#ফাবিয়াহ্_মমো .
বিকট সাইরেন বাজিয়ে এ্যাম্বুলেন্স চলছে। চারপাশটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। খালিচোখে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না, সুনশান রাস্তায় কোনো মানুষ নেই। গা ছমছম করা পরিবেশের ভেতর এ্যাম্বুলেন্সের শব্দটা ভয়ংকর লাগছে, অন্ধকার ফুঁড়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে গাড়িটা তোড়জোড় কায়দায় ছুটছে। চলন্ত গাড়ির ভেতর লেডি ডাক্তার বসা, সঙ্গে একজন নার্স কাজ করছে। লেডি ডাক্তারটা ছোট্ট কাঁচের শিশি থেকে লম্বা সিরিন্ঞ্জটা ভর্তি করলো। মুখে মাস্ক লাগানো অবস্থায় সামনের পুরুষটির দিকে তাকালো। পুরুষটার মুখটা এখন কাঠের মতো কঠিন দেখাচ্ছে, কানে ফোন লাগিয়ে থেমে-থেমে কাউকে ইন্সট্রাকশান দিচ্ছে। কিছু-কিছু কথা শুনে রাগে ঠোঁট শক্ত করছে, আবার কিছু কথা শুনে বাঁ ভ্রুঁটা উঁচু করে নাক ফুলাচ্ছে। লেডি ডাক্তারটা সিরিন্ঞ্জ ভরা শেষে শিশিটা আগের জায়গায় রেখে দিলো, মুখ ঘুরিয়ে পুরুষটির দিকে তাকাতেই হঠাৎ নার্সের দিকে খেয়াল হলো। মেয়েটা চোরা চোখে সেদিকে তাকিয়ে আছে। শান্ত-মুগ্ধ দৃষ্টিটা নরমভাবে চোখ ঘুরাচ্ছে। লেডি নার্সটা মেয়েটার অবস্থা দেখে ক্ষুদ্ধ হলো, মনে-মনে কঠিন কিছু আওড়ালে শেষমেশ পুরুষটির উদ্দেশ্যে বললো,
– আনসারী, ফোনটা রাখো। তুমিযে আমার আন্ডারে আছো এটা ভুলো না। দেখি হাতটা দাও।
জরুরী কথায় বাধা পেয়ে চোখ ঘুরালো মাহতিম। অন্য কোনো ডাক্তার হলে সে সত্যিই ক্ষেপে উঠতো! কিন্তু এ দফায় সে ক্ষেপলো না। এরই মধ্যে লেডি ডাক্তারটা আবার ফোন রাখতে ইশারা করলো। মাহতিম শান্ত মুখে ওপাশের ব্যক্তিকে কিছু বলে কল কেটে দিলো, ফোনটা রেখে তার বাঁহাতটা চুপচাপ ডাক্তারের দিকে এগিয়ে দিলো। ডাক্তারটা কয়েক সেকেন্ড ইনজেকশনটা চেক করে সূক্ষ্ম সূঁচটা জায়গামতো ঢুকালো। মেডিসিন পুশ করতে-করতে বললো,
– তুমি আর ভালো হলে না। যেই রিস্কি কাজ নিয়ে পরে আছো, আরেকটু হলে ওটিতে ঢুকতে হতো। তোমার কি ওয়াইফের জন্য একটুও টেনশন হয় না? বুলেট কোথায় টাচ লেগেছে জানো?
পুশ করা শেষে জায়গায় তুলা চাপলো মাহতিম। স্বাভাবিক মুখভঙ্গিতে দৃঢ়তার সাথে বললো,
– লাগলেও কিছু করার থাকতো না। হায়াতের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ উপরওয়ালার কাছে। এদিকে আমার-আপনার কোনো হাত নেই। আজ বেঁচেছি, কাল মরবো এটাই নিয়ম।
মাহতিমের কাটকাট কথা শুনে নিশ্বাস ছাড়লো ডাক্তার। মাহতিমের সাথে কোনোদিনই যুক্তি দেখিয়ে পারেন না। সরল-সোজা কথাটা খুবই জঘন্যভাবে প্যাঁচাতে জানে মাহতিম, এমন-এমন যুক্তি উপস্থাপন করে, তখন বাধ্য হয়ে সামনের ব্যক্তিকে মুখ থুবড়ে পরতে হয়। মাহতিম কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিরুত্তাপ কন্ঠে বললো,
– রুমানা ম্যাম, আমার ওয়াইফটা খুবই সেন্সিটিভ। আশাকরি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।
ইঙ্গিতপূর্ণ কথাটা কেউ না বুঝলেও রুমানা ঠিকই বুঝলো। নার্সের বোকা চাহনি উপেক্ষা করে শান্ত গলায় বললো,
– না বুঝার উপায় আছে? তোমার ওয়াইফ যদি সেন্সলেস হয়, তাহলে আসল কালপ্রিটটা তুমি নিজেই। শার্ট খোলো, যদি স্টিচ লাগে তাহলে এখুনি এ্যাম্বুলেন্স ঘুরাতে বলবে।
ঢোক গিললো নার্সটা। শার্ট খোলার কথা শুনতেই বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। কান গরম লাগছে। লজ্জায় তাকাতে চাইছে না সে, তবুও মনের উপর তাল হারিয়ে চোখ তুললো নার্স। মাহতিম আজ্ঞামতো শার্টের টপ বাটনে হাত দিয়েছে। মুখের থেকে চোখ সরিয়ে মৃদ্যু হেসে দুহাতে বোতাম খুলতে-খুলতে বললো,
– আই এ্যাসোর ইউ ম্যাম, আমার স্টিচ লাগবে না।
রুমানা সার্জিক্যাল মাস্কের আড়ালে ক্ষীণ রাগ দেখিয়ে বললো,
– তুমি নিশ্চয়ই ডাক্তার নও আনসারী! আমাকে দেখতে দাও। যদি স্টিচ লাগার মতো সিচুয়েশন হয়, আমি পিছপা হবো না।
শার্ট খুলা পর ভালোমতো বুকের ডানপাশটা দেখতে লাগলো। হাতে সার্জিক্যাল গ্লাভস পরে একটা কাঁচি নিলো রুমানা, কাঁচির মুখে তুলা নিয়ে ধীরে-ধীরে ক্ষতটা পরিষ্কার করলো। বুলেটপ্রুফ ভেস্টটা যতোই মজবুত হোক, গুলিটা কাছ থেকে করায় ভেস্ট ফুঁটো হয়ে চামড়ায় এসে ঠেকেছে। ভাগ্যিস সেটা চামড়া গলিয়ে বুকে ঢুকেনি। রুমানা দক্ষ হাতে ক্ষতর কাছে ঔষুধ ছুঁইয়ে দিলো, পরিশেষে তুলা দিয়ে ক্ষতর মুখটা বন্ধ করলো। সেবা-শূশ্রুষার পর্ব শেষ হলে সহকারীর দেওয়া খয়েরী শার্ট পরলো মাহতিম। টিমটিমে হলদে বাতির নিচে স্লিভদুটো দ্রুত ভাঁজ করতে থাকলো। নার্স মেয়েটা আড়চোখে মাহতিমের দিকে তাকাচ্ছিলো। রুমানা চল্লিশোর্ধ্ব হলেও তার মেয়েলি সত্ত্বা নার্স মেয়েটার অবস্থা বুঝতে পারছে। ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে ঠান্ডা মানুষ হিসেবে মাহতিমকে চেনে সে। পুরো ব্যক্তিত্বের ভেতর আচারনিষ্ঠ ব্যাপারটা প্রকাশ পায়। মেপে-মেপে কথা বলার গুণটা দেখার মতো। আবার সময়মতো যোগ্য কথার পিঠে যুক্তি ছুঁড়তে ভুলে না। মাহতিম সবার কাছে শক্ত মেজাজের মানুষ, যার সাথে কাজ ছাড়া অন্য কথা যায় না। রুমানার প্রতিটা কথা চুপচাপ শোনার পেছনে মাহতিমের বাবা দায়ী। মাহতিমের বাবা রুমানার স্বামীর বন্ধুতুল্য ছিলো। সেই পুরোনো সম্পর্কের জেরে রুমানা আজ মাহতিমকে চেনে। কিন্তু তাজ্জবের ব্যাপার হলো, মাহতিমের বাবার সাথে মাহতিমের স্বভাব কিছুটা হলেও আলাদা। যেখানে মাহতিমের বাবা সবার সাথে মিলেমিশে চলতো, সেখানে মাহতিম তার ডিপার্টমেন্টের কাছে শক্ত। বাপ-ছেলের এমন অদ্ভুত নজির দেখে প্রায়ই অবাক হয় রুমানা। এ্যাম্বুলেন্সটা ঝুপড়ি অন্ধকারের কাছে থেমে গেলো। সাইরেনটা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। মাহতিম ফোনটা পকেটে পুড়ে দরজাটা ধাক্কা দিয়ে খুললো, এক লাফ দিয়ে নিচে নামতেই মুখ ঘুরিয়ে পিছু ফিরলো। রুমানার দিকে কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়ে যেতে লাগলো মাহতিম। হঠাৎ পা থামিয়ে পিছু ঘুরলো সে। ডান কপালের কাছে দুই আঙ্গুল ছুঁয়ে ‘ স্যালুট ‘ ইশারা করলো। মাহতিমের কাণ্ড দেখে হেসে ফেললো রুমানা। গাট্টা মারা ভঙ্গিতে হাত উঠিয়ে হাসতে-হাসতে বললো,
– বাবার মতো ফাজলামি করবে না আনসারী।
বেশ দূর থেকে সদ্য পড়া রেইনকোটের ব্যক্তিটা উত্তর দিলো,
– আপনাকে সম্মান জানিয়েছি ম্যাম। থ্যাংকিউ ফর দ্যা লিফ্ট।
.
বৃষ্টিতে কাঁচা রাস্তাটা কর্দমাক্ত। জায়গায়-জায়গায় গর্ত ভরে পানি জমেছে। অন্ধকারটা নিকষ বলে সাবধানে হাঁটতে হচ্ছে। ঔষুধের কড়া ডোজে মাথাটা ভার-ভার, বুকের ডানপাশটা এখনো বেশ ব্যথা। এই ব্যথার জন্য ডানহাতটা বেশি নাড়াতে পারছেনা। রেইনকোটের হুডিটা চোখ পযর্ন্ত টেনে নিলো মাহতিম। গায়ে এখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টির প্রলেপ লাগছে, বৃষ্টিটা কেনো যে থামছেনা বুঝতে পারছেনা সে। রাস্তা থেকে চোখ তুলে সামনে তাকালো, রেসোর্টের মেইন গেটটা চোখ সওয়া আধারে চিনতে পারলো। ধীরগতিতে এগিয়ে গিয়ে দরজায় দুহাত রাখলো সে, আলতো করে ধাক্কা দিতেই দ্বারদুটো খুলে যেতে থাকলো। ভেতরে পা দিতেই মাহতিম চর্তুদিকে অন্ধকার আবিষ্কার করলো। সবগুলো কটেজের আলো নিভে আছে, কোথাও কোনো আলো নেই। কেবল বিদ্যূৎপৃষ্ঠের আলোয় আকাশ চিড়ে যাচ্ছে, সকালের মতো আলো বিকিয়ে আবার অন্ধকার হচ্ছে। ওইটুকু আলোর মাঝে কটেজের দিকটা খেয়াল করলো সে, কোনটা মেহনূরের কটেজ হতে পারে সেটা বুঝা মুশকিল। সবাই এখন গভীর ঘুমে ডুবে আছে, কাউকে ডেকে তুলাটা শোভা পায় না। মাহতিম দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই বাতাসের জোরদার হুঙ্কার উঠলো। শোঁ শোঁ করে তোড়জোড় হাওয়া বইলে হঠাৎ কটেজের কাছে শব্দ হতে লাগলো। রুমের জানালাগুলো বাতাসের ঝাপটায় দাপাদাপি করছে। মাহতিম দ্রুত চোখের সামনে হাত রেখে ঝাপটা বাঁচিয়ে দেখলো। ওমনেই দুই নাম্বার কটেজটা দেখে নিশ্চিত হলো সে। বাতাসে জানালার কপাট খুলতেই জলন্ত মোমের শিখাটা দেখতে পেলো মাহতিম। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আলোর শিখাটা দেখলো। ঠোঁটের কোণে চিরচেনা হাসিটা ফুটে উঠলে সেদিক বরাবর পা বাড়ালো। কটেজের সিড়িতে পা ফেলেই দরজার দিকে গেলো সে, গা থেকে রেইনকোট খুলে নবে হাত দিলো। খুবই নৈপুণ্যের সাথে দরজা খুললো মাহতিম, একটুও শব্দ না করে চটপট ভেতরে ঢুকে গেলো। দরজাটা চাপিয়ে দিতেই টেবিলে চোখ পরলো। লম্বা মোমের মাথায় আলোর শিখা জ্বলছে, বাতাসের জন্য দপদপ করে হলদে শিখাটা লাফাচ্ছে। পুরো ঘরটার ভেতর সম্মোহনী পরিবেশ। কাউকে বশ করা জন্য মোক্ষম সুযোগ। মাহতিম চোখ তুলে বিছানার দিকে তাকালো। সবসময়ের মতো লম্বা দীঘল চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। বিছানা ডেঙিয়ে ফ্লোরের উপর স্তুপ হয়ে আছে। মোমের হলদে আলোয় একপলক দেখার জন্য মন ছটফট করছিলো। ঘুমন্ত মুখের পবিত্রতা দেখার জন্য, ছোঁয়ার জন্য মাহতিম যেন ব্যকুল। ডানকাত হয়ে শুয়ে আছে মেহনূর। তারই দেওয়া গাঢ় নীলের শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। মাহতিম খুব আস্তে করে পা এগিয়ে চললো, বিছানার কাছে এসে চুপচাপ বসলো। মেহনূরের মুখটা চুলের নিচে লুকিয়ে আছে, কালো-কালো চুলের নিচে উজ্জ্বল চামড়াটা লুকোচুরি খেলছে। মাহতিম তর্জনী দিয়ে সবগুলো চুল কানের পেছনে গুঁজে দিলো। মুখ নামিয়ে গালের উপর দু’ঠোঁট ছেড়ে দিলো, চোখ বন্ধ করলো মাহতিম। বাঁহাত এগিয়ে মেহনূরের গলা জড়িয়ে ধরলো, গালের উপর ঠোঁটযুগলের চাপ বসিয়ে চুমু খেলো সে। উষ্ণ স্পর্শের কাছে তন্দ্রা কাটলে চোখ খুললো মেহনূর।সেই মাদকপূর্ণ পারফিউমের সুগন্ধটা আষ্টেপৃষ্টে ধরেছে। বুক ফুলিয়ে লম্বা নিশ্বাস নিলো মেহনূর, চোখ বন্ধ করে মাহতিমের উপস্থিতিটা গাঢ় বুঝলো। নিশ্বাসটা ছেড়ে চোখ খুলে মাহতিমের দিকে ফিরলো। নিমিষেই দুটো মুখ দুজনের পানে থামলো। জানালা থেকে আগত বাতাসের মোমের শিখাটা নড়ছে, রুমের মধ্যে সেটার জন্য আলো ঘুরাঘুরি করছে। কিছুক্ষণ দুজনের ভেতর মৌনতার সময় চললো। মেহনূর সামনে থাকা মুখটার দিকে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে তাকালো। কপালে সাদা ব্যান্ডেজ করা। ঠোঁটের ডান কোণাটা টকটকে লাল হয়ে আছে। ঠোঁট থেকে চোখ সরিয়ে চোখের দিকে তাকালো, মাহতিমের গভীর চোখদুটোর মাঝে দৃষ্টি মিলিয়ে দিলো। জীবনের সকল অধ্যায় আজ বন্ধ হয়ে শুধু একটা অধ্যায় খুলে রইলো। এই একটা অধ্যায় ছাড়া আর কোনো হিসাব নেই মেহনূরের। বাইরে থেকে চিরচেনা মানুষগুলো অধ:মের মতো পরিচয় দিয়েছে। যাদের ছায়াতলে বীজ থেকে বৃক্ষ হয়েছে, আজ তারা অমা:নুষ! শানাজের মুখ থেকে সব শোনার পর একটুও কাঁদেনি মেহনূর। কেনো জানি ভেতরটা শুষ্ক-বিরান লাগছিলো। জনশূন্য চরের মতো খালি-খালি ঠেকছিলো। কথাগুলো শোনার পর একটা স্বাভাবিক মানুষের মতো চিৎকার করে কাঁদা উচিত, হাউহাউ করে কাঁদাটাও ব্যতিক্রম কিছু হতো না, আজ মেহনূর একফোঁটাও চোখের পানি ফেলতে পারেনি। যেখানে শানাজ বলতে-বলতেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেছিলো, সেখানে আজ শান্ত ছিলো সে। কথাটার ভয়াবহতা তাকে নির্বাক বানিয়ে দিয়েছে, তাকে বিমূঢ় অবস্থায় বাজেভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছে। সেখান থেকে উত্তরণের পথ আজ দিশেহারা। মেহনূরকে অনেকক্ষণ যাবৎ চুপ দেখে মাহতিম নিজ থেকে বলতে নিলো, ঠিক তখনই ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে বাঁধ সাধলো মেহনূর। ঠোঁট থেকে আঙুল সরিয়ে বালিশ থেকে মাথা তুললো। কিছুটা উঁচু হয়ে মাহতিমের দু’চোখের পাতায়, দুটো গালে, কপালের ব্যান্ডেজের উপর ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। শান্ত মনে প্রশান্তির ছাপ পেয়ে চোখ বুজলো মাহতিম, ঠান্ডা-ঠান্ডা মূহুর্তে উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে মনটা বড় কাঙাল হয়ে যাচ্ছে। এই গভীর রাতের আদরগুলো সবটুকু ক্লান্তি শুষে নিচ্ছে, ব্যথায় ক্লিষ্ট হওয়া দেহটা ভারমুক্ত হচ্ছে। বালিশে মাথা রাখলো মেহনূর, মাহতিমও চোখ খুলে তাকালো। মাহতিমের দিকে সরল দৃষ্টি রেখে আকুল কন্ঠে বললো,
– আপনার বুকটায় ঘুমাতে চাইলে রাতটুকুর জন্য দিবেন?
মাহতিম নিঃশব্দে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। মেহনূরের উপর থেকে সরে বিছানা থেকে নামলো। পকেট থেকে মোবাইল, ঘড়ি, ব্লুটুথ ডিভাইস বের করে টেবিলো রাখলো মাহতিম। এদিকে হাত খোপা পাকাতে-পাকাতে বিছানা থেকে নামলো মেহনূর। দরজাটা ঠিক মতো লক করা জন্য সেদিকে এগিয়ে গেলো। নবের মধ্যে বাটন টিপে দরজা লক করলো। জানালার কাছে গিয়ে পর্দাটা সুন্দর করে টেনে দিলো। বিছানার দিকে ফিরে আসতেই কপাল কুঁচকালো মেহনূর। মাহতিমের উন্মুক্ত বুকটার দিকে ব্যান্ডেজ দেখে উদ্বিগ্ন চোখে তাকালো। মাহতিম চাহনিটা বুঝতে পেরে দু’হাত দুপাশে মেলে দিলো, মেহনূরকে কাছে আসার ইঙ্গিত দিলে ধীরে-ধীরে বিছানার কাছে আসলো মেহনূর। মৌন অবস্থা ধার্য রেখে মাহতিমের পাশে শুলো, কিন্তু বুকের দিকে এগোনোর সাহস পেলো না। মাহতিম মেহনূরের অপ্রস্তুত মুখটা দেখে অভয় দিয়ে বললো,
– ডানপাশটা ইন্ঞ্জুর্ড, বাঁ-পাশটা এখনো ফিট। আসো মেহনূর, ভয় পেও না।
মেহনূর আবার ব্যান্ডেজের দিকে তাকালো, বড় একটা ঢোক গিলে বললো,
– আপনার ঘুম প্রয়োজন। আজকে থাকুক।
মাহতিম তাচ্ছিল্যের সাথে বাঁ ভ্রুঁ উঁচু করলো। সেই মেজাজেই বললো,
– তুমি আমাকে বাধ্য করার চেষ্টা করছো। আমার রাগ তুলে দিও না। আসতে বলেছি! কোনো কথা না বলে চলে এসো।
কন্ঠের দাপট দেখে মিইয়ে যাওয়া বেলুনের মতো চলে আসলো মেহনূর। উন্মুক্ত বুকের বাঁপাশটায় মুখ লুকিয়ে চোখ বন্ধ করলো। সাথে-সাথে বলপূর্ণ হাতদুটো দু’দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো, ছোট্ট ছানার মতো গুটিশুটি মেয়েটাকে ঢেকে দিলো মাহতিম। তার মাথায় আঙ্গুল বুলিয়ে-বুলিয়ে ঘুমানোর জন্য আরাম করে দিলো। বৃষ্টির শব্দ কমে এসেছে, বাইরে এখন প্রচুর ঠান্ডা। সেই ঠান্ডার হাওয়াটা ফাঁকফোঁকর পেয়ে রুমের ভেতর ঢুকছে। রুমের ঠান্ডা পরিবেশে চোখ জুড়ানো ঘুম আসছে। মাহতিম ঘুমের জন্য চোখ বুজতেই হঠাৎ বুকের কাছে কান্নার দমকটা টের পেলো! তাড়াতাড়ি মুখটা নিজের দিকে তুলতেই প্রশ্ন করলো সে,
– তুমি কাঁদছো?
মেহনূরের চোখে স্পষ্ট কান্নার আভাস! মাহতিম কিছু বলার পূর্বেই মেহনূর অশ্রুমাথা চোখে ধরা গলায় বললো,
– উনার কবরটা কোথায় দেওয়া হবে?
বাকরুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মাহতিম। আজ উত্তরের ঝুলিটা আসলেই খালি।
চলমান .
মন বাড়িয়ে ছুঁই গল্পের লিংক kobitor (all part)
#FABIYAH_MOMO