®মেহরুমা নূর
★সকাল থেকেই বাড়ির আবহাওয়ার তাপমাত্রা প্রচন্ড হাই হয়ে আছে। তানির মেজাজ ভীষণ চড়ে আছে আজ। তা দেখেই সবার মাঝে ত্রাসের আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে । সকাল সকাল ডাইনিং টেবিলে আসতেই তানির উচ্চ তাপমাত্রার আভাস পেল সবাই। তানি খাবারের বোল এনে আবিরের সামনে ঠাস করে শব্দ করে রাখলো। যেন বোলটা ঠাস করে আবিরের মাথায় ফাটানোর ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু আপাতত টেবিলের উপরই কাজ চালাতে হচ্ছে তাকে। সকল প্লেট গ্লাস গুলোও ঠাস ঠাস করে এক প্রকার আছড়ে রাখছে টেবিলের উপর। তার একেক বার ঠাস করে জিনিসপত্র রাখার শব্দে টেবিলে বসা পরিবারবৃন্দ কেঁপে কেঁপে উঠছে। ভয়ে সবাই চুপসে জড়োসড়ো হয়ে আছে। আদ্রিতা আবিরের দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,
“চাচ্চু, কাহিনি কি! আমার সুইট মিছরির মতো সোনা মায়ের উপর হঠাৎ রিনা খানের আত্মা ভর করলো কেন? তুমি কিছু করোনিতো?”
আবির আরও ডাবল ফিসফিস করে বলল,
“মাম্মি কসম, আমি কিচ্ছু করিনি অরি মা।আমার মতো মাছুম অবলা স্বামীর কি স্পর্ধা আছে বউকে কিছু বলার! “
“আরে ভালো করে মনে করে দেখো। নিশ্চয় কোনো গড়বড় করেছ তুমি। নাহলে আমার সোনা মা, শুধু শুধু রাগার লোকই না।”
ওদের ফিসফিসানি দেখে তানি ধমকের সুরে বলে উঠলো,
“অরি.. খাবারের টেবিলে কি গল্প করতে এসেছিস তুই! চুপচাপ খাবার খা। নাহলে উঠে যা।”
আদ্রিতা ভয়ে সাথে সাথে এক খাবলা খাবার নিয়ে মুখে ঠুসে দিলো। যেন সারাজনমের খাবারের কোটা আজই পূরণ করবে সে। আদ্রিতার মতো বাকিরাও টু শব্দ না করে গপাগপ খাওয়া শুরু করে দিলো। যেন এই তৃ ভুবনে খাওয়া ছাড়া আর কোনো দ্বিতীয় কাজটি নেই। গপাগপ খেয়ে সবাই যার যার মতো নিজের জান হাতে নিয়ে কেটে পড়লো ডাইনিং থেকে। নিবিড়ও উঠে যেতে নিলে তানি এগিয়ে এসে বলল,
“দাঁড়া নিবিড়। কথা আছে কিছু তোর সাথে।”
নিবিড় খুব ভালো করেই জানে তার মা কি বলবে তাকে। তাই মায়ের কথার তীর থেকে বাঁচতে নিবিড় অজুহাত দেখিয়ে বলল,
“মা অন্য কোনো সময় বোলো। আমার জরুরি মিটিং আছে। এখুনই বের হতে হবে। “
বলেই নিবিড় উল্টো ঘুরে চলে যেতে নিলে তানি কড়া গলায় পেছন থেকে বলে উঠলো,
“তোকে সেদিন মানা করেছিলাম আমি। অরির থেকে দূরে থাকতে বলেছিলাম। তুই কিন্তু সেসব মানছিস না।”
নিবিড় পেছনে ঘুরে শান্ত সুরে বলে উঠলো,
“আগের বারতো তোমার কথাই শুনেছিলাম। তাতে কি সুফল হয়েছে তা নিশ্চয় তুমিও জানো। আমি তোমার অবাধ্য ছেলে না, মা। তবে তোমার এই কথা মানতে পারবোনা আমি। এটা মানাতে চাইলে আমার দেহ থেকে হৃদপিণ্ড বের করে নিতে হবে তোমার। তা পারলে করো। তাতে আমার একটুও আপত্তি নেই। তাছাড়া সম্ভব না।”
বলেই নিবিড় দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেল। ছেলের বেপরোয়া ভাব দেখে তানি রাগে হাতের জগটা আবারও ঠাস করে টেবিলের উপর রাখলো। হতাশাজনক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সে। তানি যদিও জানতো নিবিড় তার কথা মানবেনা। সেদিন রাতে যখন চোখ খুলে আদ্রিতাকে বিছানায় দেখেনি তখনই সে বুঝতে পেরেছিল এটা তার ঘাড়ত্যাড়া ছেলেরই কাজ। ছেলেটা একটুও বদলালো না। সেই ছোট থেকেই একইরকম একঘেয়ে থেকে গেল। ছোট থেকেই নিবিড় তানির সেসব কথাই মানতো যা তার পছন্দের তালিকায় পড়তো। আর পছন্দ না হলে সেই কথা নিবিড়কে দিয়ে কিছুতেই মানানো যেত না। তখন তানি নিবিড়কে কিছু বললে সে বলতো,”তোমার এই কথাটা আমার পছন্দ হয়নি তাই অর্ডার নিতে পারলাম না,মা। পরিবর্তীতে পছন্দসই অর্ডার দিয়ো তাহলে নিবো।” ওইটুকুন বাচ্চা ছেলের মুখে অমন কথা শুনে তানি তখনই বুঝে গিয়েছিল তার ঘরে ছেলে না,বাপ পয়দা হয়েছে। এই ছেলে আর তার গুণধর বাপের জন্যই তানির মেজাজ চড়ে আছে। আজ তানি আর আবিরের বিবাহ বার্ষিকী। অথচ এই আবিরটার সেটা মনেই নেই। সকাল থেকে তানি তাকে কতবার মনে করানোর চেষ্টা করেছে আজকের দিনটা। কিন্তু ওই বুড়োটা সেটা মনেই করতে পারলোনা। একারণেই তার সকাল থেকে মেজাজ খুবই খারাপ। বাপ ছেলে মিলে মেজাজ খারাপ করে দিলো একেবারে।
__
বিকাল থেকে মনটা একটু মলিন করে বিছানায় শুয়ে আছে তানি। আবিরতো আবির,বাকি সবাইও আজকের দিনটার কথা বেমালুম ভুলে গেছে। এই তার পরিবার! যাদের জন্য এতকিছু করে সে! আজ তারা সামান্য উইসটুকুও করার সময় পেলনা! এসব ভেবেই মন খারাপ হচ্ছে তানির।সময় তখন সন্ধ্যা সাতটার উপরে হবে। হঠাৎ বো,ম ফাটার মতো বিকট শব্দে চমকে গেল তানি। ধড়ফড়িয়ে উঠে দ্রুত রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে নেমে এলো সে। লিভিং রুমের লাইট বন্ধ পেল সে। তানি নিচে আসতেই আচমকা লাইট জ্বলে উঠলো। পরিবারের সবাই একসাথে উচ্চস্বরে বলে উঠলো, “সারপ্রাইজ!!..” সাথে সাথে ফটাস ফটাস পার্টি আতসবাজি ফাটাতে লাগলো তাসান আর আদ্রিতা। লিভিং রুমে অল্প পরিসরে একটু সাজানোও হয়েছে।সামনেই “শুভ বিবাহ বার্ষিকী” লেখা একটা ব্যানারও লাগিয়ে রেখেছে। সানা তাসিররাসহ অল্প কিছু কাছের আত্মীয় স্বজনও এসেছে। এসব দেখে তানি সত্যি সত্যিই সারপ্রাইজড হয়ে গেল। আবির মুচকি হেঁসে তানির কাছে এগিয়ে এসে বলল,
“তুমি কি ভেবেছিলে, আমি ভুলে গেছি আজকের কথা! একদমই না। আমার জীবনের সেই দুর্ধর্ষ কালো দিনটার কথা কীভাবে ভুলতে পারি, যেদিন আমার জীবনে তুমি নামক ডা,কি,নী এসেছিলে!”
তানি হেঁসে দিয়ে আবিরের বাহুতে আলতো করে চাপড় মারলো। আবির বলল,
“এইযে দেখছ, সবার সামনেই কেমন মারপিট করছ এই অবলা স্বামীটাকে! তাহলে বোঝ সবাই অগোচরে কতটা অত্যাচারীত হই আমি! এতবছর এসব সহ্য করেও সংসার করতে পারছি এরজন্য আমাকে অস্কার দেওয়া উচিত।”
হাসলো সবাই আবিরের কথায়। আবির তানির দুই বাহু ধরে নরম সুরে বলল,
“তবুও আমার এই ডা,কি,নী টাকেই সারাজীবন চাই। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত চাই তোমাকে। এতবছর এই পাগলটাকে সহ্য করার জন্য আর আমার পরিবারকে এত ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ তোমাকে তানি। তুমি আমাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার, দুটো সন্তান দিয়েছ আমাকে। আই লাভ ইউ ভেরি মাচ তানি।”
তানি টলমল চোখে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বলল,
“আই লাভ ইউ টু আবির।”
ওদের আবেগ ভরা কথা শুনে তাসান মুখে দুই আঙুল পুরে শিস বাজিয়ে উঠলো। তারপর ইমোশনাল হওয়ার ঢং ধরে বলল,
“বাহ! কি ভালোবাসা! আমারতো চোখে পানি এসে গেল।”
আদ্রিতা তা শুনে বলে উঠলো,
“কই পানি ভাইয়া! চোখেতো পানি দেখা যায় না।”
তাসান বলল,
“আরে আসবে আসবে। দেখতে থাক। দেখতে দেখতে চলে আসবে।”
তাসান নিজের চোখের নিচে তর্জনী আঙুল দিয়ে চোখের নিচের পর্দা টেনে ধরে আদ্রিতাকে দেখিয়ে বলল,
“এই দেখ আসছে।”
“নাহ! দেখা যাচ্ছে না। এক চিমটিও না। পুরো শুকনো খরা পড়ে আছে।”
সানভি মজা করে বলল,
“ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখ, তাহলে হয়তো দেখা যেতেও পারে।”
তাসান বলে উঠলো,
“আসলে আমি এসব দেখিয়ে বেরানো পছন্দ করিনা।তাই দেখা যাচ্ছে না। এগুলো মনের কান্না, মনেই থাকে। তোরা বুঝবিনা।”
আবারও হাসলো সবাই। তাসির আবিরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
“যাক শেষমেশ তুই যে পাগল সেটা শিকারতো করলি।”
আবির প্রতিত্তোরে গানের লাইন বলল,
♬ পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না…
ছোট খাটো পার্টির মতো আয়োজন করা হয়েছে।লিভিং রুমেই সবাই যার যার মতো খাওয়া আর আড্ডা দিচ্ছে।কেউ চেয়ারে আবার কেউ সোফাতে বসে আছে। পার্টিতে অপরাহ্নের মা বাবাও এসেছে। নিবিড় অপরাহ্নের মায়ের উদ্দেশ্যে বলল,
“আন্টি, অপু কোথায়? ওকেতো দেখছিনা। ওকেওতো আসতে বলেছিলাম পার্টিতে।”
সোফায় তানহাও বসা ছিলো। অপরাহ্নের নাম শুনে তার মনের মাঝেও ধুকপুকিয়ে উঠলো। তার অবচেতন মনটাও কোথাও না অপরাহ্নের ব্যাপারে জানতে চাচ্ছে। সেদিনের পর আজ প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল। এরমাঝে অপরাহ্ন সত্যি সত্যিই তার সামনে আসেনি। আর না কোনরকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। এতে তানহার ভালো লাগার কথা থাকলেও তা মোটেও হচ্ছে না। বরং গুমোট যন্ত্রণায় ভেতরটা অসহনীয় হয়ে উঠছে যেন। না চাইতেও অপরাহ্নের ব্যাপারে জানতে মন চাইছে তার। সে মনযোগ দিলো অপরাহ্নের মায়ের জবাব শুনতে। নিবিড়ের প্রশ্নের উত্তরে অপরাহ্নের মা খুবই হতাশার সুরে বললেন,
“অপুর কথা আর বলিসনা বাবা। ছেলেটার আমার, কি হয়েছে কে জানে! আজ সপ্তাখানেক হলো কেমন অন্যরকম হয়ে গেছে। ঠিকমতো খায়না,ঘুমায় না, কথা বলে না। সারাদিন ক্লিনিকে পরে থাকে।সবসময় হাসিখুশি থাকা ছেলেটার মুখ থেকে হাসি একেবারে গায়েবই হয়ে গিয়েছে যেন। মুখের দিকে তাকানোই যায়না। মুখটা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে কিছু বলেও না। শুধু বলে কি জানি পরিক্ষা নাকি দিচ্ছে ও। ওই পরিক্ষাই নাকি ওর সামনের জীবনের ভবিষ্যৎ ডিসাইড হবে। এরবেশি আর কিছু বলেনা। আজ এখানে আসার কথা বললাম তাও আসবেনা। বলে ওর পরিক্ষায় পাস হলে নাকি আসবে, নাহলে আসবেনা। ছেলেটাকে নিয়ে আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। তুমিতো ওর বন্ধু। একটু কথা বলে দেখনা ছেলেটার কি হলো। হয়তো তোমার কাছে বলবে।”
নিবিড় বলল,
“আচ্ছা আমি কথা বলে দেখবো আপনি চিন্তা করেন না আন্টি। ইদানীং ও আমার সাথেও দেখা করছেনা। আমিও কাজের চাপে বিষয় টা খেয়াল করিনি।”
এরমাঝে তাসান বলে উঠলো,
“আন্টি আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে অপু ছ্যাঁকা ট্যাকা খাইছে। বিয়া শাদি করাই দেন সব ঠিক হইয়া যাইবো।”
অপরাহ্নের মা বলল,
“আরে না বাবা তেমন কিছু না। তোমরাতো জানোই ও কেমন। তেমন কিছু থাকলে তো আমরা খুশি খুশিই বিয়ে করিয়ে দিতাম। প নিজেইতো বিয়ে করতে চায়না। বিয়ের কথা বললেই এড়িয়ে যায়।”
নিবিড় বলল,
“হ্যাঁ আন্টি ঠিকই বলেছে। আরে আর কেউ না জানুক, আমরাতো জানি ওই ব্যাটা অপুর স্বভাব। মেয়েদের কাছ থেকে এমন ভাবে দূরত্ব রাখে যেন তারা ওর জান কবজ করতে আসবে। আজ পর্যন্ত একটা প্রেম করাতো দূরের কথা। কোন মেয়ের সাথে বসে কফি খেয়েছে কিনা সন্দেহ। ওর মতো শুদ্ধ ছেলে এই জামানায় পাওয়া কঠিন। আমারতো মাঝে মধ্যে মনে হয় ও, ভুল যুগে পয়দা হয়ে গেছে। ওকেতো আদি যুগে মানাত।”
এসবকিছু শোনার পর তানহার গুমোট যন্ত্রণা যেন এবার বিস্ফোরিত হয়ে তার সর্বাঙ্গের শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়লো। হৃদপিণ্ডে অদৃশ্য ছু,রি,কাঘাত হতে লাগলো। হাতের মাঝে ধরে রাখা কোল্ড ড্রিংকসের গ্লাসটা ধরে রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলছে সে। ধরধর করে কাঁপছে হাত। বুঝতে পারলো এখানে বসে থাকা আর তার পক্ষে সম্ভব না। গ্লাসটা টি টেবিলের উপর রেখে দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে গেল সে।
___
পার্টিতে অল্প কিছুসময় থেকেই রুমে চলে এসেছে নূরান। শুধুমাত্র সোনা মা’এর মন রাখার জন্য উপস্থিত থেকেছে সে।নাহলে তার ওখানে যাওয়ারও ইচ্ছে ছিলোনা। তার মনোভাব ঠিক যাচ্ছে না এখন। রুমে এসেই ফোন অন করলো। নীলাম্বরীর আইডি ডিএক্টিভেট দেখে চোখ বুজে ফেললো সে। সেদিনের পর থেকে এটাই দেখছে নূরান। সেদিন দেখা করার কথা বলার পর থেকেই এই অবস্থায়ই পাচ্ছে সে। সেদিনের পর থেকে আর কোন টেক্সট আসেনি। আইডিও এক্টিভ হয়নি৷ নূরান ফোনটা বিছানায় ফেলে দিয়ে চিত হয়ে শুয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে রইলো। অন্য কেউ হলে হয়তো এই অবস্থায় ভীষণ অস্থিরতা দেখাতো। বিভ্রান্তের মতো আচরণ করতো। তবে নূরান আলাদা। সে সব সিচুয়েশনেই নিজেকে শান্ত রাখে। আজও তাই করছে। সে বুঝতে পারছে নীলাম্বরী আর নিজ থেকে যোগাযোগ করবেনা। এখন নূরানকেই খুঁজে বের করতে হবে নীলাম্বরীকে। আর কীভাবে খুঁজতে হবে সেটাও ভালো করে জানে নূরান।
__
বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে কেকও আনা হয়েছিল। তানি আর আবির মিলে কেক কেটেছে। কাটার পর মেহমানদের দেওয়ার পর যেটুকু বেচেছে তা পুরোটুকুই তাসান নিজের আয়ত্তে করে নিয়েছে। হা করে গপাগপ খাচ্ছে আবার বলছে,
“রুচি নাই বুঝলি। এইটুকু কেক খেয়ে চালাতে হচ্ছে। “
হাসলো আদ্রিতা। সানা তখন বলল,
“আরে নিবিড়কে কি কেক দেওয়া হয়েছে? ও’তো কেক কাটার আগেই রুমে চলে গেল। অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হওয়ার সময় পাইনি তাই রুমে গেল ফ্রেশ হওয়ার কথা বলে। আর তুই দেখি সব একাই সাবার করছিস। দেখি দে এদিকে।”
“আরে মা, আরেকটু খেতে দাওনা। এমনিতেই রুচি নেই। তারওপর খেতেও দিচ্ছোনা তোমরা।”
“হয়েছে আর খেতে হবে না। ছাড় দেখি। একটু নিবিড়কে দিতে হবে না!।”
সানা একটা প্রিচে এক পিস কেক রেখে নিবিড়কে দেওয়ার জন্য যেতে নিলেই হঠাৎ তানি তাকে একটু দরকারে ডাক দিলো। সানা তখন প্রিচটা আদ্রতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“যাতো আম্মাজান,তুই একটু নিবিড়কে কেকটা দিয়ে আয়তো।”
আদ্রিতা মাথা নেড়ে কেকের প্রিচটা নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিবিড়ের রুমের দিকে এগুলো।
নিবিড়ের রুমের দরজায় এসে নক করতে নিয়ে দেখলো দরজা খোলাই আছে। আদ্রিতা দরজা আস্তে করে ঠেলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
“নিবিড় ভাইয়া আপনার জন্য কেক এনে….”
বলতে বলতে ভেতরে ঢুকে সামনে তাকাতেই থতমত খেয়ে গেল আদ্রিতা। নিবিড় শুধু টাওজার পড়া অবস্থায় খালি গায়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে মাথার ভেজা চুলগুলো মুছছে।এইমাত্র শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে বোধহয়। পেছনে তার ফর্সা খোলা পিঠটাতে পানির বিন্দু বিন্দু কনা জমে আছে। এমতাবস্থায় তাকে অত্যাধিক আকর্ষণীয় লাগছে। আদ্রিতার বেহায়া বেলাজ নজর যেন বখাটের মতো তাকিয়ে আছে সেদিকে। ঘোর লাগা ওই বেয়ারা দৃষ্টি হয়তো ভুলেই গেছে যে, এভাবে তাকিয়ে থাকাটা অসভ্যতার মাঝে পড়ে। আদ্রিতাকে আয়নায় দেখতে পেল নিবিড়।বাঁকা হেঁসে ঘাড় ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো সে আদ্রিতার দিকে। তার তাকানো দেখে আদ্রিতার হুঁশ এলো যেন। সে লজ্জার কবলে আবদ্ধ হলো। অপ্রস্তুত নজরে এদিক ওদিক তাকিয়ে কেকের প্রিচ টা টেবিলের উপর রেখে বলল, “আপনার কেক।” বলেই আবার চলে যেতে উদ্যোত হতেই পেছন থেকে ভারী গলায় নিবিড় ডাকলো,
“দাঁড়া।”
দাঁড়িয়ে গেল আদ্রিতা। নিবিড় তোয়ালে রেখে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো আদ্রিতার দিকে। তা দেখেই আদ্রিতার মাঝে দুরুদুরু কম্পনের সৃষ্টি হলো। নিবিড়কে আসতে দেখে ধীরে ধীরে আদ্রিতা পেছাতে লাগলো। পেছাতে পেছাতে একসময় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল। আর পেছাতে পারলোনা সে। নিবিড় আদ্রিতার একেবারে কাছে চলে এলো। তার চোখের নজর ভীষন নেশাময়। যা আদ্রিতাকে বিবশ করে দিচ্ছে। নিবিড় আদ্রিতার মাথার দুই পাশে দেয়ালে হাত রেখে আদ্রিতাকে দুই হাতের মাঝে আবদ্ধ করে ফেলল। মাথা ঝুঁকিয়ে আদ্রিতার চুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে কানের কাছে এসে নেশালো কন্ঠে বলল,
“চোরের মতো আমাকে যে এভাবে দেখছিস তার পারমিশন নিয়েছিস তুই! বিনা পারমিশনে নিবিড় শাহরিয়ারকে খালি গায়ে দেখার অপরাধে তোকে কি ভয়ংকর শাস্তি দিতে পারি আমি, তা জানিস! এই দৈত্য দানবটাতো তোকে এখন খেয়ে ফেলবে। এখন কে বাঁচাবে তোকে!”
আদ্রিতা কথা বলবে কি! নিবিড়ের এতো কাছে আসায় এমনিতেই তার নিঃশ্বাস তলদেশে গিয়ে লুকিয়েছে। চোখ বুজে গেছে আপনাআপনি।নিবিড়ের চুলের শীতল পানি টুপ টুপ করে আদ্রিতার কাঁধে পড়তেই শিহরণ সৃষ্টি হলো সকল স্নায়ুকোষে। সদ্য শাওয়ার নিয়ে বের হওয়া নিবিড়ের শরীর থেকে এক ঠান্ডা শীতল স্নিগ্ধতা পাচ্ছে আদ্রিতা।যা তাকে অবশ করে দ্রবীভূত করে দিচ্ছে। আদ্রিতার নিরবতার মাঝেই নিবিড় আবার বলে উঠলো,
“কিরে কথা বলছিস না কেন? তাহলে শাস্তি ভোগ করতে রেডি!”
বলেই নিবিড় আদ্রিতার কানের লতিতে আলতো করে কামড় দিয়ে দিলো। আদ্রিতা ঘাড় কাত কম্পিত গলায় বলল,
“এ….এমন কিছু না। আমিতো শুধু আপনার কেক দিতে এসেছিলাম। ফুপিমনি বলেছিল তাই। “
নিবিড় মাথা উঠিয়ে বলল,
“এমন ভাবে বলছিস যেন কেক দিয়ে আমাকে অনেক কৃতার্থ করছিস! এত কৃতার্থ করছিস যে এখুনি তোর চরন ধুয়ে পানি খাওয়া অতিব অপরিহার্য হয়ে গেছে আমার উপর।”
আদ্রিতা কুঞ্চিত নয়নে তাকিয়ে বলল,
“আমি কখন বললাম তা!”
“আচ্ছা, তো এখন তোর বলার অপেক্ষায় থাকতে হবে আমার! ম্যাডাম কখন বলবে তারপর আমার বুঝতে হবে! সামান্যতম ম্যানার্সও শিখিসনি তুই তাইনা! কেকটা এনে এমনভাবে রেখে যাচ্ছিস যেন আমি রাস্তার ফকির মিসকিন। মানে জিনিসটা আমার হাতে দিতেও তোর হাত পঁচে যাবে তাইনা!”
আদ্রিতা হতবাক। প্রকৃতিতেও এত রকম পরিবর্তন নেই যতটা এই লোকের আছে। সে বোধহয় আরও তিনজনম নিলেও এই লোকটাকে চিনতে পারবেনা। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আদ্রিতা গিয়ে কেকের প্রিচ নিবিড়ের সামনে ধরে বলল,
“এখন নিন।”
“বলার পর দয়া দেখাচ্ছিস! এটা গ্রহণযোগ্য না। এখন এটা তুই নিজের হাতে খাইয়ে দিবি। তাহলে গ্রহনযোগ্য হবে।”
আদ্রিতার চিল্লিয়ে বলতে মন চাইলো, পারবোনা। কিন্তু তা বলার সাহস কই। তাই অগত্যা কেকের পিস হাতে তুলে নিবিড়ের মুখের সামনে ধরলো। নিবিড় অল্প করে এক কামড় নিলো। সেটা খেয়ে বলল,
“উহুম। ভালো না কেকটা। একদম মিষ্টি না।”
আদ্রিতা বলে উঠলো,
“কই, ভালোইতো। অনেক মজাইতে।”
“তুই কি বলতে চাচ্ছিস, আমি মিথ্যে কথা বলছি! ঠিক আছে তুই এখুনি খেয়ে দেখ আমার সামনে।”
আদ্রিতা বিরক্ত মুখেই অল্প একটু কেক মুখে নিয়ে বলল,
“ঠিকইতো আছে।”
নিবিড় ফট করে আদ্রিতার ঠোঁটে লেগে থাকা কেকের ক্রিমটুকু নিজের অধর দ্বারা সেটা খেয়ে নিলো। ধমকিত হয়ে আদ্রিতা জমে গেল যেন। খাওয়ার পর নিবিড় ফিসফিস করে বলল,
“আসলেই মজা ছিলো।”
বলেই বাঁকা হেঁসে এক চোখ টিপ মারলো নিবিড়। আদ্রিতা আর দাঁড়াতে পারলোনা। লজ্জায় লাল হয়ে ছুটে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে। পেছন থেকে নিবিড়ের হাসির আওয়াজ এলো তার কানে।
চলবে…..