®মেহরুমা নূর
★তিন্নির জন্মদিন উপলক্ষে আজ বাড়িতে বার্থডে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যা হতেই পার্টির তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। জুহি তিন্নিকে হোয়াইট কালারের একটা প্রিন্সেস ড্রেস পড়িয়ে নিয়ে এলো। মাথায় প্রিন্সেস ক্রাউন। ছোট্ট তিন্নিকে বারবিডল পুতুলের মতো লাগছে। আদ্রিতা তিন্নির সাথে নানান ভঙ্গিতে সেলফির বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। ছোট্ট তিন্নিকেও পাউট করা শেখাচ্ছে। আর তিন্নিও একেবারে বড়দের মতোই ঠোঁট চোখা করেই আদ্রিতার সাথে ছবি উঠছে। পার্টির মেইন এট্রাকশন আজ তিন্নি। নিবিড় তিন্নির জন্য বিশাল আকার পাঁচ লেয়ারের একটা কেক অর্ডার করেছে। রঙবেরঙের বেলুন আর ঝিকিমিকি ফেইরিলাইটে বাড়ি সজ্জিত। বাড়ির সবাই ড্রয়িং এসে জড়ো হয়েছে। একটু পরেই কেক কাটা হবে। তাসান আর সানভিরাও এসেছে। সানভি সবসময়ের মতোই আলট্রা মডার্ন মেকাপের সাগরে নিজেকে চুবিয়ে নিয়ে এসেছে। যদিও ওকে এভাবে সুন্দরই লাগে। অপরাহ্নও এসেছে। নিবিড় তাকে ইনভাইট করেছে। তিন্নির জন্য আনা গিফট’টা দিতে এগিয়ে গেল ওর কাছে। তিন্নি তখন তানহার কোলে বসে আছে সোফায়। অপরাহ্ন এগিয়ে গিয়ে তিন্নির সামনে সোফায় বসলো। গিফট টা তিন্নির হাতে দিয়ে মুচকি হেঁসে বার্থডে উইশ করলো তাকে। তিন্নির সাথে কথা বলার মাঝে সামনের শ্যামকন্যাকে একপলকে অবলোকন করে নিলো। আজকাল অপরাহ্নের মন কেমন যেন কিশোরদের মতো চঞ্চল হয়ে উঠেছে। এই শ্যামকন্যাকে দেখার কোনো বাহানাই সে হাত ছাড়া করতে চায়না। তাইতো নিবিড়ের একবার বলাতেই সে ক্লিনিক থেকেই চলে এসেছে। অপরাহ্নের উপস্থিতি তানহাকেও কেমন নার্ভাস করে দিলো। চশমার কোন ঠেলে চোখের নজর লুকাতে ব্যাস্ত। সানা ফুপির অনুষ্ঠানে সেদিনের অপরাহ্নের সাথে ওই মুহুর্তের পর থেকে লোকটার প্রতি তার দৃষ্টিকোণ কেমন যেন বদলে গেছে। আজকাল এই লোকটা আশেপাশে থাকলে তার কেমন যেন নার্ভাসনেস কাজ করে। বুকের মাঝে অকারণেই দুরুদুরু করে। তা লুকাতেই তানহার যতো সংঘর্ষ।
সবাই নানান কথায় ব্যাস্ত। ঠিক তখনই দরজা দিয়ে আসতে আসতে কেউ বলে উঠলো, “পাবলিকগণ তুমহারা ধ্যান কিধার হে, দ্য গ্রেট রবি বাবা ইধার হে। সোয়াগাত নেহি কারোগি! “
সবাই সামনের দিকে তাকিয়ে রবিকে (নূরের ভাই) দেখে আনন্দে প্রফুল্লিত হয়ে গেল। আদ্রিতা অতি উৎসাহে চিল্লিয়ে বলল,”ইয়েএএ মামা!” বলতে বলতে ছুটে এলো রবির কাছে। রবি এক হাতে ভাগ্নিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,”কেমন আছে আমার কিউটিপাই টা?”
আদ্রিতা খুশিমনে বলল,”বিন্দাস। তোমাকে দেখে আরও ভালো হয়ে গেলাম। কতদিন পর এলে। আমাদের তো ভুলেই গেছ তুমি । কেমন আছ মামা?”
রবি মুখ করুন করে বলল,”কিউটিপাই, এই মামা না ডাকলে কি হয়না! এমন ইয়াং এন্ড ড্যাশিং ছেলেটাকে এভাবে মামা ডেকে একেবারে বুড়ো বানানো কি জরুরি! আম স্টিল ব্যাচেলর। মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যাচিলর ইন দিস কান্ট্রি। আরে কতবার বলেছি আমাকে ডুড বা বাডি বলে ডাকো।”
হাসলো আদ্রিতা। তাসান এগিয়ে এসে বলল, “এক্কেরে ঠিক বলেছেন। দ্য গ্রেট লাভ গুরু রবি বাবাকে মামা বলে ডাকার জন্য তোর কোটিটাকা জরিমানা হওয়া উচিত, অরি। আরে উনি আমাদের বাপ,মামাদেরও লাভ গুরু। লাভ গুরুর জয় হোক। লাভ গুরুজি, এই মিসকিনদের উপরও একটু কৃপাদৃষ্টি করুন। অনাহার, অবহেলায় ঝড়ে পড়ছি আমরা।”
রবি তার সেই বিখ্যাত স্টাইলে, ঋষি মুনিদের মতো করে এক হাত উঠিয়ে বলল,”চিন্তা নেই বৎস। রবি বাবা ইজ কামিং নাউ। সবার কল্যাণ করবে রবি বাবা।”
হেঁসে উঠল সবাই রবির কথায়। সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় শেষে নিবিড়ের পাশে এসে বসলো রবি। নিবিড়কে বলল,”তা ফরেন ভ্রমণ শেষ হলো বুঝি বৎস? ভাবছি ইতালিতেও আমার একটা ব্রান্স খুলবো। “
নিবিড় হালকা হেঁসে বলল, “ওখানে তোমার ব্যাবসা চলবেনা মামা। ওখানকার জেনারেশন এমনিতেই অনেক ফাস্ট। ফাস্ট মিটিংয়েই সব সেরে ফেলে।”
রবি নিবিড়ের দিকে হালকা ঝুঁকে নিচু গলায় বলল, “মনে হচ্ছে অনেক এক্সপোরিয়েন্স হয়ে গেছে ভাগিনা!”
প্রতিত্তোরে আবারও হালকা হাসলো নিবিড়।
কিছুক্ষণ পর তিন্নির মামা জোহান এসে উপস্থিত হলো। জোহান চাকুরীর সুবাদে ঢাকাতেই থাকে। ছোট্ট ভাগ্নির জন্মদিনে তাই চলে এসেছে। জোহানকে দেখেই তিন্নি দৌড়ে গিয়ে মামার কোলে উঠে পড়লো। জোহান ভাগ্নিকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে করতে সবার মাঝে এসে কুশলাদি বিনিময় করলো। জোহানকে দেখে সানভি বরাবরের মতোই আকর্ষীত হলো। জোহান নিবিড়ের মতো অতটা হ্যান্ডসাম না হলেও তার থেকে খুব একটা কমও হ্যান্ডসাম না৷ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ ছেলেটার মাঝে একটা অন্যরকম চার্ম আছে। সানভি জোহানকে দেখে নিজের পাশে জায়গা করে দিলো যাতে জোহান এসে তার পাশে বসে। কিন্তু জোহান তা অদেখা করে, সে গিয়ে বসলো আদ্রিতার পাশে। আদ্রিতা ফোনে তার সেলফিগুলো চেক করছিলো।জোহানকে সে খেয়াল করেনি। জোহান তিন্নিকে কোলে নিয়ে আদ্রিতার পাশে বসে বলে উঠলো, “কেমন আছ অরি?”
জোহানের কথায় মাথা তুলে তাকালো আদ্রিতা। সৌজন্যমূলক হেঁসে বলল,”ভালো আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?”
আদ্রিতার ভাইয়া সম্বোধন টা যেন জোহানের মনসই হলোনা। উৎসুক হাসিমাখা মুখটা হালকা চুপসে গেল তার। জোরপূর্বক হাসি টেনে বলল,
“এইতো ভালো। তোমাকে আজ সুন্দর লাগছে এই ড্রেসে। সোনালী কালারটায় তোমাকে মানিয়েছে অনেক।”
“থ্যাংক ইউ। এটা আমার বাবাই পাঠিয়েছে নিবিড় ভাইয়ার কাছে।”
জোহান আরও কিছু বলতে যাবে, তখনই সানভি ওখানে উড়ে এসে বসলো। হাসিমাখা মুখে জোহানকে বলল,”কেমন আছেন বিয়াই সাহেব? আজকালতো আপনাকে দেখাই যায়না। “
জোহানের চেহারার হাবভাবে বোঝা যাচ্ছে সে সানভির আগমনে একটু নাখোশ হলো বোধহয়। তবুও ভদ্রতা বজায় রেখে বলল,”এইতো ভালো। আসলে কাজের চাপ থাকেতো তাই তেমন আয়া হয়ে ওঠেনা।”
“তবে আপনাকে কিন্তু আজ খুব হ্যান্ডসাম লাগছে বিয়াই সাহেব।”
তিন্নি জোহানের কোল থেকে বলে উঠলো, “এই পিপি,তুমি মামাকে বিয়াই সাহেব বলছ কেন?”
সানভি তিন্নির গাল টেনে বলল, “কারণ উনি আমার বিয়াই সাহেব হন। তোমার সব মামারা, তোমার সব পিপিদের বিয়াই হবে বুঝেছ? “
“ওওও তাহলে অলি পিপি কেন বিয়াই বলে না?”
তিন্নির প্রশ্নে যেন জোহান একটা ভালো সুযোগ পেল। সে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
“হ্যাঁ বিয়াইন সাহেবা। আমি আপনারওতো বিয়াই হই। আপনি কেন বিয়াই বলে ডাকেন না? বিয়াই বলে ডাকলেই তো কতো ভালো লাগে। বিয়াই বিয়াইনের সম্পর্কটাইতো সবচেয়ে মজার সম্পর্ক।”
আদ্রিতা মুচকি হেঁসে বলল,
” না ভাইয়া। এসব বিয়াই, বিয়াইন সম্বোধন আমার কাছে কেমন অড লাগে। এসব পূরানো হয়ে গেছে। ভাইয়াই ঠিক আছে।”
জোহান বেচারা হতাশাজনক নিঃশ্বাস ছাড়ল। হঠাৎ নিবিড় ফট করে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বলল,
“আমরা আজ বসে বসেই রাত পার করার জন্য জড়ো হয়েছি নাকি! আসল কাজ না করলে শুধু শুধু এখানে বসে থেকে আমার সময় নষ্ট করবো না।এটাই করার থাকলে আমি চলে গেলাম রুমে।”
জুহি তড়িঘড়ি করে বলে উঠল,
“সে’কি যাবে কেন! তুমিই সব আয়োজন করলে আর এখন তুমিই থাকবেনা এ কেমন কথা! এইতো এক্ষুনি কেক কাটিং হবে। এসো সবাই।”
জুহির তাগিদ দেওয়াই সবাই কেক কাটিংএর জন্য জড়ো হলো। কিন্তু নিবিড়ের এই হঠাৎ রাগ আদ্রিতার বোধগম্য হলোনা। এতক্ষণ তো ঠিকই ছিলো! এই লোকটার মতিগতি কিছুই বোঝা যায় না। আদ্রিতা না বুঝলেও, ছেলের মনোভাব তানি ঠিকই বুঝতে পারছে। ভয় জমছে তার মনে। ছেলেটা কোনরকম পাগলামি না করলে হয়।
কেক কাটা শেষে সবার মাঝে পিচ পিচ করে কেটে খেতে দেওয়া হলো। তাসানতো হাজার জনমের ক্ষুদার্থ রাক্ষসের মতো কেকের উপর হামলে পড়েছে। প্রায় অর্ধেক কেক সে একাই সাবাড় করেও মুখ বেরুচি করে বলছে,
“নারে অরি,কেক খেয়ে তেমন মজা পাইলাম না। রুচি কমে গেছে বুঝেছিস। রুচির ঔষধ খেতে হবে।”
অরি বলল,
“টেনশন করোনা ভাইয়া। তুমি বরং তিন গ্লাস নিম পাতার জুস খাও। দেখবে কেক কেন, ওভেন সহ খেয়ে ফেলবে।”
তাসান আবেগে আপ্লূত হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
“তুইই আমার একমাত্র কলিজার বইন। কত্তো ভাবিস আমার কথা। চোখে পানি আইসা গেল।”
এতোসব শোরগোলের মাঝে নূরান নেই। সে কেবল কেক কাটিং এর সময় এসে একটু কেক মুখে দিয়েই চলে গেছে। কেউ আর জোর করেনি। জানে নূরান এমনই।
কেক প্রায় শেষ। তানহার হাতে শুধু এক টুকরো অবশিষ্ট আছে। সবাইকে দেওয়ার পর তানি ওকে এটুকু দিয়ে গেছে। তানহা খেতেই নিবে তখনই দেখলো অপরাহ্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করছে। কিছুক্ষণ পূর্বে ফোনে কথা বলতে বলতে বাইরে যেতে দেখা গিয়েছিল একবার। তারমানে উনি নিশ্চয় কেক পাননি। তানহা একবার নিজের হাতের কেকটুকুর দিকে তাকালো। বার্থডে পার্টিতে দাওয়াত দিয়ে কেকই না খেতে দিলে বিষয় টা কেমন দেখায়। তানহা নিজের হাতের কেকটুকু নিয়ে অপরাহ্নের দিকে এগিয়ে যেতে নিলো। তখনই অপরাহ্নের আবারও ফোন এলো বোধহয়। সে ফোন কানে নিয়ে বাহিরে চলে গেল। তানহা কেক দিতে বাইরেই গেল তার পেছনে। বাইরে এসে দেখলো অপরাহ্ন পুল সাইডে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।কথা শুনে মনে হচ্ছে উনার ক্লিনিকের কোনো স্টাফের সাথে কথা বলছে। তানহা অপরাহ্নের পেছনে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে, অপরাহ্নের কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রইলো।
কথা শেষ করে পেছনে ফিরতে নিলেই হকচকিয়ে গেল অপরাহ্ন। দুই হাত দুপাশে তুলে একটুর জন্য তানহার সাথে ধাক্কা লাগতে লাগতে বাঁচল। তানহাকে এভাবে হঠাৎ দেখে কিছুটা আশ্চর্যান্বিত হয়ে অপ্রস্তুত হেঁসে বলল,
“তানহা! তু…তুমি!
তানহা স্বভাবগতই চশমার কোন ঠেলে নিচু স্বরে বলল,
“আপনার জন্য কেক এনেছিলাম। আপনিতো খাননি নিশ্চয়।কেক কাটার সময়তো আপনি ছিলেন না।”
তানহা কেক রাখা পিরিচ টা অপরাহ্নের দিকে এগিয়ে দিলো।অপরাহ্ন এবার তানাহার হাতে থাকা কেকের দিকে তাকালো। মেয়েটা তারজন্য কেক নিয়ে এসেছে!তারমানে এতো লোকের মাঝে সে আমার কথা মনে রেখেছে।আমি যে কেক খেতে পায়নি সেটা সে নোটিশ করেছে!ভাবতেই কেমন শীতলতা অনুভব হচ্ছে অপরাহ্নের। খুশিমনে সে তানহার হাত থেকে কেকের পিরিচ টা নিয়ে মুচকি হেসে বলল,
“ধন্যবাদ তানহা। আসলে ক্লিনিক থেকে জরুরী ফোন আসছে বারবার। যারজন্য ঠিকমতো এটেন্ড থাকতে পারছিনা।”
তানহা সৌজন্যমূলক স্মিথ হেঁসে বলল,
“আমি বুঝতে পেরেছি। ডাক্তারদের দায়িত্ব একটু বেশিই থাকে।আপনি খান, আমি আসছি।”
বলেই তানহা ঘুরে যেতে উদ্যত হতেই অপরাহ্ন ডেকে উঠল,
“তানহা।”
তানহা আবার ফিরে তাকিয়ে বলল,
“জি?”
অপরাহ্ন জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি খেয়েছ কেক?”
তানহা এবার একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। চশমার কোন ঠেলে আমতা আমতা করে বলল,
“হ….হ্যাঁ খেয়েছি তো।
অপরাহ্ন মুচকি হেঁসে বলল,
“তুমি কি জানো, তুমি মিথ্যে বলায় একেবারেই অপরিপক্ব! ভেতরে যে কেক শেষ তা আমি দেখেছি।তাই মিথ্যে বলার দরকার নেই।”
“তাতে কি হয়েছে, আপনি খান। আমার কেক এমনিতেও তেমন পছন্দ না।”
“কেকতো আমিও খুব একটা খাইনা। তাই আমরা বরং একটা কাজ করতে পারি। আমরা কেকটাকে ভাগ করে খেতে পারি।যদি না তোমার কোনো অসুবিধা হয়।”
অপরাহ্ন কাটা চামচটা দিয়ে কেকটুকুর মাঝখান দিয়ে দুভাগ করে নিলো। তারপর তানহার দিকে এগিয়ে নিয়ে বলল,
“বার্থডের কেক না খেলে বার্থডে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাই চলো দুজনেই এটা ভাগাভাগি করে খাই।”
অপরাহ্নের কাজে তানহার হাসি পেল।কেন যেন মানা করলোনা সে। মুচকি হেঁসে একভাগ কেক হাতে তুলে নিয়ে মুখে দিলো। অপরাহ্নও প্রফুল্ল মনে আরেকভাগ কেক নিজের মুখে তু্লে নিলো।আজ যেন এই কেকের টুকরোটা অমৃতর স্বাদ দিচ্ছে অপরাহ্নকে। আজ এখানে আসাটা এতো লাভদায়ক হবে তাকি জানা ছিলো।
কেকের পর্ব শেষ করে খেতে বসলো সবাই।আদ্রিতার পাশে যথারীতি নিবিড় এসে গম্ভীর মুখ করে বসলো। কোথাথেকে হঠাৎ ছুটে এসে জোহান আদ্রিতার ওপর পাশে এসে স্থান গ্রহণ করে নিলো। বিষয় টা আদ্রিতাসহ বাকিদের মাঝে তেমন প্রতিক্রিয়া না ঘটালেও নিবিড়ের ভেতর যে এটার তুমুল প্রতিক্রিয়া সংঘটিত হচ্ছে তা খাবার সার্ভ করতে থাকা তানি ঠিকই বুঝতে পারছে। নিবিড়ের ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে হওয়া মুখয়বে তা প্রতিয়মান হচ্ছে। তানির ভয় বাড়ছে। ছেলেটা কোনো তুফান না আরম্ভ করে দেয়। খাবার খাওয়ার এক পর্যায়ে জোহান আদ্রিতার উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“আরে অরি,তুমি এই চিংড়ীর কারিটা ট্রাই করো। দেখ অনেক মজা হয়েছে।”
বলতে বলতে জোহান এক পিচ চিংড়ী চামচে নিয়ে আদ্রিতার প্লেটে তুলে দিলো। আদ্রিতার তা ভালো না লাগলেও ভদ্রতার খাতিরে জোরপূর্বক হাসলো। এমনিতেই তার খাবারে অনিহা। তারওপর এমন অযাচিত খাবার পাতে ঢেলে দেওয়াই মনে মনে বিরক্ত হলো আদ্রিতা। তবে আত্মীয় বলে তা আর বুঝতে দিলোনা।ভেতরে ভেতরে দাঁত চেপে, উপরে জোরপূর্বক হেঁসে বলল,
“থ্যাংক ইউ ভাইয়া, আপনি এটা না দিলে আজ খাবারের স্বাদই পেতাম না।”
জোহান যেন মহাখুশি হলো। হাসিমুখে বলল,
“মাই প্লেজার অরি। তুমি এতো কম খাও কেন? এটাইতো খাওয়ার সময়। বেশি বেশি করে খাবে বুঝেছ।”
তাসান মুরগির লেগপিসে বিশাল একটা কামড় বসিয়ে চিবোতে চিবোতে বলল,
“হ্যাঁরে অরি,তোরও কি আমার মতো রুচি নাই রোগ হয়েছে? দেখনা, মাত্র আট টা রোস্ট খেতে পারলাম। এইটা কোনো খাওয়া হলো! এতো কম খেয়ে শরীর দূর্বল হয়ে যাচ্ছে বুঝেছিস! রাস্তা ঘাটে কখন না আবার অজ্ঞান খেয়ে যাই! লাইফে বহুত ট্রাজেডি।”
তাসানের তীব্র দুঃখজনক আলাপ শুনে কারোর চোখেই পানি দেখা গেলনা৷ বরং হাসির ফোয়ারা ছুটলো। রবি বলে উঠল,
“সাব্বাস! এই না হলে বাপের বেটা! তোমার মতো রুচি নাই রোগ ওয়ালা লোক ঘরে ঘরে থাকলে দেশের উন্নতি অনিবার্য।”
তাসান তার অপমান টাকে গর্বের সহিত নিয়ে বলল,
“ধন্যবাদ মামা। ব্যাস,কখনো অহংকার করিনি।
হাসলো সবাই। জেহান আবারও আদ্রিতাকে বলল,
” তবে সত্যি তুমি খেয়েদেয়ে একটু গুলুমুলু হও। তুমি এমনিতেও অনেক কিউট। তবে গুলুমুলু হলে আরও কিউট লাগবে। একদম আদুরে আদুরে।”
জোহানের কথাবার্তায় আদ্রিতার কেমন অস্বস্তি লাগছে এবার। কিন্তু ওইযে ভদ্রতার খাতিরে জোরপূর্বক হাসা ছাড়া কিছু বলতেও পারছেনা। তবে এপর্যায়ে হঠাৎ নিবিড় ঠাস করে উঠে দাঁড়াল। তা দেখে চমকে উঠল তানি। ছেলের মুষ্টি বদ্ধ শক্ত, রগ ফুলে উঠা হাত, তার নজর এড়ায়নি। সে অবস্থার ভয়াবহতা বুঝতে পেরে নিবিড়ের কাছে এসে বিড়বিড় করে বলল,
“এমন কোনো কিছু যেন নাহয় যাতে জুহি এবাড়িতে নিজেকে পর মনে করে।আশা করি বুঝতে পারছ।”
নিবিড় তাকালো মায়ের দিকে। যেন বলতে চাইছে,
“তুমি কি আমকে এতটাই ইম্যাচিউর ভাবো!”
সানা নিবিড়ের দাঁড়ান দেখে বলল,
“কি ব্যাপার নিবিড়! খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালে কেন?”
মায়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিবিড় গমগমে গলায় বলল,
“পেট ভরে গেছে ফুপি।”
বলেই বড় বড় পা ফেলে হনহন করে সিড়ি বেয়ে উঠে গেল সে। তানি যেন গোপনে হালকা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। তবে পুরোপুরি হতে পারলোনা। তুফান যে কোনদিকে ঘুরবে কে জানে।
নিবিড়ের হঠাৎ রাগের আভাস যেন কিছুটা আদ্রিতাও পেল। কিন্তু কেন তার এই রাগ তা বোধগম্য হলোনা। আদ্রিতা তাকালো নিবিড়ের প্লেটের দিকে। প্লেটের খাবার যেন একটাও নড়চড় হয়নি। উনি কি না খেয়েই চলে গেল! আদ্রিতার খাবার কেন যেন আর গলা দিয়ে নামলো না। বুকের ভেতর কেমন খচখচ শুরু হলো তার।
চলবে….
(জমানো পর্ব শেষ হয়ে গেছে। তাই গল্প হয়তো একটু অনিয়মিত হতে পারে। সংসার সামলে গল্প দেওয়া একটু কঠিন হয়ে যায়। তবে আমি চেষ্টা করবো বেশি অনিয়ম না করার।আশা করি আমার পাঠকগণ বুঝবে।)