# নীল চিরকুট
# লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা
০৬.
শহরে ভোর নেমেছে প্রায় দু’ ঘন্টা হলো। ঘড়িতে সাতটা কি আটটা বাজে। খানিকবাদেই গ্রীষ্মের সোনালি রোদে ঝলমল করে উঠবে জনাকীর্ণ ঢাকা শহরের গাঁ। ধানমন্ডির ছয় নম্বর রোডে সাদা রঙের বিশাল বিল্ডিংয়ের পার্কিং-এ দাঁড়িয়ে আছে নম্রতার বন্ধুরা। তাদের সামনে কালো রঙের চমৎকার এক প্রাইভেট কার। সাদা একটা ন্যাকড়া দিয়ে নিরন্তর গাড়িটির গাঁ মুছে চলেছেন একজন ড্রাইভার। বিরসমুখী ড্রাইভারের গাঁয়ে ঝকঝকে সাদা ইউনিফর্ম। চিমসে যাওয়া গাল দুটো লেগে আছে গালের দু’পাশের চ্যাপ্টা হাড়ে। থেবড়ানো নাকে হাজার টন বিরক্তি। ছোট ছোট চোখে মাত্রাতিরিক্ত প্রভূভক্তি। রঞ্জনের গায়ে কালো রঙের পোলো শার্ট। পরনে অফ হোয়াইট জিন্স। পায়ে ব্ল্যাক কেডস। পুরু ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত।
‘ শালা! এই অন্তু মরছেটা কই? খোঁজ-খবর নাই কোনো।’
নাদিম গিটারে সুর তোলার চেষ্টা করছিল। গায়ে পরা নীল-কালো চেকশার্টটির উপরের বোতামদুটো খোলা। ঘন চুলের এক গাছি পড়ে আছে কপালে। কাগজের মতো সাদা মুখে বিরক্তির ছাপ। রঞ্জনের কথায় কপালের চুলগুলোকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে গেইটের দিকে তাকাল নাদিম। নম্রতা ট্রলি ব্যাগের উপর গালে হাত দিয়ে বসে ছিল। ফু দিয়ে নিজের কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো উড়িয়ে দিতে দিতে আকাশ-পাতাল ভাবছিল। ঠিক এমন সময় গেইট পেরিয়ে ভেতরে এলো অন্তু। কালো গায়ে ঝকঝকে সাদা রঙের টি-শার্ট। পরনে ছাই রঙের ঢিলাঢালা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। পিঠে ট্যুরিস্ট ব্যাগ। চুলগুলো খাঁড়া করে পেছন দিকে আঁচড়ানো। পেটানো, প্রশস্ত বুকের ছেলেটি ঘেমে অস্থির। পার্কিং-এ বন্ধুদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো অন্তু। রাগান্বিত বন্ধুরা কিছু বলার আগেই ভুবন ভুলানো হাসি হাসল। গায়ের রং কালো হলেও নিজের হাসিটা যে মারাত্মক সুন্দর সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন অন্তু। শুধুমাত্র এই মায়াভরা, ইনোসেন্ট হাসিটার জন্যই অসংখ্যবার অঙ্ক স্যারের ভয়ানক মার থেকে বেঁচে গিয়েছে সে। সে হাসলে আশেপাশের মেয়েরা যে বারবার ঘুরে তাকায় তা একটু বয়স হতেই নিজ জ্ঞানে বুঝে নিয়েছে অন্তু। কিন্তু হায় নিয়তি! একমাত্র নীরাকেই এই হাসির মায়ায় কাবু করতে পারল না সে। রঞ্জন দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ শালা! এতোক্ষণ লাগে আসতে? আমরা হল থেকে চলে এলাম আর তুমি ধানমন্ডিতে থাকা সত্ত্বেও ঠিক টাইমে পৌঁছাতে পারো না। খারাপ কথা মুখে আসছিল একখান।’
অন্তু বিগলিত হেসে বলল,
‘ আরে, বাসায় একটু ঝামেলা হইছিলো। আব্বায় হঠাৎ বাজারে পাঠাই দিছিল।’
কথাটা বলে এদিক-ওদিক তাকাল অন্তু। নম্রতার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
‘ কী রে? আরগুলা কই?’
নম্রতা সরু চোখে তাকাল। ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,
‘ আরগুলা? নাকি নীরা?’
রঞ্জন হাসল। নাদিম গিটারে রোমান্টিক টুন দেওয়ার চেষ্টা করল। অন্তু মাথা চুলকে গরম চোখে তাকাল। কপট রাগ নিয়ে বলল,
‘ খোঁচা মারস কেন হারামি? খালি নীরার কথা জিগ্যেস করব কেন? ছোঁয়াও তো নাই। রওনা দিবি কখন?’
অন্তুর প্রশ্নের মাঝেই সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো ছোঁয়া আর নীরা। তাদের পেছনেই ছোঁয়ার বাবা-মা প্রফেসর সালাম হক এবং সিঁথি হক। ছোঁয়ার বাবা মার উপস্থিতিতে বন্ধুমহলের প্রশ্ন-উত্তর পর্বে ভাটা পড়ল। সবাই হঠাৎ করেই নিশ্চুপ হয়ে গেল। প্রফেসর সালাম হক ছেলে-মেয়েদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে ড্রাইভারকে বিস্তর বোঝালেন। কিভাবে সাবধানে তাদের কক্সবাজার পর্যন্ত পৌঁছে দিবেন তার বিস্তর উপদেশ দিলেন। সিঁথি হক আর সালাম হকের খবরদারিতে ছোঁয়া ব্যতিত বাকি পাঁচজনেরই ভ্রু কুঁচকে এলো। নাদিম মুখ কাঁচুমাচু করে নিচু গলায় বলল,
‘ মামা? মনে তো হইতাছে আমরা কেজি স্কুলে পড়ি। প্রথম প্রথম স্কুল কী জিনিস দেখতে যাইতাছি। বাল! এতো ঢং-এর মানে কী?’
রঞ্জন উত্তর দিল না। অন্তু মৃদু গলা খাঁকারি দিয়ে চুপ করে রইল। বাবা-মায়ের বাধ্য মেয়ে ছোঁয়া সময় নিয়ে বাবা-মার থেকে বিদায় নিলো। বন্ধুরা কুঁচকানো ভ্রু আর একরাশ অনিশ্চয়তা নিয়ে গাড়িতে উঠল। গাড়ি যখন ধানমন্ডি ছেড়ে নারায়ণগঞ্জের রাস্তায় ছুটলো তখন সূর্যের যৌবনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পথঘাট, পথচারী। প্রায় আধঘন্টা চলার পর থমথমে গলায় আদেশ করল রঞ্জন,
‘ মামা? গাড়ি ঘুরাও। আমরা কেরানীগঞ্জ যাব। পুরাতন ঢাকা।’
রঞ্জনের কথায় চরকির মতো ঘুরে এসে তার মুখের উপর স্থির হলো পাঁচ জোড়া চোখ। বিস্মিত ড্যাবড্যাবে চোখগুলোর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলো রঞ্জন। কে, কী বুঝলো জানা নেই। নাদিম জোরের সাথে বলল,
‘ হ্যাঁ, হ্যাঁ। মামা গাড়ি ঘুরাও। কেরানীগঞ্জের রোড ধরো। পুরাতন ঢাকায় যামু।’
ওদের কথায় ড্রাইভার অগ্নিদৃষ্টিতে তাকাল। তার চোখ-মুখ দেখে মনে হচ্ছে, সে মহাপাপীদের সাথে বসবাস করছে। এই পাপীদের সাথে বসে থেকে সে প্রচন্ড কুন্ঠিত, লজ্জিত এবং রাগান্বিত। রঞ্জন আবারও বলল,
‘ কী হলো মামা? গাড়ি ঘুরাতে বললাম না?’
ড্রাইভার ডাঁট হয়ে বসে রইল। চোখদুটো সামনের দিকে নিবদ্ধ। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে থমথমে কন্ঠে বলল,
‘ ম্যাডাম কইছে, ডিরেক্ট কক্সবাজার যাবা। হেতেহুতে অযথা থামাইবা না। আমিও থামাইতাম না। সিদা কক্সবাজার যাওম। গাড়ি ঘুরামু ক্যান? ম্যাডাম তো কেরানীগঞ্জ যাইতে কয় নাই।’
অন্তু-রঞ্জন একে অপরের দিকে তাকাল। দু’জনের ভ্রুই কুঞ্চিত। নাদিম তিক্তমুখে বলল,
‘ একটু জোরে চালান মিয়া। এমনে ভ্যান গাড়ির মতো চালাইতাছেন ক্যান? আর একটা ফার্স্টক্লাস গান দেন। এভাবে কেউ ট্যুরে যায়?’
‘ গাড়ি ঠিক গতিতেই চলতাছে। ম্যাডাম কইছে গাড়ির গতি ত্রিশের উপরে না নিতে। আর গান দেওন যাইত না। ম্যাডাম কইছে গানে ফোকাস নষ্ট হয়। ফোকাস নষ্ট করুন যাইত না।’
বিরক্তিতে কুঁকড়ে উঠলো নাদিম। বিরবির করে বলল,
‘ বাল যাইত না। অসহ্য! অসহ্য!’
অন্তু জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলল,
‘ পুরাতন ঢাকায় আমাদের এক বন্ধু আছে। সাথে যাবে। ওখান থেকে ওকে তুলে নিয়ে তারপর কক্সবাজার যাব। গাড়ি ঘুরান।’
ছোঁয়া কিছু বলবে তার আগেই চোখ রাঙাল নাদিম। যার অর্থ, কথা কবি তো চড়াই দাঁত ফেলাই দিমু! ড্রাইভার লাফিয়ে উঠে বলল,
‘ ম্যাডাম তো কইছিল ছয়জন যাইবো। আপনারা কারে নিতে চাইতাছেন? আপনাগো হাব ভাব সুবিধার লাগে না তো। আমি ম্যাডামের অনুমতি ছাড়া কোনোহানে যাইতাম না।’
রাগে রঞ্জনের ফর্সা গাল দুটোতে লাল রঙের আভা ফুটে উঠল। ছোঁয়া ড্রাইভারের পাশে বসেছিল। পেছনে নম্রতা, নীরা আর রঞ্জন। একদম পিছনের দিকটাই অন্তু আর নাদিম। রঞ্জন নম্রতার দিকে ঝুঁকে এসে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ কেমন মুডে আছিস নমু?’
নম্রতা ভ্রু বাঁকিয়ে তাকাল। চোখদুটো ছোট ছোট করে বলল,
‘ মানে?’
‘ এডভেঞ্চার মুড?’
‘ এনিটাইম।’
নম্রতা হাসল। রঞ্জন বাম চোখটা টিপে দিয়ে হাসল। নীরাকে ইশারা করে বলল,
‘ গ্যাঞ্জাম নাম্বার ৩।’
নম্রতা সেই কথাটাই নীরার কানে পৌঁছাল। হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে নিচু গলায় বলল,
‘ গ্যাঞ্জাম নাম্বার ৩, হবে?’
নীরা চোখ ঘুরিয়ে তাকাল। কোনো প্রশ্ন না করেই দুনিয়া অন্ধকার করে চেঁচিয়ে উঠল। নম্রতা অস্থির গলায় বলল,
‘ নীরু? কী হয়েছে? এমন করছিস কেন!’
নীরা দমবন্ধ গলায় বলল,
‘ ব… মি। বমি পাচ্ছে। গাড়ি থামাও। নি..নিশ্বাস আটকে আছে আমার! ওয়াক…’
ড্রাইভার চোখ বড় বড় করে নীরার দিকে তাকাল। নীরার চোখ দুটো উল্টো যাওয়ার উপক্রম। কপালের আশেপাশে ঘাম। কি বিভৎস দৃশ্য। মেয়েটা মরে টরে যাবে না তো! নাদিম খেঁকিয়ে উঠে বলল,
‘ ওই মিয়া! থামাতে বলতাছে শুনো না? মাইয়ার কিছু হইলে তোমারে খাইছি।’
ড্রাইভার কয়েক সেকেন্ড দ্বিধা-দন্দে থেকে গাড়ি থামাল। নম্রতা ছোঁয়ার গায়ে পর পর দুটো চড় বসিয়ে দিয়ে বলল,
‘ তোর ড্রাইভারকে বল একটা মেডিসিনের দোকান থেকে দুটো দুটো….’
এটুকু বলে থেমে গেল নম্রতা। অসহায় চোখে বন্ধুদের দিকে তাকাল। অন্তু ফট করে বলল,
‘ দুটো নাপা এক্সট্রা ট্যাবলেট আনতে বল।’
নম্রতা সাই দিয়ে বলল,
‘ হ্যাঁ। নাপা এক্সট্রা আনতে বল।’
পরক্ষণেই অবাক হয়ে বলল,
‘ অ্যা! নাপা এক্সট্রা!’
বন্ধুদের কার্যকলাপ দেখে চোয়াল ঝুলে পড়ার অবস্থা ছোঁয়ার। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বলল,
‘ হ্যাঁ? নাপা এক্সট্রা! নাপা এক্সট্রা দিয়ে…’
এটুকু বলতেই আবারও আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে দিয়ে বমির ভঙ্গিমা করল নীরা। ছোঁয়া আৎকে উঠল। মাথার চিন্তাশক্তি গুলিয়ে গেল। অন্তু ধমক দিয়ে বলল,
‘ ওই তব্দা? তোর ড্রাইভারকে ট্যাবলেট আনতে বলবি? নাকি থাপড়া খাবি? নীরুর কিছু হলে তোর দোষ।’
ছোঁয়া থতমত খেয়ে ড্রাইভারকে মেডিসিন কিনতে পাঠাল। ড্রাইভার একরাশ দ্বিধা আর বিরক্তি নিয়ে মেডিসিনের দোকান খুঁজতে গেল। নাদিম এতোক্ষণ চিন্তিত মুখে ম্যাগাজিন দিয়ে নীরার চোখে-মুখে হাওয়া দিচ্ছিল। ড্রাইভার নেমে যেতেই থেমে গেল তার হাত। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে দেখল। তারপর ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে এলো গাড়ি থেকে। তার সাথে সাথে নেমে দাঁড়াল অন্তু,রঞ্জন। অসুস্থ নীরাও চোখের পলকে সুস্থ,সবল হয়ে উঠল। এক মুহূর্ত নষ্ট না করে বেরিয়ে এলো গাড়ি থেকে। ছোঁয়া হতভম্ব চোখে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করল,
‘ কী করছিস তোরা? কোথায় যাচ্ছিস? গাড়ি থেকে নামছিস কেন? নীরা? তুই না অসুস্থ!’
সবাই উল্টো পথে দৌঁড় লাগাতে লাগাতে বলল,
‘ গ্যাঞ্জাম নাম্বার ৩, বলদ। এখনও বুঝস নাই?’
ছোঁয়া দিশেহারা কন্ঠে বলল,
‘ কিন্তু কেন!’
নীরা উঁচু গলায় বলল,
‘ জানি না। আসলে আয় নয়তো তব্দার মতো বসে থাক।’
বন্ধুদের থেকে জুতসই উত্তর না পেয়ে ব্যাগ কাঁধে নিজেও দৌঁড় লাগাল ছোঁয়া। বন্ধুদের হাবভাব বুঝতে না পেরে মাথা ভনভন করছে তার। আশ্চর্য! কী করতে চাইছে ওরা? ওরা কী ট্যুরে যাবে না? না গেলে বললেই হয়। এতো নাটক কেন? কিছুদূর আসার পর বাস ধরলো ওরা। জনাকীর্ণ বাসে দাঁড়াবার মতো জায়গা নেই। বাসে কোনোরকম ঠেলেঠুলেই দাঁড়িয়ে পড়ল ছয়জন। এই কোণঠাসা বাসে ছোঁয়ার অবস্থা বেকাহিল। ঢাকার লোকাল বাসগুলোতে উঠার অভ্যাস তার নেই বললেই চলে। রঞ্জন বাসের দরজায় ঝুলে রইলো। ওদের তিনজনকে ঘিরে দাঁড়াল অন্তু আর নাদিম। কিছুক্ষণের মাঝেই আড্ডায় মজে উঠল পাঁচজন। একপর্যায়ে গিয়ে পেছন থেকে মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক বাজে ভাবে স্পর্শ করল ছোঁয়ার স্পর্শকাতর স্থানে। ছোঁয়া অসহায় চোখে বন্ধুদের দিকে তাকাল। নাদিমের দিকে কিছুটা সরে আসার চেষ্টা করল। অন্তু নম্রতাকে ইশারা করতেই ছোঁয়ার জায়গায় গিয়ে দাঁড়াল নম্রতা। বাসে ঝাঁকি লাগতেই পেছনের দিকে হেলে পড়ে দানবীয় ভাবে লোকটির পা মাড়িয়ে দিল নম্রতা। পেন্সিল হিলের ভয়ানক আঘাতে আর্তনাদ করে উঠল লোকটি। দাঁত মুখ খিঁচিয়ে কিছু বলবে তার আগেই অন্তু বলল,
‘ আহা চাচা। বাসে উঠলে একটু আধটু ধাক্কা খেতেই হয়। ওমন চেঁচামেচি করলে তো চলে না।’
কিছুক্ষণ পর আবারও একই কাজ করল নম্রতা। লোকটি প্রতিবাদ করতেই নাদিম খেঁকিয়ে উঠে বলল,
‘ ফাইজলামি পাইছেন মিয়া? ধাক্কাধাক্কি সহ্য না হলে নাইমা যান। কেউ ইচ্ছে করে ধাক্কা দিব ক্যান আপনারে? এতো ফেচফেচ করতাছেন ক্যান?’
লোকটি আর কথা বাড়াল না। বন্ধুরা আবারও আড্ডায় মাতলো। দুপুরের শেষ ভাগে কেরানীগঞ্জ গিয়ে পৌঁছাল তারা। সেখান থেকে পুরাতন ঢাকা। দুপুর আড়াইটার দিকে পুরাতন ঢাকার একটা রেস্টুরেন্টে পেট পুড়ে খাবার খেলো সবাই। ছোঁয়া উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
‘ হেই গাইস? আই থিংক, আই এম ইঞ্জয়িং দিস ট্যুর!’
নাদিম বিরক্ত কন্ঠে বলল,
‘ আবার ইংরেজি মারাস। বাংলায় কথা কইতে পারিস না তুই? ইংরেজের বাচ্চা!’
নীরা হাই তুলতে তুলতে বলল,
‘ ঝগড়া রাখ। আমরা কী কক্সবাজার যাচ্ছি? নাকি যাচ্ছি না? এতো ঢং করে এখানে আসারই বা কারণ কী?’
রঞ্জন টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল,
‘ যাচ্ছি।’
‘ তাহলে গাড়ি ছাড়লাম কেন?’
অন্তু দাঁত কেলিয়ে বলল,
‘ ওইটা ট্যুর ছিল? ওই ড্রাইভারকে সাথে নিলে ট্যুরের বারোটা বাজত। আমরা কক্সবাজারে যাচ্ছি লঞ্চে করে। ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। পাঁচটায় লঞ্চ।’
ছোঁয়া আৎকে উঠে বলল,
‘ লঞ্চ! আমি কখনো লঞ্চে উঠি নি। লঞ্চ যদি ডুবে যায়? আর লঞ্চে করে কক্সবাজারে কিভাবে?’
নাদিম বিরক্ত হয়ে বলল,
‘ সবাই যেভাবে যায় সেভাবে।’
নম্রতা খাবার চিবোতে চিবোতে বলল,
‘ যেতেই তো দু’দিন লাগবে। কক্সবাজার থাকব কখন?’
রঞ্জন ঠোঁট উল্টে বলল,
‘ তাই কী? কক্সবাজার তো বহুত গিয়েছি। এবার না হয় আশেপাশের জায়গাগুলোতেই বেশি থাকলাম। সদরঘাট থেকে হালুয়া ঘাট। ওখান থেকে দশটার লঞ্চে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম একরাত থেকে পরের দিন কুতুবদিয়া হয়ে কক্সবাজার। দুইদিনে যাব। একদিন কক্সবাজারে থাকব। চতুর্থদিন সড়কপথে ফিরে আসব।’
ছোঁয়া হা-হুতাশ করে বলল,
‘ মাম্মা কে কী বলব? মাম্মা আমাকে মেরে ফেলবে।’
নাদিম বিরবির করে বলল,
‘ শুরু হইছে ম্যা ম্যা।’
সারাদিন পুরাতন ঢাকার এখানে সেখানে ঘুরে, আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দিল নম্রতারা। সন্ধ্যা পাঁচটায় সদরঘাটে পৌঁছে নির্দিষ্ট লঞ্চে উঠল তারা। রঞ্জন দুটো কেবিন বুক করেছে। একটা মেয়েদের জন্য। অন্যটি ছেলেদের জন্য। লঞ্চ সদরঘাট ছাড়লো সন্ধ্যা ছয়টার দিকে। ধীরে ধীরে দৃষ্টি সীমার আড়ালে পড়ল শহরের দূষিত বাতাস। সবাই যার যার মতো ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় এসে বসলো রাত আটটার দিকে। কিছুক্ষণ আড্ডা চলার পর হঠাৎই মন খারাপ হয়ে গেল নম্রতার। বন্ধুদের রেখে ডায়েরি হাতে ধীরে ধীরে নিচে নেমে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়াল সে। রাতের আকাশে মস্ত এক চাঁদ। দিগন্ত বিস্তৃত জলধারায় চকচকে জ্যোৎস্নার আলো। গা কাঁপানো তীব্র বাতাস। নম্রতা বুক ভরে শ্বাস নিলো। টলমলে অনুভূতি নিয়ে ডায়েরিটা খুলে পড়ার চেষ্টা করল। বুক ভরে চিঠির গায়ে থাকা সুঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করল। নম্রতাদের প্রেমের এক পর্যায়ে ‘সে’ নামক ব্যক্তিটি চিঠির গায়ে সুন্দর এক সুগন্ধি ব্যবহার করত। চিঠি খুলতেই অসাধারণ এক সুগন্ধে বুক ভরে আসত নম্রতার। নম্রতা জিগ্যেস করায় বলেছিল,
‘ তুমি যে চিঠিগুলো অসংখ্যবার পড়ো ,জানি। চিঠিগুলো যখন খুলবে। এই গন্ধটা যখন নাকে লাগবে। ঠিক তখনই, আমার খুব কাছে থাকার অনুভূতি হবে তোমার। তাছাড়া! নীল চিরকুটের সুগন্ধ কী সাধারণ কাগজের মতো সাধারণ হলে চলে? শ্যামলতাই বা বারবার কাগজের এই বিশ্রী গন্ধটা কেন নিবে? শ্যামলতা মানেই তো হাজারও বেলীর সৌরভ!’
নম্রতার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। চোখদুটো বোজে নিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিলো। ঠিক তখনই পেছন থেকে প্রচন্ড ধাক্কায় সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল নম্রতা। এক হাতে রেলিং আঁকড়ে ধরে নিজেকে রক্ষা করলেও হাতের ডায়েরিটা গিয়ে পড়ল টলমলে নদীটিতে। নম্রতা আৎকে উঠলো। সারা শরীর কেঁপে উঠল। ডায়েরিটাকে ধীরে ধীরে তলিয়ে যেতে দেখে মাথা ঘুরে উঠল তার। রেলিং-এর ওপর ঝুঁকে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠল,
‘ আমার ডায়েরি। নীরু! নীরু! আমার ডায়েরি। রঞ্জন!’
নম্রতাকে রেলিং-এর ঝুঁকে পড়তে দেখে পেছন থেকে শক্ত একটি হাত আকঁড়ে ধরল নম্রতার ডান হাত। বিস্ময় নিয়ে বলল,
‘ আরে! করছেন কী? পড়ে যাবেন তো!’
#চলবে….
[ কী যে লিখছি। নিজেও জানি না। রি-চেইকও করা হয় না।]
In the past few years, many different drugs have been evaluated as systemic chemotherapy agents for the treatment of HCC, such as Tamoxifen, Doxorubicin and Cisplatin, but they have limited efficacy due to side effect and chemo resistance 7 can lasix lower blood pressure In effect, proviron acts as a magnifier of the anabolic effects of steroid hormones