®মেহরুমা নূর
★আদ্রিতার হাল বেহাল। চোখে পানি,নাকে সর্দি। তিনদিন পর থেকে পরিক্ষা শুরু। এই অজুহাতে নিবিড় নামক দৈত্য দানবটা ওর উপর রিতীমত রিমান্ড জারি করে দিয়েছে। দিন-রাত বইয়ের স্তুপের মাঝে বসিয়ে রাখে ওকে। কে বলবে এই লোকটাই সেদিন রাতের সেই সুইট লোকটা! যে মাঝরাতে তাকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে সুন্দর মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছিলো! অথচ সেই রাতের পরের সকাল থেকেই আবারও সেই দৈত্য দানব রুপ ইস ব্যাক। পড়ার নামে আদ্রিতার উপর কঠিন জুলুম করে যাচ্ছে। তার এই করুন দশা দেখার কেউই নেই এই ধরায়। আদ্রিতা এই জুলুম থেকে বাঁচতে কত জনের কাছে গেল সাহায্যের আশায়। কিন্তু কেউই তার উপর একটু খানিও দয়া দিক্ষা দেখালোনা। আদ্রিতার আজ নিজেকে জনমদুখিনী মনে হচ্ছে। যার এই কূলকিনারায় আপন বলতে কেউই নেই। ভবের দুনিয়ায় সবাই স্বার্থপর। বারবার ওই গানটা মন পড়ছে, ♬ কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো, আমি বুক চিড়িয়া…..
একশ মিটার লম্বা দুঃখ মনে নিয়ে পড়ার টেবিলে বসে আছে আদ্রিতা। তার সামনেই জল্লাদের মতো বসে আছে জনাব নিবিড় শাহরিয়ার। পড়নে এ্যাশ কালারের ঢোলাডালা টিশার্ট আর বাদামী রঙের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। দৈত্য দানবটা এখন আর অফিসেও বেশি যায়না। বলে কিনা আদ্রিতার এক্সামের প্রিপারেশনের জন্য উনার বাসায় থাকা জরুরী। শুধুমাত্র জরুরী কোন মিটিং ছাড়া সব কাজ বাসা থেকেই করছেন উনি। বলি কেনরে ভাই! তুই কি ডক্টর ঝটকার(মটু পাতলু কার্টুনের চরিত্র) বানানো কোনো গ্যাজেট নাকি যে, তুই সামনে বসে থাকলেই আমার মস্তিষ্কে সব ডাটা অটোমেটিক ট্রান্সফার হয়ে যাবে! এত চাপ কেন নিতাছস ভাই! একটু চিল মার না! নিজেও খুশি থাকো আর আমাকেও খুশি থাকতে দাও। কিন্তু আপসোস, এসব মুখে বলতে পারার সাহস কোথায় আদ্রিতার। সে ছোট্ট মোট্ট একটা মাছুম জান, আর কোথায় ওই বিশাল দৈত্য দানব। কিছু বললে চাবিয়ে খেয়ে না ফেলবে! তাইতো দুঃখের তিক্ত করল্লার জুস সেবন করে অসহায় আদ্রিতা বইয়ে মুখ গুঁজে বসে আছে। কিন্তু মন বসাতে বরাবরই অক্ষম হচ্ছে। নিচ থেকে সবার হাসির আওয়াজ আসছে। তাসান ভাইয়া এসেছে। সে নিশ্চয় সবাইকে তার মজার মজার কথায় হাসাচ্ছে। তা জেনেও কীভাবে আদ্রিতা পড়ায় মন বসাবে! সে এখানে বইয়ের গাদায় জান দিচ্ছে আর ওরা মজা করছে! এ কেমন বিচার! নাহ আর মানা যাচ্ছে না। আদ্রিতার মাথায় টুকুস করে একটা ব্রান্ড নিউ কুবুদ্ধি এলো। সে একবার চোরা চোখে তাকিয়ে দেখলো নিবিড়ের নজর আপাতত ল্যাপটপেই আছে।কাজের মাঝে কিছুক্ষণ পরপর নিজের চুলে আঙুল চালিয়ে ব্রাশ করছে। অন্য সময় হলে হয়তো আদ্রিতা এই লুকে ক্রাশ টাশ খেত।কিন্তু এখন এসবের মুড নেই একদমই। হ্যান্ডসাম হলেই তো আর দৈত্য দানব, ভালো মানুষ হয়ে যাবে না! আদ্রিতা সুযোগ বুঝে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে তাসানের ফোনে একটা ম্যাসেজ পাঠাল। ম্যাসেজটা এমন,”আমার রুমে এক ভয়ংকর ডাকাত এসেছে। আমাকে বাঁচাও ভাইয়া।”
ম্যাসেজ পাঠিয়ে আবার তা নিজের ফোন থেকে ডিলিটও করে দিলো। ফোনটা আবার আগের জায়গায় রেখে দিয়ে চুপচাপ ভদ্র মেয়েটির মতো পড়া শুরু করে দিলো। যেন তার মতো ইনোসেন্ট, ভদ্র মেয়েটি এই তৃ ভুবনে আর দ্বিতীয়টি নেই। গুগলে সার্চ দিয়েও পাওয়া যাবে না তার মতো ভদ্র মেয়ে। দুষ্টুমি, ছল চাতুরী কি জিনিস সেটাতো সে জানেই না। ভদ্রতার জন্য অস্কার পেয়েছে যেন। মিনিট দুই অতিবাহিত হতে না হতেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুলি, আয়লা, চিত্রাং এর মতো দরজা ঠেলে হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো তাসান। তার পিছু পিছু সানভি আর তানহাও এলো।ওদের এভাবে আসতে দেখে আদ্রিতা বাঁকা হাসলো। আর নিবিড়ের কপাল কুঁচকে এলো। তাসান ভেতরে ঢুকেই বীর যোদ্ধার মতো এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বলল,
“কোথায় ডাকাত! কোথায় সে! সাহস থাকেতো সামনে আয়। দেখ তোর বাপ এসেছে। ‘চিতে কি চাল,বাজ কি নাজার অর তাসান কি মার পে কাভি সন্দেহ নেহি কারতে।’ একবার সামনে আয়। আমি তোর বডিতে এতো ছিদ্র করবো যে তুই কনফিউজ হয়ে যাবি, নিঃশ্বাস কোন জায়গা দিয়ে নিবি আর পাদবি কোন জায়গা দিয়ে। তাসান দ্য বাহুবালী ইজ হিয়ার।”
তাসান আদ্রিতা আর নিবিড়ের উদ্দেশ্যে বলল,
“ভাই আর বোইন, ভয় নেই। তোদের রক্ষাকারী চলে এসেছে। আর কোন ভয় নেই। আমি থাকতে কোন বউয়ের জামাইর সাহস নেই তোদের গায়ে টোকা দেওয়ার। দেখ দেখ,কেমন আমার আসার খবর পেয়েই লুঙ্গি উঠিয়ে পালিয়েছে ডাকাত ব্যাটা।”
তানহা বলে উঠলো,
“কিন্তু ভাইয়া ডাকাত লুঙ্গি পড়ে এসেছিল তা তুমি কীভাবে জানলে!”
তাসান তানহার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“গুড কুয়েশ্চন। এক্সুলি ভেরি গুড কুয়েশ্চন।আমিতো অবাক! তুই এত মহান কুয়েশ্চন ক্যামনে করে ফেললি! এত মহৎ একটা প্রশ্নের জন্য তোরে নোবেল দেওয়া অপরিহার্য হয়ে গেছে।নাহলে নোবেল নারাজ হয়ে যাবে। আমি আজই নোবেল কমিটির সাথে কথা বলবো তোর এই মহত্বের ব্যাপারে।”
সানভি মাঝখান দিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো,
“লুঙ্গি পড়া ডাকাত! হাউ ওল্ড ফ্যাশন! ডাকাত গুলোর কোনো ফ্যাশন সেন্সই নেই। আরে অন্তত প্যান্ট শার্টেও তো আসতে পারতো। পুলিশ ধরে যখন মিডিয়ার সামনে নিয়ে যাবে তখন কেমন ডিসকাস্টিং লাগবে দেখতে। আই টেল ইউ, দিস রোবারস হ্যাস নো ক্লাস। “
তাসান এবার তার বোনের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
“আসলে ওদের কাছে তোর মতো আবালের খালাম্মা নেই কিনা। তাই এই অবস্থা। তবে চাপ নিস না। আমি ডাকাত গুলোকে পার্সোনালি তোর অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়ে আসবো। এরপর থেকে যখনই ওরা ডাকাতি করতে যাবে তখনই যেন তোর কাছে মেকাপ করিয়ে যায়। তোর ট্যালেন্ট কবে আসবে বল। আর এই উছিলায় দুটো টাকাও ঘরে আসবে।”
এই পর্যায়ে নিবিড় বিরক্তিতে ফেটে পড়লো। ঠাস করে উঠে দাঁড়িয়ে চোয়াল চিবিয়ে বলল,
“হোয়াট দ্য হেল! হচ্ছে কি এসব! আর তোরা কি করছিস এখানে?”
তাসান বলে উঠলো,
“কি করছি মানে! তোদের বাঁচাতে এসেছি ব্রো।”
“হোয়াট!! কিসের বাঁচাতে! কি হয়েছে আমাদের!”
“আরে ডাকাত এসেছিল না! তাদের থেকেইতো বাঁচাতে এসেছি। “
“দিন দুপুরে কি গাঁ,জা গিলে এসেছিস! কে বলল তোকে ডাকাত এসেছে!”
“কেন,অরিইতো ম্যাসেজ পাঠাল।এই দেখ!”
তাসান ফোন বের করে অরির ম্যাসেজ দেখাল।তা দেখে চোয়াল শক্ত করে, দাঁতে দাঁত পিষে তাকালো আদ্রিতার দিকে৷ আদ্রিতা তখন মাছুম নাদান বাচ্চার মতো মুখ করে বলে উঠলো,
“কে,আমি! কই নাতো। আমি কেন এমন করতে যাবো! আমার মাথার উপর পরিক্ষা। সেই টেনশনে আমার নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় নেই।তাহলে ম্যাসেজ পাঠাবো কখন! বিশ্বাস না হলে এইযে আমার ফোন৷ চেক করে দেখুন।”
আদ্রিতা নিজের ফোন বের করে নিবিড়কে দেখাল।তারপর বলল,
“দেখেছেন তো আমি দেইনি।আপনিতো জানেনই তাসান ভাইয়া একটু ফান লাভিং। তাই আমাদের সাথে মজা করার জন্য এসব বলছে তাইনা ভাইয়া!”
তাসান যেন বোকা বনে গেল। বোকার মতো মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
“এইটা কি হলো! তাহলে কি ভূতে ম্যাসেজ পাঠাল!”
নিবিড় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো আদ্রিতার দিকে।আদ্রিতা শুঁকনো ঢোক গিলল। তার ছল চাতুরী যে লোকটা বুঝে গেছে তা বুঝতে পেরেই ভয়ে আত্মা শুঁকিয়ে এলো তার। নিবিড় আদ্রিতার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে থেকেই তাসানদের উদ্দেশ্যে বলল,
“তোরা যা এখন। ওই ভূত,পেত্নীকেতো আমি দেখছি।”
তাসানরা বেড়িয়ে গেল। নিবিড় এবার দরজা আঁটকে ছিটকিনি লাগিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে ওর দিকে অগ্রসর হতে নিলেই, আদ্রিতা ঝট করে বই খুলে নিজের মুখের সামনে ধরে জোরে জোরে পড়া শুরু করে দিলো। যেন পড়াই তার একমাত্র লক্ষ্য। পড়াই তার জীবন-মরণ, পড়াই তার প্রাণ। পড়া ছাড়া এই ভূবনে নাইতো কিছু আর। পড়তে পড়তেই শহীদ হয়ে যাবে সে।
অতঃপর পনেরো দিন পর আদ্রিতা তার পরিক্ষা নামক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয় করলো। পরিক্ষা শেষ হতেই নিজেকে চৌদ্দ বছরের জেল খেটে সদ্য বের হওয়া কয়েদীর মতো মুক্ত মনে হচ্ছে। আজ থেকে না পড়ার প্যারা। না ওই দৈত্য দানবের অসহ্য অত্যাচার। লোকটার উপর ভীষণ পরিমাণ রাগ জমে আছে আদ্রিতার। গত কয়েকদিনে সে, আদ্রিতাকে এতো ধমকিয়েছে, এত ধমকিয়েছে যে নিজেকে আদ্রিতা না ধমকিতা মনে হচ্ছে ওর। যেন ধমকের ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করার ধান্দায় আছেন উনি। আমার মতো নাদান, মাছুম জানটার কলিজা,ফোঁপরা সব ড্যামেজ করে ফেলেছে ধমকে, ধমকে। আদ্রিতা ডিসিশন ফাইনাল করে ফেলেছে। আর কথা নেই তার সাথে। একদমই না৷ কিছুতেই না। কোনদিনও না। কদাপি নহে। এই মনস্তাপ করেই পরিক্ষা শেষ করে বেড়িয়ে এলো আদ্রিতা। গেটের বাইরে আসতেই দেখলো নিবিড় গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।পরিক্ষার এই কয়েকদিন উনিই আনা নেওয়ারও দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন। পার্পল কালারের শার্ট আর ব্ল্যাক প্যান্ট পরিহিত। গায়ের জ্যাকেট টা এক হাতের উপর ঝুলিয়ে রেখে, এক পা সামনে দিয়ে একটু ক্রস করে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে, হাতে ফোন টিপছে। তাকে দেখে আদ্রিতার অবাধ্য মনটা ক্রাশ খাওয়ার জন্য হা করতেই আদ্রিতা অদৃশ্য একটা কষে থাপ্পড় মারলো তাকে। থাপ্পড় মেরে মনে মনেই বলল,”চুপ, মুখ বন্ধ কর বলছি! খবরদার! ওই ক্রাশ নামক বাশি-পঁচা জিনিসটা খেয়েছিস তো! দরকার হলে করল্লার জুস এক বালতিও খেয়ে নিবি তাও এই লোকের উপর ক্রাশ খাবিনা। এটা খেলে ফুড পয়জনিং হবে। তাই ভুলেও খাবিনা।” আদ্রিতার হুমকিতে তার মনটা অসহায় মলিন মুখ করে যেন বলল,”বেশি না,এই একটুখানি খাবো শুধু। প্লিজ! “আদ্রিতা নাকোচ করে বলল,” নো। নো মিনচ নো।” বেচারা মনটা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বসে রইল।আদ্রিতা সেসবের তোয়াক্কা না করে গটগট করে হেঁটে সামনে এগিয়ে গেল।
ফোন থেকে নজর সরিয়ে মাথা তুলে সামনের দিকে তাকালে আদ্রিতাকে দেখতে পেল নিবিড়। আদ্রিতা কাছে আসতেই সে জিজ্ঞেস করলো,
“পরিক্ষা কেমন হয়েছে? “
কিন্তু আদ্রিতা কোন জবাব না দিয়ে সোজা হেঁটে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে গিয়ে বসলো। পরপরই নিবিড়ও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল,
“কিরে, কিছু জিজ্ঞেস করলাম, কানে যায়নি! এক্সাম কেমন গেল! লিখতে পেরেছিস কিছু! নাকি আমার সব মেহনত জলে ভাসিয়ে দিয়ে এসেছিস! সত্যি বলছি, যত শ্রম তোর পেছনে দিয়েছি। এতটা মেহনত আমার নিজের জন্য করলে আজ নির্ঘাত অ্যাস্ট্রোনট হয়ে চাঁদে ঘুরে আসতাম।”
আদ্রিতার এমনিতেই রাগ জমে ছিল। নিবিড়ের তিরস্কারপূর্ণ কথায় তার আরও রাগ হলো। অভিমানে সে উল্টো হয়ে জানালার দিকে পুরোপুরি ঘুরে বসলো। কথা না বলার সিদ্ধান্তে আরও একধাপ অটল হলো সে। তা দেখে হালকা করে মাথা নেড়ে হাসলো নিবিড়।যেন বুঝতে পারলো তার পুতুলের গভীর অভিমানের পাল্লা একটু বেশিই ভারী হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ গাড়ি ব্রেক কষলো। আদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে ঘুরে তাকালো। নিবিড় তখন বলল,
“হাওয়াই মিঠাই খাবি?”
আদ্রিতার এবার হাত পা ছুঁড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।লোকটা সবসময় ওর দূর্বল পয়েন্টে আঘাত করে। এইযে হাওয়াই মিঠাই তার দূর্বলতা। এখন সে মানা করবে কীভাবে! আর মানা না করলে তার কথা না বলার পণের কি হবে! আদ্রিতার ভাবনার মাঝে নিবিড় আবার বলল,
“কিরে বল খাবি নাকি! আমার হঠাৎ অনেক গুলো হাওয়াই মিঠাই কিনতে ইচ্ছে করছে।এই যেমন পাঁচ ছয়টা।কিন্তু আমিতো আর খাইনা এসব। তাহলে এতগুলো কিনেতো ওয়েস্ট হয়ে যাবে তাইনা!”
ব্যাস, হয়ে গেল। কথা না বলার পণের আ,ত্মা,হু,তি দিয়ে আদ্রিতা অতি দ্রুত বলে উঠলো,
“আরে আমি আছিনা। না মানে, আমি আবার খাবারের ওয়েস্ট সহ্য করতে পারিনা।তাই কষ্ট করে হলেও আমি খেয়ে নিবো।আপনার যখন ইচ্ছে হয়েছে তখন কেনাই উচিত। মনের ইচ্ছে কখনো দমিয়ে রাখতে নেই। আপনি যতগুলো ইচ্ছে কিনতে পারেন। “
“থ্যাংকস পুতুল। তুই কতো ভাবিস আমাকে নিয়ে। “
আদ্রিতা গর্বে গদগদের ভঙ্গিতে হেসে বলল,
“জি, এটাতো আমার কর্তব্য।”
নিবিড় মাথা জানালার দিকে ঘুরিয়ে নিরব হেসে বিড়বিড় করে বলল, “ড্রামাবাজ।” তারপর রাস্তায় দাঁড়ান হাওয়াই মিঠাই ওয়ালাকে ডাক দিয়ে পাঁচ ছয়টা পিংক কালারের হাওয়াই মিঠাই কিনে দিলো আদ্রিতাকে। তা পেয়েতো আদ্রতা ভীষণ খুশি। সব রাগ-অভিমান কোন নদীতে ভেসে গেল তা আদ্রিতা টেরও পেলনা। হাওয়াই মিঠাই গুলো একটার সাথে আরেকটা লাগিয়ে নানান আকৃতি তৈরি করছে আর খাচ্ছে। আর নিবিড় গাড়ি চালানোর মাঝে মাঝে মুগ্ধ নয়নে তা দেখছে। আদ্রিতার ওই প্রাণচঞ্চল হাসিমাখা মুখটাতেই নিবিড়ের যত প্রশান্তি। মিনিট বিশেক পর গাড়ি আবার থামলো। আদ্রিতা নিবিড়ের দিকে তাকাতেই দেখলো নিবিড় ঝুঁকে আসছে তার দিকে।কিছুটা থমকালো সে। নিবিড়ের চাহুনিতে তীব্রতা দেখতে পাচ্ছে সে। তা দেখেই বুকে দুরুদুরু শুরু হলো তার।নিবিড় মুগ্ধ নজরে তাকিয়ে আদ্রিতার মুখের খুব সামনে ঝুঁকে এলো।আদ্রিতার থুতনিতে লেগে থাকা কটন ক্যান্ডিটুকু দুই আঙুল দিয়ে তুলে নিয়ে নিজের মুখে পুরে নিলো সে। কম্পন ঘটলো আদ্রিতার হৃদপিণ্ডে। নিবিড় আরেকটু ঝুঁকে আদ্রিতার কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“আমার সব কঠোরতা তোর ভালোর জন্যই বুঝেছিস।আমি চাইনা তুই শুধু কারো মেয়ে,কারো বউয়ের পরিচয় নিয়ে চলিস। আমি চাই তুই নিজের জন্য আলাদা একটা পরিচয় বানাবি৷ সমাজে নিজে প্রতিষ্ঠিত হবি। আর আজকের শ্রমই আগামীতে তোর কাজে লাগবে। আমি জানি তোর সেই মেধা আছে। শুধু একটু ঘষামাজার প্রয়োজন।”
আর কি লাগে আদ্রিতার! শুধু এই ক্ষুদ্র কিছু শব্দইতো দরকার ছিল তার। মনে আবারও রঙিন প্রজাপতির মেলা জমলো। নিজের অযথা রাগের জন্য নিজের উপরই উপহাস হচ্ছে এখন ওর। সেতো ওর ভালোর জন্যই কঠোর হয়েছিল। তবে এখন আদ্রিতা বুঝতে পেরেছে। তাইতো এখন রাগের জায়গায় আবার সুখময় আমেজ ছড়াচ্ছে মনে। আদ্রিতা এবার তার মন খারাপ করে থাকা মনটাকে বলল,”নে যা, যত খুশি ক্রাশ খা এবার। আর মানা করবোনা। ক্রাশ খেতে খেতে অজ্ঞান হয়ে যা।” আদ্রিতার পারমিশন পেয়ে তার মন খুশিতে লাফিয়ে উঠে গাড়ি চালানো অবস্থায় থাকা নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে তার উপর ইচ্ছেমত ক্রাশ খাওয়া শুরু করলো। আদ্রিতা খেয়াল করলো গাড়ি ওদের বাড়ির রাস্তায় না গিয়ে অন্য রাস্তায় যাচ্ছে। তা দেখে আদ্রিতা বলল,
“কোথায় যাচ্ছি আমরা!”
নিবিড় আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বাম হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে মুচকি হেঁসে বলল,
“বলবো,আগে এখানে আয়।”
আদ্রিতা হালকা লাজুক হেঁসে নিবিড়ের কাছে এগিয়ে আসলে নিবিড় বাম হাতে তাকে জড়িয়ে নিলো। মাথায় চুমু খেয়ে বলল,
“অজানায় হারাবো আজ। হারাবি আমার সাথে!”
আদ্রিতা নিবিড়ের বুকের পাশে মাথা রেখে মুচকি হেঁসে বলল,
“নিরন্তর।”
চলবে……