#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘একটা মানুষ,যে কিনা তোমাকে সবকিছুর উর্ধ্বে ভালোবেসে গেছে।একটু ভালোবাসা পাবার জন্য ছটফট করেছে।বেশি’কিছু না, তোমাকে ভালোবেসে সে একটু সুখে থাকতে চেয়েছে।তুমি যদি তাকে এই সামান্য পরিমাণ ভালোবাসা না দিতে পারো।অক্ষ’ম হও।তাহলে তোমার থেকে বড় অ’কৃতজ্ঞ আর কে?
‘রামিশার অবস্থা’ও এক।সে রাজকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলো।কিন্তু রাজ তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।সে অনেক বড় স্মা’গলার।
নারী পাচার থেকে শুরু করে ইয়াবা,ড্রাগ।আরো বিভিন্ন অপকর্মের সাথে যুক্ত।আর তাকে সঙ্গ দেয় তার বাবা রায়হান শেখ।যিনি এমপি পদে আছেন।
এমনকি পুষ্পের প্রতিও তার ঝোঁক ছিলো।রাজ এতোই নিকৃষ্ট।
‘কলিং বেলের আওয়াজে পুষ্প ডায়েরি’টা রেখে দরজা খুলতে গেলো।দরজা খুলে অচেনা এতো রাতে একটা পুরুষ’কে দেখে মোটেও চমকায়নি সে।তার জন্যই অপেক্ষা করছিলো পুষ্প।
-আমার মনে হয় সবকিছু আমার জন্য হয়েছে।
‘ছেলেটার কথায় পুষ্প ভ্রু কুঁচকালো।
-আমি যদি রামিশা’কে সত্যিটা না জানাতাম,তাহলে রাজও সব জানতো না,আর রামিশা বেঁচে থাকতো।
-এখানে আপনার আমার কারো হাত নেই।আমার অনেক কাজ আছে।কি দিবেন তাড়াতাড়ি দেন।
‘ছেলেটা পকেট থেকে একটা পেন’ড্রাইভ বের করে পুষ্পের হাতে দিলো।তারপর বললো,,
-তুমি চাইলে আমাকে সাথে নিয়ে ভিডিও গুলো দেখতে পারো।একা একা সহ্য করতে পারবে তো?
‘আরিমা কিছু না বলে টি’ভি’তে পেন’ড্রাইভ সেট করে নিলো।দুইটা ভিডিও এখানে।একটা অন করতেই কিছু সিন পুষ্পের মনে দোলা দিয়ে গেলো।
‘এক্সি’ডেন্ট হয়ে গাড়ির ভিতর থেকে ছিঁটকে পরে আছেন দুজন মধ্যবয়সী মানব/মানবী।
চেহারা রক্তে ভেসে যাচ্ছ।তখনই গাড়ির ভিতর থেকে চিৎকার করে একটা মেয়ে বেরিয়ে এলো।
তার কোলে আরেকটা বাচ্চা।তারপর ওই দুজনের কাছে গিয়ে মেয়েটা কাঁদতে লাগলো।
লোকটা মেয়েটাকে আস্তে আস্তে কি যেনো বললো।মেয়েটা বারবার মানা করছিলো মাথা নাড়িয়ে।অতঃপর পকেট থেকে টাকা বের করে মেয়েটার হাতে ধরিয়ে দিলো মধ্য’বয়সী পুরুষ।
‘তারপর মেয়েটা দুজনের রক্ত ভেজা কপালে চুমু দিয়ে ছোট মেয়াটা’কে কোলে নিয়েই দৌড় লাগালো।
মেয়েটা যাওয়ার পর সেখানে আরেকটা গাড়ি আসে।সেখান থেকে আরেকজন বের হয়।তারপর ওই লোকটার কানে কানে কিছু বলে তার গলা পা দিয়ে চেপে ধরে।
‘লোকটা ছটফট করতে করতে সেখানেই জীবন ত্যাগ করে।তারপর গাড়ি চেক করে সেই লোকটা।
আরো কয়েকজন’কে ডেকে এনে গাড়ি’তে আগুন ধরিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
‘প্রথম ভিডিও টা দেখে পুষ্পের রুহ কেঁপে উঠে।মেয়েটা যে তার বড্ড চেনা।রামিশা ওটা সে ভালো’ভাবেই বুঝেছে।কিন্তু বাকি দু’জন লোক কে?
পুষ্প ঢোক গিললো তারপর ছেলেটার দিকে তাকালো।
-নেক্সট ভিডিও দেখো।
‘পুষ্প আবার টিভির দিকে তাকালো।এবার সে রামিশা’কে দেখতে পাচ্ছে।মুহুর্তেই তার কলিজা ছ্যাঁৎ করে উঠলো।চোখ জ্বলে যাচ্ছে।বুকের ভিতর ভারি কিছুর আস্তরণ টের পাচ্ছে সে।
‘রামিশা একটা খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।তার আশেপাশে বেশ কয়েকটা ছেলে-পেলে তাকে ঘিরে রেখেছে।রামিশা বার-বার হাত জোড় করছে।কিন্তু কেউ তার কথা শুনছে না।
‘শেষে পালানোর জন্য দৌড় দিতে নিলেই একজন কষিয়ে থা’প্প’ড় মারে তাকে।মুহুর্তেই সবাই তার উপর পেট্রোল ঢালতে থাকে।রামিশা শুধু কাঁদছিলো আর হাতজোড় করে মিনতি করছিলো।
‘এবার এক এক করে সবাই তার শরীরে দিয়াশলাই এর কাঠি ছুঁড়ে মারলো।মুহুর্তেই লাল রঙা শাড়ি’টা আগুন লেগে পুড়ে যেতে লাগলো।
‘রামিশা ছটফট করছে।কিন্তু কেউ তাকে সাহায্য করতে এগোচ্ছে না।শেষে রামিশা একটা জোরে চিৎকার দিয়ে নড়াচড়া বন্ধ করে দিলো।
‘ক্যামেরা’ দূরে থাকার দরুন সব কথা শোনা না গেলেও লাস্টের কথা’টা আরিমার কানে এসে বারি খেয়েছে।
“আমার বোকা ফুল,ভালোবাসি বোন।
‘পুষ্পের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।কোনো রিয়েকশন নেই।শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।
-আমিই রামিশা’কে রাজের কীর্তি’কলাপ সম্পর্কে জানিয়েছি।কিন্তু রাজ কোনোভাবে জেনে যে এতো খারা….
-জানেন তো।আমার বোনটার বেশি কিছু আশা ছিলো না।আমাকে নিয়েই বাঁচতে চেয়েছিলো সে।আমিই তাকে বিয়ের জন্য ফোর্স করতাম।
কতো সপ্ন ছিলো আমাদের।একদিন পূরণ হবেই ইনশাআল্লাহ।কিন্তু।
-আচ্ছা ভাইয়া।যখন আমার বোনের শরীর’টা পুড়ছিলো তখন তার অনেক কষ্ট লেগেছে তাইনা?কি পরিমাণ ছটফট করেছে বাঁচার জন্য। কেউ তাকে সাহায্য করেনি।কেউ করে নি।
‘পুষ্প কাঁদতে লাগলো।বুকের ভিতর’টা জ্বলছে তার।এ’কি নিদারুণ যন্ত্রণা।তাদের জীবন তো সুন্দর-ই ছিলো।কেনো হঠাৎ সব এলো’মেলো হয়ে গেলো?
-প্রথম ভিডিও সম্পর্কে প্রশ্ন করলে না?
‘মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো পুষ্প।সে জানতে চায় সে সম্পর্কে।
-উনারা তোমার বাবা-মা।তোমার বাবা একজন অ’নেস্ট পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন।যার দরুন অনেক প্রমাণ ছিলো তার কাছে রায়হান শেখের বিরুদ্ধে।
রায়হান শেখ আপোষ চেয়েছিলেন।কিন্তু তিনি মানেন নি।সে এরকম খারাপ কাজ কিছুতেই করতে পারবেন না
যার ফলপ্রসূ তাদের মৃত্যু হলো।
কিন্তু তোমাদের পায়নি সে।
-আর হ্যাঁ, ভিডিও গুলো আমার ছোটো ভাই করেছে।তার প্রকৃতির ছবি তোলার অনেক শখ।ঘটনাচক্রে দুই দিন-ই সে সেখানে উপস্থিত ছিলো।তাই সব প্রমাণ আমার হাতে।
‘পুষ্প কিছুই বলছে না।বুকের ভিতর সব জট পাকিয়ে আছে।কোনো কথায় বলছে না সে।
“অধিক শোকে কাতর” যাকে বলে।
-আপনি কে?
-আমি গোয়েন্দা সংস্থা’র একজন কর্মকর্তা। তাদের সিক্রেট এজেন্ট।নিশাত আহসান তুষার।
-শোনো আরিমা।তুমি কি চাও না।তোমার বোন/বাব-মা’র খুনি’রা তাদের শাস্তি পাক?
-আমিই তাদের নিজ হাতে শাস্তি দিবো।দয়া করে বলবেন না,আইনের হাতে তাদের তোলে দিতে।
-তুমি অনেক শক্ত আছো।কঠোর মনের অধিকারী। তুমিই পারবে তাদের শাস্তি দিতে।কিন্তু আইনের লোক যেনো কিছু বলতে না পারে।তাই তোমাকে আইনের লোক হতে হবে।
‘পুষ্প অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।তার মতো গরীব ঘরের মেয়ে কোথায় চাকরী পাবে?যেখানে ঘোষ ছাড়া চাকরী-ই হয়না।
-আমি তোমাকে চাকরী দিবো।আমার পি’এ হবে তুমি।আস্তে আস্তে তোমার সততা দেখে তোমাকে সিক্রেট এজেন্ট’দের দলে নিবো।তার আগে শোনো।
-রায়হান শেখ তোমাকে ব্যাবহার করবে খান ভীলাকে ধ্বংস করার জন্য। তুমি এমন ভাবে কাজ করবে যাতে করে সবাই ভাববে তুমি তাদের ব্যাপারে কিছুই জানোনা।তাদের সব খুটি’নাটি তোমার জানতে হবে।আমি হেল্প করবো।
-আর ট্রেনিং?ওটা রায়হান নিজ দায়িত্বে করাবে তোমাকে।রাজকে সহ্য করতে হবে তোমার।তার সাথে প্রেমের অভিনয় করতে হবে।তাতেই কাজ হবে।
-প্লিজ!মেনে নাও আরিমা।
-আচ্ছা তা-ই হবে।
-এই নাও একটা ফোন।এখানে নাম্বার আছে আমার।দরকার হলে কল দিও।
‘নিশাত চলে যেতেই পুষ্প কান্নায় ভেঙে পরলো।আজকে রাজ বাসায় নেই।এটাই সুযোগ ছিলো।
পুষ্প অজু করে জায়নামাজ বিছিয়ে নিলো তারপর নামাজ আদায় করে দোয়ার মধ্যে ইচ্ছে মতো কাঁদলো।একমাত্র উপরওয়ালা ছাড়া যে কেউ নেই তার।
‘এরপর থেকে আরিমা অভিনয় করে যেতো।শত ক্ষো’ভ থাকা সত্ত্বেও সে মুখ বুজে ছিলো।আস্তে আস্তে রায়হান শেখের সাথে পরিচয় হলো।তারপর সব প্ল্যান মাফিক-ই চলছিলো।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে এখানে আসার পর।সে কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারে না নিজেকে।সে হতাশ।চরম ভাবে হতাশ।
***
‘খান ভীলায় নিরবতা বিরাজ করছে।একটা সুঁই পরলেও যেনো আওয়াজ হবে।
আরিমা সোফার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।তার কোনো হেলদোল নেই,খালি চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।দৃষ্টি তার মেঝে’র সাদা টাইলস এর দিকে।
‘বন্ধু মহলের সকলে এসে আরিমাকে জাপটে ধরে হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো।আরিমার কোনো রিয়েকশন না পেয়ে ফারহা তার দিকে তাকালো।
জ্ঞা’ন হারিয়েছে মেয়েটা।ওকে তাড়াতাড়ি করে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো আফরিদ।
‘ফায়ান এখনো সোফার হাতল শক্ত’ভাবে ধরে রেখেছে।সে জানতো।আরিমা হলো পুষ্প।কিন্তু এতো কাহিনী জানতো না।তারপর ফায়ান উঠে দাঁড়িয়ে একটা লা’থি দিলো চেয়ারে।তারপর হনহন করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।
চলবে,,,,,,
(ভুল’ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ)