®মেহরুমা নূর
★আদ্রিতার মনের টেপ রেকর্ডারে শুধু এখন একটাই গান বাজছে,প্রেমে পড়েছে মন, প্রেমে পড়েছে। অচেনা এক মানুষ… না না অচেনা না। নিবিড় ভাইয়া তো আর অচেনা না। এক্ষেত্রে হবে ♬ প্রেমে পড়েছে মন, প্রেমে পড়েছে, ছোট্ট কালের চেনা মানুষ আমার মন কেঁড়েছে। ভাঙ্গা ক্যাসেটের মতো একই গান বারবার বেজেই যাচ্ছে। চারিদিকে শুধু প্রেম প্রেম হাওয়া বইছে তার। বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মতো গাছের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে গান গাইতে ইচ্ছে হচ্ছে আদ্রিতার। আজাইরা আবালের মতো বত্রিশ পাটি বের হাসতে মন চাইছে।হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়ে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। মনের মাঝে হাজার রঙের প্রজাতিরা ব্রেকড্যান্স, ডিসকো,হিপ-হপ, পপিং, লকিং সব রকমের ডান্স একসাথে করে ডান্স ফ্লোর ভেঙে ফেলছে। অনুভূতির তোড়জোড়ে বেকায়দা অবস্থা আদ্রিতার। প্রেম মানুষকে এমন টপ লেভেলের আবাল বানিয়ে দেয় তা আজ শুধু হাড়েহাড়ে না র,ক্তে, মাংসেও টের পাচ্ছে। তা না হলে কি আদ্রিতার এই অবস্থা হয়!
সকাল থেকে আদ্রিতা লিভিং রুমের সোফায় অবস্থান করছে। সোফায় পা উঠিয়ে বসে মুখে বৃদ্ধাঙ্গুল ঢুকিয়ে দাঁত দিয়ে নখ কামড়াছে।মুখে লাজুক হাসি লেপ্টে নিজের খেয়ালে ডুবে আছে। দিনদুনিয়ার খেয়াল থেকে আপাতত তার সব কানেকশন বিচ্ছিন্ন। সেই কখন থেকে সে এই একই ভঙ্গিতে বসে আছে। সকালে নাস্তার টেবিলে যখন নিবিড় রোজকার মতো ওর পাশে বসলো তখম আদ্রিতার হাত পায়ের মাঝে যেন ইঞ্জিন চালু হয়ে গেল। ঝিনঝিন করতে লাগলো হাত পা। হৃদপিণ্ড লাফ দিয়ে বেড়িয়ে প্লেটে এসে পড়ার যো। লজ্জাগুলো তো যেন আজ তার চৌদ্দ গুষ্টি সমেত এসে হাইসা বলে হামলা করে দিয়েছে আদ্রিতার উপর। হঠাৎই অকারণেই তার লজ্জা লাগছে। মনে হচ্ছে যেন নতুন বউ সে আর নিবিড় ভাইয়া তার সদ্য বিয়ে করা স্বামী। কি জ্বালা! কিন্তু তার পাশে বসা নিবিড় ভাইয়ার মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সে রোজকার মতোই খেয়েদেয়ে অফিস চলে গেল। আর আদ্রিতা তখন থেকেই সোফায় এভাবে একই ভঙ্গিতে বসে আছে।
প্রথম প্রথম ব্যাপার টা কারোর নজরে না পড়লেও ধীরে ধীরে যেন নোটিশ করতে শুরু হলো বিষয় টা । প্রথম খেয়াল করলো তানহা। যখন সে আদ্রিতার পাশে এসে বলল,
“অরি রিমোট টা দেতো।”
তানহা দেখলো তার কথায় আদ্রিতার কোন নড়নচড়ন নেই। সে একই ভঙ্গিতে বসে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে আর নিজের খেয়ালে ডুবে আছে। মুখে কেমন লাজুক লাজুক হাসি তার। তানহা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“এই অরি, রিমোট দিতে বললাম না! “
আদ্রিতার হেলদোল নেই। তানহা আবারও বলল,
“এই অরি, কথা কানে যাচ্ছে না! এভাবে বসে আছিস কেন?”
এবারও প্রতিক্রিয়াহীন আদ্রিতা। তানহা আদ্রিতার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,
“এই অরি,কি হয়েছে তোর! কি নতুন ঢং শুরু করলি আবার। এই অরি!”
নাহ,তবুও নির্বিকার এই ভঙ্গিতে আছে আদ্রিতা। একটু পর সানভি এলো সেখানে।তিন্নির বার্থডে উপলক্ষে এসে এখনো যায়নি ওরা।এমনিতেও সানভি আর তাসান বেশির ভাগ সময় এই বাড়িতেই থাকে। তানহা সানভিকে আদ্রিতার ভাবসাব বললে সে-ও খেয়াল করলো বিষয় টা। সানভি আদ্রিতার দিকে হালকা ঝুঁকে ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
“ওই ছেড়ি তোর আবার কি হইলো! মাথায় কিডনি ফেইল হইছে নাকি! এমন আবুলের বউ ছবিলার মতো বিহেব করছিস কেন? কথা বলিসনা কেন? তোর মিউট বাটন আবার কে চাপলো?”
সানভির কথায়ও আদ্রিতার কোনো ভাবাবেগ হলোনা। একই পজিশনে রইল সে। তানহা আর সানভি নিজেদের প্রচেষ্টায় ফেইল হয়ে এবার বাকিদের ডাকতে লাগলো। ধীরে ধীরে পুরো বাড়ির লোক জড়ো হয়ে গেল। সবাই চিন্তিত আদ্রিতার এমন অদ্ভুত আচরণে। সবাই যার যার মতো আদ্রিতার ধ্যান ভাঙার চেষ্টা করছে। কিন্তু আদ্রিতার কোনো নড়নচড়ন নেই। আবির এসে বলল,
“অরি মামুনি,লুক এট মি। কি হয়েছে তোমার! এভাবে বসে আছ কেন? কেউ বকা দিয়েছে? চাচ্চুকে বলো, চাচ্চু এখুনি তাকে উগান্ডা পার্সেল করে পাঠিয়ে দিবে।”
নাতনীর কথা শুনে তুলি বেগমও নিচে এসেছে। তিনিও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ অরি বুবু,টেল টেল। হোয়াট হাঁপানি(হ্যাপেন্ড) টু ইউ। আমাদের তো অনেক স্টেশন(টেনশন) হচ্ছে। স্টেশনে আমার ব্লাডি (ব্লাড) পানচার(প্রেশার) বেড়ে যাচ্ছে।”
আরমান আর আহনাফও নাতনীর জন্য চিন্তিত। সবার মাঝে দ্য গ্রেট তাসান এসে উপস্থিত। দুই হাতে জনতার ভীড় ঢেলে আদ্রিতার কাছে এগিয়ে এলো সে। এক ভ্রু উঁচিয়ে তীক্ষ্ণ সন্দিহান দৃষ্টিতে আদ্রিতাকে পর্যবেক্ষণ করলো। তারপর সিআইডির এসিপি প্রদিউমানের মতো এক হাতের পাঁচ আঙুল নাচিয়ে বলল,
“কুছ তো গাড়বার হে দয়া! এই অরি নড়ছেনা কেন! তারকি অন বাটন নষ্ট হয়ে গেছে! নাকি তার মাথায় অ্যাপেন্ডিক্স হয়েছে! নাকি সে মাইনাস -৯ ডিগ্রি ঠান্ডার মাঝে বসে নিজেকে কুলফি মালাই বানিয়ে রাস্তায় রাস্তায় বিক্রি করার বিজনেস প্ল্যান করেছে! নাকি হাঁটুতে সর্দি হয়ে হাঁটু বন্ধ হয়ে গেছে! এই রহস্য জানতে চোখ রাখুন শুধুমাত্র আমাদের চ্যানেল ‘ফাটার প্লাসে’।”
তানহা বোকার মতো প্রশ্ন করলো,
“কিন্তু ভাইয়া ফাটার প্লাস আবার কোন চ্যানেল আছে নাকি!”
“আরে আছে। ওই স্টার প্লাস আর স্টার জলসার সাথে একটু ধনিয়াপাতা আর পুদিনাপাতা মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে তিন সপ্তাহ টানা রোদে রেখে দিলেই ফাটার প্লাস তৈরি। এবার বুঝেছিস? না বুঝলে বেশি চাপ নিস না। এগুলো লিজেন্ডদের ব্যাপার স্যাপার। তোদের মাথায় ঢুকবেনা। তুই এক কাজ কর। স্টিলের থালা আর চামচ নিয়ে আয়।”
তাসানের কথামত তানহা স্টিলের থালা আর চামচ নিয়ে এলো। তাসান সেটা হাতে নিয়ে আদ্রিতার কানের কাছের কাছে জোরে জোর চামচ দিয়ে থাল বাজাতে লাগলো। তাতেও কোনো কাজ হচ্ছেনা। তাসান এবার আরও বড় স্টিলের ডিস আনতে বলল। তারপর বিশাল এক ডিশের উপর তাসান ঝনঝন শব্দে ড্রামসেটের মতো বাজাতে লাগলো। বাকিদের কানের পর্দা ফেটে যাবার যোগার।তারা দুই হাতে কান চেপে ধরেছে। অথচ আদ্রিতা সেই একই ভঙ্গিতে নির্বিকার। ডিশ বাজাতে বাজাতে তাসান বেচারার জিব বের হয়ে গেছে। তবুও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সানভি বলল,
“এক কাজ করি অরির উপর ঠান্ডা পানি ঢেলে দেই তাহলে জাগবে নিশ্চয়।”
তানহা গিয়ে ফ্রীজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে নিয়ে এসে পুরো পানি আদ্রিতার মাথায় ঢেলে দিলো। তাতেও কোনো উন্নতি হলোনা। সবাই হতাশ হয়ে বসে পড়লো। কি করবে বুঝতে পারছেনা। আবির বলল,আদ্রিতাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। সেই সময় বাসার কাজের মহিলা জাবেদা খালা এসে বলল,
“সাব ডাক্তার না, কবিরাজ ডাকেন। অরি মামুনির এহন কবিরাজের দরকার। তার উপর জ্বীনে ভর করছে। এই জন্যই তো এতোকিছুর পরেও কোন নড়নচড়ন নাই। আমগো গায়েও এমন অনেক বার হইছে। জ্বিনের আছর করলে মানুষে এমনই করে। কবিরাজ বাবা আইসা জ্বিন ছাড়াইলে আদ্রিতা ঠিক হইয়া যাইবোগা।”
আবির জাবেদার এমন অন্ধবিশ্বাসী কথা মানতে চাইলোনা। কিন্তু তুলি বেগমও জাবেদার কথায় সায় দিয়ে কবিরাজ ডাকতে বলল। জাবেদা বলল, তার কাছে এক পরিচিত কবিরাজের নাম্বার আছে। সে ফোন করে আসতে বলল কবিরাজকে। ঘন্টাখানেক পর চলে এলো কবিরাজ। কালো লম্বা জুব্বার মতো পোশাক। মাথায়ও কালো কাপড় বাঁধা। গলায় শতশত নানানরকম পাথরের মালা। এক হাতে ময়ূরের পালকের এক বান্ডিল। আরেক হাতে ধূপ। কবিরাজ আদ্রিতার সামনে এসে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
“হুমমম, ফ্রীজ জ্বিন। ফ্রীজ জ্বিনে ভর করছে ওরে।”
তাসান পাশ থেকে মজা করে বলল,
“কিন্তু কবিরাজ বাবা, ফ্রীজ জ্বীন কি তাহলে বিদ্যুৎ ছাড়াই চলে? বাহ! তাইলে তো ভালোই। আমি আজই কয়েকটা ফ্রীজ জ্বীন অর্ডার করমু অনলাইনে। ক্যাশ অন ডেলিভারি। সবার বিদ্যুৎ খরচ কতো কমে যাবে।”
কবিরাজ চোখ বড় বড় করে বলল,
“দুষ্টু বালক! জ্বীনের সাথে মজা! অনেক ভারী পরবে।”
কবিরাজ আদ্রিতার উপর তার মন্ত্রতন্ত্র ছুড়তে লাগলো। হাতের মাঝে ছাইয়ের মতো কিছু পাউডার নিয়ে মন্ত্র পড়ে পড়ে আদ্রিতার মাথার উপর ছিটিয়ে দিচ্ছে। কবিরাজ মন্ত্র পড়ছে, ওমম জ্বিন, খিন, চিনচিন
খায় খালি পলিথিন।
যন্তর,মন্তর কালি কালান্তর
সকালে মাথা খায় রাতে খায় অন্তর।
পেত্নী তোর মা, ভূতনী নানী
ঠ্যাং ধইরা করে টানাটানি।
পিশাচ তোর শ্বশুর
মরা ইন্দুর খাইয়া করে ভুসুর ভাসুর
এই মাইয়ারে ছাইড়া যা
নাইলে পিছাই দিমু এমন লাত্থি
সারাজীবন গাবি ♬ কাটা লাগা উইমা উইমা উহ্….
ছু মন্তর ছু,কালি কুত্তার গু। ছু ছু……
মন্তর পড়ে আদ্রিতার উপর পাউডার ছিটিয়ে ভরিয়ে দিলো। কিন্তু কবিরাজের এতো কারসাজি কিছুই ফলপ্রসূ হলোনা। আদ্রিতার মাঝে কোনো নতুনত্বই দেখা গেলনা। কবিরাজতো হতবাক। তাসান এগিয়ে এসে টিপ্পনী করে বলল,
“মিঃ শ্রদ্ধেয় কবিরাজ জি, আপনার চিকিৎসাতো কাজে লাগলোনা। আপনার কবিরাজি ডিগ্রি কি নিজের মেধাতেই পাইছেন। নাকি নকল করে পাস করছেন? “
কবিরাজ বেচারা অবস্থা বেগতিক দেখে নিজের কবিরাজি জ্ঞান পুটলিতে ভরে পালালো ওখান থেকে। সকাল গড়িয়ে বিকালে নেমেছে তবুও আদ্রিতার পজিশনের কোনো পরিবর্তন নেই। যেন একই পজিশনে জমে গেছে সারাজীবনের জন্য। সবাই সব প্রচেষ্টা করে হতাশ হয়ে বসে রয়েছে। সবার শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে তাসান আবারও উঠে দাঁড়াল। হাত পায়ের পোশাক গুটিয়ে মাঠে নামলো। বুক ফুলিয়ে বলল,
“ব্যাস, এবার শেষ উপায় এপ্লাই করতেই হবে। তাসান ফোন বের করে কাউকে ফোন দিয়ে কিছু বলল। মিনিট বিশেক পরই সেখানে কয়েকজন লোক এসে উপস্থিত হলো। আর সাথে করে নিয়ে এলো বিশাল বিশালকার এক একটা লাউডস্পিকারের মিউজিক সিস্টেম। এমন পিলারের মতো পাঁচ ছয়টা লাউডস্পিকার এনে লিভিং রুমে এনে সারি করে রাখলো। তাসান এবার সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
“শুনুন শুনুন সবাই। যার যার হার্ট দূর্বল তারা এখান থেকে প্রস্থান করতে পারেন। এটা কিন্তু খুবই ভয়াবহ স্টান্ট। বাচ্চারা কেউ বাসায় এটা ট্রাই করবে না।”
আরমান, আহনাফ আর তুলি নিজেদের রুমে চলে গেলেন। তাসান মিউজিক সিস্টেম চালু করলো। মিউজিকে গান প্লে করে সাউন্ড দিলো ফুল ম্যাক্সিমাম। এতো এতো বিশাল লাউডস্পিকার চালু হতেই পুরো বাড়ি যেন ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠল। লাউডস্পিকারের সাউন্ড এতোই জোরে যে এর সামনে টিকে থাকা কঠিন। টর্নেডো, সিডোর, আইলা,বুলবুলি,চিত্রাং সব ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড় একসাথে আরম্ভ হয়ে গেল। আর ঝড়ের বেগে সামনে থাকা ব্যাক্তিগুলো রীতিমতো উড়ে যেতে লাগলো। সবাই উড়ে গিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো। তানি উড়ে যেতে নিলে সোফার কোনা আঁকড়ে ধরলো। কিন্তু তাও টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আবির উড়ে গিয়ে সিড়ির রেলিং ধরে ঝুলে পড়লো। ওখান থেকেই চিল্লিয়ে করুন সুরে তানিকে বলল,
“ওগো প্রেতাত্মা, থুক্কু প্রিয়তমা, তোমার সাথে বুঝি আমার এই শেষ দেখা। ভুল চুক মাফ কইরো,গরুর গবর ছাফ কইরো। আর যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাই।শোনো মাঝে মধ্যে তোমার থেকে লুকিয়ে আমি তোমার কাজিন বোনদের সাথে ফ্ল্যাট করতাম। মাফ করে দিও প্লিজ। আমার ছেলে মেয়ে গুলোকে সবসময় মনে করিয়ে দিও তার বাপ মহান ব্যক্তি ছিলো। মাম্মি….তোমার লাল আজ পটল তুলতে যাচ্ছে।”
তানি চরম বিরক্তি ভরা চোখে তাকিয়ে বলল,
“আবিইরার বাচ্চা, খালি মিউজিক বন্ধ হোক। তারপর তোরে চির বিদায় আমি নিজে দিমু।”
তানহা আর সানভিও উড়ে গিয়ে দুজন একসাথে ফ্যান ধরে ঝুলে পড়েছে। দুইজন ফ্যানের দুই পাখা ধরে ঝুলছে। সানভি ঝুলে থাকতে থাকতে বলল,
“এই শোন দেখতো আমার মেকাপ ঠিক আছে কিনা! আমি পড়ে মরে টরে গেলে আমার ছবি ঠিক আসবেতো?”
তানহা বিরক্তির সুরে বলল,
“খারাপ কেন আসবে!তুই এক কাজ করিস। মরার আগে টাচআপ টা করে যাস। “
“হ্যাঁ ভালো বুদ্ধি দিয়েছিস। এমনই করতে হবে। “
ওদিকে জুহি বেচারিও সোফার এককোনা ধরে বাঁচার চেষ্টা করছে। তাসানতো কোনার পিলারটাকে এমনভাবে ধরে রেখেছে যেন এটা ওর বউ। বউকে কোনমতেই ছাড়া যাবেনা।
কিন্তু যারজন্য এই ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি করা হলো। সেতো দিব্যি বসে আছে। তার মধ্যে কোনো হেলদোলই নেই। সবাই অবাকের চূড়ান্তে। এই মেয়েটার কি কোনো কিছু লাগছে না!
এদের এতসব কান্ডের মাঝে এবার দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো নিবিড়। কিন্তু বাসার এই অবস্থা দেখে সে হতভম্ব। এতো লাউড মিউজিক তার কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়ার যো। সে দুই হাতে কান চেপে ধরে কোনরকমে ঝড়ের বেগ রুখে গিয়ে মিউজিক বন্ধ করে দিলো। সাথে সাথে যে যেখানে ছিলো সেখান থেকে ঠুস ঠুস করে নিচে পড়ে গেল। পড়ে গিয়ে সবাই যার যার ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠল৷ যাক, ঝড়ের কবল থেকে রেহাই পেয়েছে তারা। নিবিড় এসব দেখে বিস্মিত গলায় বলল,
“কি হচ্ছে এসব! সবার এই অবস্থা কেন?”
নিবিড় আদ্রিতাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ওর কাছে গিয়ে বলল,
“ওই,তোর কি হয়েছে? আর পিশাচের মতো নখ খাচ্ছিস কেন? খাবারের কি অভাব পড়েছে!”
সবাই ভাবলো আদ্রিতা নিশ্চয় এবারও কিছু বলবেনা। কিন্তু সবাইকে অবাকের সপ্তম আসমানে নিয়ে, সেখান থেকে ঠুস করে নিচে ফেলে দেওয়ার মতো কাজ করলো। নিবিড়ের কথায় ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়াল আদ্রিতা। যেন এইমাত্র ঘুম থেকে জাগনা পেল সে। ধড়ফড়িয়ে উঠে আমতাআমতা করে বলল,
“কি…..আর হবে! কিছুই না।”
বলেই সে নিবিড়ের সামনে থেকে সরে গিয়ে দ্রুত উঠে নিজের রুমে চলে গেল। এই লোকটার সামনে থাকলেই এখন কেমন যেন লাগছে ওর।
আদ্রিতার কান্ড দেখে নিবিড় বাদে বাকি সবাই হতবাক, হতবিহ্বল, বাকরুদ্ধ। নিবিড় এবার সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
“বলবে কি হয়েছে? “
সবাই হা হয়ে একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো৷ তারপর সবাই একসাথে ঠাস করে নিচে পড়ে গেল। অজ্ঞান বনে গেল সবাই। আদ্রিতার প্রেমে পড়ার মাশুল সবার উপর দিয়ে গেল। বেচারা শুধু নিবিড় শুধু হতভম্বের মতো তাকিয়ে রইলো।
চলবে……
(আজকের পর্বটা শুধুই হাস্যকর করেছি। আজকে একটু সবাই হাসুক মন খুলে)