More than love পর্ব ১৪
মেঘলা_আহমেদ
.
-” ডে/ল্টা স্লিপিং পট, যাকে হাই বার্নে/সন স্লিপিং চেম্বার ও বলা হয়। এখানে একজন মানুষকে হাই বার্নে/সনে রাখা হয়। যদি তুমি এই পটে ঘুমিয়ে ৪০ বছর ও কা/টিয়ে দাও তাতেও তোমার বয়সের কোন তফাত ঘটবে না। এটা আলফা প্ল্যানেট এর বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত অতি আধুনিক একটি চেম্বার।
সবাই চুপচাপ শুধু রুহির কথা শুনছে। আশ্চর্য হচ্ছে, সঙ্গে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে বিজ্ঞানের এসব আবিষ্কার নিয়ে। সবাই থম মে রে গেল। নীরবতা ভঙ্গ করে রোদ্দুর বলল-
-” রুহি একটা কথা জিজ্ঞেস করি? মাইন্ড করো না।
রুহি চোখ তুলে রোদ্দুরের দিকে তাকায়। মাথা কাত করে সম্মতি দিয়ে বলে-
-” বলুন ভাইয়া।
রোদ্দুর নড়েচড়ে বসে। গলা ঝাড়ি দিয়ে বলে-
-” আচ্ছা তুমি কি তোমার বাবার সব কথা বিশ্বাস করো?
রুহি চোখ বড় বড় করে রোদ্দুরের দিকে তাকায়। অবাক হয়ে বলে-
-” এ কেমন কথা? সন্তান তো তার বাবাকে বিশ্বাস করবেই। আপনি এটা জিজ্ঞেস করলেন কেন?
রুহির কথায় রোদ্দুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলা শুরু করে –
-” দেখো তোমরা আমি যতদূর তোমাদের কাছ থেকেই আজ জানলাম। ডে/ল্টা স্লিপিং পট তো আলফা গ্রহেই আবিষ্কার হয়েছে তাই না? তাহলে রোজার মা আর তোমার মা যদি ডে/ল্টা স্লিপিং পটে থাকে। তাহলে একটা প্রশ্ন কি মাথায় আসছে না। তাদের কে ঐ হাই বা/র্নেসন চেম্বারে রেখেছে? তারা ঐ পটে কি করে গেল? তোমার বাবা কেন ঐ ঘরে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে। যেখানে স্লিপিং পট গুলো আছে। একবার ও কি জানতে ইচ্ছে করছে না?
রুহি নখ কামড়ে বলে –
-” আপনার কি মনে হচ্ছে?
রোদ্দুর হাসে। আফসোস করে বলে-
-” তোমার বাবা করছে এসব। আমার আফসোস হচ্ছে তোমার জন্য। এ বিশ্বাস করে বাবার কথায় পৃথিবীতে আসলে মা কে ফিরে পাবে বলে। কিন্তু হলো কি শেষমেষ? তোমার বাবা শুধু প্রজেক্ট এর আইডিয়া নেয়ার জন্য বা সিস্টেম নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে? যাতে তোমার মা কে খুঁজতে পারো। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে রোজার মা আর তোমার মা একসাথেই আছে। তাদের কোন ডে/ল্টা স্লিপিং পটে রাখা হয়েছে।
রুহি গ/র্জে ওঠে। আ/হত বাঘী/নীর ন্যায় তাকিয়ে বলে-
-” আপনি এসব কি বলছেন। বাবা এমন কেন করবে? আমার বাবা আমাকে খুব ভালোবাসে। আপনার এমন মনে হওয়ার কারন কি? সাইমন উনি এসব কি বলছে। থামতে বলো ওনাকে। আমি আর শুনতে পারছি না। এই পৃথিবীর মানুষের সাথে সব শেয়ার করাই ভুল হয়েছে। এদের শে ষ করে দেবো আমি! আমার লে জার গা/ন কোথায়?
সাইমন দুই হাতে রুহিকে পেছন থেকে ধরে। ওকে খুব বিধ্বস্ত লাগছে। সে রুহিকে শক্ত করে ধরে বলে-
-” শান্ত হও প্লিজ। তুমি এমন করছো কেন। তুমি শুধু ওদের মা রতে পারবে না।
রোদ রোজার দিকে একপল তাকায়। এরপর আবার রুহির দিকে তাকিয়ে বলে-
-” রুহি আমি যা বলছি তা সত্যি হয়তো। নয়তো তোমার আর রোজার মা কে ডে/ল্টা স্লিপিং পটে কে রাখবে। নিশ্চয়ই আলফা গ্রহের কেউ। পৃথিবীর কারো কাছে কি ঐ ডেল্টা স্লিপিং পট আছে?
রোজা এবার মুখ খুলে বলে –
-” আপনি এতোটা সিউর, কি করে হচ্ছেন রোদ ভাই? যে ওর বাবাই এই কাজ করেছে। কোন ক্লু দিন। আলফা গ্রহে তো আরো মানুষ আছে। তারাও এ কাজ করতে পারে।
সাইমন রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে বলে-
-” ভাই আপনি ঠিক বলছেন। রুহির কাছের আংটি টা রোজার মায়ের ছিল! তাহলে সেটা রুহির বাবা কোথায় পেল? তার কাছেই আছে দুই ইয়াসমিন।
রুহি আঁতকে উঠলো ওর কথায়। সাইমনের দিকে ঘোলা চোখে তাকালো। সাইমন কে ধা ক্কা দিয়ে বলল-
-” তোমাকে এত ভালোবাসি এই জন্য? আমার বাবার নামে বলতে বুক কা পলো না? চলে যাও সবাই এখান থেকে। একা থাকতে দাও আমাকে। চলে যাও।
রুহি দুই হাতে নিজের চুল আঁক/ড়ে ধরে। মাথা নিচের দিকে। রোজা ওর কাছে যেতে চাইলে রোদ্দুর হাত ধরে থামিয়ে দেয়। রোজার হাত ধরে সে উঠে দাঁড়ায়। সাইমন কে চোখের ইশারায় যেতে বলে। তারপর শান্ত গলায় বলে-
-” দেখো তুমি ভাবো। আমরা তোমার রুমেই আছি। তোমার বাবা নিশ্চয়ই সতর্ক হয়ে গেছে। তুমি তার আদেশ অমান্য করে ঐ ঘরে গিয়েছো। তাই তোমাদের সে মে রেও ফেলতে পারে। ঠান্ডা মাথায় ভেবে, উপরে এসো। সবাই মিলে আন্টিদের খোঁজার প্ল্যান করবো। চলো রোজা আর সাইমন।
রোদ্দুর, রোজা আর সাইমন ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রোদ্দুর পিছু ফিরে বলে-
-” ভালো করে ভাবো। তোমার বোঝায় কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। শুভকামনা।
____
উপরে উঠে রোদ্দুর রোজার থেকে সব শোনে। কি করে রোজার মা উধাও হয়েছিল। কি করে সে ঐ ল্যাবে গেল। অজ্ঞান হয়ে গেল। সাইমন ও তার জানা বিস্তারিত সব জানালো রোদ্দুর কে। রোদ্দুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব শুনে। এখন রুপির সিদ্ধান্তই শেষ ভরসা।
রুহি কতক্ষন ঝিম মে রে বসে থাকলো। সে কিছুই ভাবতে পারছেনা। তার বাবাকে কি করে অবিশ্বাস করবে? যে এতবছর ধরে আগলে বুকে লালন করলো। যে কি না তার স্ত্রী কে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসে। সে এতবছর নিজের স্ত্রী কে লুকিয়ে রাখবে এটা কেউ বিশ্বাস করবে? সে এত বছর নিজের মেয়েকে পরিকল্পনা করে সার্থের জন্য দূরে রাখবে। এ কি বিশ্বাস যোগ্য। কিন্তু সমস্ত প্রমান তাই বলছে। নাহলে ঐ ঘরে যেতে তার বাবা নিষেধ করেছিল। তার নাকি মৃ/ত্যু হবে সেখানে গেলে। কিন্তু দুইবার গিয়েও সে অক্ষত। আর ঐ আংটি ওটা তো রোজার মায়ের। রোজার মায়ের আংটি তো তার সাথেই ভ্যানিশ হয়ে গেছে। তাহলে বাবা এটা কি করে পেলো? আমার তো কিছু মাথায় আসছেনা। কতক্ষন চুপ করে থাকতেই সব যেন পরিষ্কার হয়ে গেল। রুহি তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ায়। ল্যাব থেকে উপরে ওঠে তড়িঘড়ি করে। সবার দৃষ্টি এতক্ষন সেই সিক্রেট দরজার দিকেই ছিল। রুহি উঠে দম নেয়। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে-
-” রোদ ভাই, আমি বুঝতে পেরেছি। এখানে বাবার কোন চাল। কিন্তু আমি তা একা খুঁজে বের করতে পারবোনা। তাই নিচে আসুন প্লিজ।
সবাই মিলে আবারো নিচে নামে। রোদ চেয়ারে বসে বলে-
-” আমাদের সর্বপ্রথম ঐ ঘরে যেতে হবে। দেখতে হবে আন্টি আসলেই ওখানে আছে কি না? ওখানে যা আছে তা তোমাকে বোকা বানানোর জন্য করা হতে পারে। কিন্তু কেউ স্পর্শ করবেনা আর ঐ তীব্র আলোর কাছে যাবেনা।
তারা সবাই মিলে ঠিক করে তারা ওখানে যাবে। কিন্তু কিছু স্পর্শ করবেনা। প্ল্যানমাফিক তারা ওগোতে থাকে। রোদ্দুর নিঃশব্দে দরজা খোলে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে দুটি ডেল্টা স্লিপিং পট। রোদ্দুর নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে স্লিপিং পটের ভেতরে দেখে। গ্লাসের মধ্যে স্পষ্ট ইয়াসমিন কে দেখতে পায়। দুটোতেই সেইম মানুষ। কিন্তু রোদ্দুরের এগুলো আসল মনে হচ্ছে না। সে নিঃশ্বাস বন্ধ করে টাচ করে স্লিপিং পটের গায়ে। হঠাৎ করেই দুটো পট উধাও হয়ে যায়। রোদ্দুর দ্রুত সবাইকে ইশারা করে নিজেও বের হয় ওখান থেকে। জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে-
-” ওগুলো তো গায়েব হয়ে গেলো।
রুহি বিরক্ত হয়ে বলে-
-” হ্যা গত দুইবার ও এভাবেই গায়েব হয়েছিল। কিন্তু যারা স্পর্শ করেছিল তারা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।
রোজা মাথা ধরে বলে –
-” কিন্তু মা গেল কোথায়?
রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে-
-” আমার মনে হচ্ছে না এই স্লিপিং পট গুলো এখানে আছে। এগুলো ইমেজ ছিলো। যা দেখতে একদম আসল। নাহলে দেখোনি ধরতেই কেমন করে গায়েব হলো!
#চলবে?
(নোট:- এতদিন অসুস্থতা, আর কাজ নিয়ে ছিলাম। গল্প লেখার সময় হয়নি। দুঃখিত আমি। এখন থেকে নিয়মিত দেয়ার চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ)