নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৩৫
#WriterঃMousumi_Akter
অন্ত পায়ের উপর পা তুলে চেয়ার নিয়ে বসে আছে।তার সামনেই পুড়ে যাচ্ছে প্রিয়তার বেনারসি।প্রিয়তা ঘুম থেকে উঠে শাড়ি পু’ ড়’ তে দেখেই ভয় পেল। আ’গু’ন বলে চিৎকার দিয়ে উঠল।প্রিয়তার চিৎকার দেখে অন্ত দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে এসে প্রিয়তার সামনে দাঁড়াল। খুব উত্তেজিত কন্ঠে বলল, “কি হয়েছে প্রিয়তা?”
প্রিয়তা হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে এত বেশী ভ’য় পেয়ে গিয়েছে অন্তকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আ’ গু’ ন লেগেছে, আ’গুন। “
এক নাগাড়ে কয়েকবার আ’গু’ন আ’গু’ন করে চিৎকার দিল।অন্ত প্রিয়তার হৃৎস্পন্দন শুনতে পাচ্ছে।ভ’য়ে হাতুড়ির বা’ ড়ি দিচ্ছে বুকের ভেতর।অন্তু প্রিয়তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, “আ’ গু’ ন লাগেনি। আমি আ’গু’ন লাগিয়েছি। ভ-য় পেওনা।”
আমি আ’গু’ন লাগিয়েছি কথাতা প্রিয়তার কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই প্রিয়তার হুঁশ ফিরে এল।সে দ্রুত অন্তর বুক থেকে মাথা তুলল।খানিক টা দূরে সরে দাঁড়িয়ে একবার অন্ত একবার জ্বলন্ত শাড়ির দিকে তাকাচ্ছে।প্রিয়তা দ্রুত শাড়িটির কাছে যায়।নিজের হাত দিয়ে আ’গু’ন নেভানোর চেষ্টা করতে করতে বলে, ” আপনি আমার ভালবাসার চিহ্ন জালিয়ে দিচ্ছেন? এটা আমার শ্রাবনের দেওয়া শাড়ি। আপনি আ’গু’নে পুড়াচ্ছেন ক্যানো? তার মানে সব কিছুর পেছনে আপনার হাত আছে।আপনি কালপ্রিট।আপনি শ্রাবণের বন্ধু সেজে থেকে শ্রাবণের কিছু করেছেন।”
অন্ত জোর করে প্রিয়তাকে আ’গু’নের কাছ থেকে সরিয়ে আনল।প্রিয়তা জোরাজুরির চেষ্টা করল।কিন্তু অন্তর সাথে পারল না।যতই হোক পুরুষের শক্তির সাথে পেরে ওঠা কি নারীর সাধ্যতে আছে।অন্ত প্রিয়তার দুই হাত শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে বলল, “তুমি কি পা-গ-ল হয়ে গিয়েছো? শ্রাবণ শ্রাবণ আর শ্রাবণ। শালা তো নিজে গায়েব হয়েছেই সাথে তোমার মাথাটা একবারেই খেয়ে গিয়েছে।আমি ক্যানো শ্রাবণের সাথে কিছু করতে যাবো। শ্রাবণ নিজেই তো পৃথিবীর সব থেকে বড় বেঈমানি করে নিঁখোজ হয়েছে।তুমি একবার ও শ্রাবণের দোষ দেখছো না। শ্রাবণের এত বড় অন্যায়ের পরেও তুমি ওর দোষ টা সম্পূর্ণরূপে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে যাচ্ছো!এখানে আমার অন্যায় টা কি?”
“আপনার অন্যায় নেই, তাহলে এই শাড়ি পোড়াচ্ছেন ক্যানো?”
“এই শাড়ি পোড়াব না? কাল রাতে এই শাড়ি দিয়ে তুমি যে অঘটন ঘটাচ্ছিলে তারপর ও এই শাড়ি আমি কীভাবে ঘরে রাখব!তোমার আম্মুকে রাতের ঘটনা জানিয়েছিলাম। সবটা শুনে উনিই বলেছেন, কেউ গলায় ফাঁ-স দিলে সেই শাড়ি আর ঘরে রাখতে নেই। আ’গু’নে পোড়াতে হয়। আমি তোমার জন্য করছি সব।যা করছি তোমার ভালোর জন্য প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।”
অন্তর কথা শুনে প্রিয়তা শান্ত হল।সে অকারণেই অন্তকে ভুল বুঝল।ভাল-মন্দ সব চিন্তা ভাবনার বাইরে চলে গিয়েছে প্রিয়তা।সে আবার ও কেদে দিল। চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।কাদতে কাদতে বিছানায় গিয়ে উপুড় হয়ে সুয়ে পড়ল।প্রতিটা সেকেন্ড যেন কয়েকযুগের সমান যাচ্ছে তার। মনে হচ্ছে তার জীবনের এই খারাপ সময়টা আজীবন থেকে যাবে।এই বাজে সময়টা আর ফুরাবে না।এভাবেই অনন্তকাল জ্বলতে থাকবে তার হৃদয়। মানসিক অশান্তিতে পু’ ড়ে যাবে সারাদেহ।
অন্ত শাড়ির ছাইগুলো একটা বাকেটে তুলতে তুলতে বলল, ” শাড়িটা আমি বাইরে কোথাও নিয়ে পো’ড়া’তে পারতাম।কিন্তু তোমাকে রেখে গেলে যদি আবার উল্টা পাল্টা কিছু করতে।” বলেই অন্ত দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ল।
________________________________________
খালি গায়ে প্রান্তিক উপুড় হয়ে সুয়ে আছে।সে সবসময় উপুড় হয়েই সুয়ে থাকে। সারারাত ঘুমোয় নি সে।বাড়ির কেউ ই সারারাত ঘুমোয়নি। সকালে সবাই চোখ বুজেছে। কিন্তু রজনির চোখে ঘুম নেই। ভালবাসার মানুষের বেঈমানি প্রতিটা মানুষের ই ঘুম কেড়ে নেয়। দেয় শুধু মানসিক তীব্র যন্ত্রণা।রজনীর কানে একটা কথা বেজে চলেছে সব সময় প্রান্তিকের অন্য কোনো ভালবাসার মানুষ আছে।যার জন্য সে রজনির ভাই এর গায়ে হাত তুলেছে।নিজের কয়েকটা পোশাক ব্যাগে ভরে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিল রজনি।নিঃশব্দে গিয়ে ঘরের দরজা খোলার চেষ্টা করছে।কিন্তু কোনোভাবেই দরজা খুলছেনা।দরজা অনেক টানাটানির পরেও খুলছেনা।এমনিতেই রজনি ভয়ে ভয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করছিলো কারণ প্রান্তিক দেখলে আর যেতে দিবেনা।রজনি কয়েকবার দরজা খোলার ট্রাই করে না পেরে পেছনে তাকাল যে প্রান্তিক জেগে গেল কীনা! পেছনে তাকাতেই হাত থেকে ব্যাগ পড়ে গেল ভয়ে।প্রান্তিক তার দিকে কপালের চামড়ায় ভাজ ফেলে তাকিয়ে আছে।তার মানে কি প্রান্তিক ঘুমোয়নি? রজনির কৌতুহলি মুখ দেখে প্রান্তিক ভ্রু কুচকে বলল,
“দরজা খুলে বাইরে যেতে চাইলে দরজা ভেঙে যেতে হবে। অত বল তো তোমার গায়ে নেই। যদি থাকে ভেঙে ফেলো সমস্যা নেই।”
রজনি বোকার মত তাকিয়ে রইলো প্রান্তিকের কথা শুনে।রজনিকে ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রান্তিক বলল,
“দরজা লক করা চাবি আমার বালিশের নিচে। শুধু শুধু দরজা ধাক্কাধাক্কি করে লাভ নেই। এসো চাবি নিয়ে যাও।”
রজনি এইবার আরো বেশী সিওর হল প্রান্তিকের চিন্তাভাবনার আশে পাশেও রজনির চিন্তা-ভাবনা নেই।প্রান্তিকের মস্তিষ্ক অতি তীক্ষ্ণ। যা ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়।রজনি এবার বেশ খানিকটা শক্ত হয়ে বলল,
“আমাকে আটকে রাখতে চান আপনি? কি জন্য আমার শরীরের জন্য? মন তো অন্য কাউকে দিয়েছেন।তাহলে আমাকে কেনো রেখেছেন আমার শরীর ভোগ করার জন্য।”
প্রান্তিক সোয়া থেকে উঠে দাঁড়াল।থমথমে মুডে রজনির দিকে এগিয়ে এল।রজনি দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়াল।প্রান্তিক রজনির কাছাকাছি এগিয়ে এসে রজনিকে দুই হাতের মাঝে রেখে দুই হাত ওয়ালে রাখল।ওষ্ট এগিয়ে রজনির ডান গালে চুমু দিয়ে বলল,
“ওয়ানলি কিস ছাড়া তোমার বিনা অনুমতিতে কিছু করেছি? কোনদিন করেছি? জোর করেছি কোনদিন?”
“তাহলে আমাকে আটকে কেনো রেখেছেন এখানে? কি চান আমার কাছে আপনি? আমার মত সহজ সরল মেয়েকে কেনো শাস্তি দিচ্ছেন আপনি?”
“তোমার কাছে কি চাই জানতে চাও রজনিগন্ধ্যা?”
“হ্যাঁ চাই।”
“তোমার সুবাস চাই। তোমার সুবাস ছাড়া আমার দমবন্ধ হয়ে আসে।আমার শুধু তুমি চাই।তোমার অভাব আমার।আর এইযে বলছোনা তোমাকে আটকে রেখেছি আমি।আমি তোমার মন আটকেছি শুধু।এমনভাবে আটকেছি আর কোনদিন এই প্রান্তিক চৌধুরীকে ছাড়া তুমি বাঁচতে পারবেনা।আমার ভালবাসা ভুলে যাওয়ার মত ক্ষমতা তোমার নেই রজনিগন্ধ্যা।”
“আমাকে চান? আর কত মিথ্যা বলবেন আপনি? আমি আর নিতে পারছিনা।আপনার দোহাই লাগে আমাকে যেতে দিন।যাকে ভালবাসুন তাকে নিয়ে আসুন।”
“কাকে ভালবাসি দেখতে চাও তুমি?”
“হ্যাঁ চাই।”
“চোখ বন্ধ করো।আজ তোমাকে দেখাব প্রান্তিক চৌধুরীর ভালবাসার মানুষ কে।”
রজনির বুকের মাঝে বাড়ি মেরে উঠল।সে দেখতে চায়না প্রান্তিকের ভালবাসার মানুষ। নিজের প্রিয় পুরুষের পাশে অন্য নারীকে সে সহ্য করতে পারবেনা।প্রান্তিক রজনির চোখ বন্ধ করে দিয়ে রজনির পেছনে দাঁড়াল।রজনির চোখের উপর এক হাত রেখে আরেক হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে সামনের দিকে পা বাড়াল।কয়েক পা যাওয়ার পর রজনির চোখ ছেড়ে দিল।এইবার দুই হাত দিয়ে রজনিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে থুতনি রেখে বলল,
“এই দেখো সেই নারী। যে নারীকে তোমার স্বামি ভালবেসে উন্মাদ হয়ে গিয়েছে।এই নারীর জন্য নিজের আপন বড় শালাকে প্রচন্ড মে- রে- ছি-ল।তার অপরাধ ছিল সে না জেনেই নিজের বোনকে নিয়ে খারাপ কথা বলেছিল।এখন বলো রজনীগন্ধ্যা তোমার স্বামি কি ভুল করেছিল।যাকে ভালবাসে তার নামে বাজে কথা যেই বলুক তাকে পু*তে দেওয়া উচিৎ কীনা বলো!”
রজনি অবাক হয়ে প্রান্তিকের মুখের দিকে তাকাল।কি বলবে সে বুঝতে পারছেনা।ছল ছল চোখে বলল,
“আমার ভাইয়া আমাকে খারাপ কথা বলেছিলো।”
প্রান্তিক রজনিকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,
“এইজন্য ই বলতে চাইছিলাম না। কিন্তু তোমার পা-গ-লা-মি আমাকে বলতে বাধ্য করল।”
রজনি কাদতে কাদতে বলল, “আমি আবার আপনাকে ভুল বুঝলাম।আপনি আমাকে এত ভালবাসেন তাও আমি ভুল বুঝলাম।আমি এর শাস্তি চাই। আমাকে শাস্তি দিন আপনি।”
“শাস্তি তো দিবই তবে আদরের।আমাকে ছেড়ে যাবার সাহস দেখে অবাক হলাম।যদি আমি কখনো মরে যায় সেদিন ই মুক্তি তোমার।তার আগে নয়।”
চলবে?…