মন বাড়িয়ে ছুঁই পর্বসংখ্যা ৩০
#ফাবিয়াহ্_মমো .
গ্রামের সরলতা ছেড়ে শহুরে জন্ঞ্জালে প্রবেশ করলো মেহনূর। গাড়িটা যখন বউ বাজারের রাস্তা পেরিয়ে যাচ্ছিলো, তখন কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো বুকের ভেতরটা অজানা শূন্যতায় খাঁ খাঁ করছে। পুরোনো দিনের মজবুত বন্ধনটা আচমকা ছিড়ে অন্য দুনিয়ায় সংযোগ হয়ে যাচ্ছে। গাড়িতে সিয়াম বাদে সবাই তখন ঘুমে ঢুলে আছে। মারজা ডানহাতে মেহনূরকে আগলে রেখে সিটের পেছনে মাথা ছেড়ে দিয়েছে, সেও জার্নির একটানা ক্লান্তিতে তন্দ্রামগ্নে ডুবে আছে, মেহনূরের হাতদুটো নিজের কোলে টেনে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে মারজা। এদিকে মেহনূর কোনোভাবেই চোখের পাতা বুজে ঘুমের জন্য স্থির হতে পারছেনা। সাদা শাড়ির লাল পেড়ে আচঁলটা সরতে-সরতে মাথার মাঝ বরাবর ঠেকে আছে ওর, চলন্ত গাড়ির স্বচ্ছ জানালা দিয়ে শোঁ শোঁ করে হিমশীতল বাতাস ঢুকছে তখন। মেহনূর জানালার বাইরে দৃষ্টি দিয়ে উদাস আকাশে তাকিয়ে আছে, অপরিচিত দুনিয়ায় নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারবে কিনা, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে। মা, বড়মা যা যা শিখিয়ে দিয়েছে, সেগুলো ঠিকঠাক মতো পালন করতে না পারলে কতটা ব্যর্থ হবে, সেটা নিয়েই যত চিন্তা। মেহনূর যখন এসব চিন্তায় বিভোর ছিলো, তখন আশেপাশে কিচ্ছু খেয়াল করেনি সে। ঠিক তখনই বাতাসের বেগটা আচমকা বেড়ে গিয়ে মেহনূরের মাথা থেকে আচঁলের শেষ ঘোমটাটুকু সরিয়ে দিলো। মেহনূর দ্রুত খসে পরা আচঁলটুকু মাথায় টানার জন্য হাত উঠাবে, ঠিক তখনই জানালার বাইরে দৃষ্টি গিয়ে ঘোমটার হাতদুটো থেমে যায় ওর। মাইক্রোর পাশাপাশি সমান তালে, সমান বেগে শান বাজিয়ে কালো জিপটা ছুটছে। জিপের ড্রাইভিং সিটে যে মানুষটা বসে আছে, তার ভাবগতিক দেখে মেহনূর সেদিকে স্থিরপানে তাকিয়ে আছে। মাহতিম জিপের গোল স্টিয়ারিংটা শক্তভাবে আকঁড়ে বেশ দাম্ভিকতার সাথে জিপ চালাচ্ছে। গাঢ় বেগুনির শার্টটা কাঠামো-দেহের খাপে-খাপে সেঁটে আছে ওর, কালো প্যান্টের সাথে সবসময়ের মতো বেল্ট বেধেঁছে মাহতিম। ড্রাইভিংয়ের জন্য শার্টের স্লিভদুটো মোটা করে গুটিয়ে রেখেছে সে। যতবার স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে ড্রাইভ করছে, ততবার হাতের বাম ঘড়িটা সূর্যের আলোতে রিফ্লেক্ট হয়ে মেহনূরের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। মাহতিমের চোখদুটো কালো সানগ্লাসের আড়ালে ঢেকে আছে আজ। তীক্ষ্ম-ধারালো দৃষ্টি দিয়ে ক্ষণেক্ষণে জিপের গতিবিধি ঠিক রাখছে এখন। মাহতিমের ওমন অবস্থা,বেশভূষা,তেজীয়মান চিন্তাচেতনা দেখে নিজেকে খুব তুচ্ছ ভাবছে মেহনূর। প্রথমত লোকটার সাথে কিছুই মিলেনা ওর। সে থেকেছে শহরের মধ্যে, মেহনূর বেড়েছে গ্রামের ভেতর। তার চিন্তা-চেতনা আধুনিক যূক্তিকেন্দ্রিক, অন্যদিকে মেহনূরের ভাবনা খুবই স্বল্প। মেহনূর এসব ভাবতে-ভাবতে মাথার ঘোমটাটা টেনে নিলো। জানালার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে কোলের দিকে নামিয়ে রাখলো। মনের ভেতর তীব্র জড়তার ঝড় চলছে, সেই অশান্ত ঝড়ে মন-মস্তিষ্ক বেকাবু কায়দায় যুদ্ধ করছে। মেহনূর সেইযে চুপটি মেরে গাড়িতে উঠেছিলো, এখনো সে অবস্থায় নিরব হয়ে আছে। মাহতিম বারবার ড্রাইভিংয়ের ফাঁকে মেহনূরের দিকে তাকাচ্ছে, ওর অবস্থা দেখে যতদূর বুঝতে পারলো, কোনো বিষয় নিয়ে মেহনূরের মধ্যে বিষাদের ছায়া নেমেছে। মাহতিম ওর দৃষ্টি আর্কষণ করার জন্য হর্ণ সিস্টেমে হাতের তালু চেপে মৃদ্যুভঙ্গিতে হর্ণ বাজালো। সিয়াম তখন কপাল কুঁচকে লুকিং মিররে তাকালে তখনই পেছনের ভিউ দেখে ড্রাইভ করা অবস্থায় হেসে দিলো। সেখান থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতেই মেহনূর ততক্ষণে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। সানগ্লাসের আড়ালে থাকা চোখদুটো দেখতে না পেলেও মাহতিমের মুখটার দিকে চুপ করে তাকিয়ে রইলো। মাহতিম ফাঁকে-ফাঁকে দু’দফা মেহনূরের দিকে তাকিয়ে শেষে জিপের স্পিড বাড়িয়ে সিয়ামের পাশাপাশি আসলো। সিয়াম ক্ষণিকের জন্য মাহতিমের দিকে তাকালে মাহতিম সেসময় ছোট্ট একটা ইশারা করলো। সেই ইশারাটা কি ছিলো সেটা মেহনূরের পক্ষে বোধগম্য ছিলো না, কিন্তু সময়ের পাল্লা ভারি না হতেই সিয়াম গাড়ির স্পিড এমনভাবে বাড়িয়ে দিলো, সবাই গাড়ির অমাত্রিক ঝাঁকুনি খেয়ে ঘুম থেকে চমকে উঠলো। তৌফ গাড়ির জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে হা করে ঘুমাচ্ছিলো, কিন্তু গাড়ির এমন আকস্মিক স্পিডে হড়বড় করে চমকে উঠে সিয়ামের দিকে ক্রুদ্ধদৃষ্টিতে তাকালো। কাঁচা ঘুম নষ্ট করার জন্য মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেছে তৌফের। এদিকে সিয়াম তৌফের দিকে ভেটকি মেরে তাকালে তৌফ আহত পশুর মতো ছটফট করে পা থেকে জুতা খুলতে থাকে। সিয়াম ওই দৃশ্য দেখে তাড়াতাড়ি ওর হাত ধরে আটকায়, একহাতে ড্রাইভ করতেই অন্যহাতে তৌফের সাথে হাড্ডাহাড্ডি অবস্থা চলতে থাকে। একটু আগে যারা ঘুম থেকে উঠেছিলো তারা আবার ঘুমে ঢুলে পরে। সবাই আবার ঘুমে নিমগ্ন হলে কেউ দুজনের অবস্থা দেখতে পায় না, মেহনূর ওমন পাগলের কারখানা দেখে একবার তৌফের দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার উজবুকের মতো সিয়ামের আকুতি-মিনতির দৃশ্য দেখছে, অথচ প্রতিবার কিছু বলতে যেয়ে থেমে যাচ্ছে মেহনূর। একপর্যায়ে তৌফের চোখ মেহনূরের দিকে চলে যায়, আর সাথে-সাথেই মেহনূরের দিকে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে হাত থেকে জুতা ছেড়ে দেয়। সিয়ামও মারাত্মক লজ্জা পেয়ে শান্তভঙ্গিতে গাড়ি চালাতে থাকে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য মনে-মনে তৌফকে দোষারোপ করে।
দুপুরের সূর্যটা মধ্যগগণ ছেড়ে পশ্চিমের দিকে হেলে পরেছে । তপ্তময় জৌলুস ছেড়ে ডুবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। চারিদিকের কোলাহল ছাপিয়ে কান জ্বালাময় হয়ে গিয়েছে। মেহনূর গাড়ির ভেতর এসির নিচে থাকলেও ব্যস্ত শহরের যানজট দেখে প্রচুর অবাক হচ্ছে। আকাশে দীপ্তমান সূর্যটা থাকতে-থাকতে মাইক্রোটা পাকা ধরেছে এখন। ঠিক মিনিট দশেকের মতো টান দিতেই গাড়িটা খোলা গেটের ভেতর দিয়ে ঢুকলো। গেটের কাছে দুজন দারোয়ান দেখতেই হঠাৎ মেহনূরের মনে হলো, গেটটা যেনো ওদের অপেক্ষাতে খোলা ছিলো। সিয়াম একদম বাড়ির সামনে এনে থামালে সবাই চটপট গাড়ি থেকে নেমে যায়। মাহদি সবার আগে নেমে একদৌড়ে মেহনূরের পাশ থেকে দরজা খুলে দেয়। মেহনূরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিজের ছোট হাতটার মধ্যে মেহনূরের হাতটা গুঁজে নেয়। মেহনূর আশ্চর্যভাবে চারিদিকে চোখ বুলাতে থাকে, পায়ের নিচে দামী পাথরের রাস্তা বাঁধানো, চোখের সামনে বিলাস-বহুল দোতলা ভবন। ভবনটা এতোই উঁচু আশেপাশের তিন-চারতলা বিল্ডিংয়ের মতো সমান। মেহনূর মাথাটা ডানে ঘুরাতেই সবুজ ঘাসের মাঠতুল্য জায়গা দেখতে পেলো। পুরো বাড়িটা যে গাছ দিয়ে বাউন্ডারি করা সেটা এমন সন্ধ্যের টাইমেও বোঝা যাচ্ছে। মেহনূরের অবাক করা চাহনি দেখে মাহদি মুচকি একটা হাসি দিয়ে ওকে ভেতরে নিয়ে যায়। মেহনূর একপা-একপা করে সামনের দিকে এগুচ্ছে, ওমনেই বুকের বক্ষপিন্ঞ্জরটা ধপাস-ধপাস করে লাফিয়ে উঠছে। মেহনূর প্রতিটি পদাঙ্কের দিকে দৃষ্টি রেখে মাথা নিচু করে সম্মুখ দরজার সামনে চলে আসে। ডানহাতটা মাহদির তত্ত্বাবধানে থাকলেও বাঁহাতটা কে যেনো চট করে ধরে, মেহনূর জোরে-জোরে শ্বাস নিতেই বামে তাকিয়ে মারজাকে দেখতে পায়। মারজা চোখে-মুখে তৃপ্তিজনক হাসি ফুটিয়ে মেহনূকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। মেহনূরকে স্বস্তি অনুভব করানোর জন্য নিজের সাথেই আগলে রাখে। মেহনূর বাইরে থেকে যতটা আশ্চর্য হয়েছিলো, বাড়িটার ভেতরটা দেখে তার চেয়ে বেশি পরিমাণে নির্বাক হয়ে যায়। নীতি, প্রীতি সবাই হাতমুখ ধুয়ে কাপড় পালটানোর জন্য যার যার রুমে চলে যায়। এদিকে মেহনূরকে নিয়ে মারজা তখন নিজের রুমে চলে আসে। নিজের বিছানায় মেহনূরকে বসিয়ে আলমারির দ্বার খুলতে ব্যস্ত হয়, মেহনূরের জন্য পছন্দসই শাড়ি ঠিক করতেই শান্তসুরে বলে,
– আমার একটাই ইচ্ছে ছিলো, আমার বউটা যেনো ছোট্ট হোক। এতোটাই ছোট হবে, ওকে আমি আদর-যত্ন করে বড় করবো, রঙ-বেরঙের শাড়ি পড়াবো, চুল বেধেঁ দিবো, খাওয়া থেকে থেকে শুরু করে সবকিছু শুধু আমি দেখবো। কিন্তু তোমাকে আনতে এতো দেরি করবে এটা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।
মারজা কথাটুকু শেষ করতেই আলমারি থেকে আকাশী রঙের শাড়ি বের করলো। সেটা হাতে নিতেই আলমারি বন্ধ করে মেহনূরের কাছে চলে আসলো। মেহনূর তখন চুপ করে শ্বাশুড়ির কথা শ্রবণ করছিলো। মারজা যে স্বচ্ছ মনের মানুষ এ সম্বন্ধে বড়মা বেশ আগেই বলে দিয়েছে। কিন্তু আজ আবারও মনে হচ্ছে মারজা সত্যিই ভালো মনের মহিলা। মেহনূরকে চুপ থাকতে দেখে মারজা ওর মাথায় হাত বুলাতে থাকলো, মেহনূরের শান্ত নয়নের দিকে দৃষ্টি রেখে হাসিখুশি মুখে বললো,
– আমি জানি মেহনূর, মাহতিমের সাথে থাকা নিয়ে তোমার মধ্যে কি কাজ করে। এই ভয়টা বিয়ের রাতেও ছিলো, এখনো সেটা আছে। আমি আমার ছেলেকে চিনি বলে সেদিন রাতে কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করিনি। আমি বাবামশাইকে বলে এসেছি, তিনিও আমার মতামত শুনে রাজি হয়েছেন। তুমি যতোদিন মন থেকে ভয় দূর না করছো, মন থেকে সবকিছু না চাচ্ছো, ততদিন পযর্ন্ত মাহতিম আর তুমি আলাদাই থাকবে। মাহতিম নিজেও এ সিদ্ধান্ত শুনে মত দিয়েছে, এজন্য তুমি যতদিন চাও, যেভাবে চাও এ বাড়িতে নিজের মতো করে থাকো। তোমাদের বিয়েটা হুট করে হলেও তোমাদের বোঝাপড়াটা হুট করে ঝুলিয়ে দিতে চাইনা, তোমরা দুজন আমার কাছেই থাকবে, আমার কাছেই থাকবে। আমি চাইনা তুমিও মাহতিমের মতো দূরে-দূরে থাকো। অন্তত তোমাকে নিয়ে এই বাড়িটায় একটু হলেও শান্তি পেতে চাই মেহনূর। তাই যতো কিছুই হোক, তুমি কোনো বিষয় নিয়ে মন খারাপ করো না।
মারজার কথা শুনে মেহনূর সসম্মানে চোখ নামিয়ে নিলো। দৃষ্টি নত করে নিজের সুপ্ত ইচ্ছাটা আনমনে বুঝিয়ে দিলো। মারজা আর কিছু না বলে মেহনূরকে হাতমুখ ধুতে পাঠিয়ে দিলো। মেহনূরের জন্য নির্দিষ্ট করা রুমটা দেখার জন্য চলে গেলে মেহনূর কিছুসময় পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। গায়ে আকাশী রঙের সুতির শাড়ি জড়িয়ে অনেকক্ষণ পর শান্তি পেলো মেহনূর। কিন্তু সমস্যা একটাই, ম্যাচিং ব্লাউজটার হাতা কনুই ছুঁই-ছুঁই। মেহনূর ব্যাপারটা নিয়ে তেমন মাথা না ঘামিয়ে মারজার ড্রেসিংটেবিলের সামনে গেলো। খোপায় বাধাঁ চুলগুলো খুলতেই হঠাৎ দরজা খুলে প্রবেশ করলো নীতি। নীতিকে দেখে মৃদ্যুভঙ্গিতে হেসে দিতেই নীতি সহজাত মিশ্র হাসিতে এগিয়ে আসলো। মেহনূরের চুলগুলো সুন্দর করে আঁচড়ে দিতেই হাসিমাখা সুরে বললো,
– ভাইয়ার রুম দেখেছো? তোমার রুম জানো ভাইয়া ইচ্ছে করে ছাদের রুমটা দিয়েছে। কত করে বললাম ছাদের রুমটা দিও না, আমার রুমটাই দিয়ে দাও। ভাইয়া আমার কথাই শুনলো না। আমার তো সামারের ভ্যাকেশান শেষের দিকে, ভাইয়া চলে গেলেই এদিকে আমার ফ্লাইটের টিকিট কাটতে হবে। শুধু-শুধু ওই রুমটা দেওয়ার মানে হয়?
মেহনূর সারাক্ষন চুপ থাকলেও মাহতিমের কথা শুনে মনে-মনে প্রশ্ন জাগলো। মাহতিমের বিষয়ে কিছু জানার জন্য নীতিকে তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন করলো,
– আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি? যদি কথাটা শুনে মনে কিছু না করেন, তাহলে বলবো, নাহলে বলবো না।
নীতি প্রশ্নের ধরন দেখেই বুঝে যায়, মেহনূর কি বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছে। মেহনূরের কথায় সভ্যসূচক হাসি দিয়ে সরল সুরে বলে,
– আমাকে ‘ আপনি ‘ করে বলতে হবেনা ভাবী। আমি যেহেতু আপন ভেবে ‘ তুমি ‘ করে বলছি, তুমিও আমাকে আপন ভেবে ‘ তুমি ‘ করে বলো। তুমি নিশ্চয়ই ভাইয়ার ব্যাপারে জানতে চাও, ভাইয়া কি করে, কোথায় যাবে এটা নিয়ে প্রশ্ন করতে চাচ্ছো। আসলে আমি হেল্পলেস, ভাইয়া আমাদের সবক’টা ভাইবোনকে বলে দিয়েছে তোমাকে এ বিষয়ে কিছুই না বলতে। কেনো না করেছে সেটাতো জানিনা, কিন্তু ভাইয়া সম্ভবত তোমার সাথে লুকোচুরি খেলতে চাচ্ছে।
মেহনূর ভালোভাবে বুঝে গেছে ওরা সবক’টা ভাই পাগল। ভাইয়ের কথায় উঠে-বসে, ভাইয়ের কথায় নাচে-গায়। এমতাবস্থায় কিছু জিজ্ঞেস করা যা, না করাও তা। মেহনূর নিরুত্তর মুখে সায় বুঝিয়ে দিলে নীতি ছোট্ট একটা চালাকি করে। মেহনূরের হাত ধরে বাড়ি ঘুরানোর নাম করে সোজা মাহতিমের রুমে আনে। মেহনূর রুমের প্রতিটা জিনিস দেখে আশ্চর্য হয়ে তাকালে শেষমেশ দুই দেয়ালের কোণাকুণি জায়গার দিকে হা করে তাকায় মেহনূর। দেয়ালের সাথে সেঁটে থাকা বস্তুটা দেখে সাথে-সাথে তর্জনী তুলে সেদিকে ইশারা করে নীতিকে আতঙ্কগ্রস্ত কন্ঠে প্রশ্ন করে,
– ওটা কি? ওটা এখানে কেনো? উনি, উনি, উনি —
মেহনূরের অস্থির মাখা মুখটা দেখে ফিক করে হেসে দেয় নীতি। সেই দেয়ালটার দিকে হাসিমাখা ভঙ্গিতে এগিয়ে যায় তখন, বস্তুটার দিকে তাকিয়ে থাকতেই বুক ফুলিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নেয়। শ্বাসটা টেনে নিতেই সেটা সশব্দে ছেড়ে দিতে থাকে। শ্বাসটা ছাড়তে-ছাড়তেই বস্তুটার দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় শান্ত কন্ঠে বলে,
– একটা মানুষের বন্দুকের টিপ যে কতটা ভয়ংকর, এটাই তার চাক্ষুষ প্রমাণ। তুমি ধীরে-ধীরে সব জানতে পারবে ভাবী। খুব শীঘ্রই তুমি তরতাজা বুলে’টের আওয়াজ শুনতে পাবে।
– ‘ চলবে ‘
#FABIYAH_MOMO
( নোটবার্তা : আমার দীর্ঘদিনের ফোনটা গতকাল পুরোপুরি ভাবে চুরমার হয়ে গিয়েছে। আজ যে এটুকু টাইপ করলাম, সেটা অমানুষিক যন্ত্রণা সহ্য করে টাইপ করেছি। আমার মরহুম মামার পুরোনো একটা ট্যাব ছিলো, সেটা নিয়ে একটানা টাইপ করে আজকের পর্ব দিতে পারছি। ট্যাবের স্ক্রিন তুলনামূলক ভাবে বড় থাকে বলে সেটা একটানা ধরে থাকা যায় না। হাত ঝিমঝিম করে নতুবা ব্যথায় অসাড় হয়ে যায়। নিশ্চয়ই আজ আমি গল্প দিতাম না, কিন্তু পরীক্ষার সময় যতো এগিয়ে আসছে ততই দূরত্বের জন্য সময় বেড়ে যাচ্ছে। অত্যন্ত নিরুপায় হয়েই দিয়েছি, আশা করবো প্রতিটা পাঠক অপেক্ষা করবে। ইনশাআল্লাহ্ ইনশাআল্লাহ্ ইনশাআল্লাহ্, ভালো কিছু দিয়েই আগামীর পথচলা হবে। আলহামদুলিল্লাহ। শুকরিয়া-ভালোবাসা-কৃতজ্ঞতা। )