নয়নে লাগিল নেশা ১৪
#WriterঃMousumi_Akter
রজনীর হাতে লাল গিফট পেপার দিয়ে মোড়ানো এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট। বেশ নার্ভাস দেখাচ্ছে তাকে। চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ দৃশ্যমান। প্রিয়তার ভাই সম্পর্কে যা শুনেছে তাতে প্রান্তিকের থেকে ভ’ য়ঙ্কর মনে হচ্ছে। চেনা জানা নেই এইভাবে সিগারেট দিলে যদি কিছু বলে। রজনী কাচুমাচু চোখ-মুখ নিয়ে প্রিয়তাকে বলল, “আমি পারব না রে। খুব ভ-য় হচ্ছে। যদি কিছু বলে!”
“আচ্ছা, আমি তো বললাম কিছুই বলবে না। কিছু বললে আমি বুঝে নেব। তুই শুধু এটা ভাইয়ার সামনে ধরে বলবি আপনার জন্য গিফট নিয়ে এসেছি, ভাইয়া। তারপর নিজের সমস্যার কথা বলবি। চল আমার সাথে।”
প্রিয়তা রজনীকে টানতে টানতে নিয়ে গেল প্রান্তিকের রুমের সামনে। প্রিয়তা খুব করে চাইছে তার ভাইয়ের যেন রজনীকে দেখেই পছন্দ হয়ে যায়। রজনীর মোহে যেন আটকে যায়। সেই মেয়েকে যেন ভুলে যায়।
প্রান্তিকের রুমের সামনে গিয়ে প্রিয়তা বলল, “ভাইয়া, ভেতরে আছ?”
“হ্যাঁ, আছি।”
“আসব?”
“পারমিশন কেন নিতে হচ্ছে?”
“ভদ্রতা দেখাচ্ছি, সাথে আমার বান্ধবী আছে। ও তোমার সাথে একটু কথা বলবে।”
“কী কথা?”
“শুধু কথা নয়, তোমার প্রিয় জিনিস গিফটও এনেছে। ওর একটা কাজ আছে করে দিয়ো।”
“আমার প্রিয় গিফট?”
“হ্যাঁ।”– বলেই প্রিয়তা প্রান্তিকের ঘরের দরজা একটু আলগা করল। আর রজনীকে ঘরের ভেতরে ধাক্কা মারল।
প্রান্তিকের থ্রি-কোয়ার্টার পরা, খালি গায়ে। বুঝতে পারল ঘরে অচেনা একটি মেয়ে প্রবেশ করেছে। দ্রুত উঠে উলটা দিকে ঘুরে একটা শার্ট নিয়ে গায়ে দিয়ে বোতাম লাগাতে শুরু করল।
রজনী এমনিতেই ভয়ে নার্ভাস হয়ে আছে।এদিক-সেদিক কোনোদিক না তাকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়াল। চোখ দুটো একদম ফ্লোরের দিকে নিবদ্ধ। কী করবে, কীভাবে কী শুরু করবে বুঝতে পারছে না। হাতে গিফট বক্সটা ধরে রেখে কাচুমাচু মুখে নার্ভাস অবস্থায় নিচু হয়ে বলতে শুরু করল,
“ভাইয়া প্লিজ, আপনি আমার বড়ো ভাইয়ার মতো। আমার একটা উপকার করে দিন প্লিজ। একটা গুন্ডা ছেলে আমার পিছু লেগেছে। চরিত্র খারাপ, একাধিক মেয়ের সাথে রিলেশন। এমনকি কলেজে আমার এক ক্লাসমেটের পেছনে ঘুরছে। এসব করেও আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। আমার মা-বাবাও সে বিয়েতে রাজি। আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। প্লিজ আমাকে আপনি বাঁচান। এই মুহূর্তে আমার আপনি ছাড়া কেউ নেই। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না। আ- আমি আপনার জন্য একটা গিফটও এনেছি।”
রজনীর কণ্ঠস্বর প্রান্তিকের কানে যেতেই সমস্ত শরীর যেন ঝিম ধরে গেল প্রান্তিকের। সে কি পেছনে তাকবে না কি তাকাবে না? সে যার কণ্ঠস্বর ভাবছে সত্যিই কি সে দাঁড়িয়ে আছে? সে কি ঠিক শুনল না কি সারাক্ষণ রজনীর ভাবনায় বুদ থেকে এখনও ভ্রম থেকে মনে হচ্ছে এটা রজনীর কণ্ঠ? রজনী কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে গিফট বক্সটা প্রান্তিকের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “নিন ভাইয়া।”
প্রান্তিক ঘুরে দাঁড়াল এবার। শার্টের উপরের দুইটা বোতাম খোলা। বাকিগুলো কেবল লাগাচ্ছিল। প্রান্তিক ঘুরে দাঁড়িয়ে রজনীকে দেখেই অবাক হলো। প্রান্তিক অবাকের চেয়ে যেন বেশি খুশি হলো। কিন্তু রজনী? সে প্রান্তিককে দেখেই চমকে উঠল। আত্মা যেন উড়ে গেল। বুকের মাঝে ভয়ানক গতিতে হাতুড়ির বাড়ি দিচ্ছে। তার সমস্ত শরীর কেমন কাঁপাকাঁপি শুরু করল। এখনি পড়ে যাবে। আজকের মতো এত ভয়ংকর পরিস্থিতি তার জীবনে কখনো আসেনি। ভ’য়ে ঠোঁট দু’টো থরথর করে কাঁপছে।রজনীকে এত বেশি ভ’য় পেতে দেখে প্রান্তিক শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে ফিক করে হেসে দিল। আর এক হাতের পাঁচ আঙুল রজনীর সামনে মেলে ধরে বলল, “প্লিজ, কুল মাই ডিয়ার সুইটহার্ট রজনীগন্ধা। এত ভ-য় পেয়ো না। আমি তোমাকে কিচ্ছু বলব না। কিচ্ছু করবও না। এইটুক ভদ্রতা আমার আছে। বিয়ের আগে হবু বউকে আদর করা যাবে না।”
রজনী আস্তে আস্তে পেছন দিকে পা নিচ্ছে।এই রুম থেকে বেরোতে পারলেই সে এ বাড়ি থেকে এখনি পালাবে।
প্রান্তিক আবারও হাসল। হেসে মাথা দোলালো। রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল, “তুমি কি চাইলেই পালাতে পারবে রজনীগন্ধা? প্রান্তিক চৌধুরীর কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া কি এতই সোজা?”
“দেখুন আ-আমি বাড়ি যাব।”
“তোমার বাড়িই তো আছ। দু’দিন পর এ বাড়িই তো তোমার হবে। এই যে, রুমটা দেখছ। এটা তোমার হবে।”
রজনী কেঁদে দিয়ে বলল, “আমাকে যেতে দিন।”
“যেতে দেব, বাট আমার জন্য কী গিফট এনেছ, দেখি?”
“রজনীর হাত কাঁপছে। প্রান্তিক রজনীর কাঁপা হাত দু’টো চেপে ধরল। রজনী আরও বেশি ভয় পেয়ে খুব জোরে কেঁপে উঠল।
প্রান্তিক ঠান্ডা কণ্ঠে বলল, তোমাকে এভাবে ভ-য় পেতে দেখলে ইচ্ছা করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরি। জড়িয়ে ধরে সব ভ-য় দূর করে দিই। তুমি আমাকে কেন ভ*য় পাও রজনীগন্ধা? তোমার চোখে আমি ভ*য় নয় প্রেম, আর ভালোবাসা দেখতে চাই।”
রজনী তখনও ভয়ে কাঁপছে।
প্রান্তিক আবারও ঠান্ডা মেজাজে বলল, “এইভাবে ভয় পেলে কিন্তু আমি ডিরেক্ট হাগ করে দিব। স্বাভাবিক হও। তোমাকে আমার সাথে স্বাভাবিক হতে হবে না হলে সংসার করবে কীভাবে? আমাকে ভালোবাসবে কীভাবে? এই ভ-য় নিয়ে কি আর ভালোবাসা হয়?”
রজনী স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল।প্রান্তিক রজনীর হাত থেকে বক্সটা নিয়ে খুলল। খুলে দেখল সিগারেট। প্রান্তিক হো হো করে হেসে উঠল। হেসে উঠে বলল, “সিগারেটের ধোয়া সহ্য করতে পারো?”
রজনী মাথা দুলিয়ে বলল, “না।”
প্রান্তিক সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে দুই ঠোঁটের মাঝে চেপে ধরল। টেবিল থেকে লাইটার এনে রজনীর হাতে দিল। নিজেই রজনীর দুই হাত ধরে লাইটার জ্বালিয়ে সিগারেট ধরাল। সিগারেট এক টান দিয়ে রজনীর সামনে থেকে সরে দাঁড়াল। ঘরের পেছনের দরজা খুলে ধোয়া সেদিকে উড়িয়ে দিল। তারপর হাত দিয়ে মুখের কাছ থেকে ধোয়া সরানোর চেষ্টা করল। সিগারেটে আর এক টানও দিল না।দেওয়ালে চেপে ধরে আগুন নেভাল। আগুন নিভিয়ে সিগারেটটা আবারও প্যাকেটে এনে রেখে দিল। রজনী প্রান্তিকের ভাব-সাব কিছুই বুঝতে পারল না। সিগারেট ধরাল তার থেকে খানিক দূরে গিয়ে ধোয়া উড়ালো।আবার সেই সিগারেট এনে প্যাকেটে রেখে দিল। রজনীর ভাবনা কাটার আগেই প্রান্তিক বলল, “আমিই কি একমাত্র প্রেমিক যে, প্রেমিকার থেকে সিগারেট গিফট পেয়েছি? এই সিগারেট আমি যাদুঘরে রেখে দিব।”
বলেই প্রান্তিক আলমারি খুলে সিগারেটের প্যাকেট রাখল।
এরপর রজনীর হাত ধরে নিয়ে নিজের নরম বিছানায় বসাল। নিজে একটা টুল টেনে এনে রজনীর সামনে বসল। তারপর জিজ্ঞেস করল,
“এখন বলো, কাকে মা’ রতে চাও? কে তোমাকে ডিস্টার্ব করছে সুইটহার্ট? কার এত সাহস? জাস্ট নাম বলো।”
রজনি এখনি কেঁদে দেবে দেবে ভাব।
“প্রান্তিক চৌধুরিকে মা*র*তে হবে তাই তো? ওকে মে* রে দেব ।”
রজনি এমন বাজে সিসুয়েশনে পড়েছে যে, কী বলবে বুঝতে পারছে না।
প্রান্তিক হেসে বলল, “তোমার কি আমাকে মা*র*তে মানুষ ভাড়া করা লাগে? তুমি একবার হেসে দিলেই তো আমি একদম শেষ।”
চলবে…..