নয়নে লাগিল নেশা ১৯
Mousumi Aktar
রজনীর পেটে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই রজনী বার বার সেই হাত সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। খুব বিশ্রী ছিলো সেই হাতের স্পর্শ।খুব বাজে ভাবে স্লাইড করে যাচ্ছে। পাশে কয়েকজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে পেছনে প্রান্তিক ও আছে। কিন্তু রজনী কাকে সন্দেহ করবে।এর ই মাঝে প্রান্তিক এক টুকরো কেক রজনীর গালে স্পর্শ করতেই রজনীর কি হয়ে গেল বুঝতেও পারল না। নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে থা!প্প!ড় মা!র!ল প্রান্তিকের গালে। প্রান্তিক অবাক হয়ে দেখল রজনীর চোখ ছুটে যাচ্ছে রাগে আর ঘৃনায়। এই ঘৃনা ভরে দৃষ্টি ই প্রান্তিক সহ্য করতে পারেনা। উপস্থিত সবাই ভীষণ অবাক হয়ে তাকাল।
প্রান্তিক চৌধুরীর গায়ে কারো হাত মানে বিশাল একটা ব্যাপার। অন্রকে ফিস ফিস করছে প্রান্তিক কি এখন মেয়েটাকে আস্ত রাখবে।আর থা*প্প*ড় মারার ই বা কারণ কী? সবার ফিস ফিস শুনে প্রান্তিক বলল, গাইস সবাই জানতে চেয়েছিলেন আমি কবে বিয়ে করব আর ধরনের মেয়ে বিয়ে করব।আজ আমি পরিচয় করাচ্ছি। বলেই রজনীর দিকে তাকিয়ে দেখাল এই সেই মেয়ে যাকে প্রান্তিক চৌধুরী পছন্দ করেছে।মেয়েটা যে নিঃসন্দেহে চরিত্রবান তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই। গালে সামান্য স্পর্শ করতেই মেয়েটা কেমন অন্য জগৎ এ চলে গিয়েছে। পর-পুরুষের স্পর্শ যে মেয়ের ভাল লাগেনা সেই মেয়ে নিশ্চয়ই আগে পরে কোনো পুরুষের সাথে মেলামেশা করেনি। প্রান্তিক চৌধুরীর বিচক্ষণ চোখ কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা।
রজনীর চোখ ছলছল করছে। টুপ করে দু’ফোঁটা পানিও পড়ল।প্রান্তিকের মুখের দিকে তাকাল। মুখটা কেমন অসহায় দেখাচ্ছে। এত গুলো মানুষের মাঝে যাকে থা*প্প-ড় মারল। সে কীনা থা*প্প*ড় এর বিনিময়ে কিছু না বলে এতগুলো মানুষের মাঝে তার সম্মান হাজারগুন বাড়িয়ে দিল।এতগুলো অচেনা মানুষের মাঝে রজনীর নিজেকে অসহায় লাগছে।সে বেরিয়ে গেল ডায়নিং থেকে। সন্ধ্যার পর পর ই আকাশে চাঁদ উঠেছে। হঠাৎ প্রিয়তাদের ঘর থেকে অদ্ভুত সুন্দর ফুলের সুবাস ছড়াচ্ছে।এত ফুলের সুবাস আসছে কোথা থেকে।রজনী এদিক এদিক ঘুরে ফিরে বাইরে তাকাল।বাইরে তাকিয়েই তার মন ফুরফুরা হয়ে গেল।এত সুন্দর ফুল বাগান আছে এ বাড়িতে।
ডায়নিং থেকে সবাই চলে গেল। অনুষ্টান সংক্ষেপে শেষ করা হল।প্রান্তিক এর মন খারাপ।সামান্য কারণে যার তেজ এর মানুষ ভয় পায় আজ তার মন খারাপ। আঞ্জুমান ডাকল, ” দাঁড়াও প্রান্তিক।”
“আমি জানি আম্মু কি বলবা! প্লিজ বলোনা। আমার মন ভাল লাগছে না। তুমি যা বলবা তা শুনতে আমার সত্যি ভাল লাগছেনা।”
“কিন্তু তোমাকে শুনতে হবে।”
” যা খুশি বলো আম্মু, ওর নামে খারাপ কিছু বলোনা। তোমার ছেলে ওই মেয়েকে ভালবাসে। যাকে ভালবাসি তার নামে খারাপ কিছু কীভাবে শুনি!”
” আর আমাদের ভালবাসা সেটা কি ভালবাসা নয়। আমাদের ভালবাসা ও তো তুমি। তোমার গায়ে একটা মেয়ে হাত তুলবে আর আমরা সহ্য করব।”
“আম্মু এটা আমার পাপের ফল। সারাজীবন মেয়েদের তুচ্ছ করেছি। কেউ আমার জন্য হাউমাউ করে কাঁদলেও কোনো অনুভূতি আসেনি ভেতরে। এইসব তারই পাপের শাস্তি। আসলে একটা ছেলেকে শায়েস্তা করতে হাজার হাজার গুন্ডা লাগেনা এক মেয়ের প্রেম ই যথেষ্ট।”
মাহবুব ছেলের দিকে তাকিয়ে বুঝল, ” তার ছেলের রজনীর প্রতি গভীর প্রেম।কেমন অন্য জগৎ এ চলে গিয়েছে। এই মেয়ে ছাড়া তার ছেলেকে স্বাভাবিক করা যাবেনা।না হলে মা-বাবার সামনে কীভাবে প্রেম ভালবাসার কথা গড়গড় করে বলে যাচ্ছে।তার কঠিন ছেলেটা কেমন বদলে গিয়েছে।”
মাহবুব আঞ্জুমান কে ইশারা দিল কিছু না বলার জন্য।প্রান্তিক কে বলল,
” যাও বাবা রুমে যাও।রেস্ট নাও।”
ডায়নিং এ শ্রাবণ অন্ত মাহবুব আর আঞ্জুমান বসে আছে। আঞ্জুমান প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল, ” এই মেয়েকে এখনি তার বাড়িতে দিয়ে এসো।আমি সহ্য করতে পারছিন যে আমার ছেলের গায়ে হাত তুলেছে।আমি কোনদিন এমন অসভ্য মেয়েকে আমার ছেলের বউ করে আনব না।”
প্রিয়তা আঞ্জুমানের দিকে তাকিয়ে বলল, ” আম্মু এইখানে নিশ্চয়ই কিছু ঘটেছে। তুমি অযথাই ওকে ভুল বুঝছ। দাঁড়াও আমি কথা বলছি ওর সাথে।”
প্রিয়তা রজনীকে খুজতে নিজের রুমে গেল কিন্তু পেলনা।দৌঁড়ে ছাদে গেল।সেখানেও রজনী নেই। আর তখন ছাদে শ্রাবণ প্রবেশ করল।প্রিয়তা তাড়াহুড়ো করে বলল, ” এই রজনী কে দেখেছো?”
“তুমি আমার বউকে দেখেছো প্রিয়তা?”
“মানে?”
“মানে আমার বউ যার জন্মদিন আজ।বিখ্যাত মাফিয়া প্রান্তিক চৌধুরীর বোন। এক টুকরো কেক তো কপালে হলোই না। সাথে স্পেশাল উইশ ও করতে পারলাম না।”
“শ্রাবণ রজনীকে পাচ্ছিনা।”
” ও হারায় নি,আছে।তুমি আগে এসোতো জা-ন।”
শ্রাবনের হাতে ছোট্ট মিনি কেক।স্পেশাল অর্ডার দিয়ে খুব ই ছোট করে বানানো।শ্রাবন নিজের হাতের উপর কেক্টা রেখে মিনি একটা মোমবাতি রেখে বলল আগুন জ্বালাও।
এরই মাঝে অন্ত ছাদে প্রবেশ করে বলল, ” প্রান্তিক ভাই জানলে আ-গু-ন তোর জীবনে জ্বালিয়ে দিবে শ্রাবণ। “
“তুই এইখানে ক্যান? ভাবি কই? ভাবিরে খোজ যা।”
” আমি তোর স্পেশাল কেক খেতে এসছি।”
” এটা আমার বউ এর জন্য এনেছি উইশ করতে।”
” বাঘের বাসায় থেকে তার বোনকে স্পেশাল উইশ।”
” আরে ভাই সেতো বুঝলাম।কিন্তু বাঘের বউ এর দিক কু দৃষ্টি কে দিল তাই বুঝছিনা।”
” সেটা তো আমিও ভেবে যাচ্ছি।”
শ্রাবণ বলল, ” যাক আমিতো আর সিগারেট খাইনা যে আমার দোষ হবে।”
অন্ত বলল, ” আমি খাই বলে কি আমার দোষ হবে।”
শ্রাবণ বলল, ” তোর কথা শুনে এখন মনে হচ্ছে, ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খায়নি।”
,” একটা নির অপরাধ ছেলেকে এইভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।যায় হোক আমি প্রিয়তাকে একটা উপহার দিতে এসছি।”
” কি দিবি ফটাফট দিয়ে ভা’গ এখান থেকে। আমি প্রেম করব।”
অন্ত প্রিয়তার হাতে একটা বক্স দিয়ে বলল, ” জীবনে যেন কোনো দুঃখ না আসে তোমার জীবনে প্রিয়। সুখি হও। “
শ্রাবণ বলল,” হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছি। এই শালা বউ আমার তুই এত দোয়া করিস ক্যান?”
“হতেই পারে তোর চেয়ে আমার দোয়া খাটি বেশী।”
অন্ত নিচে নেমে গেল। শ্রাবণ বলল, ” ওর ভাব সাব কি?”
“আরে ধুর! জানোই তো এমন রহস্যময় কথা বলে। বাদ দাও।”
প্রান্তিক রুমে বসে সিগারেট টেনে যাচ্ছে। একের পর এক সিগারেট টেনে যাচ্ছে। দুই আঙুলের ভাজে জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে জানালার পর্দা ভেদ করে প্রান্তিক দেখল, রজনী ফুল বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।ফুলে ফুলে হাত রেখে ঘুরছে।প্রান্তিকের চোখে বিশ্বজাহানের শ্রেষ্ট ফুল যেন আজ তার বাগানে ফুটেছে।প্রান্তিক রজনীর দিকে তাকিয়ে বলল, ” একদিন আমাকে ভালবেসে হাউমাউ করে কাঁদবে? আমাকে জড়িয়ে ধরে বলবে আপনাকে ভালবাসতে কেনো এত দেরি করলাম আমি। সেইদিন আসবেই রজনীগন্ধ্যা। আমি অপেক্ষা করব। এই পৃথিবীতে যে যাকে ভালবাসে তার দেওয়া কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা রাখতে হয়। না হলে ভালবাসা যায় না। কারণ মানুষ সবার কথায় কষ্ট পায়না। যাকে ভালবাসে তার ই ক্ষমতা থাকে সামান্য কারণে কষ্ট দেওয়ার।কারণ ভালবাসার মানুষের কাছেই মানুষের এক্সপেকটেশন বেশী থাকে।প্রান্তিক রজনীর দিকে যত দেখছে মুগ্ধ হচ্ছে, এত সরল,এত ভীতু,আবার এত সাহসী এই মেয়ে। রজনীগন্ধ্যা তুমি আর কতভাবে আমাকে তোমার দিকে টানবে? একটা থা*প্প*ড় দিয়েও পা*গ-ল করে দিলে।প্রান্তিক চৌধুরীর বউ এমন সাহসী না হলে হয়। তুমিই আমার যোগ্য। কিন্তু সামান্য কেক এর জন্য এত বেশী রেগে গেলে কেনো প্রাণপাখি। অন্য কোনো কাহিনী নেইতো।
এরই মাঝে প্রান্তিকের ফোনে ফোন এল।ফোনের ওপাশ থেকে বলল,
” ভাই বাবু বলছে প্রান্তিকের পছন্দের মাইয়্যা রে আমিই আগে বিছানায় নিবো।”
প্রান্তিক ফোন কেটে দিয়ে বলল, কুলাঙ্গার এর বাচ্চা নিজের অজান্তেই নিজের বোন নিয়ে এমন কথা বললি। তুই না জেনেই বলেছিস কিন্তু প্রান্তিক তোকে ছেড়ে দিবেনা।জাস্ট ওয়েট। আগে তোর বোন কে সামলায় নিই।
চলবে?….