নয়নে লাগিল নেশা ১৫.
#WriterঃMousumi_Akter
“আমি কি ম-রে গেলে তুমি খুশি হবে? নাকি আমার হাত -পা ভে-ঙে পঙ্গু করতে পারলে তুমি খুশি হবে? “
প্রান্তিক এইবার থমথমে মুডে কথাটা বলল।চোখ দু’টো স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে রজনীর মুখবদনে।
রজনীর হাত -পা ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে আসছে। কি উত্তর দিবে কিছুই জানা নেই। গলা দিয়ে কোনো স্বর বের হচ্ছেনা। গায়ের সমস্ত বল যেন ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।ভ-য়ে চোখ মুখ আরো শুকিয়ে এল। তার মত এমন বাজে সিসুয়েশন এ –এর আগে পৃথিবীর কেউ পড়েছে কীনা সন্দেহ!রজনী নিচু হয়ে তাকিয়ে আছে।শরীর কাঁপছে থরথর করে।
প্রান্তিক আবার প্রশ্ন করল, “আনসার মি? কোনটা হলে তুমি খুশি হবে? “
রজনীর মুখে কোনো কথা নেই। এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মত শক্তি আর সাহস কোনটায় তার নেই।
প্রান্তিক আবার ও বলল, “কি আশ্চর্য! তুমি চুপ আছো ক্যানো? চুপ থাকলে তো হবেনা মিস রজনীগন্ধা। তুমি কি ভেবেছিলে আমাকে মে*রে ফেললে তোমার পিছু নিবনা।আমি ইহকাল পরকাল কোনকালেও তোমার পিছু ছাড়ব না। আল্লাহ আমার আয়ু না শেষ করলে পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যার ক্ষমতা আছে আমাকে মা’রা’র।চাইলে তুমি আমাকে মা*র*তে পারো। এই ছাড়া বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই।আর যদি আমার হাত পা কোনো ভাবে ভেঙে ও যায় হুইল চেয়ারে বসেও তোমার পিছু নিবো।মাইন্ড ইট।”
রজনী এইবার বুঝতে পারল প্রান্তিকের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া তার ইহকালেও সম্ভব নয়।আজকের পর সে সিওর হয়ে গিয়েছে প্রান্তিক চৌধুরী যা তা কেউ নয়।সে যতটা ভয়ানক ভেবেছিল তার থেকে বেশী ভয়ানক। প্রান্তিক কোনদিন তার পিছু ছাড়বেনা। জীবনে কি পাপ করেছিল সেটাই ভাবছে। নইলে প্রিয়তাই বা কেনো তার বেষ্ট ফ্রেন্ড হতে যাবে। দুনিয়ায় কি ফ্রেন্ড হবার মত আর কোনো মেয়ে ছিলনা।
প্রান্তিক কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে আবার প্রশ্ন করল, “কি সমস্যা তোমার? আমাকে বিয়ে করতে চাও না তুমি? চুপ থাকলে খুব খারাপ হবে রজনী।আর আমার হাত থেকে বাঁচতে মিথ্যা বলবেনা। আমি তোমাকে কিছুই বলব না। জাস্ট সত্য কথা বলবা। আমার দিকে তাকাও। আমার চোখে চোখে রেখে বলো।”
প্রান্তিকের চাপা কন্ঠস্বর ছিল ভয়ানক।রজনী বুঝতে পারল প্রান্তিক রেগে আছে। ভয়ার্ত চোখ দুটো নিয়ে প্রান্তিকের দিকে তাকাল। প্রান্তিকের চোখ দু’টো রক্ত জবার ন্যায় লাল হয়ে গিয়েছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে উত্তর দিল, ” না।”
প্রান্তিকের মাথায় আগুন ধরে গেল।দুনিয়ার সব মেয়ে যার জন্য পা-গ-ল এই একটা মেয়ে কেনো তাকে ঘৃনা করে।বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বসে থাকা জোরে লাথি মারল। সাথে সাথে পা কে’টে গেল।পা দিয়ে গড়িয়ে পড়ল র*ক্ত।হুংকার ছেড়ে বলল,
“তুই আমাকে বিয়ে করবি না ? আমার অপরাধ কী? আমাকে বিয়ে করবিনা যখন তাহলে আমার সামনে নাচতেছিলি কেনো? আমি কি বলেছিলাম আমার সামনে এসে নাচানাচি করতে। ওইভাবে হাসছিলি কেনো? আমার নয়নে নেশা লাগালি কেনো? কেনো এত কিছু করলি? আমার ইমোশন নিয়ে খেলা করছিস তুই।আমি চাইলেই তোকে তুলে নিয়ে বিয়ে করতে পারতাম। কিন্তু আমি তোকে ভালবাসার চাইতেও সম্মান করি বেশী। তোকে দেখার পর বুঝি ভালবাসা পবিত্র। সম্মান বেশী জরুরী। মুখে যায় বলি বাজে নজর তোর দিকে আমার আসেনা।জীবনে অনেক মেয়ে আমার গায়ে পড়ে মিশতে চেয়েছে তাদের আমি ভাল নজরে দেখিনি। তারা যে উদ্দেশ্য এসেছে আমিও ওই নজরেই দেখেছি। কিন্তু তুই আলাদা। তুই মানেই ফুল। যে ফুলের সুবাসে আমি মাতোয়ারা।”
প্রান্তিকের তুই তুকারি দেখে রজনী আরো ভয় পেয়ে গেল।রজনী দেখল প্রান্তিকের কপালের দুই পাশের শিরা ভেষে উঠেছে চোয়াল শক্ত করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ নিরবতায় কাটল।প্রান্তিক ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করল। রজনীর দিকে এইবার শান্ত চোখে তাকাল।ভেতরে রাগ তবুও চোখের দৃষ্টি শান্ত করে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল, “আমি তোমার কোন ক্লাসমেট এর পেছনে ঘুরছি। প্লিজ আনসার মি!আই থিংক তুমি সব সময় আমার বিষয়ে নেগেটিভ কিছু ভাবছো।তোমার এই ভুল ভাঙা উচিৎ। ভয় পেওনা। আই আম সরি। আমি রিয়্যাক্ট করে ফেলেছি। বাট বলো তোমার কোন ক্লাস মেটের পিছে ঘুরছি।”
রজনী চুপ করে রইলো। প্রান্তিক আবার ও শান্ত মেজাজে বলল, ” কি ভাবছো আমি তুই তুকারি করেছি। রিয়্যাক্ট দেখিয়েছি বলে রাগ করেছো। আমিই বকবো, আমিই রাগ করব, আমিই শাষন করব আবার আমিই ভালবাসব। কিন্তু ছেড়ে যাবোনা মাইন্ড ইট। এইবার বলো কোন ক্লাসমেটের পিছে ঘুরছি।”
“আ’ অদ্রিতা।”
“হু ইজ অদ্রিতা?”
“ক্লাস মেটের নাম,যার পিছে ঘুরছেন।”
“এই নামে তো কোনো মেয়েকেই চিনিনা।তোমাকে কে বলেছে আমি তার পিছে ঘুরছি?”
“ওরাই বলাবলি করছিলো।”
প্রান্তিকের খেয়াল হল সে যে দোকান থেকে সিগারেট কেনে।দোকানের উপরের তলায় দুইটা মেয়ে তাকে দেখে ফিসফিস করে।গতকাল ই সে শুনেছে এই অদ্রিতা নাম।একটা মেয়ে বলছিলো অদ্রিতা তোর হিরো এসছে।বাই এনি চান্স এই মেয়েই রজনীর ক্লাসমেট নয়তো।
প্রান্তিক আগে অনেক মেয়ের সাথে টাইম পাশ করেছে।সে নিজে কারো কাছে যায়নি।কেউ এলে কিছুদিন কথা বলেছে মন টানেনি বাদ দিয়েছে।রজনীকে দেখার পর কোনো মেয়ে তাকে ফোন দিলেই অপরাধবোধ কাজ করে। ভ-য় করে যদি রজনী জেনে যায়।অজানা ভ-য়ে প্রান্তিকের বুক কাঁপে। রজনী তাকে ভুল বুঝবে এই ভ*য় টায় প্রান্তিকের জীবনে প্রথম পাওয়া কোনো ভ*য়।প্রান্তিক রজনীর ধরে উঠালো।হাত ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে যেতে যেতে বলল, ” চলো অদ্রিতার বাড়ি। আমার বউ এর কাছে আমাকে খারাপ বানিয়ে সংসারে আ’ গু’ ন লাগানো।আদ্রিতার জীবনে আ’গু’ ন লাগিয়ে দিবো আজ। আজকের পর যে মেয়ে আমার নাম মুখে উচ্চারণ করবে সেই মেয়ের খবর আছে।”
( পর্ব ছোট লিখতে সময় লেগেছে অনেক।একটু বিজি ও ছিলাম।)