নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৯
#WriterঃMousumi_Akter
হসপিটালের বেড থেকে এক ঝটকায় ফ্লোরে পা রাখল রজনী। তার উদ্দেশ্য– এই মুহূর্তে জায়গা ত্যাগ করে বাড়ি ফেরা। কিছু একটা নিয়ে সে বিরক্ত, ভীষণ বিরক্ত। তার মন তাকে যে সিগনাল দিচ্ছে সে তা মেনে নিতে চায়ছে না। প্রান্তিকের জীবনে এত মেয়ের আনাগোনা, অজানা এক কারণে রজনীর বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটা। মনের সাথে মস্তিষ্কের যুদ্ধ চালিয়ে প্রমাণ করতে চায়ছে না যে, তার কিছু যায় আসে না। কিন্তু মন বড্ড খারাপ জিনিস। বড্ড বেপরোয়া। সে কি কারো কথা শুনেছে কখনো? মন এমন একটা জিনিস যা কখনো শান্ত নদীর মতো বয়ে যায়। কখনো সমুদ্র ওঠা ঝড়ের মতো তুফান সৃষ্টি করে। এর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কারো হাতে নেই। প্রান্তিকের অভিজ্ঞ আঁখিজোড়া বুঝতে সক্ষম হলো– রজনী তার প্রতি বিরক্ত। বিরক্তির কারণও আঁচ করতে পারল। এই রাগ- মান-অভিমানের পালা খানিকটা গাঢ় করে দু’জনকে সুযোগ দিতে শ্রাবণ বাইরে চলে গেল। রজনী সোজা দরজার দিকে হাঁটা দিল। প্রান্তিক রজনীর সামনে গিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজল। প্রান্তিকের সমগ্র মুখাবয়বে বেশ থমথমে একটা ভাব। সাথে সাথে এক হাত প্যান্টের পকেট থেকে বের করল। দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করল রজনীর পাতলা ঠোঁট জোড়ার দিকে। রজনী বিরক্ত কণ্ঠেই বলল,
“সামনে থেকে সরুন। আমি বাড়ি যাব।”
“আমাকে উপেক্ষা করে যাওয়ার ক্ষমতা কি তাহলে আমার রজনীগন্ধা হারিয়ে ফেলল?”
“আপনাকে উপেক্ষা করে যাওয়ার ক্ষমতা আমার আছে। ভদ্রতার খাতিরে ধাক্কা দিইনি তাই।”
“একটু অভদ্র হয়েই না হয় আমাকে ধাক্কা দাও।”
রজনী অতিরিক্ত বিরক্ত হয়ে প্রান্তিককে ধাক্কা মারল।
প্রান্তিক এক চুলও নড়ল না। বরং মৃদু হেসে বলল,
“এমন সুঠাম দেহের পুরুষকে কি পুচকি এক মেয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলতে পারে? আমি জাস্ট চাচ্ছিলাম তুমি আমায় স্পর্শ করো রজনীগন্ধা। তোমার স্পর্শতে যেন চাঁদ-সূর্যের গ্রহণের মতো এক ভয়নাক উলট-পালট প্রলয় ঘটল ভেতরে।”
“আপনি এসব বলে কী প্রমাণ করতে চাইছেন, আপনি অনেক ভালো মানুষ? আপনি একজন চরিত্রহীন মানুষ, লম্পট মানুষ। সামনে থেকে সরুন বলছি।”
“মেয়েদের গালি এত্ত কিউট হয় আগে জানতাম না তো। তুমি পারলে অন্য গালিগুলা ট্রাই করো। আমি শুনতে ইন্টারেস্টেড।”
রজনী বিরক্ত হয়ে আবারও বলল, “আপনি না সরলে কিন্তু আমি চিৎকার করব।”
“চিৎকার করে লাভ নেই বোকা ফুল।চিৎকার করলে যে কিছুই হবে না। এতদিনে কি প্রান্তিক চৌধুরীকে এই চিনলে।?”
“তাহলে আমাকে যেতে দিবেন না?”
“এইভাবে তাড়াহুড়ো করে গেলে তুমি পড়ে যেতে পারো।”
“আমার পড়া নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না।”
“বউ আমার, ভাববে কি পাড়ার জ্যাঠা মশাই?”
“বউ!”
“ইয়েস ডার্লিং। ইউ আর মাই সাত জন্মের বউ। এই জন্ম পরের জন্ম সব জন্ম। যতবার জন্ম হবে ততবারই তুমি আমার বউ।”
“আপনি ভাবলেন কী করে, আপনার মতো একাধিক নারীতে আসক্ত ছেলের বউ আমি হব? যে পরনারীতে আসক্ত আমি তার বউ হব ভাবলেন কীভাবে আপনি?”
“আমি যদি পরনারীতে আসক্ত না হই তাহলে তুমি আমার হবে, তাই তো রজনীগন্ধা?”
রজনী চুপ হয়ে আছে। তার এই মুহূর্তে কী বলা উচিত সেটা কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না। প্রান্তিক রজনীর গালে আলত স্পর্শে হাত রেখে বলল,
“আমি পরনারীতে আসক্ত না হলে পরজন্মেও তুমি আমার হবে রজনীগন্ধা।”
“আমি কোনো জন্মেই কোনো চরিত্রহীন, গুন্ডা, বদমাশ, মেয়েদের বিছানায় নেওয়া ছেলের বউ হব না। আপনি কী চান হ্যাঁ! আগে নিজে ভোগ করবেন আমাকে তারপর আপনার ওই চ্যালাপালাদের বিছানায় পাঠাবেন আমাকে? এটাই তো আপনার উদ্দেশ্য তাই না? তাহলে এত নাটক-অভিনয় করে শুদ্ধ একজন প্রেমিক সাজার ভান করছেন কেন? যা করতে চান করুন। এখনি করুন। এখন করবেন না কি আগে ওদের পাঠাবেন? আচ্ছা দরজার বাইরে যে দাঁড়িয়ে আছে আগে ওকে পাঠান।”
প্রান্তিকের সমস্ত শরীর জ্ব* লন্ত আগ্নেয়গিরির মতো জ্বলে উঠল। তীব্র ক্রোধে চোখ দু’টো লাল বর্ণ ধারণ করল।কপালের দু’পাশের শিরা ভেসে উঠল। রাগে কাঁপতে কাঁপতে রজনীর দুই বাহু শক্তভাবে চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে ঠেসে ধরল।ভয়ানকভাবে কাঁপছে প্রান্তিক। রাগ হলে প্রান্তিক সাইকো টাইপ হয়ে যায়। মাথায় কাজ করে না। রজনী ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠল।প্রান্তিকের ভয়ানক রূপ দেখে আতঙ্কে কেঁদে দিল। প্রান্তিক ক্রাধান্বিত কণ্ঠে বলল, “তুমি আমাকে যা খুশি বলতে পারো। বাট আমার রজনীগন্ধাকে নিয়ে এত নোংরা নোংরা কথা কীভাবে মুখে আনলে? আমি নিজেই ভ*য়ে কোনদিন স্পর্শ করব না। কারণ এই ফুল আর ফুলের সুবাস আমার বেঁচে থাকার কারণ। আর সেখানে তুমি এত নোংরাভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাইছ? এমন কিছু করো যদি তোমাকেও খু* ন করব নিজেকেও খু**ন করব। আর তোমাকে স্পর্শ করা মানুষকেও খু**ন করব। এই শহরে লা*শে*র বন্যা বয়ে যাবে রজনীগন্ধ্যা!” –বলেই প্রান্তিক নিজের হাত দিয়ে ওয়ালে খুব জোরে ঘুষি দিল। ওয়ালে থাকা পেরেক বিঁধে গেল প্রান্তিকের হাতে। রজনী একবার সেদিকে তাকিয়ে জোরে কেঁদে দিল ভ*য়ে। র* ক্ত গড়িয়ে যাচ্ছে হাত দিয়ে। রজনী ভ*য়ে কাঁপাকাঁপা স্বরে বলল,
“আ আপনার হাত কে *টে গেছে!”
“তো কী যায় আসে তোমার? আমার হাত কাটু* ক বা যা খুশি হোক। তোমাকে তো আমার শারিরীক আঘাতের কেয়ার করতে বলিনি। তোমাকে আমার মনের আঘাতের খোঁজ নিতে বলেছি। এই আঘাত সেরে যাবে। বাট যে আঘাত তুমি আমার মনে দিয়েছ– এটা কীভাবে সারবে?”
প্রান্তিক রজনীকে ছেড়ে দিয়ে ক্রোধান্বিত অবস্থায় শ্রাবণকে ডাকে বলল, “শ্রাবণ! ওকে পৌঁছে দিয়ে আয়।”
শ্রাবণ রুমে ঢুকে বুঝতে পারল কিছু একটা হয়েছে। ভয়ানক খারাপ কিছু একটা ঘটেছে। রজনীকে এগিয়ে দেওয়ার সময় শ্রাবণ বলল, “ভাবি, আমি জানি না আপনি কী ভাবছেন বা ভেতরে কী ঘটেছে। তবে একটা কথা নিশ্চিত হতে পারেন। ভাই আপনাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। এর আগে ভাইকে কোনো মেয়ে নিয়ে এত সিরিয়াস হতে দেখিনি। আজ যে ছেলেটাকে মারছিল না? ওই ছেলেটাকে কেন মারছিল জানেন?”
রজনী মিহি কণ্ঠে শুধাল, “কেন?”
“আগের দিন আপনাকে খারাপ কথা বলা ছেলেগুলোর মাঝে এই ছেলেটাও ছিল।আমি সেদিন সব শুনেছিলাম। আপনাকে কত খারাপ কথা বলছিল ওরা। আপনাকে খারাপ কথা বলা মানে– ভাইয়ের ঘুম হারাম করা।”
রজনী ভীষণ অবাক হলো। এই ছেলেগুলোকে প্রান্তিক কেন মারতে যাবে? ছেলেগুলো তো তারই দলের লোক।
রজনী শ্রাবণকে প্রশ্ন করল, “ আচ্ছা, ছেলেগুলো আপনাদের দলের না?”
“আরেহ ভাবি, কী বলেন এইগুলো? এইসব চরিত্রহীন পোলাপান আমাদের দলের কেমনে হবে? আমরা তো রাজনীতি করিই এদের টাইট দেওয়ার জন্য।”
রজনী কোনো উত্তর দিল না
শ্রাবণ আবারও বলল, “আপনি জানেন, এরা আপনাকে খারাপ কথা বলেছে বলে ভাই আপনার সেফটির জন্য আমাদের পাহারা দিতে বলেছে। আমাদের বোনাস বাড়িয়ে দিয়েছে।”
____________
রজনী বাড়িতে ফিরে বিছানায় শুয়ে রইল।মুখটা মলিন। শ্রাবণের কথাগুলো তার কানে বাজছে। ছেলেগুলো তার দলের না হলে কার দলের? তাহলে কি অকারণেই প্রান্তিককে ভুল বুঝছি? প্রান্তিকের জন্য কোনো কারণে খারাপ লাগছে তার। ভাবতে ভাবতে দু’চোখ বুজে গেল রজনীর।
চলবে…..