নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৩০
#WriterঃMousumi_Akter
প্রান্তিক গভীর মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে রজনীর দিকে। বিচক্ষণতার সাথে শ্রাবণের আর প্রিয়তার ছবির কথা ভেবে চলেছে। কে পাঠালো তাকে ছবি। ছবির কথা ভাবতে ভাবতে রজণিকে প্রশ্ন করল,
” কি রজনীগন্ধ্যা তুমি শ্রাবণ আর প্রিয়তার কথাই তো বলতে চাইছিলে তাইনা?”
রজনি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে গভীর চিন্তায় ধ্যানমগ্ন হয়ে তাকিয়ে রইলো প্রান্তিকের দিকে। রজনীকে চিন্তিত দেখে প্রান্তিক হো হো করে হেসে উঠে বলল,
“কি ভাবছো? আমি কিভাবে জানলাম? “
রজনি আমতা আমতা করে বলল, ” হ্যাঁ কীভাবে জানলেন?”
প্রান্তিক রজনির সরল মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ” আমি কি জানিনা সেটা জিজ্ঞেস করো সুইটহার্ট। আমার একজন শ*ত্রু তৈরি হয়েছে। অথচ সে শ*ত্রু জানেই না আমি তাকে অনেক আগে থেকেই ধরে ফেলেছি। তার উদ্দেশ্য তোমার ক্ষতি করে আমাকে কষ্ট দেওয়া। মানুষ এত বোকা কীভাবে হয়!তার বোঝা উচিৎ প্রান্তিক চৌধুরীর চোখ ফাঁকি দেওয়া এত সহজ নয়। শুধু দেখে যাচ্ছি। আমার সব প্লান সাজানো শেষ। আমার সাথে প্রতরণার শান্তি কত ভয়াবহ হবে সে বুঝতেই পারছেনা। আমি দাবার যে গুটি সাজিয়েছি সে বুঝতেও পারবেনা কীভাবে গেইমে হারিয়ে দিবো।তার মনে হবে আমি কিছুই জানিনা,কিছুই বুঝিনা। আরো এক ধাপ তার কাছাকাছি এগিয়ে যাবো।আরো বেশী ক্লোজ হবো। তার পর সেই আঘাত টা করব। যে আঘাতের কথা তার কল্পনাতেও ছিলনা।প্রতারক এর শাস্তি দিতে প্রান্তিক কত বড় গেম খেলতে জানে এইবার বুঝবে। শুধু কষ্ট হচ্ছে নিজের প্রিয় মানুষ দের গুটি হিসাবে ব্যবহার করতে হবে।”
রজনির ভ*য়ে আত্মা শুকিয়ে এল৷ প্রান্তিক এত ভয়াবহ আর বিচক্ষণ তার কল্পনার ও বাহিরে ছিল।শ*ত্রুকে বুঝেও দিলনা তার সব প্লান জেনে গিয়েছে৷ তবুও রজনি প্রশ্ন করল,
“আচ্ছা যদি আপনার শ*ত্রু আপনার প্লান বুঝে যায়। আপনার চেয়েও চালাক হয়।”
“সে অনেক চালাক বুঝলে। চালাক না হলে কি আর প্রিয়তা আর শ্রাবনের ছবি আমার ইনবক্সে দেয়। হাউ ননসেন্স। “
“আপনি এখন কি করবেন? শ্রাবণ আর প্রিয়তাকে কি মেনে নিবেন না?”
“শ্রাবণ এত বোকা কেনো? আমি ওর চোখ দেখে অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিলাম ওর চোখে কি আছে। ওর মত কা’পুরুষের সাথে কি আমার বোনের বিয়ে দেওয়া মানায়। আমি কি ওকে মে*রে ফেলতাম। না হয় মে*রে*ই ফে-ল-তা-ম। ভালবাসার মানুষের জন্য মানুষ জা-ন দিচ্ছে। আর ও কি-না মুখ ফুটে কোনদিন বলতেই পারল না। ও কি ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য?”
“উনিই যোগ্য। আপনি কষ্ট পাবেন বলে নিজে কষ্ট সহ্য করছে।”
“এই পৃথিবীতে শ্রাবণ ছাড়া আমার বোনকে কেউ ভাল রাখতে পারবে না তাইনা রজনীগন্ধ্যা?”
“হ্যাঁ। “””
“আমি অনেক ক্লান্ত রজনীগন্ধ্যা৷ জীবনে প্রথমবার প্রান্তিক চৌধুরী ক্লান্ত।একটু মানসিক শান্তি চাই৷ দিবে আমায়।”
রজনি প্রান্তিকের এমন কাতর মুখ আগে দেখেনি। প্রান্তিকের দুই হাত ধরে বলল, “আমি আছি আপনার সাথে। আপনার সকল ক্লান্তির ভাগ আমি নিবো। আপনাকে একা বইতে দিবোনা কিছুই “
বলেই রজনী আলত করে প্রান্তিকের কপালে চুমু দিল।প্রান্তিক সকল ক্লান্তি ভুলে চমকে উঠল।প্রথমবার রজনী তাকে চুমু দিয়েছে।প্রান্তিকের দুই ওষ্টে হাসি ফুটল। সে রজনীর কপালে চুমু দিয়ে বলল,
“আজ প্রথম তোমার ওষ্টের ছোঁয়া আমার কপালে নেমে এসেছে। হ্যাপি কিস ডে সুইটহার্ট। “
রজনী লজ্জা পেল। প্রান্তিক মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে রজনীর দিকে।ভালবাসার মানুষ পাশে থাকলে বোধহয় সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। সব দুঃখ বিলিন হয়ে যায়।
——————————————————————
রাত দশটা বাজে। ডায়নিং এ সবাই বসে আছে। প্রান্তিক অন্ত আর শ্রাবণ কে থাকতে বলেছে। প্রান্তিকের পাশেই মাহবুব বসে আছে। তার পাশে আঞ্জুমান বসা। অন্ত আর শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়তা আর রজনী একপাশে বসা। লতিফা সবার জন্য চা নিয়ে এসছে। ভ*য়ে শ্রাবণের চোখ মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। তবুও সে আজ একটা রিস্ক নিবে। যা কিছু হোক প্রান্তিক কে বলবে সে প্রিয়তা কে ভালবাসে।এর জন্য জীবন দিতে হলেও দিবে। সবাই কে চা দিল লতিফা।মাহবুব সব ডিসিশন প্রান্তিকের উপর ছেড়ে দিয়েছে। প্রান্তিক চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোর সাথে প্রিয়তার কোনো সম্পর্ক আছে শ্রাবণ?”
শ্রাবণের বুক কেঁপে উঠল ভ-য়ে। তবুও আমতা আমতা করে বলল,
“জি ভাই। “
“কি সম্পর্ক?”
“আমি চাইলে আমাকে মে-রে ফে ল তে পারেন ভাই। আমি খুশি মনে মেনে নিবো। তবুও আজ সত্যটা বলেই ম র তে চাই। আমি আর প্রিয়তা দুজন দুজনকে পছন্দ করি। প্রিয়তার জন্য আমি জীবন দিতেও প্রস্তুত ভাই।কিন্তু আপনার আগে আমার ভালবাসা নয়। আপনাকে কষ্ট দিয়ে আমি কিছুই করতে পারব না। আপনি যা সিদ্ধান্ত নিবেন তাই হবে ভাই।”
“এতদিন বলিস নি ক্যানো?”
“ভ-য়ে ভাই। নিজের প্রাণের ভ-য় না। আপনার মত ভাই হারানোর ভ-য়।”
প্রান্তিক চায়ের কাপ রেখে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই কাপুরষ কে পছন্দ করলি। যে তোর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তবুও আমাকে বলতে পারছে না। এই অপরাধের শাস্তি দেওয়া উচিৎ কীনা বল!”
প্রিয়তা এবার হেসে দিল। শ্রাবণ ও যেন গ্রিন সিগন্যাল পেল।কিন্তু অন্ত? সেও কি খুশি হয়েছে। সে-ও হাসল। তবে ওই হাসিতে কোনো মাধুর্যতা নেই। মুখটা কালো হয়ে গেল। তবুও হাসল। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে হাসল।
মাহবুব শ্রাবণ কে বলল, ” আমার পাশে এসে বসো বাবা।”
শ্রাবন মাথা নিচু করে গিয়ে মাহবুব এর পাশে গিয়ে বসল। মাহবুব বলল,
“তুমি এত ভাল কেনো বাবা! তুমি কি জানো প্রান্তিক আর তোমাকে কখনো দুই নজরে দেখিনি।তোমার চেয়ে ভাল ছেলে কি আমি দুইটা পাবো পৃথিবীতে। আমার মেয়েকে নিশ্চিন্তে তোমার হাতে তুলে দিতে পারলেই আমার শান্তি।”
শ্রাবণের লজ্জা করছে। কি বলবে বুঝতে পারছেনা।এত আনন্দ আগে হয়নি তার। পৃথিবীর সব সুখ যেন হাতের মুঠোয় নেমে এল।
অন্ত উঠে হাঁটা দিল।প্রান্তিক বলল, “কোথায় যাচ্ছিস?”
“ভাই বাসায় যাচ্ছি।”
“শ্রাবণ আর প্রিয়তার বিয়ে না হওয়া অবধি কোথাও যাওয়া হবেনা তোর। কাল থেকে বাড়ি ঘর সব সাজাবি তুই।”
“আ- আমি ভাই?”
“তাহলে আর কে? যার বিয়ে তাকে দিয়ে কাজ করাবি নাকি। কিহ! রে ভাই তুই।”
“ঠিক আছে ভাই।”
রাতে ডিনার শেষে প্রিয়তা আর শ্রাবণ ছাদে গেল।আকাশে গোল চাঁদ।চাঁদের নরম আলো। ছাদের রেলিং ধরে ওরা দুজন দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা শ্রাবণের কান টেনে বলল, “তোমাকে বলেছিলাম ভাইয়া মেনে নিবে। তুমি শুধু শুধু ভ*য় পাচ্ছিলে।”
“আমার ও ভরসা ছিল ভাই মেনে নিবে। কিন্তু একটা ভ-য় ছিল।যদি না মানে।”
“বোকা কোথাকার।”
“আচ্ছা এসব থাক। তুমি বিয়েতে কি পরবে?”
“গোল ম্যাক্সি পরব।”
“সে কি ড্রেস।”
“মহিলারা পরে ওইযে পাঞ্জাবীর মত।”
“কি পরে?”
“ওয়েট পিক দেখায়।” বলেই প্রিয়তা নেটে সার্চ করে ম্যাক্সির পিক দেখাল।শ্রাবণ নাক সিঁটকে বলল,
“ধুর! এই কোনো পোশাক হল। এটা কেউ পরে বিয়েতে।”
“কেউ না পরে না পরুক। আমরা পরব। আমি ম্যাক্সি আর তুমি লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি। “
“মাথা গেছে নাকি বিয়ের খুশিতে।”
“তোমার কি মাথা গেছে?”
“আমি আবার কি করলাম মাফিয়ার বোন।”
“তুমি কোন আক্কেলে জিজ্ঞেস করো কি পরব।জানোনা কি পরতে হয়।”
“এইজন্য মাফিয়ার বোন বলি। এত প্যাঁচ মনে। আমাকে সহজ সরল পেয়ে কয় গ্লাস ঘোল খাওয়ালো।”
“তুমি উদ্ভট প্রশ্ন করো ক্যানো?”
শ্রবণ আকস্মিক নিজের দুই কান ধরে বলল,
“আমাকে ক্ষমা করে দিন প্রেমিকা। আমার ভুল হয়েছে। এখন ঝ গ ড়া করতে চাইছিনা। আপনাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। আপনি এখন ঝ গ ড়া করে বাসর ঘরে গিয়ে বলতে পারেন তোর সাথে আমার ঝ গ ড়া হইছে আমাকে টাচ করবিনা।”
“বিয়ের চেয়ে বাসর এর শখ বেশী।”
“দু’ টোর ই শখ।”
প্রিয়তা লজ্জা পেল। শ্রাবণ প্রিয়তার দুই গালে হাত রেখে বলল,
“আকাশের ওই চাঁদটার চেয়ে আমার চাঁদটা বেশী সুন্দর। এই চাঁদটা আমার। আমার চাঁদকে আমি ভীষণ ভালবাসি। মৃত্যুর পরেও যেন এই চাঁদের সাথেই থাকতে পারি। এই চাঁদ ছাড়া নিঃশ্বাস নিতে পারব না আমি।”
“আচ্ছা শ্রাবণ আমি যদি ম-রে যায়।”
“আমিও ম-রে যাবো শোকে শোকে।কারণ অক্সিজেন ছাড়া মানুষ বাঁচেনা। তুমিই আমার অক্সিজেন।”
“এত ভালবাসো ক্যানো আমাকে?”
“এর কোনো কারন নেই। জানো মাঝে মাঝে ভাবি আমার যদি কিছু হয়ে যায় এই পা গ লি টা কে ভালবাসবে কে? অন্য কারো সাথে বিয়ে হলে সেও কি আমার মতই ভালবাসবে?”
প্রিয়তা শ্রাবণ কে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আর দু’দিন পরে আমাদের বিয়ে। তুমি এসব কি বলছো শ্রাবণ।এমন কিছুই হবেনা।আমরা একসাথে বাঁচব। দু’জন দু’জনার হয়ে বাঁচব।”
চলবে?…
(এই উপন্যাস টা আর কয়েক টা পর্বে শেষ করে দিবো। অতিরিক্ত গ্যাপে ছন্ন ছাড়া হয়ে গিয়েছে লেখা। পাঠক ও বিরক্ত খুব। অনেক ভুল লেখা আছে।উপন্যাস টা শেষ করে ফেসবুক থেকে ডিলিট করে দিবো। যখন বই লিখব সূচনা থেকে শুরু করে অনেক কিছু বাদ দিয়ে নতুন কিছু এড করে মার্জিত ভাবে লিখব।কারণ অতিরিক্ত গ্যাপ দিয়ে আমি রাইটিং ব্লকে পড়ে এই উপন্যাস ভাল ভাবে আগাইতে পারছিনা।
নতুন রোমান্টিক উপন্যাস আসছে। গ্যাপ ছাড়া রেগুলার দেওয়া হবে। বিগত এক বছর অনিয়মিত আমি।নিয়মিত হতে পারলে নিজের ই ভাল লাগবে।আবার ও ক্ষমা প্রার্থী রানিং উপন্যাসের গ্যাপের জন্য।আমার এই গ্যাপ ইচ্ছাকৃত ছিলনা।)