#লেখনীতে #রেহানা_পুতুল
তারা বেরিয়ে গেলে লতা অতি সন্তপর্ণে তাদের পিছু নজর রাখল। দেখল তারা তিনজন গেল ঠিক সেদিকটায়। যেদিকে রইস থাকে। লতা মনে মনে বলল,
কোন সাপুড়িয়া যতই দক্ষ হোক না কেন,
তবুও তার পতন ঘটে সেই ধরতে যাওয়া সাপের বিষাক্ত ছোবলেই।
সেদিন সন্ধ্যায় আরমান ও নিকুয়াল চলে গেল জিপে করেই। সজীব রয়ে গেল। যাওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে আরমান সজীবের একটু আড়ালেই লতার গালে চুমু খেয়ে বসল। লতা কষে এক চড় বসিয়ে দিল আরমানের গালে। আরমান তাজ্জব চোখে চেয়ে রইল লতার দিকে। যেন তার চোখের সামনেই কোন অলৌকিক ঘটনা ঘটে গেল মাত্র।
সে সজীবকে তেজী চোখে জিজ্ঞেস করল,
এটা কি হলো সজীব?
সজীব আরমানকে নিয়ে ঘরের বাইরে গিয়ে দাঁড়াল।বলল,
ও আমার বিয়ে করা স্ত্রী। ঢাকার লুইসা,চেরি নয়।
আরমান সো হোয়াট বলে বলল,
শালা রাবিশ! তাহলে আগেই বললিনা কেন তোর বউ পূতঃপবিত্র গঙ্গার জল। তাকে ধরা ছোঁয়া যাবেনা।
তুই যে আমার বিয়ে করা স্ত্রীর দিকেও বাজে চোখে চাইবি। তা কে জানত? কই নিকুয়াল তো কিছুই করলনা। তাহলে তুই…
সজীবের মুখের বাক্য শেষ না হতেই আরমান জিপের ভিতরে ঢুকে পড়ল। সাইঁ সাইঁ করে জীপ গতিতে মূল সড়কে উঠে গেল। সজীব রুমে এসে লতাকে বিনীত স্বরে সর্যি বলল।
লতা ভ্রু কুঁচকে বিদ্রুপের চোখে চাইল সজীবের দিকে। বিরক্তিকর সুরে বলল,
জাস্ট আই হেইট ইউ নওশাদ শিকদার ওরফে মিস্টার সজীব।
সজীব আপ্লুত নয়নে চাইল লতার দিকে।কিছু বলতে গেলেই,লতা থামিয়ে দিল হাত উঁচিয়ে, নো মোর টক। সজীব হাত বাড়িয়ে লতাকে ছুঁতে গেলেই, লতা তিনহাত ছিটকে সরে গেল। রাতে দুজন আলাদা বিছানায় ঘুমাল।
সকালে সজীব লতাকে আবার ও কিছু বলে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল।
লতা বিরস কন্ঠে বলল,
আপনি যে একজন ক্যারেক্টারলেস পারসন। এটা অন্তত আমার কাছে দিনের আলোর মতই ক্লিয়ার এখন। ঢাকায় হয়তো আপনারা একজন আরেকজনের গার্লফ্রেন্ডকে ইউজ করেন পুরোনো গামছার মতই যখন তখন।
স্টপ ইট লতা! জাস্ট স্টপ ইট! তাহলে নিকুয়াল কেন এমন করলনা তোমার সাথে। আরমান করল কেন? সে কি তোমার প্রেমিক ছিল? আমারতো মনে হয় তাই।
লতার মগজ টগবগ করে ফুটতে শুরু করল। ক্রোধে,ঘৃণায়, ফেটে যাচ্ছে সে। দপ করে বসে পড়ল দাঁড়ানো থেকে।
সজীব লতার মাতায় হাত রেখে বলল,
ইচ্ছে করে হার্ট করার করার জন্য এগেইন সরি। আমাদের বন্ধু মহলে সবচেয়ে বাজে স্বভাবের হলো আরমান। ব্যবসায়ীক কারণে ধরা আছি তার কাছে। চাইলেই বিচ্ছিন্ন হওয়া যায়না হুট করেই। তুমি ঢাকায় গেলেই দেখবে আমার সবকিছু। তখন তোমার ধারণাই পাল্টে যাবে।
আচ্ছা! তুমি কি আরমানকে চিনতে আগে থেকে? এটা কেন বলছি ও যতই খারাপ হোক, পূর্ব পরিচিত না হলে আরমান এমনটা করার কথা নয়।
লতা তখন আরমানের বিষয়টা খুলে বলল,
উনি আমার খালার শশুর বাড়ির। সেই সুবাদে আমাকে চিনেছে। আমাকে প্রোপোজাল করেছে বারবার। রিফিউজড় করেছি। বিয়েও করতে চেয়েছে। আমি মানা করেছি। তারপর খালার বাড়িতে একদিন একা পেয়ে জোর জবরদস্তি শুরু করে গায়ে হাত দিয়ে। সেদিন ও জুতা দিয়ে মেরেছি। এরপর আর খালার বাড়িতে যাইনি। তাই এখানে তার বন্ধুর স্ত্রী রূপে আমাকে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছে। আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি। পারলে আজ আমি ওকে আরো বড় কোন শাস্তি দিতাম। তার একটা অর্গান কেটে ফেলতাম।
সজীব শিউরে উঠল লতার কোমল মুখে এত নিষ্ঠুর বাক্যটা শ্রবণ হতেই। বলল,তোমার সাহসের তারিফ করতেই হয়। তুমি যেই সেই লতা নও। তুমি হলে বনের বিষাক্ত লতা। কেউ কোন ক্ষতি করতে চাইলেই তাকে পেঁচিয়ে মারবে।
তাহলে টের পেয়েছেন? ঠোঁট কাত করে মেকি হাসি দিয়ে বলল লতা।
ঢের পেয়েছি আরমানের গালে চড় পড়ার সাথে সাথেই। লতা ও সজীবের উপস্থিত দ্বন্দ্বের অবসান হলো একরকম।
তার পরেরদিন লতা প্রভাতকালেই বিছানা ছেড়ে উঠে গেল। বাড়ির পিছন দিকে বেশ নিরিবিলি দেখা যাচ্ছে। সেদিকে দুলে দুলে এগোতে লাগল। দেখল আলতাফ মিয়াও হাঁটছে সেই পথ ধরে। আরেহ দাদাজান আপনি? মধুর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল লতা।
নাতবউ তুমি এই সাতসকালে। সজীব নেই?
ওহ ঘুমাচ্ছে দাদাজান। আপনি কি রোজ এই সময় হাঁটাহাঁটি করেন নাকি?
হ্যাঁ। ভোরের শুদ্ধ বাতাসে বাগানে গাছ গাছালীর মাঝে বেড়াতে পছন্দ করি আমি সেই বহুদিন ধরেই।
বাহ!এটা খুব ভালো অভ্যাস করেছেন দাদাজান। এখন বুঝতে পারলাম কেন আপনি এত সুস্থ, সুন্দর, সতেজ রয়েছেন।
আলতাফ মিয়া বলল,
ধরতে পারার জন্য ধন্যবাদ। তোমাকে আমিই পছন্দ করেছি কিন্তু। এইটা সজীব বলছে?
হুম বলছে দাদাজান। আলতাফ মিয়া লতার চুলের দিকে খেয়াল করে বললেন,
গোসলের পর চুলের পানি ভালো করে মোছা হয়নি। রোজ রোজ যদি এভাবে পানি থেকে যায় চুলে তাহলে ঠান্ডা লাগবে যে।
লতা লজ্জায় মাথা নামিয়ে পা ঘুরিয়ে চলে এলো আলতাফ মিয়ার সামনে থেকে।
সেদিন দুপুরেই লতাকে ভীষণভাবে চমকে দিল সজীব। পরিচিতি রাজমিস্ত্রীকে খবর দিল। বাড়ির নাম ফলক বসাল দামী নীল পাথরকে খোদাই করে। লতার চোখ বেঁধে বাড়ির সামনে নিয়ে গেল। চোখ খুলে গেইটের উপরে তাকাতে বলল। লতা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চেয়ে রইল সেদিকে। দৃষ্টিনন্দন ও রাজকীয় লাগছে নাম ফলকটা। #নীল_বুনোলতা। লতা মেলানো ঠোঁট ফাঁক করে আবেগীয় কন্ঠে বলল,
আমাকে উদ্দেশ্য করে এই নেইম প্লেট?
হ্যাঁ। নয়তো কি? আমার কি আর কয়টা বউ আছে নাকি?
কি জানি হয়তো থাকতেও পারে।
সেদিন মেরে ফেলো নিজ হাতে।
হঠাৎ আপনাদের বাড়ির নাম আমার নামে দেওয়ার কারণ?
আমরা যুতসই কোন নাম পাচ্ছিলাম না। কেন জানি আজ মনে হলো #নীল_বুনোলতা নামটা সুন্দর। সবুজে ঘেরা এই বাড়ির নাম এটাই হওয়া উচিত।
নীল বুনোলতা কেন তাহলে?
এটা ব্যাখ্যা করব পরে তোমাকে। আপাতত নয়।
আচ্ছা বলে লতা কৃতজ্ঞতার হাসি হাসল। তার মনটা সজীবের উপর আদ্র হয়ে উঠল।যত যাই হোক। মুহূর্তের জন্য ভাবল, উনি আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।
তার দুইদিন পর সজীব ঢাকায় চলে গেল। লতাকে অনেক জোর করলেও সে গেলনা। জানাল পরে যাবে। এখন যেতে ইচ্ছে করছেনা।
বিকেলে চুমকি এসে লতাকে বলল,
ভাবিজান দাদার রুমে আপনারে ডাকতাছে।
লতা তখনি চলে গেল আলতাফ মিয়ার ঘরে৷ দাদাজান ডাকছেন?
তোমাকেতো ভাগেই পাইনা আমি। কোথায় একটু পাশে বসবা। গল্প গুজব করবা। শুধু এক জামাইর দিগে খেয়াল রাখলে হবে? বুড়া জামাইর খবর রাখন দরকার না?
নাহ দাদাজান। ভুল বুঝবেন না। আমি আপনাকেও পছন্দ করি।
তাইলে আমি কিছু চাইলে ফিরায়া দিবানাতো?
আমার সাধ্যের ভিতরে হলে অবশ্যই দিব।
তোমার সাধ্যের ভিতরেই চাইব। আমি এত কঠিন মানুষ নই। যে কারো সাধ্যের বাইরে কিছু চাইব।
বলেন শুনি কি আবদার আপনার?
সেটা পরে বলি। তার আগে আমি তোমাকে একটা জিনিস উপহার দিব। আমার বহুদিনের খায়েশ ছিল সজীবরে আমার পছন্দ করা মেয়েকে সাদি করামু। এবং তার বউরে আমি একটা বড় উপহার দিমু।
লতা অবাক হলনা। কিন্তু কৌতুহলবোধ করল মনে মনে। উৎসুক চোখে চাইল আলতাফ মিয়ার দিকে।
তোমার নামে আমি বড় ধানি জমি লেইখা দিমু। স্বামীর বাড়িতে তোমার কর্তৃত্ব ও অধিকার মজবুত হইব। রানীর মত সবার উপর হুকুম চালাইতে পারবা।
এত লোভনীয় প্রস্তাবে লতার মনে বিশাল খটকা লাগল।
আমার ওসব চাইনা দাদা। আপনার নাতিই আমার সব।
হইছে থাক। পান দাও বানায়া। তোমার কচি নরম হাতের পান খাইতে ইচ্ছে হইলো। তুমিও চাইলে আমার সঙ্গে বইসা খাইতে পারো মসলা পান। খাওয়ার অভ্যাস আছে নাকি?
তেমন না। খুব সামান্য। আমার দাদীর সাথে বসে মাঝে সাঝে অল্পস্বল্প খেতাম।
যেহেতু মসলা পান বলছেন। তাহলে এখন খাব। মসলা পানের মজাই আলাদা।
খাও। দেইখবা পুরা ঠোঁট লাল হইয়া যাইব পানের রসে।
লতা নিজেও একটা পান বানিয়ে মুখে পুরে দিল। একটা আলতাফ মিয়াকে দিল।
অল্প সময়ের ব্যবধানে লতাকে পানের নেশা ধরে ফেলল। তার চোখ দুটো ঢুলু ঢুলু হয়ে আসছে। সে বলল দাদাজান আমার রুমে যাই। একটু শোয়া দরকার। কেমন যেমন মাথাটা ঝিমঝিম করছে আমার। বলেই লতা উঠে দরজার কাছে গেল।
অমনি পিছন থেকে আলতাফ মিয়া লতাকে ধরে বললেন,
পইড়া যাইতেছ। আমার এটা কি বিছানা নয়। এখানেই শুইয়া থাক। তোমার বিছানার মতই নরম আছে। মজা পাইবা শুইয়া।
লতার জ্ঞানশক্তি লোপ পেল। সে কিছুই বলতে পারছেনা। আলতাফ মিয়া লতাকে ধরে এনে বিছানার উপরে চিৎ করে শুইয়ে দিল। রুমের দরজা বন্ধ করে দিল। লতাকে নিজের গায়ের উপর লম্বালম্বি করে শুইয়ে দিল। বিশ্রীভাবে লতার শরীরে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে হাতের সুখ করে নিতে লাগল। এর বেশী আগানোর আগেই, লতার হুঁশ ফিরে এলো।
ভান করে শান্ত কন্ঠে বলল। এইজন্যই জমি দিতে চেয়েছেন? ছিহঃ!
রাগ করো কেন লতা। তোমাকে একটু আদর করলাম। খারাপ কি করছি। নাত বউ হিসেবে এটা আমি করতে পারিনা?
লতা রুম থেকে বের হয়ে গেল। বিড়বিড় করে উচ্চারণ করল,
তার মানে চুমকির রুমে রাতে তুই যাস।
ধৈর্যশীলা নারী যখন ভয়ংকর হয়ে উঠে,তখন পৃথিবীর কোন শক্তিই তাকে দমাতে পারেনা। তোদের যার যত অনাচার পাপাচার রয়েছে। সব শেষ হবে এবার।
চলবে — ৭
জনরা #থ্রিলার (mystery)