নয়নে লাগিল নেশা ১৬
#WriterঃMousumi_Akter
প্রান্তিক থমথমে মুডে রজনীর হাত ধরে টানতে টানতে রুম থেকে বের হল। এতক্ষণ প্রিয়তা বাইরে অপেক্ষা করছিল। প্রান্তিক কে ওইভাবে বের হতে দেখে চোখ কপালে উঠল। দৌঁড়ে প্রান্তিকের কাছে এসে বলল,
” ভা- ভাইয়া কি হয়েছে? ওর হাত ধরে ওভাবে টানতে টানতে কোথায় নিচ্ছো?”
প্রান্তিক কোনো কথার উত্তর দিল না। সোজা হাঁটছে।
” ভাইয়া ও আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। আমিই তোমার কাছে ওকে পাঠিয়েছিলাম। ওর কোনো দোষ নেই। প্লিজ ওর হাত ছেড়ে দাও। ও ভ*য় পেয়ে মরে যাবে।”
প্রান্তিক প্রিয়তার কোনো কথার উত্তর না দিয়ে রজনিকে নিয়ে সদর দরজা দিয়ে বাইরে বের হয়ে গেল। বাইরে গিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে রজনীর দিকে তাকিয়ে বলল, ” ওঠো।”
রজনী ভ*য়ে কাঁপতে কাঁপতে বাইকের পেছনে উঠল।
প্রান্তিক বাইক ছাড়তেই রজনি পড়ে যেত্তে গেল।সাথে সাথে বাইক থামিয়ে দিল।পেছনে তাকিয়ে বলল, ” এইভাবে কাঁপাকাঁপি করলে পড়ে যাবে কিন্তু। এই বয়সে বউ হারিয়ে দেবদাস হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই আমার।জড়িয়ে ধরে বসো শক্ত করে। বাইকের পেছনে বসে কাঁপছো ক্যানো? তোমাকেও তো এসব চালানো শিখতে হবে। দুজন এক সাথে গভীর ট্যুর দিব।”
রজনি প্রান্তিকের ঘাড়ের উপর হাত রাখল।প্রান্তিক বলল, ” কোমর জড়িয়ে ধরে বসো, আমি এইবার জোরে ছাড়ব বাইক।”
রজনি প্রান্তিকের কোমর জড়িয়ে ধরে বসল।প্রান্তিক বেশ স্পিড এর সাথে বাইক ছাড়ল। প্রিয়তা দুঃচিন্তায় পা-গ-ল হয়ে যাচ্ছে। দৌঁড়ে আঞ্জুমান বেগমের কাছে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ” আম্মু ভাইয়া আমার বান্ধবীকে নিয়ে কোথায় গেল?”
” কোথায় গেল মানে?”
” ‘হ্যাঁ হাত ধরে টানতে টানতে বাইকে উঠিয়ে কোথায় যেন নিয়ে গেল।”
” তোমার ভাইয়া তো এ ধরনের ছেলে নয়। নিজের বাড়ি কোনো মেয়ে আসলে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবে। সত্যি করে বলোতো কি গোলমাল পাকিয়েছো। জানোনা তোমার ভাই – এর রাগ হলে মাথা ঠিক থাকেনা।কি করেছো তোমরা। আজ এমন একটা খুশির দিনে এসব না করলে হত না?”
” আমি আসলে রজনিকে বলেছিলাম ভাইয়াকে এক প্যাকেট সিগারেট দিতে। ও দিতে চায়নি আমিই জোর করেছিলাম।”
” তুমি? তুমি এই কাজ ক্যানো করতে গেলে। তোমার ভাইয়ার মনে হয় এই কাজ পছন্দ হয়নি।”
“ভেবেছিলাম রজনীর চেহারা দেখলে ভাইয়া যদি সেই মেয়েকে ভুলে রজনীকে বিয়ে করতে চায় তাই।”
” তোমার ভাইকে তুমি চিনোনা। সে একবার যখন বলেছে সেই মেয়েকে বিয়ে করবে তুমি যতই সুন্দরী মেয়ে এনে দাও তার মনে লাগবেনা।সারস দেশ ঘুরে বেড়ায় তোমার ভাই। কম সুন্দরী মেয়েও দ্যাখেনি জীবনে।তাই তোমার রজনীকে ভাই এর সামনে নিয়ে দেখাতে হবে।”
“আম্মু এখন কি হবে তাই বলো। ভাইয়া ওকে কোথায় নিয়ে গেল।”
” এই মেয়েটার জন্য অশান্তির শেষ নেই।”
আঞ্জুমান শ্রাবন কে ফোন করল।শ্রাবণ ফোন পেয়ে সাইড থেকে আঞ্জুমান এর কাছে এল।প্রিয়তা অস্থিরতায় হাত কচলাচ্ছে।
প্রিয়তাকে বিচলিত দেখে শ্রাবণ জিজ্ঞেস করল, ” আন্টি কি হয়েছে?”
” প্রিয়তার বান্ধবীকে নিয়ে প্রান্তিক কোথায় গেল দেখ-তো।”
“কোন বান্ধবী।”
প্রিয়তা চিন্তিত কন্ঠে বলল, ” রজনী।”
নামটা শ্রাবনের কানে যেতেই শ্রাবন অবাক হয়ে বলল, ” কি বললে রজনী?”
” হ্যাঁ। “
” আরে ভাই যে মেয়েকে পছন্দ করে তার নাম ও রজনী।”
অঞ্জুমান বলল, ” হ্যাঁ তাইতো, রজনী ই তো নাম মেয়েটার। আমাদের গ্রামেই বাড়ি।”
প্রিয়তা বেশ অবাক হল।অবাক হয়ে বলল, ” ওর বাড়িও তো আমাদের গ্রামেই।”
শ্রাবন বলল, ” তাহলে কি তোমার বান্ধবীই তোমার ভাবি হচ্ছে।”
প্রিয়তার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। এমন হলে সে খুশিতে পা-গ-ল হয়ে যাবে। প্রিয়তার মন পজিটিভ সিগন্যাল দিচ্ছে। এখনো সে সিওর না। তার ভাই ফিরবে সেই অপেক্ষায় পা-গ-ল হয়ে যাচ্ছে।
প্রান্তিক যে দোকান থেকে সিগারেট কেনে সেই দোকানের সামনে গিয়ে বাইক থামাল।দোকান দার প্রান্তিক কে খুব ভাল করেই চিনে। প্রান্তিক বাইক থামিয়ে রজনিকে নিয়ে উপরে গেল।দো’তলায় গিয়ে কলিং বেল চাপতেই একজন দরজা খুলল। প্রান্তিক কে দেখে বলল, ” আপনি কে?”
” এটা কি অদ্রিতার বাসা?”.
“জি।”
“বলুন প্রান্তিক দেখা করতে এসছে। ওকে আমার নাম বলুন ঠিক ই চিনবে।”
মহিলাটি ভেতরে গিয়ে অদ্রিতাকে বলল, ” প্রান্তিক নামের এক ছেলে এসছে দেখা করতে।”
অদ্রিতা খুশিতে লাফিয়ে উঠে দরজয় আসল।অদ্রিতার পরনে গেঞ্জি বুকে ওড়না নেই, পরনে থ্রি কোয়ার্টার। প্রান্তিক একবার তাকিয়ে আর তাকাল না। অদ্রিতা কি বলবে বুঝতে পারছেনা।কিন্তু সাথে রজনীকে দেখে বেশ অবাক হল।
প্রান্তিক রজবীর দিকে তাকিয়ে বলল, ” এই সেই মেয়ে তাইতো।”
” হুম।”
প্রান্তিক অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলল, ” তুমি কি বলেছো আমার নামে। আমাকে চিনো তুমি?”
” না মানে।”
” আমি তোমার পিছে ঘুরছি,কবে থেকে।”
” না।”
” তাহলে কলেজ গিয়ে এসব বলেছো ক্যানো?আমার বউ তোমার জন্য আমাকে চরিত্রহীন ভাবছে।”
” ও আপনার বউ।”
” হ্যাঁ আমার বউ। এখ৷ তুমি বলো আমার নামে ক্যানো গুজব ছড়িয়েছো। একটা থা*প্প*ড় দিবো জাস্ট কানে।উঠে দাঁড়িয়ে আর আমাকে চিনবে না।থার্ড ক্লাস মেয়ে কোথাকার।” প্রান্তিকের চেচামেচিতে ভেতর থেকে অদ্রিতার মা -বাবা বেরিয়ে এল।এইভাবে একটা ছেলেকে তাদের মেয়ের সাথে চেচামেচি করতে দেখে বলল, ” কি হয়েছে?”
” আপনাদের মেয়ের কাছে জিজ্ঞেস করুন। আমার নামে কলেজে গিয়ে আমার বউ এর সামনে বলেছে আমি নাকি ওর পেছনে ঘুরি। এইভাবে আমার জীবন আর সংসারে আ-গু-ন লাগানোর জন্য আপনাদের মেয়েকে যা করা উচিৎ আমি তা করলাম না শুধু আপনাদের সম্মানের কথা ভেবে। না হলে গাল মুখ ভে-ঙে দিতাম রাস্তায় নিয়ে।এই মেয়ে আমার বউকে বলো তুমি মিথ্যা বলেছো? না হলে খুব খারাপ হবে।”
” আমি মিথ্যা বলেছি রজনী।মজা করেছিলাম।”
“আর কোনদিন যদি আমার নাম মুখেও উচ্চারণ করো সেইদিন আর এই মুখ কথা বলার মত রাখব না।আমি নিচ থেকে সিগারেট কিনি তোমাকে দেখিনা। “
অদ্রিতার মা বাবা প্রান্তিকের ভাব খারাপ দেখে ক্ষমা চেয়ে অদ্রিতাকে গালি দিতে শুরু করল।
প্রান্তিক যাওয়ার সময় বলল, ” পোশাকের দিকে খেয়াল দিয়েন আপনাদের মেয়ের।”
নিচে নামার সময় রজনী বলল, “পোশাকে খেয়াল দিতে বললেন ক্যানো?”
“দেখলে না কি পোশাক পরা।”
” আপনি তাকালেন ক্যানো? না তাকালেই পারতেন।” রজনির কথায় কেমন জেলাসি।
প্রান্তিক বাঁকা হেসে বলল, ” মেয়েরা ভাল বাসুক আর না বাসুক তার পেছনে ঘোরা ছেলে অন্য মেয়ের পিছে ঘুরুক এইটা চায়না। নিজে প্রেম করবে না অথচ চাইতে থাকবে ছেলেটা চিরকুমার থেকে তার পিছে ঘুরতে থাকুক। কি চিজ আসলে মেয়েরা বুঝিনা।”
” আমাকে চিজ বললেন।”
” হ্যাঁ বললাম, ভয়ংকর চিজ তুমি। আমাকে চোখের ইশারায় ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছো।একবার চোখ দিয়ে তাকাও আর আমার সাড়ে সর্বনাশ ঘটে যায়।”
রজনীর একটু ভ*য় কমেছে।কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।
প্রান্তিক নিচে দোকানে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ” আমি স্মোক করব। তুমি দাঁড়াও দু’মিনিট।”
স্মোক এর নাম শুনে রজনীর দৃষ্টিতে রাগ ফুটে উঠল। প্রান্তিক দোকান থেকে সিগারেট আর লাইটার নিয়ে সিগারেট ধরাল।জোরে জোরে কয়েক টান দিল।নাক দিয়ে ধোয়া ছেড়ে দ্রুত সিগারেট শেষ করল।
দোকানদার বলল, “ভাই স্মোক করছেন ভাবি রাগ করবে না।”
“শুনে দেখো তোমার ভাবির কাছে।”
দোকান দার একটা বড় পলিথিন এ কিছু খাবার নিয়ে বেরিয়ে এসে রজনীর হাতে দিয়ে বলল, “ভাবি ভাই কিন্তু অতিরিক্ত সিগারেট খায়।আপনি নিষেধ করুন।”
রজনী দোকান দারের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল, ” আপনি সিগারেট বিক্রি করেন ক্যানো? না করলে তো আর কিনতে পারেনা।”
“ভাবি না বেঁচলে খাবো কি?”
“যারা সিগারেট খায় ওদের মা’থা খাবেন।”
ভাই ভাবির কিন্তু রাগ হচ্ছে আমার উপর।আপনি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিন।
” তোমার ভাবিকে বলো আমাকে বলতে।”
“ভাবি ভাইকে বলুন,আপনি বললে আর খাবেনা।”
“তাহলে জীবনেও বলব না।”
“তোমার ভাবি যত রেগে যাচ্ছে আমি ততই প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।কি মুশকিল।তোমার ভাবি ভ*য় পেলেও প্রেমে পড়ছি। প্রেম তো দেখছি যে কোনো কিছু থেকেই আসতে পারে।” বলেই প্রান্তিক চুলে আঙুল চালালো।
চলবে……..
(রিচেক দিইনি। বনান ভুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)