More than love পর্ব ১৫
মেঘলা_আহমেদ
.
চারদিকে পিনপতন নীরবতা। সবাই তাকিয়ে আছে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে। সেখানে একটি ম্যাসেজ এসেছে। ম্যাসেজ টি সাংকেতিক ভাষায়। যা রুহি ছাড়া কারো বোধগম্য নয়। রুহি এগিয়ে গেলো। ম্যাসেজ টা ওপেন করলো সে। ঠোঁট নাড়িয়ে বার কয়েক পড়ে নিল।
মুখে দুই হাত দিয়ে ছিটকে সরে এলো পেছনে। তার বড় বড় চোখজোড়া এখনো কম্পিউটার স্ক্রিনেই নিবদ্ধ। হতবাক হয়ে সে শুধু লেখাটাই বারবার পড়ছে। একটু আগে-
রোদ্দুর রুহিকে জিজ্ঞেস করে-
-” আচ্ছা তোমার বাবা যে ওখনে যেতে না করেছে। জিজ্ঞেস করেছিলে কেন যাবেনা?
রুহি দুই পাশে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোঝায়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে-
-” ঐ ঘরে গেলে আমার জীবনের ঝুঁ)কি আছে। তাই যেতে না করেছে। কিন্তু!
রোদ্দুর রুহিকে মাঝপথে থামিয়ে বলে-
-” দেখলে ঐ ঘরে কি আছে। আমার ধারনা সব কিছুর মাষ্টারমাইন্ড তোমার বাবা। সেই দুই ইয়াসমিন কে আটকে রেখেছে। আর তোমাকে দিয়ে তার কার্য হাসিল করতে চাইছে। সে যদি ইউনিভার্স ভ্রমনের সিস্টেম জেনে নিতে পারে তাহলে তোমাকেও হয়তো আটকে রাখবে তোমার মায়ের মতো। রুহি এবার তোমাকেই কিছু একটা করতে হবে।
রোজা বিরক্তিতে “চ” শব্দ করে বলে-
-” আচ্ছা রোদ ভাই! আপনি ওকে কি করতে বলছেন। ও কিই বা করবে?
রোদ্দুর চোখ পাকিয়ে রোজার দিকে তাকায়। ভয়ে চুপসে যায় রোজা। রোদ্দুর বাজ/খাঁই গলায় বলে-
-” নেক্সট টাইম আর ভাই ডাকবে না। কদিন পর তোমার জামাই হতে যাচ্ছি। আর এখনো ভাই ভাই করছো। বে/য়াদব মেয়ে!
রোজা চোখ বড় বড় করে বলে-
-” এই আপনি আমাকে বেয়াদব বলছেন! তো একটা মেয়েকে প্রথম দেখায় ধা/ক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া আবার অপমান করা। এটা কোন ধরনের আদব। আমি শুধু সব সহ্য করছি মুখ বুজে। এই আমিই আপনাকে বিয়ে করবো এটাও আপনার ভাগ্য। নাহলে কোন মেয়ে পাত্তাও দেবেনা। কখনো বউ জুটবে না।
রোদ্দুর ধমক দিয়ে বলে-
-” চুপ করো্। রুহি ওকে থামাও। নাহলে আমি কিন্তু..
রুহি এদের কান্ড দেখে মুচকি হেসে সাইমনের দিকে তাকায়। সাইমন তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। রুহি চোখ ফিরিয়ে নেয়। সাইমন আস্তে করে রুহির হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। হালকা কেঁপে ওঠে রুহি। অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ পেয়ে। সে দ্রুত নিজের হাত সরিয়ে নেয়। ঠিকঠাক মতো বসে বলে-
-” রোদ ভাইয়া আপনি বলুন তো আমি কি করতে পারি।
রোদ্দুর এতক্ষন রোজার দিকে তাকিয়ে ছিলো। রুপির কথায় টনক নড়ে তার। সে সোজা হয়ে বসে বলে-
-” দেখো তোমার বাবা এত বছর তোমাকে এখানে কেন রেখেছে?
রুহি ঠোঁট কামড়ে ভেবে বলে-
-” তা তো জানিনা! কিন্তু আমাকে বলেছে যেদিন আমার ২২ বছর হবে সেদিন ঐ মেশিন থেকে সমস্ত ডাটা নিয়ে চলে যেতে। এবং তার কাছে ফেরত দিতে।
রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে-
-” তার আগে যেতে নিষেধ করেছে?
রুহি দুই দিকে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বলে-
-” হ্যা তার আগে যেতে না করেছে। তার আগে নাকি ঐ মেশিন কাজ করবে না। কিন্তু কেন?
রোদ্দুর হেসে ফেলে বলে-
-” ওয়েল! ঠিক ধরেছো। কিন্তু কেন। এই উত্তর তুমি বের করবে। এখন তুমি তোমার বাবার সাথে যোগাযোগ করবে। তাকে বলবে “বাবা পৃথিবীর কিছু মানুষ জেনে গেছে আমি আর সাইমন অন্য গ্রহের। এখন আমাকে আর সাইমন কে তারা মে/রে ফেলবে। তুমি বলো প্লিজ আমি তাহলে চলে আসি আলফা গ্রহতে। পারমিশন দাও প্লিজ”। তারপর দেখবে উনি কি বলে।
সাইমন অবাক হয়ে বলে-
-” কিন্তু এটা করে লাভ কি কিছু হবে?
রোদ্দুর হেসে বলে-
-” এই প্রশ্নের উত্তর ই সব বলে দেবে।
রুহি রোদ্দুরের কথামতো এগিয়ে যায় কম্পিউটারের দিকে। তার ভয় করছে মিথ্যা বলতে। কাঁপা কাঁপা হাতে টাইপ করে সে রোদ্দুরের শিখিয়ে দেয়া কথা। এরপর তার বাবার ম্যাসেজ আসে। যা দেখে অবাক হয়ে সরে যায় রুহি।
-” এই রুহি।
সবার ডাকে ঘোর কাটে রুহির। এতক্ষন সে কল্পনা করছিলো। কিন্তু তার বাবা এসব কি বলছে। তাহলে মেইন কাল/প্রিট কি তার বাবাই! রোদ্দুর রুহিকে জিজ্ঞেস করে –
-” কি হলো ওরকম করছো কেন? বলো কি বলেছে তোমার বাবা।
রুহি যান্ত্রিক মানুষের মতো তাকায়। আস্তে আস্তে বলে-
-” বাবা বলেছে- তুমি ঐ মেশিন এ করে সবকিছু আলফা প্ল্যানেট এ পাঠিয়ে দাও। তোমাকে মা/রলে সমস্যা কি? তুমি আজ ও ম/রবে কাল ও ম/রবে। আর সাইমন ও ম/রবে। পৃথিবীতেই নাহয় ম/রো। আর চালাকি করে তথ্য না পাঠালে তোমার সব বন্ধু রোদ্দুর, রোজা কেও শে/ষ করে দেয়া হবে। সিদ্ধান্ত এখন তোমার!
রুহির কথা শুনে অবাক হয়ে যায় সবাই। রোজা বসা থেকে উঠে বলে-
-” কি বলছিস এসব? তোর বাবা আমাদের কথা জানলো কি করে?
রুহি বসে বলে –
-” সে সব জেনেই আমাকে এখানে পাঠিয়েছে। এত বছর ধরে এত ভালোবাসলো আর কদিনেই তা উবে গেল? শুধুমাত্র এই মেশিন আর সিস্টেমের জন্য! আমি ভেঙে ফেলবো এসব। তারপর উনি কি করে আমি দেখবো।
রুহি রেগে মেশিন ভাঙতে যায়। রোজা ধরে ফেলে তাকে। রোদ্দুর ওর সামনে গিয়ে বলে-
-” পা/গল হয়ে গেছো নাকি? এখন এটাই কাজে লাগবে। এই মেশিন চালু করতে জানো তুমি?
রুহি থেমে যায়। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে রোদ্দুর কে-
-” এই মেশিন ই সব নষ্টের মূল। এটা আর কি কাজে লাগবে আমাদের? এটা দিয়ে কি করতে পারবো?
রোদ্দুর রিল্যাক্স হয়ে বসে বলে-
-” দেখো আমার মনে হচ্ছে আলফা গ্রহে না গেলে আমরা এই রহস্য সমাধান করতে পারবো না। কিন্তু কথা হচ্ছে যাব কিভাবে? তোমার কথা মতে এটা দিয়ে যাওয়া যাবে। তাহলে তো এই মেশিন ই কাজে লাগবে!
সাইমন অবাক হয়ে বলে-
-” কিন্তু আপনি গিয়ে কি করবেন ওখনে? আমাদের সমস্যা আমাদের ই সমাধান করতে হবে।
রোদ্দুর কপাল কুঁচকে বলে-
-” তুমি বুঝতে পারছো না। তোমাদের জন্য এখন নিরাপদ নয় আলফা প্ল্যানেট বা পৃথিবী। দুই জায়গাতেই মা/রা পড়বে তোমরা। আর সঙ্গে আমরাও। তাই আমাদের উচিত সমস্যা থেকে না পালিয়ে সমস্যার সমাধান খোজা। আমাদের এখন সব কিছুর উত্তর দিতে পারবে রুহির বাবা। দুই ইয়াসমিন কেও সে কোথায় রেখেছে তা বলতে পারবে। তাই আলফা গ্রহতে গিয়ে সব কিছুর সমাধান করো নয়তো কা পুরুষের মতো এখানে থেকে ম/রো। কোনটা করবে তোমরাই ভালো জানো। আমি শুধু পথ বের করে দিলাম।
রোজা রোদ্দুরের সামনে এসে বলে –
-” কি বলছেন এসব? আমরা যদি ওখানে আটকা পড়ে যাই?
রোদ্দুর রোজার দিকে তাকিয়ে বলে-
-” আন্টিকে ফিরে পেতে চাওনা? মা কে কত বছর ধরে দেখো না। কষ্ট হয়না? আমরা ফিরলে তাকে নিয়েই ফিরবো নয়তো ওখনেই ম/রবো। তোমার ভয় করলে দরকার নেই যাওয়ার। আমি একাই মাফ ওদের সাথে।
মায়ের কথা শুনে রুহি রোজা দুজনের ই মন গলে যায়। অতীত স্মৃতি ভেসে ওঠে। রোজা চোখের পানি মুছে বলে-
-” আমি যাব। আমার মা কে ফিরিয়ে আনতে।
রুহি পাশে এসে বলে-
-” আমিও যাবো। কেন পালাবো? কোন দোষ করিনি। শুধু শুধু পালানোর মানেই হয়না। আমি সবকিছুর উত্তর চাইবো। সাইমন তুমি যাবে কি?
সাইমন উঠে আসে। পেছন থেকে রুহির দুই বাহু ধরে বলে –
-” হ্যা আমি যাবো। তোমার সাথে।
রোদ্দুর উঠে দাঁড়িয়ে বলে-
-” চলো তাহলে এবার মেশিনে ওঠো। আমরা আলফা গ্রহতে যাবো।
চারজনে গিয়ে মেশিনে উঠে বসে। পাঁচটা সিটি আছে মোট। রুহি নির্দেশনা অনুযায়ী লালা বাটনের পর ব্লু বাটন চেপে দেয়। এরপর বসে সিটবেল্ট বেঁধে বলে-
-” তৈরি হও সবাই। শক্ত করে বসো।
মেশিন টা কাঁপতে শুরু করে। ঘরের লাইট অন অফ হচ্ছে। ঘরের মাঝে মেঝেতে বিশাল ব্ল্যাক হোলের মতো তৈরি হয়। মেশিন টা সেটার মধ্যে ঢুকে যায়।
#চলবে