নয়নে লাগিল নেশা ১৭
#WriterঃMousumi_Akter
প্রান্তিক রজনীকে বাইকে উঠিয়ে আবার বাসার দিকে রওনা হল। বাইকের এক হাত ছেড়ে দিয়ে বার বার নিজের চুল ঠিক করছে আর আয়নায় নিজেকে দেখছে। প্রতিটি মানুষ ই চায় নিজের ভালবাসার মানুষের কাছে নিজেকে সুন্দর দেখাক।প্রান্তিকের নজর সারাক্ষণ বাইকের আয়নার দিকে। রজনীর ভ’য় করছে। এমনিই বাইকে উঠতেই তার ভ’য় করে। তার উপর প্রান্তিক এক হাতে বাইক চালাচ্ছে।
রজনি এইবার চিন্তিত হয়ে বলল, ” দাঁড়ান, দাঁড়ান আগে।”
প্রান্তিক বাইক স্লো করে বলল, ” কি সমস্যা।”
“যেখানে আপনি আছেন সেখানে সমস্যার অভাব কোথায়?”
“যেখানে প্রান্তিক চৌধুরী থাকে সমস্ত সমস্যা বিদায় নেয় সুইটহার্ট। বলো কি সমস্যা খুজে পেলে।”
“আমি নামব। আপনি যেভাবে এক হাতে বাইকে চালাচ্ছেন এখনি পড়ে ম*রে যাবো।”
প্রান্তিক হো হো করে হেসে উঠে বলল, “আমার বাইক থেকে তুমি পড়ে যাবে সেটা কল্পনা করাও অবাস্তব তাতে ম*রে যেওয়া।”
“আপনি কি মহাপুরুষ যে বাইক থেকে কেউ পড়বে না বা ম*রবে না।”
“আমার বাইক থেকে পড়ে যদি তুমি ম’রে যাও বিশ্ব আরেক মহাপুরুষ কে দেখবে। সেও সাথে সাথে মারা যাবে। তারপর পরকালে গিয়ে আবার তোমাকে জ্বালাবো।”
“তখন আমাকে জ্বালানোর কথা মাথায় আসবে না
কীভাবে নিজের কুকির্তীর হিসাব দিবেন তাই ভাবুন।”
“কুকির্তী?”
” হ্যাঁ দুনিয়ার মেয়েদের নিয়ে যা করে বেড়িয়েছেন সেসব কুকির্তী।”
“কই আমি তো কাউকে কিছু করিনি। তবে মেয়েরা চেয়েছে কিছু একটা করে আমাকে তাদের করে নিতে।”
“এসব সব দোষ মেয়েদের দিচ্ছেন।আর আপনি সাধু।”
“তুমি আরো আগে এলে সাধুই থেকে যেতাম। কি করব সুন্দরী মেয়েরা চা ‘কফি খাওয়ার অফার দেয়। না গেলে অন্যায় হয় তাই যেতাম।বাট ওই চা আর কফির বিল ই দিয়েছি আর কিছুই না।”
“তারা কি আমার চেয়েও সুন্দরী নাকি।”
“তোমার মত সুন্দরী কি এই দুনিয়াতে আর আছে। “
“থাকলে নিশ্চয়ই তার পিছে ঘুরতেন।ছেলেরা এমন ই।সুন্দর মেয়ে দেখলেই মাথা ঠিক থাকেনা।এইজন্য আমি আপনাকে বিয়ে করব না।”
“সুন্দরের ওইভাবে আলাদা ব্যাখ্যা করা যায়না।দেখার সৌন্দর্য আর মনের সৌন্দর্য বহুত আলাদা রজনীগন্ধা। তুমি মনে গেঁথে গিয়েছো।তোমার পর ২য় কোনো নারীর মোহ আমাকে আটকাতে পারবেনা।”
“আগের গুলোহ মোহ যদি কাটাতে পেরেছেন আমাকেও পারবেন।”.
” আমি ওদের মোহ ছিলাম,ওরা আমার মোহ ছিলনা।বাট আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে ওইসব মেয়েদের প্রতি তুমি খুব জেলাস।”
“আমি কেনো জেলাস হতে যাবো?”
” তোমার হবু জামাই এর ওর সাথে চা খেয়েছে সেই দুঃখে।”
“আমার জামাই যদি সত্যি এসব করে থাকে সারাজীবনের জন্য চা খাওয়া বন্ধ করে দিবো।”
“ইয়া হাবিবি, চা -এর রিজিক কি তুলে নিলে।মেয়ে মানুষদের ভুলেও কিছু বলতে নেই।খোটা শুনতে শু৷নতে জীবন শেষ।”
এরই মাঝে প্রান্তিক বাইক থামালো। সামনেই সুন্দর একটা শাড়ির দোকান।প্রান্তিক বাইক থামিয়ে রজনি কে বলল,” নামো।”
“কেনো।”
“এই মেয়ে তুমি এত প্রশ্ন করো ক্যানো? তুমি কি জানো তুমি ছাড়া আমি আর কারো কোন প্রশ্নের দিইনা।”
“আমার প্রশ্নের উত্তর না দিলেও তো পারেন।”
“বোকা রজনীগন্ধা, তা আর সম্ভব নয়।”
প্রান্তিক আর রজনী দুজনে শপিং মলে প্রবেশ করল।
প্রান্তিক কে মলের সবাই চিনে।যে দেখছে সে সালাম দিচ্ছে। রজনীর মনে হচ্ছে যেন কোনো সেলিব্রিটি শপিং মলে প্রবেশ করেছে।শপিং মল টা খুব সুন্দর। রজনী চারদিকে চেয়ে চেয়ে দেখছে।প্রান্তিক খানিক টা এগিয়ে গিয়েছে। পকেট থেকে কার্ড বের করে বুথ এ দিয়ে টাকা বের করল।রজনীর বয়স কম। এই বিষয়ে খুব একটা ধারণা নেই। মাথায় হাজার টা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। একটা মেশিনের মাঝে একটা কার্ড দিলেই টাকা আসে। যেকোনো কার্ড দিলেই কি টাকা আসবে। এরই মাঝে বাইরের একটি ছেলে শপিং মলে প্রবেশ করল।ছেলেটি দেখেই বুঝল রজনী গ্রামের সহজ সরল মেয়ে। রজনীর দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই মেয়ে শোনো।”
রজনি চোখ তুলে তাকালো।
ছেলেটি সাথে সাথে চোখ টিপ মেরে দিল। রজনীর একটু ভাল লাগল না বিষয় টা।এই মুহুর্তে নিজেকে সেফ করার মত কাউকে দেখছে না।ছেলেটে চোখ মুখ দিয়ে আজে বাজে টোন করেই যাচ্ছে। এরই মাঝে রজনীর নজর গেল প্রান্তিকের দিকে। কেনো যেন মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে তার আপনজন বলতে এখানে প্রান্তিক ই আছে। প্রান্তিক ই পারবে তাকে বাঁচাতে। রজনী গুটি গুটি পায়ে প্রান্তিকের দিকে এগিয়ে গেল। প্রান্তিকের পেছনে গিয়ে একদম পিঠঘেষে দাঁড়ালো।রজনির মুখ প্রান্তিকের পিঠে গিয়ে বিঁধেছে। কি অদ্ভুত এক শিহরণ।রজনির স্পর্শ যেন ভয়ংকর। প্রান্তিকের হৃদয়ে ভয়ংকর এক তোলপাড় সৃষ্টি হল।
ছেলেটা রজনীর পাশে এসে বলল, ‘ কি সেক্সি অন্য পুরুষের পেছনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছো ক্যানো? আমি থাকতে অন্য পুরুষ কেনো বেবিগবেবিগার্ল। চলো শপিং করে দিবো।বিনিময়ে আমি যা চাইব তাই দিলেই হবে।’
রজনি মলিন চোখ মুখে প্রান্তিকের দিকে তাকাচ্ছে। তার মানে দেখুন ওই ছেলে গুলো আমাকে খারাপ কথা বলছে,খারাপ মেয়ে ভাবছে। আপনি কিছু বলুন।
প্রান্তিক রজনির চোখের ভাষা বুঝে গিয়েছে একবার তাকাতেই।আর ছেলেটাকেও অনেক আগেই নটিস করেছে। শুধু দেখছিল রজনী ভরসা করে তার কাছে আসে কীনা?এই যাত্রায় প্রান্তিকের উদ্দেশ্য সাকসেস।রজনী তাকে ভরসা করেছে।
প্রান্তিক টাকা গুলো পকেটে ঢুকিয়ে রজনীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কি ম্যাডাম কোনো সমস্যা?’
রজনীর চোখ দুটো ছোট হয়ে এল।প্রান্তিকের এমন আচরণে।সে কি বুঝতে পারছেনা পাশের ছেলে গুলো বিরক্ত করছে।
প্রান্তিক এবার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কি ভাই মনোমালিন্য হয়েছে নাকি? শপিং করে দেন মন মত সব ঠিক হয়ে যাবে।’
ছেলেটা এবার নিশ্চিত হল।যাক মেয়েটাকে তার বউ ভাবছে।এই সুযোগে এত সুন্দর মেয়ে ভোগ করা যাবে।
ছেলেটা বলল, ‘,হ ভাই! দিতেই তো চাইছি নিচ্ছে না।’
‘মেয়েরা একটু না না করে।একবার শপিং করে দেন ঠিক ই পিছ পিছ চলে যাবে।সব জায়গা কিপটামি করলে হয়না।টাকা নেই ভাই পকেটে?’
‘আরে কি বলেন টাকা নেই। কি নিবে নিক।’.
‘আসুন আমিই আপনাদের হেল্প করছি।’
প্রান্তিক রজনিকে বলল, আসুন আমরা দো’তলায় দামি দোকানে যায়।
রজনী প্রান্তিকের আচরণে বেশ ক্ষুব্ধ হল।নিজেও বাজে একটা বাজে ছেলের হাতে তাকে তুলে দিচ্ছে।রজনীর চোখ মুখ ছুটে যাচ্ছে রাগে।এখনি বিশ্রি গালি দিতে ইচ্ছা করছে।কিন্তু এখানে সে অসহয়।ছেলেটার চোখ মুখ দেখেই স্পষ্ট চরিত্রহীন কোনো ছেলে।খুব বাজে ভাবে তাকাচ্ছে রজনীর দিকে।ছেলেটা রজনীর হাত ধরতে গেলেই প্রান্তিক ছেলেটাকে সামনে পা বাড়িয়ে দিতেই হুমড়ি খেয়ে মানুষের মাঝে পড়ল।মল ভর্তি মানুষ হো হো করে হেসে উঠল।দেখে রজনীও হেসে দিল।ছেলেটি আবার ও উঠে দাঁড়াল।সব থেকে দামি দোকানে গিয়ে প্রান্তিক অনেক গুলা ড্রেস বের করল।কিনতে কিনতে এক লাখ ২০,০০০ টাকা ছাড়িয়ে গেল।এইদিকে ছেলেটির পকেটে এত টাকা নেই।ছেলেটি বলছে ভাইয়া একদিনে এত কেনার কি দরকার।অন্যদিন কিনব।আজতো এত টাকা আনিনি।প্রান্তিক ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“মেয়েমানুষ কে একটা পোশাক দিয়েই বিছানায় নেওয়ার অভ্যাস অনেক আগে থেকেই তাইনা?পকেটে নেই দুই টাকা আইছো ফুটানি দিতে।ওই মেয়ে কি দুই টাকার মেয়ে।এখান থেকে ৫ লাখ টাকার শপিং করব।তারপর খা*ন*কি* র পোলা। দোকানের টাকা শোধ করতে না পারায় তোর বাপ আসবে এইখানে।পুলিস কেস হবে মেয়েদের হয়রানির জন্য, তোকে উচিৎ শিক্ষা দিবো এই জন্মের মত।যেন মেয়ে দেখলেই বিছানার কথা না ভাবিস।”
প্রান্তিক রজনির হাত চেপে ধরে বলল, ” ও কে জানিন, ও প্রান্তিক চৌধুরির বউ।এইরকম একটা শপিং মল কিনে দেওয়ার ক্ষমতা আছে।আর তুই আমার বউকে শপিং করে দিয়ে বাজে কথা বলিস।আমার র*ক্ত যেভাবে টগবগ করছে মাদারের বাচ্চা তোকে এই মলেই ফ্লোরের নিচে পুতে ফেলব”
।বলেই দোতলা থেকে লা* থি মারল প্রান্তিক ছেলেটাকে।সিঁড়িতে মাথা কেটে নিচে গড়িয়ে পড়তেই কয়েকজন ছেলেটাকে ধরে ফেলল।ধরে বলল,
” ভাই মাথা ঠান্ডা করে বাড়ি যান।আমরা পুলিশ ডাকছি।এই সব চরিত্রহীনরা এইভাবেই মেয়েদের হ্যারাসমেন্ট করে।”
“আমি রজনীগন্ধার জন্য মামলা খেতে রাজি আছি তবুও রজনীগন্ধা কে কেউ কুদৃষ্টিতে তাকালে আমি সহ্য করব না।”
“ভাই শান্ত হন।আমরা দেখে নিচ্ছি।”
“এই ছেলে যে ৫ লাখ টাকার বিল করিয়েছে এর থেকেই নিবেন।” বলেই রজনীর হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নেমে এল প্রান্তিক।
রজনি প্রান্তিকের হাত ঝাড়ি মেরে বলল, ‘ছেলেটিকে এইভাবে বিপদে ফেলে এলেন কেনো?’
‘তুমি জানোনা ও আমার বউ এর দিকে খারাপ নজর দিয়েছে।’
‘ দুই একটা মা*ই*র দিয়ে ছেড়ে দিতেন। এটা বেশী হল না।’
‘চোখ দু’টো তুলে ফেলিনি ওর ভাগ্য ভাল।দুইদিন পর আমার বিয়ে। তাই চাইছিনা যে আপাতত কিছুদিন জেল খাটতে।’
‘অত টাকার ড্রেস আনলেন কে পরবে? আমি কিন্তু পরব না।’
‘ তুমি ভাবলে কীভাবে অন্যর টাকার পোশাক তোমাকে পরতে দিবো?’ এইগুলা সব পথে গরিব মানুষ দের দান করে যাবো।ছেলেটার সওয়াব হবে।’
“আপনি কি হ্যাঁ। “
“তোমার প্রেমে ফিদা জাস্ট আর কিচ্ছুনা।”
চলবে,,,,