নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ২৫.
#WriterঃMousumi_Akter
খুব ভোরে রজনীর ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙতেই নিজেকে আবিষ্কার করল একজন পুরুষমানুষের আলিঙ্গন তাকে আকড়ে ধরে রেখেছে। রজনী চোখ পিটপিট করে তাকাল। বিবাহিত জীবনের প্রথম সকাল আজ তার। তার পাশে ঘুমিয়ে থাকা মানুষটা ঘুমের মাঝেও তাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। খালি গায়ে উপুড় হয়ে রজনিকে শক্তভাবে আলিঙ্গন করে রেখেছে। রজনী মুগ্ধ হয়ে প্রান্তিক কে দেখছে। মানুষটাকে যতটা ভয়ংকর ভেবেছিল আসলে ততটা ভয়ংকর না। ভেতরে কোমল একটা মন আছে। যা সে গত রাতে বুঝতে পেরেছে। রজনী পুরা ঘরে চোখ বুলালো। চারদিকে শুধু তার ছবি। তার এত ছবি এই মানুষ কীভাবে কালেক্ট করেছে। ঘরের সমস্ত দিকে চোখ বুলিয়ে রজনীর দারুণ কিছু অনুভব হল। এত গোছানো একটা মানুষ হয়। এতটা পরিপাটি সুন্দরভাবে গোছানো রুম দেখেই রজনী মুগ্ধ।
হঠাৎ রজনীর খেয়াল হল তার পরণে বেনারসী নেই। বিশাল লম্বা একটা সাদা টি-শার্ট পরা। পেটিকোট এর সাথে টি-শার্ট কীভাবে এল? এটাই তো কাল প্রান্তিক তাকে পরতে বলেছিলো কিন্তু সে তো পরেনি। তাহলে টি-শার্ট কীভাবে এল। সে বিছানার এদিক -সেদিক তাকাল শাড়ি কোথায় দেখার জন্য। তার শাড়ি, ব্লাউজ সব সুন্দর করে ভাজ করে খাটের পাশের টি-টেবিলে রাখা। রজনীর চোখ কপালে উঠে গেল। তার মানে প্রান্তিক তার শাড়ি,ব্লাউজ সব চেঞ্জ করে দিয়েছে। গতরাতের কথা রজনীর স্পষ্ট মনে আছে। প্রান্তিক যখন বেসামাল হয়ে খুব বেশী ঘনিষ্ট হতে যাচ্ছিল তখন রজনী খুব নার্ভাস হয়ে কেঁদে দিয়ে বলেছিলো আমাকে সময় দিন প্লিজ! আমার ভ’য় করছে। অসুস্থ লাগছে।
প্রান্তিক নিজেকে সামলে নিয়ে রজনীর কপালে চুমু দিয়ে বলেছিল,
” চিন্তা করোনা, তুমি আমার বউ। সময় তো চলে যাচ্ছেনা। তুমি একদিনের জন্য আমার জীবনে আসোনি।সারাজীবনের জন্য এসেছো। আজ কিছু না হলে যে আর কোনোদিন সুযোগ পাবোনা এমন তো না। স্বামী নামক ধর্ষক হতে চাইনা আমি। তুমি যদি কোনদিন না চাও তাহলে কোনদিন ই কিছু হবেনা তবুও তোমাকে কষ্ট দিতে পারব না আমি। তুমি আমার জন্য কষ্ট পেলে আমার বেঁচে থাকাটায় বৃথা। এর আগে কি করেছি তা ভাবতে চাইনা। তবে আমি আজ থেকে বাঁচব তোমাকে ভাল রাখার জন্য, তোমার চোখে অশ্রু নয় গোলাপের পাপড়ির ন্যায় ঠোঁটে শুভ্র পবিত্র হাসি দেখতে। সে হাসি আমাকে আরো উন্মাদ করে দিবে তোমাকে ভালবাসতে। আমি তোমার সব শর্ত মেনে নিব রজনীগন্ধ্যা শুধু এই শর্ত মেনে নিব না।আমাকে বিশ্বাস করো তুমি। তোমার অনুমতি ছাড়া কিচ্ছুই হবেনা। তবে আমার বুকে মাথা রেখে তোমাকে রোজ ঘুমোতে হবে।তুমি দূরে থাকলে হার্টবিট অচল হয়ে যাবে। আমি অসুস্থ হয়ে যাবো। আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি তুমি নিজেও জানোনা রজনীগন্ধ্যা। যখন তুমি ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকাতে প্রতিটা চোখের পলকে নিজের মৃত্যু অনুভব করতাম। এটা আমার লাইসেন্স করা পিস্তল রজনীগন্ধ্যা।যদি আমার প্রতি ঘৃণা আসে সোজা সুট করে দিও আমি হাসি মুখে বরণ করে নিব। তবুও ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে দেখোনা আমাকে। আমি তাহলে শেষ হয়ে যাব। এই পৃথিবীতে প্রিয় মানুষের ঘৃনাভরা দৃষ্টি কতটা ভয়ানক, কতটা যন্ত্রণাময় তুমি বুঝবেনা। আমি কঠিন মানুষ তাই টিকে থেকেছি। তুমি নরম ফুল। তুমি হলে সহ্য করতে পারতে না। অনেক কিছুই বললাম। এইবার কি একটু পারমিশন পাবো তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোনোর।রজনীর সম্মতিতে প্রান্তিকের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়েছিল রজনী।কিন্তু এখন এই অবস্থা কেনো? ছেলে মানুষ এত মিথ্যা বলতে পারে। কাল রাতে এত গোল গোল কথা বলে এখন আমার ঘুমোনোর সুযোগে এসব করেছে। রজনী খুব তেজের সাথে জোর খাটিয়ে বিছানা থেকে উঠার চেষ্টা করল। কিন্তু এতই কি সোজা প্রান্তিক চৌধুরীর শক্ত আলিঙ্গন ভেদ করে বেরোনো।কয়েকবার চেষ্টা করতেই প্রান্তিকের ঘুম ভাঙল। সে চোখ অফ রেখেই ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
” কি হয়েছে মিসেস চৌধুরী, সারারাত ঘুমোতে দাওনি। এখন তো ঘুমোতে দাও। যদি রাতদিন ২৪ ঘন্টা আদর করতে বলো তাহলে পারব কীভাবে? ঘুমিয়ে নিজেকে একটু ফিট রাখাতো প্রয়োজন।”
কথাটা শুনেই রজনীর মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল। মানুষ এত ঠোঁট কাটা হবে ক্যানো? আশ্চর্য! সেকেন্ডে সেকেন্ডে লজ্জা দেয় এই লোক।রজনী তীব্র মেজাজে বলল,
” আপনাকে আমি রাতে ঘুমোতে দিইনি মানে? আর আপনাকে আদর করতে বলছে কে? এত বানিয়ে বানিয়ে কথা বলেন ক্যানো?”
প্রান্তিক রজনির হাত ধরে আরেকটু টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে মাথা নিচু করে হাতে চুমু দিয়ে বলল,
“উঁহু বানিয়ে কিচ্ছুই বলিনি। নতুন বউ আমার তুমি। তুমি কি মুখ ফুটে বলবে নাকি তোমার আদর লাগবে? ওসব ননসেন্স টাইপ ছেলেরা বোঝেনা। আমার মত হ্যান্ডসাম ছেলে ঠিক ই ওসব বুঝতে পারে।”
” আজে বাজে কথা না বলে ঘুরুন এদিক।”
” আবার তোমার দিকে ঘুরতে বলছো ক্যানো? সাত-সকালে একটা অনর্থ হয়ে যাবে কিন্তু। ঘুমন্ত মেয়ে দেখলে এমনিই নেশা কাজ করে।”
“এর আগে কতগুলা ঘুমন্ত মেয়ে দেখেছেন?”
” খাইছে রে, এখন আমি বিবাহিত। কথা হিসাব করে বলতে হবে। “
“আমার গায়ে টি-শার্ট কীভাবে এল।”
“তোমার বর পরিয়ে দিয়েছে।”
“ক্যানো?”
“তার বউ অত ভারী শাড়ি নিয়ে ঘুমোতে কষ্ট পাচ্ছিল।”
“কাল যে এত বড় বড় কথা বলা হল আমার অনুমতি ছাড়া কিছু হবেনা সেসব কথার দাম কই রাখলেন।”
“আমি তো কথা রেখেছি।”
” কীভাবে?”
“জাস্ট কাপড় চেঞ্জ করে দিয়েছি আর কিছুই করিনি।”
“চেঞ্জ করার সময় তাকান নি আমার দিকে?”
“তাকানো ও নিষেধ ছিল বুঝি!”
“অসভ্য মানুষ। “
“আমি অনেক অসভ্য রজনীগন্ধ্যা। আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে।”
বলেই প্রান্তিক চোখ খুলল। চোখ খুলে কাত হয়ে রজনীর দিকে তাকাল। চোখ গেল সোজা রজনীর চোখের দিকে। ওই চোখ দেখেই তো তার চূড়ান্ত সর্বনাশ ঘটেছিল।প্রান্তিক রজনিকে আবার ও দুইহাতে শক্তভাবে আলিঙ্গন করে ধরে বলল, ” রাগ করছো কেনো সুইটহার্ট।”
রজনী আরো রেগে গিয়ে বলল,
“রাগ করব না কি করব।কাজটা আপনি ঠিক করেন নি।”
“কিচ্ছুই করিনি, শুধু একটু কিস করতে ইচ্ছা হচ্ছিলো, আমার আবার যা ইচ্ছা হয় তাই করি। কিস করেও দিয়েছি।”
“কোথায়?”
“তাই তোমাকে বলি, ওসব বলা যাবেনা।”
“আপনার কাছে আর জীবনেও ঘুমোবোনা আমি।”
“তোমার আমার কাছে না ঘুমোলেও চলবে,কিন্তু আমি ঘুমোবো।”
রজনী ড্যাব ড্যাব চোখে তাকালো প্রান্তিকের দিকে।
প্রান্তিক রজনীকে ছেড়ে দিয়ে বিছানা ত্যাগ করে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। জানালার পর্দা সরিয়ে কাচ টেনে দিল। জানার গ্রিল ধরে বাইরে তাকাল।তার ফুল বাগানটা অসম্ভব সুন্দর। মিষ্টি সুবাসে ভরপুর।প্রান্তিক রোজ সকালে উঠে এই বাগানের ফুলের মিষ্টি সুবাস নেয়। পেছনে তাকিয়ে বলল, ” রজনীগন্ধ্যা ভীষণ পিপাসা পেয়েছে আমার।”
রজনী জগ থেকে পানি ঢেলে প্রান্তিকের সামনে ধরে বলল,
” নিন পানি। “
প্রান্তিক রজনীর হাতে পানির গ্লাস থেকে মৃদু হেসে বলল, ” এই পিপাসা না। লং টাইম স্মোক করিনা। “
রজনী অগ্নিচোখে তাকিয়ে পানির গ্লাসের পানি ঢকঢক করে গিলে খেয়ে ফেলল।
প্রান্তিক প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার নিয়ে পেছনের দরজা খুলে বাইরে চলে গেল সিগারেট খেতে।
রজনী পেছন থেকে ডেকে বলল, ” ওসব না খেলে হয়না?”
” দীর্ঘদিনের অভ্যাস ছাড়ি কীভাবে?”
“আপনি জানেন না সিগারেট খেলে ক্যান্সার হয়।”
” জানিতো।”
” তাহলে খান কেনো?”
” ক্যান্সার কি খুব বড় অসুখ রজনীগন্ধ্যা?”
” ক্যান্সারের চেয়েও কি বড় অসুখ আছে দুনিয়াতে।”
” ভালবাসার চেয়ে বড় অসুখ দুনিয়াতে নেই রজনীগন্ধ্যা। তুমি আমার সেই ক্যান্সার যা সেরে উঠবার মত নয়।”
রজনীর চোখ ছলছল করে উঠল। এই মানুষ টা তাকে এত ভালবাসে।তার মত ভাগ্যবতী নারী কী এই দুনিয়াতে আর আছে।
রজনী চেঞ্জ করবে।শাড়ি কোথায় রাখা সে জানেনা।উপায় না পেয়ে আবার ও সেই ভারী বেনারসি পরা শুরু করল।এরই মাঝে রজনী খেয়াল করল পেছনের দরজায় কেউ উঁকি দিচ্ছে। দুটো চোখ তাকিয়ে আছে রজনীর দিকে। রজনী ভয়ে এক চিৎকার মারল।রজনীর চিৎকারে প্রান্তিক বাগান থেকে এক দৌঁড়ে রুমে আসল। প্রান্তিক কে দেখেই রজনী কাঁপতে কাঁপতে জড়িয়ে ধরল।রজনীকে এভাবে কাঁপতে দেখে প্রান্তিক রজনীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“কি হয়েছে রজনীগন্ধ্যা? এত ভয় পেয়েছো ক্যানো?”
রজনী আঙুল তুলে বাইরের দরজা দেখিয়ে বলল, ” ওখানে কেউ ছিল। আমাকে বাজে ভাবে দেখছিলো।”
প্রান্তিকের শরীর জ্বলে উঠল। দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করল।কিন্তু রজনীর ভয় কমাতে বলল, ” কেউ না, আমি ছিলাম। আমি ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিলাম।”
বলেই রজনীকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরল।জড়িয়ে ধরে বলল,
” যতক্ষণ আমি বেঁচে আছি, কেউ তোমাকে স্পর্শ করতে পারবেনা আই প্রমিজ।”
“আ-আপনি বেঁচে থাকবেন। আমার আয়ু নিয়ে হলেও বেঁচে থাকবেন।আপনি ম-রা-র কথা বলবেন না।”
চলবে?…
(বলেছিলাম শুক্র -সোমবার গল্প দিব। কিন্তু সেভাবেও দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। পেজ ফলো দিয়ে রাখুন। যখন ই পোস্ট দিবো আপনাদের কাছে নটিফিকেশন পৌছে যাবে।)