নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৭
#WriterঃMousumi_Akter.
কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আছে রজনী। গভীর ধ্যানে মগ্ন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ক্যাম্পাসের দূর্বাঘাসের দিকে নিবদ্ধ। প্রান্তিককে সে বুঝে উঠতে পারছে না। প্রান্তিক যে খারাপ এটা পরিষ্কার। কিন্তু এত ভালো মানুষ সাজার ভান ধরছে কেন? রজনী নিজমনে ভাবছে, “প্রান্তিকের উদ্দেশ্য আমাকে বিছানায় নেওয়া। সে চাইলেই তো নিতে পারে। যেদিন দেখা হয়েছিল সেদিনই নিতে পারত। তাকে আটকানোর ক্ষমতা তো কারো নেই। তাহলে কেন সে সেটা করছে না? যেখানে যাচ্ছি সে কেন সেখানেই যাচ্ছে? তার চোখের দৃষ্টিতে তো লালসা নেই। একবারও লালসা দেখিনি।দেখেছি একজন পবিত্র প্রেমিককে। একজন পা’গ’ল’টে প্রেমিক।”
ঠোঁটের হাসিতে যেন একরাশ মুগ্ধতা। নিজের অজান্তে প্রান্তিককে নিয়ে ভালোকিছু ভেবে ফেলল রজনী। সাথে সাথে নিজে মাথা ঝাঁকি দিল। নিজের প্রতি রা’গ হলো। ছি! এসব কী ভাবছি আমি! এসব জঘন্য মানুষ তো এমন নিঁখুত অভিনয় করবেই। এরা হলো অভিনেতা, অভিনয়ে দক্ষ, এদের ভালো ভাবার কারণ নেই। এদের অভিনয়ে ভোলা যাবে না। ঠিক তখনি রজনীর পাশে এসে বসল প্রিয়তা। প্রিয়তা রা’গে গটমট করছে। কিন্তু খেয়াল করল রজনী তার দিকে তাকাচ্ছে না। গভীর ধ্যানে মগ্ন। রজনীর সামনে হাতের তুড়ি বাজাল প্রিয়তা। রজনী স্বাভাবিক হলো। প্রিয়তাকে বলল, “এসছিস?”
“হু, এলাম।”
“আজ কার সাথে এসেছিস?”
“ওর সাথেই এসছি।”
“তোর ওটা কলেজের গেট অবধি আসে না ক্যান?”
“আমিই আনি না। খানিকটা দূরে নেমে যায়।”
“কেন?”
“আনিনা তাই সেই লু**চ্চা আমার বন্ধবীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে!”
রজনী চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বলল, “কার প্রেমে?”
“তোর।”
“আমার?”
“হ্যাঁ।”
“কী আশ্চর্য!”
“আরে হ্যাঁ, আজ আমাকে বলছে, “তোমাদের কলেজে রজনী আছে না?”
“আমার নাম কেমনে জানে?”
“সেটাই ভাব। আমি তো তোর নাম বলিনি ওর সামনে। ও খুঁজে খুঁজে তোর নাম বের করেছে।”
“ধুর! তুই-ই আমার নাম বলেছিস কখনো ভুলে।”
“উঁহু! বলিনি।”
“দ্যাখ, আমি তাহলে আর তোর সাথে মিশব না। আমি চাই না আমার জন্য তুই কষ্ট পাস।”
প্রিয়তা রজনীর চুল টেনে ধরে বলল, “আরে, মাথা খারাপ তোর? আমি হলাম ওর জান। আমি জানি– ও তোর প্রেমে-ট্রেমে পড়েনি। তোকে হুদাই চেতালাম। ও আমাকে এত্ত বেশি ভালোবাসে রজনী। ওর ভালোবাসার আকার-আকৃতি একদমই বিশাল। আকাশের চেয়েও বিশাল। মাঝে মাঝে তো আমি অবাক হই; ও আমাকে এত ভালোবাসে কেন?”
“তোদের ভালোবাসা অনেক কিউট প্রিয়তা। মিষ্টি ভালোবাসার গল্প শুনলেও শান্তি লাগে।”
“রজনী, এইবার গ্রামে গেলে কিন্তু তোদের বাড়িতে যাব।”
“কবে যাবি?”
“শিঘ্রই যাব। বাট তার আগে আপনি রেডি থাকবেন ম্যাডাম। এক সপ্তাহ পর আমার জন্মদিন।”
“আচ্ছা, আসব।”
“তিনদিন থাকতে হবে কিন্তু।”
“আম্মু রাজি হবে না।”
“তাহলে আমার বাবাকে বলব তোর বাবাকে বলতে।”
“আচ্ছা।”
“ আচ্ছা, তোকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?”
“প্রিয়তা, আমার খুব বিপদ রে।”
“কেন?”
“একটা ছেলে আমার পিছু নিয়েছে। আমাকে নিয়ে খারাপ কথা বলাবলি করে।আমাকে ওরা বিছানায় নিতে চাই।”
“কী! বলিস কী? এই শহরে এত বড়ো গু*ণ্ডা নেই যে আমার ভাইয়ের সামনে এসে দাঁড়াতে সাহস পাবে। তুই শুধু নাম বল সে কে। আমি ভাইয়াকে বলব। ভাইয়া একদম আলু ভর্তা বানিয়ে দিবে।”
“সেও অনেক ভ’য়া’ন’ক। মানুষ ভ*য় পায় প্রচুর।”
“আরেহ, তুই তাহলে জানিস না। এসব ম*স্তান আমার ভাইয়ের কাছে কিছুই না।আমার ভাইয়ার নামটাই যথেষ্ট ওদের জন্য।”
“আমাকে একটু তোর ভাইয়ার সাথে কথা বলিয়ে দিবি? আমি সরাসরি শেয়ার করতে চাই।”
“হ্যাঁ জন্মদিনে আয়, ভাইয়া থাকবে। সবটা বলিস।”
“ওকে।”
______________
কলেজ শেষ করে বাড়ির দিকে রওনা হয়েছে রজনী। তার সামনেই ভয়া*নক রকমের মা’রা’মা’রি হচ্ছে। অনেকগুলো মানুষ গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রজনীর দেখতে ইচ্ছা করল– কে কাকে মারছে।রজনীর কানে পাশ থেকে মানুষের কথা ভেসে আসছে, “এমন মানুষের হাতে পড়েছে আজ জা*ন বে’র করে ফেলবে। বহুদিন তো ভাইকে এত চেততে দেখিনি।”
রজনী ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে দেখল একটা ছেলেকে প্রান্তিক মারছে। প্রান্তিকের পরনে সাদা শার্ট, ব্লু জিন্স। শার্টের হাতা গোটানো। তার সামনে থাকা ছেলেটার কলার চেপে ধরে শুধু ঘু*ষি দিয়ে যাচ্ছে।প্রান্তিকের রক্তবর্ণ চোখ দেখে ভ*য় পেয়ে গেল রজনী। চোখ-মুখ দিয়ে ঝাঁঝালো আগুন ঝরছে। ছেলেটার চোখ-মুখ র*ক্তা*ক্ত হয়ে গিয়েছে। নাক দিয়ে র*ক্ত ঝরছে। রজনী অবাক হয়ে দেখছে। চারদিকের কেউ আটকাচ্ছে না। কেউ কিছু বলছে না। মানুষ শুধু বলছে ঠিকই আছে।রজনীর ধারণা– মানুষ প্রান্তিককে ভ*য় পায়। সেই ভ*য়ে কেউ এগোচ্ছে না। একটা মানুষ কতটা নিষ্ঠুর আর পাষাণ হলে মানুষকে এইভাবে মা*রতে পারে। একটুও হাত কাঁপছে না। রজনী প্রান্তিকের অন্যরকম ভয়াবহ রূপ দেখে আতঙ্কে কেঁপে উঠল। অধরজোড়ায় মৃদু কম্পন শুরু হয়েছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, বুক ধুকপুক করছে। সে র*ক্ত দেখতে পারে না। এখনি যেন মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। প্রান্তিক যে ছেলেটাকে মা*র*ছি*ল তাকে এবার রোডে ফেলে দিল।পেটের উপর পা তুলে আঘাত করছে।ছেলেটা ছটফট করছে। এহেন দৃশ্যে রজনীর হৃদয় আহত হচ্ছে। এবার প্রান্তিক পেছন থেকে পিস্তল বের করে তাক করল। রা-গে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “জা’র’জে’র বাচ্চা! তুই যে অন্যায় করেছিস আমি ওইদিনই পুঁ*তে ফেলতে পারতাম। কিন্তু আমি চাইছিলাম– জনসম্মুখে তোর জা’ ন নেব।যাতে আর পাঁচজনের শিক্ষা হয়।”
প্রান্তিক এবার ছেলেটার গলায় পা রাখল।জুতার আঘাতে ছেলেটার জা’ ন এমনি বের হয়ে যাওয়ার মতো।
রজনী এবার সহ্য করতে পারল না। জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে বলল,
“উনাকে ছেড়ে; দিন ম’রে যাবে। মা’র’বে’ন না।”
ভয়ে কেমন গুটিসুটি মেরে গিয়েছে রজনী।প্রান্তিকের কর্ণকুহরে রজনীর কণ্ঠস্বর পৌঁছাতেই প্রান্তিক গলা থেকে পা তুলে ফেলল। ভয়ে কাঁপতে থাকা রজনীকে দেখে পেছনে পিস্তল গুঁজে নিল প্রান্তিক। দ্রুত রজনীর কাছে গিয়ে ওকে ধরল। রজনী তখনও অস্বাভাবিকভাবে কাঁপছে। প্রান্তিক অস্থির হয়ে বলল, “রজনীগন্ধ্যা, কী হয়েছে তোমার?”
রজনী জড়ানো কণ্ঠে বলল, “মা’র’বে’ন না প্লিজ।”– এটুকু বলেই সেন্সলেস হয়ে গেল।ঢলে পড়ল প্রান্তিকে উপর। প্রান্তিকের বুকে রজনীর মাথা রাখা। প্রান্তিক অগ্নিঝরা চোখে বলল, “শু’য়ো’রে’র বাচ্চা, তোকে জ’ বা’ ই দিতে মন চাইছে আমার। কিন্তু আমি মানুষ খু’ন করি না। তোর জন্য ও এগেইন ভুল বুঝল আমাকে। তুই দুইটা অন্যায় করেছিস।দুইটায় মহাঅপরাধ। রজনীকে দেখে অশালীন কথা বলেছিস। যা সোজা এসে আমার ক* লি* জা* য় লেগেছে। সেই অপরাধে তোকে মা*র*তেছিলাম। তোকে মা*র*তে দেখে রজনী ভ*য় পেয়েছে।আমাকে খারাপ ভাবছে।”
শ্রাবণ এগিয়ে এসে বলল, “ভাই, ভাবিরে হসপিটাল নিয়ে যান। আমি এরে পুলিশের হাতে দিয়ে আসতেছি।”
প্রান্তিক রজনীকে পাঁজাকোলে তুলল। মানুষ কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে। মানুষের চোখ-মুখে কৌতুহল দেখে প্রান্তিক বলল, “ আমি যে মেয়েকে বিয়ে করতে চলেছি এই সেই মেয়ে। সো এর দিকে কেউ বাজে দৃষ্টিতে তাকালে বা বাজে ইঙ্গিত করলে অবস্থা খুব খারাপ হবে।”– প্রান্তিক কথাটি বলেই রজনীকে কোলে তুলে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছাল।
চলবে……