#লেখনীতে #রেহানা_পুতুল
সজীব লতার দিকে পলক তুলে চাইল। মায়াভরা চোখে বলল,
ভালো থেকো। আমার জন্য চিন্তা করোনা।
সবাই মাটিতে আছড়ে পড়ল। গগন বিদারী বিলাপে ভারী হয়ে উঠল #নীল_বুনোলতা কুঞ্জের রক্তিম আকাশ।
ঘরের ভিতর থেকে এসে সজীবদের আগের সেই চারজন কাজের মেয়ে লতা ও সুজানাকে টেনে তুলল। ঘরের সিঁড়িতে নিয়ে বসালো। লতার মাথার উপর যেন হঠাৎ করে আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। একদিকে বোন হাসপাতালে। আরেকদিকে স্বামী থানায়। রইস অসুস্থ। মেয়েগুলো বাড়িতে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। দিশেহারা হয়েও লতা ধৈর্য হারা হলোনা। নিজেকে সামলে নিল। মচকে গেলে চলবেনা। সব ঠিক করতে হবে তার।
লতা ভাবল,
কিন্তু পুলিশ কিভাবে জানল আলতাফ শিকদারের বিষয়টা। উত্তর মিলিয়ে নিলো নিজের মতো করে। প্রতিটি মানুষেরই কিছু না কিছু আপন মানুষ থাকে। সে যতই খারাপ মানুষ হোকনা কেন। তাদের কাছে সে নিতান্তই ভালোমানুষ হিসেবে পরিচিত। আলতাফ শিকদারের ফোন দীর্ঘ সময় বন্ধ পেয়ে তার কোন নিকটজন থানায় ইনফর্ম করেছে। এটাই হবে। তাহলে তারা বাড়িতেওতো সরাসরি চলে আসতে পারতো খোঁজ নেওয়ার জন্য। ওহ হো! সম্ভবত গতকালকে যারা আসছে আশেপাশের মানুষজন। এদের থেকে কেউ হবে। আর আমি যে কয়দিন আগে সজীবকে দেখেছি রইসের ঘরের ওদিকে যেতে। আমার দেখা সত্যি ছিলো। কিন্তু ধারণা ও বিশ্বাস ভুল ছিলো। তারমানে সে সত্যিই হাঁটতে গিয়েছে।
সবুজ হাসপাতালে ফোন দিয়ে তার বাবাকে সব খুলে বলল। তার বাবার চিন্তায় মাথায় হাত পড়ল। কি হবে তার মেয়ের। সজীবকে কিভাবে ছাড়িয়ে নিবে। লতার বাবা লতাকে ফোন দিয়ে শান্তনা দিল। এবং তার এক দূর সম্পর্কের ভাগিনার কথা বলল। মাহমুদ নামের সেই ভাগিনা কোন থানার ওসি হবে সম্ভবত। বলল,
তুই সজীবকে তোর সেই ফুফুর বাড়ি পাঠা মোবাইল নাম্বার আনার জন্য। তাহলে আমিও কথা বলব । তুই ও বলিস। দেখি ও কি পরামর্শ দেয়।
লতা যেন দূরাশার মাঝে ক্ষীণ আশার আলোর সন্ধান পেল। লতা সবুজকে তাদের গ্রামে পাঠিয়ে মাহমুদের মোবাইল নাম্বার যোগাড় করল। বিস্তারিত জানাল। তার বাবাও ফোন করে অনেক অনুরোধ করল মেয়ের জামাইকে ছাড়িয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য। মাহমুদ বাবা মেয়েকে ফোনকলে শান্তনা দিল।
লতাকে বলল,
কোর্টে চালান দেওয়ার আগেই তুই থানায় চলে যা কাল সকালেই। আমি এদিকে যা করার করছি। তাদেরকে ডিটেইলস এক্সপ্লেইন করবি ভালোভাবে। যেন কোন ফাঁকফোকর না থাকে। বলে কিছু ক্যাশ ধরিয়ে দিলেই ছেড়ে দিবে। আর তোর ভাষ্যমতে একটা পাপীকে ধ্বংস করেছিস তোরা। নয়তো তারজন্য আরো অনেক মেয়ের জীবন শেষ হয়ে যেত।
আচ্ছা বলে লতা ফোন রাখল।
লতা দুপুরের দিকে গিয়ে রইসকে দেখে আসল। রইস অনুযোগের স্বরে বলল,
ভাবিসাব। ভাইজান আমারে কিভাবে মারলো দেখলেন?
লতা রুক্ষ স্বরে বলল,
এর জন্য কি আপনি দায়ী নয়? নিজের বিবেককে জিজ্ঞেস করুন। সেইমেয়েগুলো যখন আপনার কাছে খাবার চাইলো, তখনইতো সজীব ও আমার বুঝতে বাকি রইলোনা আপনি সব জানেন এবং এতে সহযোগিতা করে আসছেন।
আমার কোন উপায় ছিলনা ভাবিসাব। এসবের জন্যই আমাকে দাদা নানা সুযোগ সুবিধা দিতো। ধান,সুপারি, নারকেল আরো অনেকরকম। ঘরে আমার অসুস্থ মা। দুইটা পোলাপান। ওদের স্কুলে দিছি। সব মিলায়া ভালোই চলছে এই কাজগুলো করি বলেই ভাবি।
করুণ আর্তি স্বরে কথাগুলো বলল রইস। লতা কিছু বললনা। বাড়ি চলে এলো।
বিকেলে সেই চারজন মেয়েকে নিজের রুমে ডাকল লতা। সবার বয়স ষোল হতে আঠারোর কৌঠায় হবে। লুকিয়ে মোবাইলের রেকর্ড অপশন অন করে দিলো। এই রেকর্ড আগামীকাল সজীবকে ছাড়াতে ভীষণ হেল্পফুল হবে।
লতা জিজ্ঞেস করলো,
তোমরা তোমাদের বাড়িতে না গিয়ে এই ধানের গোলাঘরে দুইবছর ধরে কিভাবে আটকে ছিলে ? বলতো।
স্বপ্না নামের একটা মেয়ে বলতে শুরু করলো। আমি এদের সবার আগে এই বাড়িতে কামে আইছি। মাঝে মাঝে রাইতে আলতাফ দাদা আমার রুমে যাইয়া আমার সারা শরীর কচলাতো। যেদিন কিছুটা বুঝতে পারলাম, সেদিনই খালাম্মারে কইলাম, কাম করুমনা চইলা যামু। তবে কে গায়ে হাত দেয় সেইটা কিন্তু আন্ধারের মইধ্যে টের পাইনাই ভাবি। খালাম্মা মানা করলোনা। বলল যাইস। তুইতো একা যাইতে পারবিনা। রইস ও চিনেনাই। তোরে যিনি আনছে তিনিই দিয়া আসবো। পরে দাদা তার সুবিধা বুইঝা একদিন কইলো, কাইল সকালে সব গোছায়া তৈরি থাকিস। আমিই নিয়া যামু।
তো পরেরদিন আমি আমার জামাকাপড়ের ব্যাগ নিয়া দাদার লগে বাইর হইলাম মেইন গেইট দিয়াই। পাঁচ মিনিট পরেই উনি আমারে কইলো,
স্বপ্না এইদিকে আয় একটু। রইসের কাছে একটু দরকার। এই বাড়ির শ্যাষ মাথায় আরেকটা গেইট আছে। রইস ভাইয়ের ঘর সেই গেইটের কাছাকাছি। তখন সেই গেইট খোলা ছিল। পরে বুঝলাম রইস ভাইকে বইলা রাখছে আগেই। আর সে গেইট খুইলা রাখছে। এমনিতে হগল সময় বন্ধ থাকে। তো আমিও দাদার পিছন পিছন গেলাম। দেখলাম রইস ভাইরে ফিসফিসায়া কি কি জানি কইলো। এরপর দাদা কইলো,
স্বপ্না পিছনে আমাদের ধানের গোলাঘর। দুই মন ধান দিয়া দিমু তোর মা বাপের লাইগা। এদিকে আয়। ধান বস্তায় ভরতে হইবো।
আমি খুশী খুশী মনে দাদার লগে গেলাম। ধানের গোলাঘরে ঢুকলাম। উনি পিছনে নিয়া গ্যালো। আপনারা যে দেখলেন, সেই ছোট রুমটা। বিছানাপত্র ফ্যান এসব কিন্তু তখনও ছিলো। উনি টেবিল ফ্যান ছাইড়া দিল। হাত পা সিধা কইরা শুইয়া গ্যালো। কইলো আয় দাদার গায়ের উপরে। আদর কইরা দিই।
তখন আমার কলিজা মোচড় দিয়া উঠল। মন চাইছে মাটি ফাটুক আর আমি মাটির নিচে গায়েব হইয়া যাই।
উনার উপরে ম্যালা চেইতা গ্যাছি। কইলাম এবার বুঝছি রাইতে আমার শরীর হাতান আফনে। আফনে এত লুইচ্চা ব্যাডা?
উনি আমারে কাঠের পায়ার সাথে বাইঁধা নিলো আমার বুকের ওড়না নিয়া। ডর দেখায়া কইলো,
তেড়িবেড়ি করবি তোর পরিবারের সবাইরে মাইরা ফালামু। চিল্লায়া কোন ফয়দা নাই। কেউ শুনবোনা তোর চিল্লানি। শোন সবসময় এ ঘরে থাকবি। রইস তোর লাইগাও রাঁধবো। টাইমমতে খানা দিয়া যাইব। গোসল করবি রইসের কলে যাইয়া। তোর বেতন মাসে মাসে আগের মতই তোর বাপের হাতে চইলা যাইব। আর হেরা ফোন দিলে আগের মতই আমি তোরে কথা বলায়া দিমু। স্বাভাবিকভাবেই কথা কইবি। এই যে বিছানা দেখস। তোর মতো অল্প বয়েসী কচি কচি মেয়েদের আইনা এখানে আদর করি। মজা দিই। হাতে কিছু টাকাকড়ি ধরায়া দিই। হাসিমুখে বাইর হইয়া যাই। টু শব্দটিও করেনা ওরা।
একইভাবে ছয়মাস পরপর এরা তিনজন আমার লগে যুক্ত হইলো। হে মরছে ম্যালা খুশী হইছি ভাবি। জানেন না। কি বেশরম পুরুষ হে। কি যে বিশ্রী বিশ্রী কথা কইতো আমাদের গায়ে হাত দেওনের কালে। রইস ভাইরে কতদিন হাতে পায়ে ধইরা কইছি সজীব ভাইজানরে কইতো। উনি কয় এটা অসম্ভব। উনি নুন খাইবো যার গুন গাইবো তার। নিমকহারামি কইরতে পারবোনা।
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে স্বপ্না কেঁদে ফেলল ফ্যালফ্যালিয়ে অবোধ শিশুর ন্যায়।
লতা অন্যমেয়েদের কাছে জানতে চাইলো,
ওর বলা কথা সব সত্যি?
ওরা সমস্বরে উত্তর দিল। একদম হাচা কথা। বরং স্বপ্নাবু শরমে অনেক কথা কয়নাই।
লতা বলল থাক আর বলতে হবেনা। তোমরা চাইলে আমাদের বাড়ি থেকে যেতে পারো। নয়তো যেতেও পারো।
আমরা চইলা যামু। থাকুমনা। আব্বা আম্মার লাইগা মনটা পুইড়া যাইতাছে।
আচ্ছা দুই একদিন পর আমি তোমাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করবো।
রেকর্ড অপশন অফ করে দিলো লতা। অপেক্ষায় আছে পরেরদিনের ভোরের।
পরেরদিন লতা তার ভাই সবুজকে নিয়ে থানায় গেলো। তার ফুফাতো ভাই মাহমুদের রেফারেন্স টেনে পরিচয় দিলো। তারা চিনতে পারলো। লতা নমনীয় স্বরে তাদের এ টু জেড ঘটনা ডিটেইলস বলল। এবং তার মোবাইলের রেকর্ড অপশন অন করে এসপির হাতে দিল। এসপিসহ অন্য পুলিশেরা পুরো রেকর্ড শুনলো।
সজীবকে একজন ভেতর থেকে নিয়ে এলো লতার সামনে। এসপি বললো,
শুনুন মিস্টার সজীব, যতবড় অপরাধই হোক, তারজন্য দেশে আইন আছে। আমরা বুঝলাম,আপনি আবেগ থেকে মায়ের নৃশংস হত্যাকারী ও ধর্ষণকারীকে খু*ন করেছেন। কিন্তু দ্বিতীয়বার এমনটা করবেন না আশারাখি। আমাদের ওসি মাহমুদের বলা ও পরিস্থিতির উপর বিবেচনা করে আপনাকে জামিন দিলাম।
সজীব কৃতজ্ঞতার সাথে তাদেরকে ধন্যবাদ জানালো। এবং বের হয়েই লতা ও সবুজকে নিয়ে হাসপাতালে রুমকিকে দেখতে গেলো। সেখান থেকে ঢাকা চলে গেলো।
দুইদিন পরে লতা সবুজকে সঙ্গে করে নিয়ে সেই চারজন মেয়েকে চরে গিয়ে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিলো। সেই মেয়েরা কৃতজ্ঞতা জানালো লতার প্রতি।
সপ্তাহ খানেক পরে রুমকি সুস্থ হলে তাকে রিলিজ নিয়ে লতার বাবা বাড়ি চলে গেলো।
লতা রইস,সুজানা ও চুমকিকে ডাক দিলো। চুমকিকে জিজ্ঞেস করলো,
তুই যাবি? না থাকবি আমাদের বাড়ি?
আমি আপনাদের কাছেই থাকুম ভাবিজান।
আচ্ছা তাহলে সুন্দরভাবে থাকবি,ঘুরবি,খাবি,কাজ করবি। মনে থাকে যেনো। কোনো সমস্যা মনে করলে অবশ্যই আমাকে জানাবি। এখন তোর কাজে যা তুই।
চুমকি ঘাড় কাত করে সম্মতি জানিয়ে উঠান ঝাড়ু দিতে চলে,গেলো।
লতা রইসকে জিজ্ঞেস করলো,
আপনার কি খবর? থাকবেন না বিদায় হবেন?
এতটাবছর ধইরা এই বাড়ির নুন খাইছি। যাইতে চাইনা আমি।
ঠিকাছে। তাহলে আপনার দায়িত্বের কাজগুলো হেলাফেলা না করে আজ থেকে মন দিয়ে করবেন। এখন যান।
রইস প্রভুভক্তি দেখিয়ে চলে গেলো বাগান পরিষ্কার করতে।
সুজানা বসে আছে মলিন মুখে। লতা বলল,
আপনাকে এই বাড়িতে এসে মায়ের চোখে দেখেছি। আজও তাই দেখি। সারাজীবন তাই দেখবো। দৃষ্টির পরিবর্তন হবেনা কস্মিনকালেও। তবে আপনি মুক্ত। চাইলেই যেতে পারেন মা।
সুজানা নিরবে অশ্রুপাত করতে লাগলো। ধরা গলায় বললো,
কোথায় যাবো মা। কবির দ্বিতীয় বিয়ে করে সুখের সংসার করছে। সেখানে আমার কোন সন্তান ও নেই। কার আশায় যাবো মা। আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই। এই বাড়ির ঘাস লতাপাতা থেকে শুরু করে প্রতি ইঞ্চি মাটির উপরেও মায়া বসে গিয়েছে। সজীবকে নিজের পেটের সন্তানের মতই ভালোবাসি। সজীব ও তুমি না চাইলে চলে যাব। আর চাইলে থেকে যাব। যে কয়দিন বাঁচি তোমাদের কাছেই বাঁচতে চাই।
এভাবে বলছেন কেন মা? আপনি ছিলেন,আছেন,রবেন জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।
আচ্ছা আপনি আপনার স্বামীকে সত্যটা জানাননি তিনি বিয়ে করার আগে?
ওতো তারপরেই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিলো। তবুও লোক মারফতে সত্যটা জানিয়েছি। পরে বলল আমাকে হিল্লা বিয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করতে চায়। এছাড়া আমাদের সমাজে গ্রহণ করতে দিবেনা। কিন্তু এটা আমি কিছুতেই চাইনি। তাই সে বিয়ে করে ফেলল। আমি রয়ে গেলাম এখানে।
ওহ আচ্ছা।
এক সপ্তাহ পর সজীব বাড়ি আসলো। লতার ঘাড়ে চিবুক ঠেকিয়ে অসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো সবকিছুর জন্য। লতা গোলাঘরের বিষয়টা সজীবকে খুলে বললো। এবং বলল আমিও কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি উল্টো আমাকে যে ভুল বুঝেন নি।
সজীব সুজানার কাছে গিয়ে বলল,
মা আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। ভুল বুঝে আপনাকে অনেক মেন্টালি টর্চার করেছি এতটা বছর আমি।
সুজানা কেঁদে ফেলল সজীবের মাথায় হাত বুলিয়ে।
মায়ের কাছে সন্তানের কোন ভুল নেই বাবা। আল্লাহ তোমাকে ভালো রাখুক বৌমার সাথে।
তার পরেরদিন লতার পরিবারের সবাইকে সজীব দাওয়াত দিলো। সাথে তার সেই ফুফাতো ভাই ওসি মাহমুদকেও। তারা সবাই সবাই এলো। সুজানার তদারকিতে নারকের দুধ দিয়ে পোলাউ,পালা মুরগীর ঝাল রোস্ট, রাজহাঁসের রেজালা,হাঁসের ডিমের কারি,পুকুরের রুই মাছের দোপেয়াজা, গাছের ডাবের পানি,গরুর দুধ দিয়ে ঘরে তৈরি রসগোল্লা,দই দিয়ে অতিথিসহ সবাই ভরপুর খেলো আয়েশ করে।
সবাই সজীবের অনুরোধে একদিন বেড়িয়ে চলে গেল। ধীরে ধীরে নীল বুনোলতা কুঞ্জের থমথমে পরিবেশ শান্ত হলো। রূপকথার গল্পের মতো সবার মাঝে শান্তি ফিরে এলো।
পল্লীর নির্জন নিশুতি রাত। উঠান ভরা রূপোলী চাঁদের থই থই জোছনা। আকাশজুড়ে তারাদের মিলনমেলা। সজীব একটি সিগারেট জ্বালিয়ে নিলো। দুই ঠোঁটের মাঝে চেপে ধরে সুখটান দিলো। ধোঁয়া ছেড়ে দিলো উপরের দিকে। পিছন থেকে হাত বাড়িয়ে লতা সিগারেটটা নিয়ে নিলো।
কে বলে সজীব ঘাড় ফিরে চাইলো।
আমিই। আপনার নীল বুনোলতা।
সজীব আপ্লুত চোখে লতার দিকে চাইলো। বলল,
বুনোলতা যে এত কার্যকরী তুমি না এলে জীবনে বুঝতেই পারতামনা। এইই তুমি না ঘুমিয়ে ছিলে?
কই নাতো। নয়ন বুঁজে ছিলাম। এত সুন্দর মোহাচ্ছন্ন পরিবেশ। আর আপনি কিনা তা নষ্ট করছেন সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে। আপনি আর কখনোই ধূমপান করতে পারবেন না। এটা মানুষের শরীরের জন্য খুবই হুমকিস্বরূপ।
এটা কি তোমার অনুরোধ না আদেশ?
স্ত্রী হয়ে অনুরোধ। বন্ধু হয়ে আদেশ।
আদেশ অনুরোধ দুটোই মানলাম। ধূমপানকে না বললাম চিরদিনের জন্য।
লতা জ্বলজ্বল হাসিমুখে বলল,
সত্যি?
হাজার সত্যি। লাখো সত্যি। কোটি সত্যি।
ঘুমাবেন না? আসেন।
আজ খোলা আকাশের নিচে জোছনার গালিচায় ঘুমাবো দুজন।
ভয় পাবনা আমরা?
নাতো। আমাদের পাহারা দিবে ওই দূর আকাশের ঝিকিমিকি তারাগুলো। হাত উঁচিয়ে সজীব লতাকে তারাগুলো দেখিয়ে বলল এবং নিজের দিকে আবিষ্ট করে ধরলো। উঠানের একপাশে বিশাল আমগাছের গোড়ায় গিয়ে বসল। লতাকে বলল,
তুমি গাইতে পারো বুনোলতা?
লতা মোহনীয় চোখে হাসনাহেনা ফুল গাছের দিকে চাইলো। গুনগুনিয়ে বেসুরো গলায় গাইতে লাগলো,
“এই রূপালী চাঁদে তোমারই হাত দুটি,
মেহেদীর লাল রং এ আমি সাজিয়ে দিতে চাই।
আহা কি শোনালে, মন রাঙালে,
এভাবে সারা জীবন যেন তোমাকে কাছে পাই।
আমি তোমাকে পেয়ে, সুখে আছি যেন
ফুলেরই বুকে ওলী কতো কাছাকাছি।”
লতা ঘুমিয়ে গেলো সজীবের কাঁধে। আধোরাতে সজীব লতাকে কোলে করে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো।
তার একদিন পর সুজানা হঠাৎ করে অসুস্থবোধ করলো। রক্তবমি শুরু হলো। সজীব লতা মিলে সুজানাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। নানান পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষ না হতেই সুজানা ইহজগৎ থেকে বিদায় নিলো। লতা ও সজীব কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
#নীল_বুনোলতা কুঞ্জের রক্তিম আকাশ আবারো ব্যথার নীল রঙে ছেয়ে গেলো। জীবন আনন্দ দেয় যতটুকু,বেদনা দেয় তারচেয়েও বেশি।
#সমাপ্ত ( নতুন গল্প আসবে)
জনরা #থ্রিলার