নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ২৩.
#WriterঃMousumi_Akter
চৌধুরী বাড়ির সামনে রজনীকে নামানো হল। এই বাড়িতে একদিন আগেও এসছিল রজনী তখন তার উদ্দেশ্য ছিল প্রিয়তার ভাইকে দিয়ে তার পেছনে ঘুরা ছেলেটাকে শয়েস্তা করা। আর আজ সেই বাড়ির সেই ছেলের ই বউ। ভাগ্য বড় অদ্ভুত জিনিস! আমরা কেউ জানিনা কখন কি হয়। কোনদিন যা সম্ভব নয় বলে ভাবি হয়ে যায়, যা নিশ্চিত হবে তা আবার হয়না। ভাগ্য কখন কি ঘটে যায় পৃথিবীর কেউ বলতে পারেনা।
বাড়ির গেটে নবাগত বউকে বরণ করতে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।আঞ্জুমান কিছুতেই রজনীকে বরণ করতে আসবেনা। মাহবুব জোর করে পাঠিয়েছে।রজনীর পাশে প্রান্তিক দাঁড়িয়ে আছে।এত মানুষের মাঝে রজনীর কানে কানে বলল, ” কনগ্রাচুলেশন্’স মিসেস চৌধুরী। আপনার সুদর্শন,হ্যান্ডসাম স্বামী আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে তার জীবনে আসার জন্য। তার বুকের স্বর্গের আজ থেকে পার্মানেন্ট মালিক আপনি।”
সবাই কীভাবে হা করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।রজনী লজ্জায় ম’রে যাচ্ছে। ছিঃ ছি মানুষ তো এই লোককে বউ পা-গ-ল ভাববে। এত মানুষের মাঝে কথা বলার কি দরকার। আঞ্জুমান থমথমে মুডে রজনীর মুখে মিষ্টি আর সরবত দিল। রজনী আঞ্জুমানের মুখ দেখে আন্দাজ করে ফেলল__আঞ্জুমান এই বিয়েতে রাজি না। ছেলের বউ হিসাবে সে মেনে নিতে পারেনি। রজনীর মন বেশ খারাপ হল।
রজনীকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসানো হল। চারপাশে মানুষের ভীড়।
বিভিন্ন গল্প চলছে। প্রিয়তা রজনীকে বলল, ” আজ থেকে কি তোকে ভাবি ডাকব।আর আপনি করে বলব।”
অন্ত প্রিয়তার কানে ফিসফিস করে বলল, ” আমিও কি তাহলে তোমাকে ভাবি ডাকব প্রিয়তা।”
“ক্যানো আপনি কি অন্য কিছু ডাকতে চাইছেন?”
“নাউজুবিল্লাহ! আমার চরিত্র শ্রাবনের মত নয়।”
” শ্রাবনের মত নয় মানে?”
” ওইযে ভাই এর বোনকে পটিয়ে নিল।সেই দিক দিয়ে আমাকে ১০০ তে ১০০ দেওয়া যায় ম্যাডাম।”
শ্রাবন প্রিয়তা আর অন্তর মাঝে এসে অন্তকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলল, ” দূরে থাক। সম্পদ বলতে আমার এইটুকুই আছে।তুই হাত বাড়াস ক্যান এইদিক।”
অন্ত বলল, “আমি অত হাত বাড়াবাড়ির মাঝে নেই, যদি থাকে নসিবে আপনা আপনি আসিবে।দেখ আমাদের ভাবি ভাইকে দেখতে পারত না আজ নসিবের জোরে ভাই এর বউ।”
“তা তুই কি বলতে চাইস নসিবের জোরে আমার বউ তোর হবে?”
“আমার নসিবে অত খারাপ কিছু লেখা নেই তোর মত লুইচ্চার বউ আমার হবে।”
রজনী ওদের কথা শুনে হেসে দিল।সারাদিনে এখন সে হাসল।
প্রান্তিকের বাগানের সব তাজা ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজানো হয়েছে।জীবনে প্রথম প্রান্তিক তার বাগানের ফুল নিজ হাতে কে’টে’ছে। যে ফুলগুলো সে নিজে যত্ন নিত,কখনো একটা পাঁপড়িও কাউকে ছিঁড়তে দেয় নি,সেই বাগানের অজস্র ফুল দিয়ে আজ বাসর ঘর সাজানো। তাজা ফুলের ঘ্রানে অন্যরকম এক সুবাস আছে।ঘর ফুলের সুবাসে ময়ময় করছে।রাত এগারটার দিকে সবার খাওয়া শেষ হলে রজনীকে বাসর ঘরে নিয়ে গেল প্রিয়তা সহ বাড়ির কয়েক জন মেয়ে।এইদিকে প্রান্তিক নেই কোথাও? প্রিয়তা খুজেও পাচ্ছেনা কোথাও।শ্রাবন কে ফোন দিয়ে বলল, ” ভাইয়া কোথায়? “
“আমরা ফুল বাগানে আছি।”
“ভাইয়া কি বাসর করবে না?”
“বাসর করার মত একটা রোমান্টিক ব্যাপার পুরুষ মানুষ কখনো মিস করেনা মাফিয়ার বোন।”
“তুমি আমার ভাইয়াকে আর একবার যদি মাফিয়া বলো আমি কিন্তু বলে দিব তুমি আমার সাথে প্রেম করতে চাও।”
” প্রেম করতে চাই? করিনা।”
” হ্যাঁ আমি বলব প্রেম করতে চাও। আমাকে এমন ভাবে পটিয়েছো ঘোলা চোখে তাকিয়ে, আমি এখন তোমার জন্য পা’গ’ল হয়ে গেছি।একজন মাফিয়ার বোনকে চোখের চাহনিতে ফাঁসিয়েছো এ কি কম অপরাধ। এর শাস্তি তোমাকে পেতে হবে শ্রাবন।”
“ইয়া মাবুদ আমাকে তুমি কোন কেসে ফাঁসায় দিলে। কি এমন পা’প করেছিলাম রাত দিন হুমকি শুনছি। জীবনে যেন আমার মত কোনো নিষ্পাপ ছেলে কোনো মাফিয়ার এমন ডেঞ্জারাস বোনের সাথে প্রেম না করে ভুলেও।আমি নিষ্পাপ পুরুষ জাতিকে জানাতে চাই, হে পুরুষ জাতি তোমরা নিষ্পাপ প্রয়োজনে সিঙ্গেল থাকো তবুও এই ছলনাময়ী নারীর প্রেমে পড়োনা। “
এরই মাঝে প্রান্তিক ডাকল, ” তুই ফাঁকায় গিয়ে কার সাথে ফিঁস ফিঁস করছিস। ফোন লাউড স্পিকার দে।”
অন্ত জোরে হেসে দিয়ে বলল, ” ভাই শ্রাবন এই কাজ করতে পারলে আমি ওর জুতা গুলা সেলাই করে মালা বানিয়ে কড়া রোদে পরে দাঁড়িয়ে থাকব।”
শ্রাবন অন্তর দিকে দাঁত কিড়মিড় করে তাকিয়ে বলল, “মাদারটোস্ট এক লাইন আগে থাকিস সব সময়।”
প্রান্তিক বলল, ” মেয়েটা কে? নাম কি? ঠিকানা দে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।”
” না ভাই আমার অমন সিরিয়াস জিএফ নেই।”
অন্ত ভ্রঁ কুচকে তাকিয়ে বলল, ” আরেকবার বল রেকর্ড করি।”
“হ্যাঁ আমার কোনো জিএফ নেই বলেছি। শালা রেকর্ড কর।”
” রেকর্ড ডান। তোর সব জিএফ কে দিচ্ছি।”
শ্রাবন আবার চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল, ” এ তো দেখছি আচ্ছা মুশকিল। অন্ত আমাকে ফাঁসিয়ে ছাড়বে। একবার ভাই একবার বোন। আছি কোন বিপদে ভাই! যে দিক যাবো বিপদ ছাড়া কিচ্ছু নেই।”
প্রান্তিক বলল, ” আমার বউ বাসর ঘরে বসে আছে। এখন বাকি খবর বল।”
শ্রাবন বলল, ” ভাই রোমিও বাঁচবে কীনা সন্দেহ আছে।যেই মা’ই’র টা দিছেন।ওর চ্যালাপ্যালা কারো অবস্থা ভাল না।”
“এখনো ম-রে নি?”
” না ভাই।”
” শালার কি কৈ মাছের জা-ন।”
“তাই মনে হচ্ছে।”
” আর আমার শালাবাবুর খবর কি?”
” ভাই তার অবস্থা মোটামুটি ভাল।তবে মা’ ই’র টা ভালোই লেগেছে।”
” অন্য কেউ হলে পুঁতে দিতাম। কিন্তু আমার বউ ভাই এর শোকে কাতর থাকবে,মন খারাপ হবে, দুঃখ হবে এসব ভেবে রয়ে সয়ে মে’রে’ছি।”
“ভাবি তো জেনে যাবে পরে।তখন কি হবে?”
“যা হবার হবে।রুমে আয় টাকা নিয়ে যা। শালাবাবুর জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা কর।”
“ভাই আপনিও না।”
“কি করব বল। ও অজান্তেই নিজের বোন নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে। ও কেনো আমার বউ এর নামে যে বাজে কথা বলবে তাকেই পুঁ’তে দিবো।”
প্রান্তিক ঘরে প্রবেশ করল।ঘরে প্রবেশ করতেই বাকিরা সবাই বেরিয়ে গেল।চারদিকে কেউ নেই, রজনীর এখন যেন কেমন নার্ভাস লাগছে।দুই হাতের মুঠোয় শাড়ির আচল শক্তভাবে খামচে ধরে রেখেছে। কীভাবে সে একটা পুরুষের সাথে একটা ঘরে থাকবে।তাও প্রান্তিকের মত এমন ভয়ংকর পুরুষ। প্রান্তিক আলমারি খুলে এক বাল্ডিল টাকা বের করল।বাইরে গিয়ে শ্রাবন কে দিয়ে এল।এসে রুমের দরজা লক করল।দরজা লক করতেই রজনীর গলা শুকিয়ে এল।তাও প্রান্তিকের দিকে রজনী তাকিয়ে দেখছে আর ভাবছে এতগুলো টাকা এত রাতে কি করতে দিলেন উনি।এসব ভাবতে ভাবতেই বুক কেঁপে উঠল। আচমকা প্রান্তিক এসে সোজা খাটের উপর বসল তার পাশে।রজনী কিছুটা সরে বসল। প্রান্তিক ও খানিকটা সরে বসল।সরে বসে বলল, ” আচ্ছা মানুষের কি জ্ঞাণ বলে কিছুই নেই? মানুষ জানে আমি বিয়ের জন্য কত্ত পা’গ’ল ছিলাম।আমার বউ নিয়ে এত সময় গল্পের কি আছে? আমি এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম গ-লা কাটা মুরগীর জন্য।”
রজনীর ভ’য় করছে সে আবার ও সরে বসল।প্রান্তিক ও সরে বসল।এভাবে সরে বসতে বসতে খাটের একদম কোনায় চলে গেল।প্রান্তিক এবার হেসে বলল, ” কি হল ভালোই তো লাগছিলো গেম টা।থামলে কেনো? সরে বসো।আর এখনি তুমি নিচে পড়ে যাবে।আর আমিও তোমার উপর পড়ে যাবো। উফফ ভেবেই রোমাঞ্চকর অনুভূতি হচ্ছে আমার। “
রজনী অন্যদিকে ঘুরে তাকিয়ে আছে।তার মাথা ঘোরাচ্ছে, কেমন বমি পাচ্ছে,অসহ্য লাগছে তার।এখনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।
প্রান্তিক রজনীর বেহাল দশা দেখে বলল, ” কি হচ্ছে কোনো সমস্যা?”
“ব’ বমি পাচ্ছে।”
প্রান্তিক ভ্রুঁ কুচকে বলল, “এখনি?”
রজনী কথাটা শুনে ভ্যাবাচেকা প্রান্তিকের দিকে তাকাল। সে কি বলল আর প্রান্তিক কি উত্তর দিল।রজনী ড্যাবড্যাব করে তাকাল প্রান্তিকের দিকে। প্রান্তিক সেরওয়ানির বোতাম খোলা শুরু করল।
রজনীর চোখ কপালে উঠল।সে বলেই ফেলল, ” খুলছেন কেনো?”
” বিয়ে তুমিও করেছো আমিও করেছি।তুমি ভারী শাড়িতে কষ্ট পাচ্ছো বলে আমিও চেঞ্জ করিনি আর। বাট তুমি যেটা মিন করলে ওটা ক্লিয়ার করে বলা যাবে।একচুয়ালি সেরওয়ানি খোলার কারণ হিসাবে কি ভাবছিলে রজনীগন্ধ্যা।”
রজনী ভীষণ লজ্জা পেল।তার সাথে মুগ্ধ হল প্রান্তিকের কথায়।তার জন্য সে নিজেও এত কষ্ট করছে।মানুষটার ভালবাসা সত্যি নিঁখুত। কিন্তু আমার এত ভ*য় করছে কেনো?
চলবে?……
(আগামি শুক্রবার কয়েকপর্ব এডিট করব। বানান চেক দেওয়া নেই।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)