#WriterঃMousumi_Akter
গাড়ি হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা, পাশে অন্ত ও দাঁড়িয়ে আছে।প্রান্তিক আর রজনির জন্য অপেক্ষা করছে ওরা দু’জন। প্রিয়তার মন খারাপ বলে ওরা প্লান করে কুয়াকাটা যাচ্ছে চারজন।প্রিয়তার যাওয়ার একবিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিলনা।কিন্তু রজনির অনুরোধে যাচ্ছে।প্রিয়তা গাড়ি হেলান দিয়ে বিষন্ন মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ওই বিশাল আকাশ ছাড়া মাঝে মধ্য আর কারো কাছে মন খারাপ প্রকাশ করা যায়না।মাঝে মধ্য আমাদের মন খারাপের বোঝা এত ভারী হয় যা ওই বিশাল আকাশ ছাড়া কেউ বহন করতে পারেনা।আকাশের দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাত দমকা বাতাসে প্রিয়তার চোখে কিছু একটা গেল।প্রিয়তা চোখ ঢলছে কিন্তু কি গিয়েছে বুঝতে পারছেনা, বের ও হচ্ছেনা।চোখে তীব্র জ্বালা শুরু হল। প্রিয়তা যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করল।প্রিয়তার যন্ত্রণার আওয়াজ অন্তর কানে যেতেই অন্ত তড়িৎ গতিতে প্রিয়তার দিকে তাকাল।দ্রুত এসে প্রিয়তার মুখে হাত দিয়ে বলল, ” কি হয়েছে প্রিয়তা?”
প্রিয়তা ছটফট করতে করতে বলল, ” আমার চোখে কিছু গিয়েছে?”
“দেখিতো কি গিয়েছে।”
অন্ত প্রিয়তার চোখে কোয়া টেনে দেখল ছোট্ট কালো কিছু একটা চোখের সাদা অংশে লেগে আছে।অন্ত প্রিয়তা ওড়না টেনে চোখের মনি থেকে ময়লা বের করল।চোখে ক্রামাগত ফু দিতে দিতে বলছে, ” যন্ত্রণা কি একটু কমেছে প্রিয়তা?চোখের জ্বালাপোড়া কমেছে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।”
অন্ত এমন উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বলছে প্রিয়তা অবাক হয়ে অন্তর দিকে তাকিয়ে আছে।এত বছর সে অন্তকে চিনে কই আগেতো অন্ত এমনভাবে কথা বলেনি তার সাথে।আগে কিছু নিয়ে কষ্ট পেলেই শ্রাবণ কে ডাকত। শ্রাবণ কে ডেকে বলত, ‘ দেখ প্রিয়তার কিছু হয়েছে।’ অথচ আজ নিজেই এমন করছে যেন কষ্টটা ও পাচ্ছে।প্রিয়তাকে একভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অন্ত বলল, ” ভাল লাগছে একটু।”
প্রিয়তা মিহি কন্ঠে বলল, ” হুম। একটু পানি হবে।”
” এক্ষুনি আনছি।” বলেই অন্ত পাশের দোকানে গেল।দোকান থেকে কয়েক প্রকার কোল্ডড্রিংক্স সহ মিনারেল ওয়াটার এনে প্রিয়তার হাতে দিয়ে বলল, ” যেটা ভাল লাগে খাও।”
প্রিয়তা আবার ও আবাক হয়ে অন্তর দিকে তাকিয়ে বলল, ” শুধু পানি চেয়েছিলাম এত কিছু তো চাইনি।”
“তুমি কি পানি খাবে আমিতো জানিনা প্রিয়তা।তাই সব ধরনের পানি ই নিয়ে এসছি।”
প্রিয়তা মিনারেল ওয়াটার এর মুখ খুলে বোতল উঁচু করে পানি খেয়ে অন্তর হাতে দিয়ে বলল, ” এসব গাড়িতে রেখে দিন।”
অন্ত বোতল গুলো গাড়িতে রাখতে গিয়ে প্রিয়তার খাওয়া পানি নিজে খেয়ে কেমন যেন একটা তৃপ্তি পেল।
এরই মাঝে অন্তর ফোন বেজে উঠল।ফোন রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠল, ” কিরে শালা চু-রি করে বিয়ে করলি তাও আবার প্রান্তিক ভাই এর বোনকে। তোর কপাল কত বড়রে।”
“যা থাকে নসিবে তা এমনি এমনি ই চলে আসে।”
“তার পর বল বাসর ঘরে বউ কেমন আদর দিল।”
অন্ত প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল, ” দিয়েছে তবে সেটা থা’প্প’ড় নট আদর।”
প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে অন্তর দিকে তাকাতেই অন্ত ফোন কেটে দিল।প্রিয়তা থমথমে মুডে অন্তকে বলল, ” এসব কাকে বলছেন?”
” কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন এসছিল।”
“কাস্টমার কেয়ার থেকে এসব জিজ্ঞেস করে।”
“দেশ টা রসাতলে যাচ্ছে বুঝলে।দিন দিন আরো কত কী দেখতে হবে।”
প্রিয়তা যেন বেকুব বনে গেল।অন্ত তাকে বোকা বানাল সে বুঝতে পারল।
এরই মাঝে প্রান্তিক আর রজনি এসে পৌছাল।অন্ত প্রান্তিক কে দেখে হেসে দিল।অন্তকে হাসতে দেখে প্রান্তিক ভ্রু কুঁচকে তাকাল।হাসির কারণ খুজে না পেয়ে পেয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল, ” কি সমস্যা তোর? হাসিস ক্যান?”
অন্ত হাসি থামানোর চেষ্টা করতে করতে বলল, ” ভাই আপনি হানিমুনে যাচ্ছেন তাই থ্রি কোয়ার্টার পরে।”
“আমি তো সব সময় ই থ্রি কোয়ার্টার পরেই যায়। এ আর নতুন কী?”
“অন্যবার যাওয়া আর এইবার যাওয়া কি এক হল। এইবার যাচ্ছেন আপনি বিশেষ কারো সাথে।মানে আমাদের ভাবির সাথে।এইবার একটু অন্যভাবে যাবেন না।”
প্রান্তিক অন্তর দিকে তাকিয়ে বলল, ” তুই ও তো অন্যবার থ্রি-কোয়ার্টার পরে যাস।এইবার জিন্স, শার্ট, কাহিনী কী?”
রজনি প্রান্তিকের দিকে অগ্নিচোখে তাকিয়ে বলল, ” সবাই কি আপনার মত? মানুষ বিয়ের পর চেঞ্জ হয়।আর আপনি? শুধু মুখেই ভালবাসা।”
প্রান্তিক রজনির কথা শুনে কপালের চামড়া টান টান করে তাকাল।প্রিয়তার জন্য কিছু বলল না।শুধু বলল,
“কুয়াকাটা গিয়ে উত্তর দিচ্ছি তোমাকে।”
প্রিয়তার মাঝে কোনো হেলদোল নেই।এত কথা হচ্ছে কারো কোনো কথায় হয়ত সে শোনেনি।অন্যমনস্ক হয়ে কি যেন ভাবছে। প্রান্তিক প্রিয়তার কাধে রাখল।প্রিয়তা আচমকা কেঁপে উঠল।প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে চোখ ছলছল করে উঠল তার।চোখের পানি পড়ার আগেই প্রান্তিক প্রিয়তাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বলল, ” সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছিনা।তোর না বিশ্ব ভ্রমনের খুব ইচ্ছা ছিল।আমি তোকে বিদেশের কয়েকটি দেশে ভ্রমনে পাঠাবো “
প্রিয়তা মলিন মুখে বলল, ” পৃথিবী আমার চেনা হয়ে গিয়েছে ভাইয়া। আর কিছু দেখতে চাইনা,চিনতে চাইনা।”
“চেনার এখানো অনেক বাকি। জীবনে ধাক্কা আসা খুব জরুরী।এতে মানুষ শক্ত হয়। ঘুরে দাঁড়াতে পারে।ধাক্কা না আসলে জীবন সম্পর্কে অনেক কিছুর ধারণা হয়না।মনে রাখবি কষ্টের সাথে আছে স্বস্তি।দুঃখ চিরস্থায়ী নয়।যত বেশী দুঃখ তত বেশী সুখ সামনে।আধার কেটে গিয়েই কিন্তু ভোরের আলো ফোটে।শুধু একটু ধৈর্য ধরতে হবে।ধৈর্য অনেক কঠিন জিনিস ফলাফল মধুর।”
প্রিয়তা ভাইয়ের কথা মন দিয়ে শুনল।কিন্তু কোনো প্রতিত্তোর করল না।আসলে যার ভালবাসা ম’রে যায় সেই জানে কষ্ট কত ভয়াবহ।ওই মুহুর্তে পৃথিবীর কোনো স্বান্তনা ই মানুষ কে সুখ দিতে পারেনা।
প্রান্তিক ড্রাইভ করছে।রজনি পাশে বসে আছে।পেছনের সিটে অন্ত আর প্রিয়তা বসে আছে।সাঁ৷ সাঁ গতিতে গাড়ি চলছে।গাড়ির জানাল খোলা। বাতাসে রজনির চুল উড়ছে। প্রান্তিকের চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে সেই চুল।প্রান্তিক হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দিতে দিতে রজনির কানের কাছে গিয়ে বলল, ” তোমার চুল এসে বিরক্ত করছে, তুমি কেনো করছো না।”
রজনি প্রান্তিকের মুখে হাত দিয়ে বলল, ” আস্তে, পেছনে ওরা আছে।”
প্রান্তিক পেছনে তাকিয়ে দেখল প্রিয়তা অন্তর কাধে মাথা রেখে নিরিবিলি ঘুমোচ্ছে।মুখটা একদম ফ্যাকাসে আর মলিন দেখাচ্ছে। প্রান্তিক সামনের দিকে তাকাল। গাড়ি চালানো রেখে বার বার রজনির দিকে তাকাচ্ছে। রজনি প্রান্তিক কে বারবার চোখ রাঙিয়ে বলছে, ” কত কাল দেখেন না আমাকে? মন দিয়ে গাড়ি চালান।রাস্তাঘাটে এত অমনোযোগী ভাবে গাড়ি চালানো ঠিক না।”
“কি হবে এক্সিডেন্ট। আমি সেই এক যুগ ধরে গাড়ি চালায় কিচ্ছু হবেনা।” বলতে বলতেই গাড়িটা একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা গেল। পেছন থেকে প্রিয়তা আর অন্তর চিৎকার শোনা গেল।প্রান্তিক গাড়িটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করল ঠিক ই কিন্তু এক্সিডেন্ট এর হাত থেকে রক্ষা পেল না।
চলবে?…