নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ২৪
#WriterঃMousumi_Akter
রজনী অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে। প্রান্তিক মোলায়েম কন্ঠে বলল, “রজনীগন্ধ্যা আমার দিকে তাকাও? প্লিজ একবার তাকাও আর অনুভব করো তোমার সামনে যে মানুষটা বসে আছে সে জীবন থেকে মৃত্যু তোমার সাথে থাকবে।তোমার সুখ,দুঃখ,হাসি,আনন্দ সব কিছু ভাগ করে নিবে। তুমি কি সৃষ্টিকর্তার বিঁধান মানোনা? এই পৃথিবীতে এত মানুষ থাকতে কেনো তোমার আমার সাথে বিয়ে হল। নিশ্চয়ই এটা উপরওয়ালার চাওয়া ছিল।তুমি কি চাইলেই যে কোনো ছেলের সাথে বেড শেয়ার করতে পারবে? পারবে না! কিন্তু আমার সাথে পারবে। আমার বুকে মাথা রেখে অনন্তকাল ঘুমোতে পারবে। তুমি যত আমার কাছে আসবে তত রহমত সৃষ্টি হবে, পূন্য হবে।তুমি কি সেই রহমত আর পূণ্য থেকে দূরে থাকতে চাও? “
প্রান্তিকের কথা শতভাগ সত্য। তবুও রজনীর সংকোচ হচ্ছে, ভীষণ লজ্জা করছে।তার অজান্তেই সে এই মানুষটার প্রতি কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়েছে।কিন্তু প্রান্তিক যে প্রচুর ফাজিল টাইপ ছেলে সেটাও রজনী জানে।তাই সে ধরা দিতে চাইছেনা। সে জানে এসব ভাল ভাল কথা বলে প্রান্তিক উল্টা পাল্টা কিছু একটা করবেই। এসব থেকে বাঁচতে রজনি আস্তে করে ফ্লোরে পা ফেলে দূরে সরতেই প্রান্তিক এক লাফে বিছানা থেকে নেমে রজনীর সামনে গিয়ে দাঁড়াল।শুধু এটুকু করেই থামল না।কিছু না বলেই পাজা কোলে তুলে নিল রজনীকে।রজনী ভীতু আর লজ্জা মুখে তাকিয়ে আছে প্রান্তিকের দিকে।প্রান্তিক মুগ্ধ হয়ে দেখছে তার রজনীগন্ধ্যকে।আর ভাবছে কি আছে এই মেয়েটার মাঝে। এই মেয়ের জন্য সে হাজারো মেয়েকে রিজেক্ট করেছে। এই মেয়ের মাঝে সত্যি বিশেষ কিছু আছে।প্রান্তিক কে ওইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রজনির ভীষণ লজ্জা করছে। সে মাথা নিচু করল।প্রান্তিক একটা ঝাঁকি দিয়ে রজনির মাথা আবার সোজা করল। ভ্রু নাচিয়ে বলল, “তুমি আমাকে ডিস্টার্ব করছো কেনো?”
“কি ‘ কিসের ডিস্টার্ব! “
“আমি আমার বউ কে দেখছি।তুমি মাথা নিচু করছো কেনো?”
রজনী আবার লজ্জা পেল।
প্রান্তিক বলল, ” এত লজ্জা পেলে আমাকে ভালবাসবে কীভাবে?”
এই কথা শুনে রজনী লজ্জায় এবার আরো ম-রে যাচ্ছে। ছিঃ কি অসভ্য কথা। আর এমনিতেও সে এখন একটা ছেলের কোলে উঠে আছে। লজ্জার কি আর কিছু অবশিষ্ট বাকি আছে।
প্রান্তিক রজনীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার সেরওয়ানির বোতাম গুলা খুলে দাও। আমার বিয়ের আগের স্বপ্ন এটা তুমি শার্ট, পাঞ্জাবীর বোতাম লাগিয়ে দিবে আবার তুমিই খুলে দিবে। দাও খুলে দাও।”
রজনী কাঁপা হাতে বোতাম খুলছে। প্রান্তিক দুষ্টুমি করে বলল, ” আমি কারো ঋণ রাখিনা রজনীগন্ধ্যা।তুমি আমার বোতাম খুলে দিচ্ছো,আমিও তোমার টা খুলে দিবো ব্যাস শোধ।”
সাথে সাথে রজনীর আঙুল থেমে গেল। নিজের দিকে তাকাল। রজনীর কত বোকা প্রান্তিক যা বলে তাই সত্য ভাবে।ভেবেই হো হো করে হেসে দিল প্রান্তিক।
রজনী মিহি কন্ঠে বলল, ” আমাকে নামিয়ে দিন। “
“কেনো?”
” না, মানে।”
“নামাতে পারি চোখ থেকে ভয় ভীতি কমিয়ে রোমান্টিক ভাবে হেসে বলো আমাকে নামিয়ে দাও।আমাকে আপনি আপনি করবে না একদম। তুমি করে ডাকবে।”
“এত বড় মানুষ কে তুমি ডাকব।”
“এত বড় হয়েও লাভ কী হল। সেই চলতেই তো হবে তোমার মত পিচ্চি এক মেয়ের কথায়।”
বলেই প্রান্তিক রজনীকে নামিয়ে দিল।রজনীকে ধরে ড্রেসিন টেবিলের সামনে নিয়ে বসিয়ে দিয়ে বলল, ” এসব গহনা খুলে ফেলো।”
রজনী ড্রেসিন টেবিলের সামনে তাকিয়ে দেখে প্রান্তিক কে দেখা যাচ্ছে তার পেছনে। প্রান্তিক ও সেরওয়ানির খুলছে। ছিঃ কি নির্লজ্জ একটা মানুষ। রজনী চোখ অফ করল। প্রান্তিক টাওয়াল পেচিয়ে তার সামনেই পায়জামা খুলে থ্রি কোয়ার্টার পরে নিল।রজনীর এখনো চোখ বন্ধ আছে। চোখ বন্ধ অবস্থায় আকস্মিক এক ঘটনা ঘটে গেল।রজনীর ওষ্টে আরেকজোড়া ওষ্টের বিচরণ শুরু হল। রজনীর বুক কেঁপে উঠল ভ*য়ে। থতমত হয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে প্রান্তিক তার হাত রজনীর পিঠে আরেকহাত রজনীর আরেক বাহুতে চেপে ধরে নিজের ওষ্ট চেপে ধরেছে রজনীর ওষ্টে। রজনী ছোটাছুটির চেষ্টা করছে।খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির খোঁচায় রজনীর বেশ সুরসুড়ি ও লাগছে।মিনিট দু’য়েক এমন কান্ডর পর প্রান্তুিক রজনীর ওষ্ট ছেড়ে দিল।রজনী অগ্নিচোখে উঠে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে ঠোঁট মুছছে।রজনী কিছু বলার আগেই প্রান্তিক বলল,
” ঠোঁটের জঙ্গল পরিষ্কার করে দিলাম। এত সুন্দর ঠোঁটে এসব ছাইপাশ মাখানোর ফলে প্রকৃতি তার নিজস্ব গুন হারিয়েছে। আমি সেটা ফিরিয়ে আনলাম।”
” তাই বলে এইভাবে?”
“তো কি ভাবে? আমার বউ এর ঠোঁট কোনো টিস্যু পেপার ও ইউজ করতে পারবে না। ওয়াললি মাই লিপ্স।”
রজনী প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল।প্রান্তিকের ঠোঁট জুড়ে লাল লিপিস্টিক এর ছড়াছড়ি।রজনীর এই হাসির কারণ খুজে পেলনা রজনী। কারণ খোজার ও চেষ্টা করল না। তাকে আরো কয়েক যুগ বাঁচিয়ে রাখার জন্য রজনীর এই প্রাণবন্ত হাসিই তো যথেষ্ট। সব কিছু থমকে যাক তার রজনীগন্ধা না হয় এইভাবে হাসতে থাকুক।কি সুন্দর মিষ্টি সুবাস ছড়াচ্ছে। এই সুবাস কোনো ফুল থেকে নয়। রজনীগন্ধ্যার হাসি থেকে।
প্রান্তিক মাথার পেছনে হাত রেখে চুলকাতে চুলকাতে বলল,
” এইভাবে কেউ হাসে, মে’রে ফেলার ধান্দা না।এখন আমি ভুলভাল কিছু করলে তার দায় কে নিবে হুম।”
রজনী সাথে সাথে হাসি থামিয়ে দিল।প্রান্তিকের দিকে আঙুল উঁচিয়ে দেখাল আপনার ঠোঁটে লিপিস্টিক লেগেছে।
প্রান্তিক ড্রেসিন টেবিলের দিকে তাকাল। তাকিয়ে দেখল,
সত্যি তার ফর্সা গাল লাল লিপিস্টিক এ ছেয়ে গিয়েছে।এইবার রজনীর দিকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“এইবার তুমিও মুছে দাও, যেভাবে আমি মুছে দিয়েছি।”
রজনী লজ্জা পেল।লজ্জা পেয়ে বলল, “ছিঃ আমি পারব না।”
“কত পারবে। বার বার এই সুন্দর ওষ্টে রাজত্ব চালাবে।লিখে রাখো।”
রজনী মনে মনে বলল, ” এত বাজে কথা মানুষ কীভাবে বলে। দুনিয়ার সব থেকে নির্লজ্জ মানুষের সাথেই কি আমার বিয়ে হল।”
রজনী ভাবনায় যখন বিভোর তখন ই প্রান্তিক গিয়ে রজনীর পেছনে দাঁড়াল। রজনীর গলার হার খুলতে গলায় হাত রাখতেই শিউরে উঠল রজনী। এক হাত লাফিয়ে উঠল।
প্রান্তিক গম্ভীর মুখে বলল, ” কুল।এত লাফালাফির কিছুই নেই। আমি জাস্ট হেল্প করছি তোমাকে।স্থির হয়ে দাঁড়াও।”
প্রান্তিক রজনীর সাথে একদম মিশে গলার হার খুলছে। নাকের তপ্ত নিঃশ্বাস গিয়ে পড়ছে রজনীর ঘাড়ে। প্রান্তিক গলা, আর কানের ভারি গহনা খুলতে খুলতে নিজেকে হারিয়ে ফেলল রজনী গন্ধ্যার সুবাসে। নিজের বেখায়েলি রজনীর ঘড়ে ওষ্ট ডুবিয়ে দিল। রজনী সাথে সাথে কেঁপে উঠল। আচমকা যেন বিদ্যুৎ বেগে শুরু হল সেই কম্পন।সমস্ত শরীর কাঁপছে তার। প্রান্তিকের চোখে দারুণ নেশা। রজনী খানিকটা দূরে গিয়ে দুই হাত দিয়ে শাড়ির আঁচল খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে রইল।ভয়ে প্রচন্ড বেগে বুক কাঁপছে।
প্রান্তিক গুটি গায়ে এগিয়ে গেল রজনীর দিকে। রজনীর গালে আলত করে চুমু দিয়ে বলল, ” এখানে ভয়ের কিছুই নেই জাস্ট একটু চুমুই তো। ভয় পাচ্ছো কেনো?”
রজনী ঘাবড়ে গিয়ে বলল, ” আ -আমি ঘুমোবো।”
” এই রাতে কেউ ঘুমায় মেয়ে।”
” তাহলে?”
” মানুষ প্রেম করে, গল্প করে।”
” কিন্তু আ -আমার তো ঘুম পাচ্ছে।”
“ওকে চলো আমরা এক সাথে ঘুমোয়।”
” এক সাথে মানে?”
“এক সাথে দুজনে ঘুমোবো।”
“আপনি আমার কাছে ঘুমোবেন?”
“মানুষ বউ ছাড়া কি অন্য মহিলার পাশে ঘুমোয়।”
” আ-আমি ঘুমোবোনা আপনার পাশে।”
“এ কি সিনেমা রজনীগন্ধ্যা।আমি সোফায় ঘুমোবো আর তুমি খাটে নয়ত ফ্লোরে।এটা প্রান্তিক চৌধুরীর সিনেমা।এখানে ফ্লোর,সোফা এসব কিছুই চলবেনা।এখানে তোমাকে হয় ঘুমোতে হবে নয় জেগে থাকতে হবে তবে জায়গা নির্দিষ্ট। সেই জায়গা টা হল আমার উন্মুক্ত বুক।আমি যতদিন বেঁচে আছি এই নিয়মের কোনো বরখেলাপ হবেনা।”
রজনী বুঝতে পারল প্রান্তিকের হাত থেকে আর কোনো ভাবেই তার রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। রজনীকে থম মেরে বসে থাকতে দেখে প্রান্তিক আলমারি খুলে নিজের সাদা একটা টি-শার্ট বের করে এনে দিয়ে বলল, ” যাওয়া ওয়াশ রুম গিয়ে এটা চেঞ্জ করে এসো।”
প্রান্তিকের হাতে টি-শার্ট দেখে রজনীর মাথা ভড়কে গেল।সে জীবনে এসব পরেনি।সে গ্রামের মেয়ে এসব পোশাক পরার কথা ভাবতেও পারেনা। রজনীকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রান্তিক বলল, ” ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? যাও শাড়ি চেঞ্জ করে এটা পরে এসো।এত ভারী পোশাক পরে ঘুমোনো যায় কখনো।চাইলে আমার মত পোশাকেও থাকতে পারো জাস্ট থ্রী কোয়ার্টার আর খালি গায়ে।”
রজনী কপালের চামড়া ভাজ করে প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে বলল, ” আপনি এত ঠোঁট কাটা কেনো? মুখে যা আসছে তাই বলছেন।”
” তা তুমি আমার বউ। তুমি কিছু পরলেও বা কী না পরলেও বা কী? এতে তো আর ইজ্জত যাবেনা।”
“আপনার লজ্জা নেই সেটা অনেক আগে থেকেই জানি।তার মানে আমার লজ্জা নেই এমন তো না।”
“ওহ নো! রজনীগন্ধ্য। এইভাবে বড় বড় চোখে তাকাবে না। আই সয়ার আমি এলোমেলো হয়ে যাবো। অবাধ্য এক প্রেমিক পুরুষ হয়ে যাবো। তোমার নেশায় উন্মাদ হয়ে যাবো। ভালবাসারা গভীরতা তীব্র থেকে তীব্র রুপ ধারণ করবে। ”
বলেই প্রান্তিক রজনির দিকে এগিয়ে গেল। রজনীর হাত ধরে আঙুলে ডায়মন্ড এর দামি রিং পরিয়ে চুমু দিল।
রজনীর মুখে কোনো কথা নেই। সে কথা বলার মত বল পাচ্ছেনা। গায়ের শক্তি যেন ক্ষয় হয়ে গিয়েছে।
রজনী মিহি কন্ঠে বলল, ” আম্মু সালাম করতে বলেছিলো।” বলেই নিচু হতে যেতেই প্রান্তিক রজনীকে নিজের কাছে টেনে নিল। প্রান্তিকের এই স্পর্শ রজনীর ভাল লাগছে। প্রান্তিকের বুকে মাথা রেখে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। দুজন মানব মানবীর মাঝে পৃথিবীর কেউ নেই। স্বর্গময় ভালবাসায় ভেষে গেল দু’জন।প্রান্তিক রজনীকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গেল। তার বক্ষে রজনীর মাথা রেখে রুপকথার প্রেমের গল্প শুরু করল। রজনী লজ্জায় গুটিসুটি মেরে পড়ে রয়েছে। ইশ!কি লজ্জা। অগনিত চুম্বনে ভরে গেল রজনীর গাল আর ওষ্ট। মেয়েটা লজ্জায় হয়ত আর কোনদিন প্রান্তিকের দিকে তাকাতেই পারবেনা।
চলবে?………
(রেসপন্স করবেন সবাই।)