#মেহরুমা নূর
★প্রকৃতিতে ভাদ্রের গুমোট বাতাবরণ বিরাজমান। তার থেকেও বেশি গুমোট বাতাবরণ আদ্রিতার মন মেজাজ জুড়ে। ডিনার শেষে আদ্রিতা রুমে চলে এসেছে। কেন থাকবে ওখানে? যেখানে আদ্রিতার কোনো ভ্যালুই নেই। নিবিড় ভাই, সবার সাথে কি সুন্দর অমায়িক ভাবে কথা বলছে। সবার কুশলাদি জানছে। এমনকি বাসার সার্ভেন্ট গুলোর সাথেও কুশলাদি বিনিময় করছে। অথচ আমার সাথে একটা কথাও বললো না। যেন আমি কোনো ইনভিসিবল প্রাণী। অভিমানের পালা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। নিবিড়ের প্রতি আদ্রিতার এমনিতেও অভিমানের এক বিশাল পাহাড় জমে আছে। ছয় বছর পূর্বে যখন নিবিড় বিদেশ চলে গেল তখন একবারের জন্যও আদ্রিতাকে কিছু বলে বা দেখা করে যায়নি। সেদিনের কথা মনে পড়লে আজও দুচোখ ভারী হয়ে আসে।আদ্রিতা তখন ক্লাস ফোরে পড়ে আর নিবিড় ভাইয়া তখন ইন্টারে পড়ে। ছোটো বেলা থেকে আদ্রিতা সবার আদূরে। তবে সবচেয়ে বেশি আদূরে ছিলো নিবিড় ভাইয়ার কাছে। এটা ঠিক যে নিবিড় আদ্রিতাকে সবচেয়ে বেশি শাসন করতো। একারণে আদ্রিতা ভয় পেত নিবিড়কে। তবে সবচেয়ে বেশি আদূরেও সে নিবিড়ের কাছেই ছিলো। আদ্রিতার হাজার হাজার বায়না,হাজার জ্বালাতন সব হাসিমুখে সয়ে যেত সে। সেই নিবিড় ভাই, যখন ওকে কিছু না বলে ওভাবে চলে গিয়েছিল তখন ছোট্ট আদ্রিতা অনেক কষ্ট পেয়েছিল। অনেক কান্নাকাটি করেছিল।অভিমানের সূত্রপাত সেখান থেকেই ঘটে। নিবিড়ের ওভাবে চলে যাওয়ার কারণ সে আজও ঠিকমতো জানে না। শুধু মনে আছে যাওয়ার দুদিন আগে আদ্রিতা নিবিড়ের কোনো কথা অমান্য করেছিলো। যার শাস্তি স্বরূপ নিবিড় আদ্রিতাকে স্টোর রুমে বদ্ধ অন্ধকার ঘরে আঁটকে রাখার শাস্তি দিয়েছিল। আদ্রিতা প্রচুর ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ভীষণ জ্বর এসেছিল তার৷ তার তিনদিন পরেই শুনতে পারে নিবিড় ভাই নাকি বিদেশ চলে গেছে। পরে তানহার কাছে জানতে পেরেছিল সোনা মা নাকি, নিবিড় ভাইকে প্রচুর মেরেছিল সেদিন। আদ্রিতার সাথে এমন আচরণ করার জন্য। আদ্রিতার মনে হতো নিবিড় ভাই বোধহয় সেকারণেই চলে গেছে। আদ্রিতার উপরও রাগ করে চলে গেছে সে। এসব ভেবে আদ্রিতা প্রচুর কাঁদত। নিবিড় ভাই বিদেশ যাওয়ার পর কোনোদিনও আদ্রিতার সাথে ফোনে কথা বলেনি। এমনকি ভিডিও কলে সবার সাথে কথা বললেও কখনো আমার কথা বলেনি। সবাই যখন ল্যাপটপে নিবিড় ভাইয়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতো তখন আদ্রিতা ইচ্ছে করে ওদের সামনে দিয়ে নানান অযুহাতে বারবার আসা যাওয়া করতো, যাতে নিবিড় ভাই ওকে দেখে ডাক দেয়। ওর সাথে কথা বলতে চায়। কিন্তু এমন কিছুই হতোনা৷ নিবিড় কখনোই ওর কথা বলতো না। সেই ছোট্ট হৃদয়ে তখন বৃহৎ অভিমানের সৃষ্টি হতো। তাইতো আদ্রিতাও আর নিবিড়কে দেখার চেষ্টা করেনি। এমনকি তার ছবিও দেখেনি। সেই অভিমান এখন জমতে জমতে শক্ত কনক্রিটে পরিণত হয়েছে। মূলত একারণেই নিবিড়ের সামনে যেতে চাচ্ছিল না সে। ভেবেছিল নিবিড় ভাই ফিরে এলে আদ্রিতার অভিমানের পাহাড় ভেঙে দিবে। কিন্তু তা আর হলো কই। বরং আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিলো।
আর আদ্রিতার এই অভিমানের পালা আরও আকাশচুম্বী হলো যখন সবাই নিবিড় ভাইয়ার কাছ থেকে বিদেশ থেকে আনা গিফট গুলো পেয়ে ওর সামনে খুশিতে লাফাতে দেখলো। তানহা, সানভি নিজেদের গিফট এনে আদ্রিতাকে দেখাচ্ছে আর তাদের খুশি জাহির করছে। পুচকো তিন্নিটাও কম যায়না। তার টম চাচ্চু তার জন্য কত্তো কত্তে গিফট এনেছে! তার নাকি ঘরেই আটছে না। এমনটাই তার কথায় প্রকাশ পাচ্ছে। তানহা তার গিফটটা আদ্রিতাকে দেখিয়ে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
“দেখ অরি, ভাইয়া আমার জন্য ব্রান্ড নিউ চশমার সেট এনে দিয়েছে। একসাথে অনেক গুলো আছে। একেকটা একেক ডিজাইনের। কি সুন্দর সবগুলো। “
তানহা আর সানভি আদ্রিতার প্রায় সমবয়সী হওয়ায় সবাই একজন আরেকজনের নাম ধরেই ডাকে। সানভিও প্রফুল্লচিত্তে নিজের গিফট টা দেখিয়ে বলল,
“আরে তানু,তোরটার চেয়ে আমার গিফটটা আরও বেস্ট। দেখ অরি,নিবিড় ভাইয়া আমার জন্য কি সুন্দর একটা মেকআপ কিট এনে দিয়েছে। ওয়াও! আমি কবে থেকে এটা চেয়েছিলাম। “
এদের কথাবার্তায় বিরক্তিতে মন মেজাজ খিঁচে এলো আদ্রিতার। রাগে,অভিমানে কান্না আসছে। আসার পর থেকে নিবিড় ভাই একের পর এক অপমান করেই যাচ্ছে। সবাইকে এতো এতো গিফট দিতে পারলো, আমাকে কি একটা চকলেটও দিতে পারতো না! বিষয় টা গিফটের না।বিষয় টা সম্মানের। এখন এদের সামনে আদ্রিতার কি ভ্যালু থাকলো! নিজের কান্নাকে আটকাতে রাগকে হাতিয়ার বানালো আদ্রিতা। আর তার রাগের বশবর্তী হলো আশেপাশের মানুষ গুলো। আদ্রিতা তিব্র বিরক্তির সুরে তানহা আর সানভির উদ্দেশ্যে বলল,
“কি গিফট গিফট করে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলছিস! মনে হচ্ছে বাপের জম্মে দেখিসনি এসব! খুব খুশি লাগছে তাইনা! যা এবার খুশিতে দুজন নিজেদের কাজে লেগে পর। তানহা,তুই আমাদের বাসার পাশে রাস্তায় মদনা পাগলের পাশে বসে তোর এই চশমার দোকান খুলে বয়। আর সানভি তুই, তুই এই মেকাআপের সমুদ্রে ডুবে দেশের সেরা বান্দরী হওয়ার প্রতিযোগিতায় ফাস্ট হয়ে যা।”
তানহা মুখ মলিন করে বলল,
“এভাবে বলছিস কেন অরি?”
“তো কীভাবে বলবো? আরে গাধারা, নিবিড় ভাইয়া যে গিফটের নামে ইন্ডাইরেক্টলি তোদের সাথে মজা করলো তা তোরা বুঝতেও পারলিনা। যেমন তানুকে এত্তগুলো চশমা দিয়ে বোঝাতে চেয়েছে যে,তানু একজন দৃষ্টি রোগী। চশমা ছাড়া তার চোখে দেখাই দুষ্কর। তানা হলে কেউ এত্তগুলা চশমা দেয়। শুধু একটা দিলেও তো পারতো। আর সানভি, তোকে এই মেকআপ কিট দিয়ে বোঝাতে চেয়েছে যে,তোকে মেকআপ ছাড়া দেখতে অসুন্দর লাগে। মানে তুই দেখতে বিশ্রী বুঝতে পারলি! তাই বলছি এসব গিফট পেয়ে হুদাই লাফাস না। আমি হলে তো জীবনেও নিতাম না এসব। ছুঁড়ে মারতাম তার মুখের উপর।”
গিফট সম্পর্কে আদ্রিতার এই বানী শুনে তানহা আর সানভি ভাবনায় পড়ে গেল। চুপসানো চেহারা হয়ে গেল দুজনের। মনে মনে পৈশাচিক হাসি দিলো আদ্রিতা।নিজের কুবুদ্ধির জন্য নিজেরই খুব গর্ববোধ হলো।কাঁধ চাপড়াতে মন চাইলো। বাহ! কি বুদ্ধিরে তোর অরি। আমাকে গিফট না দিয়ে অপমান করা হয়েছিল না! এখন বোঝাবো মজা। যখন তার বোনেরা তার মুখের উপর সব গিফট ছুঁড়ে মারবে।তানহা আর সানভির মলিন মুখ দেখে আদ্রিতার পুরো বিশ্বাস, তানহা আর সানভি এখুনি তাদের গিফট ফিরিয়ে দিয়ে আসবে।অপমানের প্রতিশোধ নিতে পেরে বিশ্বজয়ের খুশি হচ্ছে আদ্রিতার। তবে তার খুশির উপর পানি ঢেলে পড়লো। হঠাৎ সানভি মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়িয়ে বলল,
“ধূরর,কিযে বলিস না তুই। নিবিড় ভাই কেন আমাদের ছোট করবেন?”
তানহাও সহমত পোষণ করে বলল,
“হ্যাঁ ঠিক। ভাইয়া তার আপন বোনকে নিয়ে কখনোই এমন মজা করবেনা। আমার ভাইয়াকে আমি ভালো করেই চিনি। তুই নিজেই উল্টো বুঝছিস।”
সানভি কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে বলে উঠল,
“আরে বুঝিস না তানু,আসল কথা হলো অরি জেলাস হচ্ছে। ভাইয়া সবাইকে গিফট দিলো কিন্তু ওকে কিছুই দেয়নি তাই এখন আমাদের উল্টো বুঝ দিচ্ছে। “
বলেই হাসতে লাগলো সানভি। রাগে শরীর জ্বলে উঠল আদ্রিতার।সে-তো ভুলেই গিয়েছিল নিবিড়ের ভক্তগণ সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। নিবিড় বলতে তারা শুধু অন্ধ না, একেবারে কোমায় চলে যায়। নিবিড়ের প্রশংসার মালা জপতে জপতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। যেখানে আদ্রিতার নিজের জন্মদাত্রী মা-ই নিবিড় বলতে অজ্ঞান সেখানে বাকিদের আর কি বলা যায়।মাঝে মাঝে মনে হয় এটা পৃথিবী নয়,নিবিড় ভূমি। আদ্রিতার রাগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়ে সানভি বলে উঠলো,
“যাই বলিস, নিবিড় ভাইয়া কিন্তু আগের থেকেও আরও হ্যান্ডসাম হয়ে গেছে। আমিতো ক্রাশের উপর ক্রাশ খেয়ে যাচ্ছি। হায়,কি সুন্দর দেখতে। পোলাতো নয় যেন আগুনের গোলা।”
আদ্রিতা আর নিতে পারলোনা এদের অসহ্য আলাপ। রাগ দেখিয়ে সবগুলোকে রুম থেকে বের করে দিলো। বের করে দিয়ে দরজা আঁটকে দিলো। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। এতক্ষণের আঁটকে রাখা কান্না এবার বেড়িয়ে এলো। বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলো।কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো সে। মধ্যরাতে দরজা খুলে নিঃশব্দে কেউ প্রবেশ করলো আদ্রিতার রুমে। বিছানায় কাত হয়ে বালিশ পেঁচিয়ে ধরে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে এক রাজকুমারী। বারান্দার দরজা দিয়ে চাঁদের রুপালী আলো এসে স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দিচ্ছে তার মুখমন্ডলে।নিষ্পাপ সদ্য ফোটা পুষ্পের ন্যায় সেই মুখশ্রী। এলোমেলো চুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মুখের ওপর। এ যেন শিল্পীর আঁকা কোন ছবি। সেই মুখপানে অপলক দৃষ্টি গেঁড়ে কেউ একজন ব্যাস্ত তার হাজার জনমের তৃষ্ণার্ত আঁখির তৃষ্ণা মেটাতে। যে দৃষ্টি বলছে, এক জীবন ভর দেখেও তার এই তৃষ্ণা মিটবে না।
ঘুমের মাঝেই আদ্রিতা কেমন যেন নিজের পায়ে ঠান্ডা কোন জিনিসের অনুভব করলো। তবুও ভারী চোখ দুটো মেলে তাকানোর শক্তি হলোনা তার। আদ্রিতা বরাবরই ঘুম কাতুরে। একবার ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলে আর দিন দুনিয়ায় কোনো হুঁশ থাকেনা তার। আজও তার ব্যাতিক্রম হলোনা। ঘুমের মাঝেই হালকা অনুভব হলো তার দু পায়ে ঠান্ডা কিছু একটা যেন পেঁচিয়ে আছে। তারপর হঠাৎ খুব গভীর এক নরম উষ্ণ ছোঁয়া পায়ে অনুভব করলো। কিছুসময়ের ব্যবধানে সেই উষ্ণ ছোঁয়া কপালেও অনুভব হলো যেন। ঘুমে কাতর আদ্রিতা ভাবলো এসব বুঝি তার স্বপ্নে হচ্ছে। বাস্তবতার আবডালে রয়ে গেল সে।
সকালবেলা হেলতে দুলতে লিভিং রুমে এসে সোফায় আরমান সাহেবের পাশে ধপ করে বসে পড়লো আদ্রিতা। ঘুমের লেশ তার এখনো ছাড়েনি।সকাল সকাল সানভির চেচামেচিতে ঘুমোতে পারেনি ও। তাই বিছানা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। হায় তুলতে তুলতে আরমান সাহেবের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো আদ্রিতা। আরমান সাহেব খবরের কাগজ পড়ছিলেন৷ সেটা রেখে আদ্রিতার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বললেন,
“কি হয়েছে? গিন্নিটার ঘুম ভালো হয়নি?”
আদ্রিতা ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলল,
“না দাদু,তোমার কাওয়া গলার নাতিন গুলো থাকতে আমার কি শান্তির ঘুম দেওয়ার উপায় আছে! ফাটা বাঁশের মতো এমন চিল্লায়, কানের পোকাগুলো নির্ঘাত আ,ত্ম,হ,ত্যা করেছে। “
তানহা আর সানভি আগে থেকেই ওখানে বসা ছিলো। আদ্রিতার কথা তারা গায়ে মাখলোনা। এসব তাদের মোটা চামড়ায় লাগে না। তারা মনের আনন্দে তানির বানানো স্যান্ডউইচ মুখে পুড়ে নিলো। কিন্তু সিঙ্গেল সোফায় বসা তাসান হেঁসে উঠে বলল,
“আরে কান্দোস ক্যা বইন! এতে তো তোর উপকারই হলো। বিনা পয়সায় কানের পোকা নিধন হয়ে গেল। কীটনাশক কেনার টাকাও বেঁচে গেল। তবে কাকটাকে খুব অপমান করে ফেললি তুই। সানভিদের কন্ঠ বেচারি কাকের সাথে তুই কেমনে তুলনা করতে পারলি তুই! হাউ! এতো অপমান কেমনে সইবো তারা! নির্ঘাত আলু গাছের সাথে গলায় দড়ি দিবো। আহ! আই ফিল ভেরি দুঃখ দুঃখ। “
সানভি আর তানহা কটমটে চোখে তাকালো তাসানের দিকে। বাকিদের মাঝে হাসির রোল পড়ে গেল। হঠাৎ দরজার দিকে চোখ যেতেই আদ্রিতার হাসিতে প্রসারিত ঠোঁট দুটো আপনাআপনি চেপে এলো। নিবিড় প্রবেশ করলো এইমাত্র। দেখে বোঝা যাচ্ছে জগিংএ গিয়েছিল। পড়নে হাতা কাটা টিশার্ট আর জগিং ট্রাউজার। জগিং-এর দরুন চিবুক দিয়ে ঘাম চুইয়ে পড়ছে। ঘর্মাক্ত কপালে লম্বা সিল্কি চুলগুলো লেপ্টে আছে। অজান্তেই আদ্রিতার বেহায়া নজর নিবিড়ের পানে থমকিত হলো। ছেলে মানুষও বুঝি এমন সুন্দর হয় কখনো! ছেলে মানুষের এমন রুপবতী হওয়া অন্যায়। এক মিনিট, রূপবতী তো স্ত্রী লিঙ্গ। পুংলিঙ্গ এর বেলায় বোধহয় রুপবতা হবে। হ্যাঁ তো, এমন রুপবতা হওয়া ঘোর অপরাধ। উনাকে এখুনি বেআইনী ঘোষিত করা হোক। নিবিড় এগিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে খাচ্ছে।নিবিড়ের পানি খাওয়ার ভঙ্গিটাও কতো মডেস্ট। আদ্রিতার মনে হলো পানি খাওয়াও বুঝি একটা আর্ট। আদ্রিতা চোখ বন্ধ করে বেহায়া নজরকে দমিয়ে নিলো। হঠাৎ সানভির গলা ফাটিয়ে চিল্লানোর আওয়াজে ধড়ফড়িয়ে চোখ খুলে তাকালো আদ্রিতা। সানভি আদ্রিতার পা টেনে ধরে নিজের দিকে নিয়ে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বিস্মিত কন্ঠে বলল,
“এই অরি এটা কি! এতো সুন্দর নূপুর কই পেলি তুই? হোয়াট আ মাস্টার পিচ ইয়ার! বলনা কোথাথেকে নিলি? আমিও নিতাম। এত সুন্দর নূপুর আমি কোথাও দেখিনি।
সানভির কথায় আদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে নিজের পায়ের দিকে তাকাতেই চমকে গেল। পরক্ষনেই ছিটকে উঠে সে নিজেও একটা ছোটখাটো চিৎকার দিয়ে বলল,
“আরে! এ এটা কোথাথেকে এলো? এই নূপুর কীভাবে এলো আমার পায়ে?
তানহা বলে উঠলো,
” আরে তোর পায়ে নূপূর আর তুইই জানিস না! এটা আবার কেমন কথা? “
“আরে আমি সত্যিই বলছি। এই নূপুর কোথাথেকে এলো আমি জানি না। কাল রাত পর্যন্তও তো আমার পা খালি ছিলো। তোরাও তো দেখেছিলি। “
“আরে হ্যাঁ, কালরাতে তো সত্যি নূপুর দেখিনি। তাহলে কোথাথেকে আসলো এটা?”
তাসান মজার সুরে বলল,
“কস কি মামা! আই মিন বোইনা। নূপুর কি তাইলে ভূতে দিয়া গেল? মনে হচ্ছে কোনো হ্যান্ডসাম ভূত আমগো অরির প্রেমে পইড়া গেছে। তাইতো ভূত দুলাভাই, রাইতে আইসা তার হবু ভূতনিরে নূপুর পড়িয়ে দিয়ে গেছে। হায়,কি ভালুপাসা! আমিতো আবেগে আপ্লূত হয়ে গেলাম।”
আদ্রিতা ভিতু স্বরে বলল,
“কি বলছ এসব তাসান ভাইয়া! শুধু শুধু ভয় দেখাচ্ছ কেন! এসব ভূত টুত বলতে কিছু নেই।”
সানভি বলে উঠলো,
“ভূত নেই তবে, পরা আছে। “
আদ্রিতা কপাল কুঁচকে বলল,
“পরা? সেটা আবার কি?”
“আরে পরা হলো পরীর মেল ভার্সন।নানুর কাছে শুনেছি সুদর্শন পুরুষের উপর নাকি পরীর নজর পরে আর তার উপর পরী ভর করে। তেমন হয়তো অরির উপরও পরার নজর পড়েছে। পরা ভর করেছে তোর উপর। সেই পরাই তোকে এই নূপুর পড়িয়ে দিয়েছে। দেখনা,নূপুরের ডিজাইনও কেমন ইউনিক আর অপূর্ব। এমন নূপূর বাস্তবে কোথাও দেখেছিস!”
তানহাও সানভির কথায় সায় দিয়ে বলল,
“আরে হ্যাঁ, দাদুনের কাছে এমন গল্প আমিও শুনেছিলাম। তবে যাই বলো নূপুর জোরা কিন্তু একেবারে চোখ ধাঁধান। এটা কিন্তু রুপা মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে প্লাটিনামের তৈরি। সাথে ছোট্ট ছোট্ট পাথরগুলো একেবারে সত্যিকারের ডায়মন্ড মনে হচ্ছে। যেন কোনো কারিগরের শ্রেষ্ঠ শিল্প। তোর পায়ে কিন্তু মানিয়েছে খুব। মনে হচ্ছে তোর পায়ের জন্যই তৈরি হয়েছে।”
আদ্রিতা ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। সত্যিই কি তার উপর পরা ভর করেছে? আদ্রিতা তড়িঘড়ি করে নূপুর খুলে ফেলতে চাইলো। কিন্তু সানভি হুঁশিয়ার করে বলল,
“খবরদার অরি! এটা ভুলেও খুলতে যাসনা। তাহলে কিন্তু পরা রেগে যাবে। হতে পারে রেগে তোকে তুলে নিয়ে গেল তখন!”
নূপুর আর খোলার সাহস পেলনা আদ্রিতা। সে কোনো পরার হাতে স্বীকার হতে চায়না৷ থাক নূপুর তার পায়ে।
ছোটদের এসব উদ্ভট কথাবার্তার মাঝে বড়রা আর কেউ কোনো মতামত দিলোনা। যেন তারা যা বোঝার বুঝে গেছে। নিবিড় গ্লাসে পানি খাওয়ার মাঝে আরচোখে একবার পাশে তাকিয়ে দেখলো তার মা ডাইনিং টেবিলে ব্রেকফাস্ট সার্ভ করতে করতে ওর দিকেই সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিবিড় পানির গ্লাস রেখে গলা খাঁকারি দিয়ে বড় বড় পা ফেলে উপরে চলে গেল। নিবিড় যেতেই সানা তানির কাছে এসে মুচকি হেঁসে বলল,
“কি ভাবছ ভাবি? আমাদের নিবিড় কিন্তু আগের চেয়ে আরও বেশি বুদ্ধিমান হয়ে গেছে। “
তানি খাবার রাখতে রাখতে বলল,
“হুম,যতোই বুদ্ধিমান হোক মায়ের উপর দিয়ে যেতে পারবেনা। “
“আরে এতো বেশি ভেবোনাতো। শুধু শুধু অযথা চিন্তা করে নিজেও স্ট্রেস নিচ্ছ আর ছেলেটাকেও দিচ্ছ।”
তানি কিছু বলল না। সে কেন চিন্তা করছে তা অন্য কেউ বুঝবে না।
চলবে…..
নিবিদ্রিতা কাহন গল্পের লিংক all part
(আমি আগেই বলেছিলাম এই গল্পে আদিত্য-নূর সরাসরি থাকবে না।তবে যেহেতু এটা “ভালোবাসার চেয়েও বেশি” গল্পেরই অংশ। ওই গল্পের নেক্সট জেনারেশনের গল্প। তাই প্রয়োজন সাপেক্ষে আদিত্য-নূরের উল্লেখ থাকবে মাঝে মধ্যে। আর হ্যাঁ, “ভালোবাসার চেয়েও বেশি” গল্পে নিবিড়-আদ্রিতার যে বয়স দেখানো হয়েছিল তার থেকে এই গল্পে ওদের বয়সের ব্যবধান বেশি দেখানো হয়েছে। কাহিনির ক্ষেত্রে জরুরি ছিলো।)