যামার অনুপস্থিতি,কাছে না আসা পাগলামি সে খুব মিস করছে।অসুস্থতার কথা শুনে কেমন খারাপ লাগাও ঘিরে ধরে।রুমে গিয়ে মোবাইল হাতে নেয়।শ্যামার আইডি আনব্লক করে মেসেজ না করে সোজা ফোন দেয়।
শ্যামার হঠাৎ জ্বর আসে আবার কিছুক্ষণ পরে জ্বর ছেড়ে দেয়।ফাতেমা বেগম জোড় করে কয়েক লোকমা ভাত খাইয়ে যায়।তখনি শ্যামার হৃদপিণ্ডের গতী বাড়িয়ে দিতে ফিরোজ ফোন দেয়।সে অবাক হলেও ফোন রিসিভ করে কিন্তু কোনো কথা বলে না,এই মানুষটার উপর তার এক আকাশ পরিমান অভিমান।ফোন রিসিভ হওয়ার পরেও যখন শ্যামা কথা বলেনা তখন ফিরোজই আগে কথা বলে,
“শরীর কি বেশী খারাপ?”
শ্যামা শান্ত গলায় বললো,
“না ভালো আছি।”
“ভালো থাকলে সারাদিন কাঁদো কেনো?”
শ্যামা বুঝতে পারে ফিরোজ ফারিয়ার থেকে সব শুনেছে।
“এমনিতেই।”
“তামিম বললো তুমি নাকি ছ্যাকা খেয়েছো।”
শ্যামা চুপ করে থাকে।প্রেমই হলো না সেখানে ছ্যাকা আসবে কোথা থেকে?ফিরোজ শ্যামাকে চুপ থাকতে দেখে বললো,
“কথা বলবেনা?ফোন রেখে দেবো?”
ফিরোজের গলার স্বরও তাকে শান্তি দিচ্ছিলো।রেখে দেয়ার কথা আসাতে মাথা নেড়ে বললো,
“না না।”
“এসব পাগলামি বন্ধ করো শ্যামা।”
“আচ্ছা।”
ফিরোজ বললো,
“গুড গার্ল।”
শ্যামা আকুল গলায় বললো,
“একটা কথা বলি?রাখবেন?”
ফিরোজ চুপ করে থেকে বললো,
“বলো।”
“এখন একটু দেখা করবেন?”
ফিরোজ চমকে বললো,
“এই রাতে?”
শ্যামা হঠাৎ ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।
“প্লিজ।”
“কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।”
শ্যামা ধরা গলায় বললো,
“কেউ দেখবেনা।পুকুর পাড়ে আসেন প্লিজ।”
ফিরোজ না করেনা।শক্ত কঠিন মানুষটা হঠাৎ শ্যামাকে আশকারা দেয়।
“আচ্ছা।”
শ্যামা উঠে বসে।কলপাড়ে গিয়ে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে গুটিগুটি পায়ে পুকুরের দিকে এগিয়ে যায়।কেউ দেখবে সেই ভয়ও পাচ্ছে আবার প্রিয় পুরুষকে চোখ ভরে দেখার তৃষ্ণাও হচ্ছে।
ফিরোজ শ্যামার দিকে তাকিয়ে আছে।আবছা অন্ধকারে শ্যামাকে বেশ রুগ্ন লাগছে।ফিরোজ হান্ডেড পার্সেন্ট শিওর যে শ্যামা একটা পাগল।পাগল না হলে সামান্য একটা কথা শুনেই কেউ এতো অসুস্থ হয়?
শ্যামা অপলক তাকিয়ে আছে।উঁচুলম্বা মানুষটা চাঁদের হালকা আলো গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে আছে।এই মানুষটারও নাকি প্রিয় মানুষ আছে,মানুষটা তার হবার না এটা ভাবতেই শ্যামার কান্না আসে।
ফিরোজ আস্তে করে বললো,
“কি হয়েছে বলো?”
শ্যামা মাথা নেড়ে ফুপিয়ে কেঁদে দেয়।বিরবির করে বললো,
“শান্তি লাগে না।”
শ্যামার কান্না দেখতে ফিরোজের একটুও ভালো লাগছে না।কোনোভাবেই মেয়েটার সাথে শক্ত হতে পারছেনা।
“কেনো?”
শ্যামা ফিরোজের দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর কিছু না বলে হঠাৎ করে ফিরোজকে জড়িয়ে ধরে।শক্ত করে শার্ট আঁকড়ে ধরে বললো,
“একটু প্লিজ,আর কখনো কিছু চাইবো না।”
শ্যামার এমন কাজে ফিরোজ থমকে যায়।বুকের কাঁপন হঠাৎ করেই বাড়ে দ্বিগুন।ত্রিশ বছরের জীবনে এই প্রথম কোনো মেয়ে তাকে এতোটা নিবিড়ভাবে আলিঙ্গন করলো।দম আটকে আসা শরীর মৃদু কেঁপে ওঠে।
শ্যামা ধীরে গলায় বললো,
“একটু শান্তি নেই,প্লিজ।”
ফিরোজ শ্যামাকে ছাড়াতে চায়।
“ছাড়ো শ্যামা।”
“ম,রে যাবো।”
হঠাৎ ফিরোজের রাগ হয়।বেশী বাড়াবাড়ি করা পছন্দ হয় না।ধাক্কা দিয়ে শ্যামাকে সরিয়ে দেয়।শ্যামা কিছু বলার আগে তার গালে বলিষ্ঠ হাতের থাপ্পড় দিয়ে বললো,
“এটা বেশী বাড়াবাড়ি ছিলো শ্যামা।আমি এতোটা সাহস দেইনি।”
শ্যামা ফিরোজের দিকে তাকিয়ে কান্নারত গলায় এই প্রথমবারের মতো ফিসফিস করে বললো,
“ভালোবাসি,খুব ভালোবাসি।”
চলবে…….
(লাইক,কমেন্ট আর শেয়ার করে পাশে থাকুন।)