নীলার শাশুড়ী পর্ব ২
নীলা একটু ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করল হাফসা বেগম কি লিখছে । নীলা বলল , ” খালাম্মা কি লিখছেন এত আর কি বই পড়ছেন ?” হাফসা বেগম হেসে বললেন ” সহি বুখারী “। নীলার বেশ কৌতুহল হল কি লিখছেন তিনি আর কেনই বা , এটি জানতে । হাফসা বেগম বই বন্ধ করে বললেন, এর পেছনে নাতিদীর্ঘ এটি ইতিহাস আছে । নীলার কি সময় বা ধৈর্য হবে তা শুনবার ! নীলার দারুন কৌতুহল হচ্ছে , তাই বলল সে শুনতে চায় যদি হাফসা বেগমের বলতে কোন আপত্তি না থাকলে।
হাফসা বেগম শুরু করলেন , চার বছর আগে বেশ অল্প বয়সিদের এক গ্রুপের সাথে তিনি আর তার স্বামী হজে গিয়েছিলেন । ঐ গ্রুপের বেশীর ভাগ ছেলে মেয়েরাই বয়সে তরুন আর একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। ঐ গ্রুপে একজন বেশ ধর্ম সম্পর্কে অনেক জ্ঞান রাখা ব্যক্তি ছিলেন তিনি হজে যাবার আগে বেশ কিছু শিক্ষনীয় ক্লাস নেন সবার জন্য , সেখানে তিনি যা শিখেছেন তা আগে তেমন করে কেউ কখনো বলে নি । যেমন হজে গিয়ে অন্যের কষ্টের কারন না হওয়া বেশী জরুরী , এটি হজ কবুল হবার অন্যতম কারন , উদারন দিতে গিয়ে বলেন হোটেলের রুমে চারজনের যদি থাকার বন্দ্যোবস্ত হয় তবে যে সকলকে আগে তাদের পছন্দের বিছানা নিতে দিয়ে নিজে পরে নিবে সে উত্তম । জমজমের পানি পান করতে গিয়ে, যার জন্য লাইনে অপেক্ষা করা কষ্টকর তাকে এগিয়ে দেয়া যায় তবে সে হবে উত্তম ।
এই ভাবে মানুষের হক নষ্ট না করে হজ করতে পারলেই সেই হজ কবুল হবার সম্ভাবনা বেশী। ঐ ব্যক্তি আরও বলেন হজ্জ থেকেই ফিরে এসে তারা সবই যেন হাদিস পড়ে তাদের সামাজিক পরিবারিক জীবনে তার প্রতিফল ঘটান তবেই না সঠিক ভাবে ধর্ম পালন করা হবে আর একজন সত্যিকারের ধার্মিক ব্যক্তি একজন মানবিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তিও বটে! সেই থেকে হাফসা বেগম হাদিসের বই প্রতি রাতে পরে পরবর্তী দিনে কয়টা কাজের বাস্তবায়ন ঘটাবেন তাই লিখে রাখেন ।
গত চারবছর ধরে একদিনও এর ব্যতিক্রম হয় নি। নীলা বেশ চমৎকৃত হচ্ছিল হাফসা বেগমের কথা শুনে । আগ্রহ নিয়ে বলল কি কি হাদিসের বাস্তবায়ন তিনি তার জীবনে ঘটিয়েছেন । হাফসা বেগম বললেন , অনেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছে কিন্তু সে অসৎ পথে উপার্জন করছে, অন্যের হক নষ্ট করছে , মজলুমের প্রতি অত্যাচার করছে , ধর্মীয় নীতিরীতি যা অধিক মানবিক তা না পালন করে সামাজিক অমানবিক রীতি নীতি গুলো পালন করছে ।
হাফসা বেগম বলতে লাগলেন , হাদিস পড়েই তিনি জেনেছেন গিবত বা অন্যের সমালোচনা করা কতবড় গোনাহ , নিজের মৃত ভাইয়ের মাংস খাবার মত হল গিবত , অথচ এ কাজটি অবলিলায় করছে সবাই , তিনি অনেক বছর ধরেই এই অভ্যাস করেছেন অন্যকে নিয়ে না কথা বলার এতে গিবতের সম্ভাবনা কমে যায় , আবার হাদিসে এসেছে যার ভেতর সর্ষে পরিমান অহংকার থাকবে সে মৃত্যুর পর জান্নাত পাবে না, তাই তিনি নিজে তার বাসার কাজের মহিলা বাসায় এলে প্রতিদিন তাকে সালাম দেন । প্রতিবেশীর প্রতি হক এর ব্যাপারে এতটাই বলা হয়েছে যে তিনি অবাক হন এ ভেবে এ দায়িত্ব পালন করলেই তো আমাদের সামাজিক জীবন অনেক সুন্দর হয়ে যায় !
এখন তো ঢাকায় পাশের ফ্লাটে কে থাকে তা অনেকে জানে না , এতে করে সামাজিক সৌহার্দপূ্র্ন সম্পর্ক যেমন আর গড়ে উঠছে না তেমনি নানা অপরাধ ,সামাজিক মূল্যবোধের ক্ষয় হচ্ছে । তিনি বললেন , যেদিন থেকে তিনি ঐ হাদিস টা জেনেছেন যে রাধুনীকে তার রান্নায় একটু ঝোলের পরিমান বাড়িয়ে দিতে বলা হয়েছে যেন সে তার প্রতিবেশীর বাসায় খাবার পাঠাতে পারে ! আবার আরেকটাতে বলা হয়েছে কারও প্রতিবেশী যদি তাকে ছাগলের খুঁড় ও পাঠায় তাতেও যেন তা নিয়ে কেউ অসন্তুষ্টি প্রকাশ না করে বা উপহাস না করে। কি সুন্দর দুটি ঘটনার মেলবন্ধন ! তিনি বললেন , এখন প্রায় যখনি তার বাসায় ভালমন্দ রান্না হয় তিনি তার প্রতিবেশী মানে ফ্লাটের অন্যান্য অন্যান্য বাসিন্দাদের বাসায় পাঠাতে ভুল করেন না ।
তার ঠিক বিপরীত দিকে ফ্লাটে থাকেন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী সচিব । ভদ্রলোক ও তার পরিবার নিষ্ঠাবান হিন্দু ব্রাক্ষন । তারা স্বপাকে খান । তাই অনেক চিন্তা করে তিনি মাঝে মাঝে ফলমূল কিনে তাদের বাড়ীতে পাঠান । যাতে তারা বিব্রত না হন , আর তিনি দেখেছেন এতে তারা বেশ খুশী মনেই তার উপহার গ্রহন করছেন । এই রীতি চালু করার পর থেকে পুরো বিল্ডিংএর সবার সাথে তার একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে ! এমনকি বাসার কেয়ারটেকার ও দারোয়ানদেরকেও তিনি নিয়ম করে খাবার পাঠান ।
নীলা যত শুনছিল ততই চমকিত হচ্ছিল এই বৃদ্ধার চিন্তা চেতনা দেখে , আর নিজেকে পরিবর্তন করবার চেষ্টা দেখে! মুসলিম প্রধান দেশে নীলা তার চারপাশে নামাজ রোজা পালনকারী বহু মানুষ দেখেছে , অনেকের ব্যবহার ধর্মের নির্দেশিত নিয়মের সাথে বডড সাংঘর্ষিক! আজ হাফসা বেগমের সাথে পরিচয় না হলে জানতেই না কেউ এভাবেও চিন্তা করে আবার বাস্তবায়ন করে! খুব অল্প সময়ে এই বৃদ্ধার প্রতি এক শ্রদ্ধা মিশ্রিত ভালবাসা জন্মে গেল নীলার মনে।
ওরা দুজনে পড়া শেষ করে ঘুমোতে গেল ।
ফজরের নামাজ পড়তে নীলা আর হাফসা বেগম যখন উঠেছে তখনি হাফসা বেগমের ফোনে রিং বেজে উঠল । ড্রাইভার আহমেদ কল করেছে যে সে সদরঘাটে লঞ্চঘাটেই এসে বসে আছে ,নামার সময় কল দিলে আহমেদ এসে হাফসা বেগমকে নামিয়ে নিয়ে যাবে।
আজ লঞ্চ বেশ তাড়াতাড়ি এসেছে , পৌনে চারটার দিকেই সদরঘাটে নোঙর করে ফেলেছে সুন্দরবন -৮ নামের এই বিশাল জলযানটি । নীলারা নামাজ শেষ করে সব ব্যাগ লাগেজ গুছিয়ে রুমের চাবি বুঝিয়ে দিয়ে ঘাটে নেমে এলো । হাফসা বেগম নীলাকে কিছুতেই ছাড়তে চাইলেন না বললেন তার সাথে তার বাসায় গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে সকালের নাস্তা করে একটু জিরিয়ে নিতে, তারপর তার ড্রাইভার আহমেদ তাকে ঢাকা মেডিকেলে নামিয়ে দিয়ে যাবে । কিন্তু নীলার জরুরী ক্লাস থাকায় নীলা কথা দিল আসছে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এ অবশ্যই হাফসা বেগমের সাথে দেখা করতে যাবে । কিন্তু হাফসা বেগম ছাড়লেন না বললেন নীলাকে মেডিকেল কলেজে নামিয়ে তারপর তিনি যাবেন । নীলা এবার আর না করতে পারলো না । হাফসা বেগম নীলাকে মেডিকেল কলেজে নামিয়ে বাসায় চলে এলেন ।
নীলা কোনমতে হস্টেলে গিয়ে ব্যাগ রেখে , দুটো নাকে মুখে খেয়ে ক্লাসে ছুটল ।
চোখের পলকে সপ্তাহটি চলে গেল । শুক্রবার সকাল সকাল নীলা গোসল করে হাফসা বেগমের পরীবাগের বাসায় রওনা দিল । অনেক চিন্তা করে একগুচ্ছ সাদা গোলাপ নিয়ে নিল হাফসা বেগমের জন্য । ঢাকা মেডিকেল থেকে পরিবাগের দুরত্ব বেশী নয় আর ছুটির দিন হওয়াতে খুব দ্রুত জ্যামের ঝামেলা ছাড়া পৌছে গেল নীলা ।
নীলাকে দেখে হাফসা বেগম এত খুশী হলেন যে মনে হল তারা দুজন পরমাত্মীয় । হাফসা বেগমের স্বামী ইসহাক ইসলাম একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা । তার দুই ছেলে বড়টি অস্ট্রেলিয়াতে ইঞ্জিনিয়ারিং তয় বর্ষে পড়ছে আর ছোটটি খুলনা মেডিকেলে প্রথম বর্ষে পড়ছে । তাই বাসায় তারা দুজন থাকেন বেশীর ভাগ সময় । সারাটা দিন হাফসা বেগমের সাথে নীলার আনন্দে কেটে গেল। ঢাকায় নীলার তেমন কোন আত্মীয় না থাকায় ছোটখাটো ছুটিতে বেশীর ভাগ সময় হলেই থাকত নীলা , এখন সেই সব ছুটিতে মাঝে মাঝেই হাফসা বেগমের কাছে চলে যায় নীলা । হাফসা বেগমের সান্নিধ্যে নীলা এক অপার প্রশান্তি পায় । সত্যিকারের ধর্মচর্চা মানুষকে কতটা মানবিক করতে পারে হাফসা বেগমই তার উদাহরণ ।
দেখতে দেখতে নীলার পড়াশোনার পাঠ শেষ হয়ে গেল । ওর বাড়ী থেকে ওর বিয়ের জন্য বেশ তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। এরই মাঝে নীলার মামার এক কলিগের ছেলের সাথে নীলার বিয়ে পাকাপাকি হয়ে গেল । ছেলেও ডাক্তার । বিসিএস দিয়ে এখন বরিশালের উজিরপুর থানা হাসপাতালে কর্মরত । নীলা হাফসা বেগমকে আর তার স্বামী কে নিজের খালাখালুর মতোই জ্ঞান করে আর নীলার বাবামাও হাফসাবেগমকে নীলার বিয়েতে উপস্হিত থাকবার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন। হাফসাবেগমেরও খুব ইচ্ছে এ বিয়েতে উপস্হিত থাকবার । এ ক’বছরে নীলা তার নিজের মেয়ের মতোই হয়ে গেছে। নীলা তার বডড স্নেহের !
দেখতে দেখতে নীলার বিয়ের সময় এগিয়ে এলো । হাফসা বেগম আর তার স্বামী ইসহাক ইসলামকে নীলার বাবামা কেবল বিয়েতে এসে নিমন্ত্রণ রক্ষা করলেই হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন , একটু আগেভাগে এসে পুরোটা সময়ই তাদের সাথে থাকতে বলেছেন। তাই তারা নীলার বিয়ের দুদিন আগেই বরিশালের পথে রওনা দিলেন ।
হাফসা বেগম খুব শখ করে তার আদরের নীলার জন্য সোনার সুন্দর একটি মটরদানা হার গড়িয়ে নিয়েছেন । বেশ সাবেকী আমলের নকশা । নীলা একবার তাকে কথায় কথায় বলেছিল ওর সাবেকী আমলের গয়না , বাড়ীঘর , আসবাবপত্র বেশ লাগে। তাই তার মনে হলো এই হারটি নীলার পছন্দ হবে। বরিশাল পৌছে তিনি তার বোনের বাসায় উঠলেন । ভাবলেন বিয়ে বাড়ীতে কত মানুষ থাকবে , যদিও নীলার বাবা মা বারবার বলে দিয়েছেন যেন তারা নীলাদের বাসার আতিথ্য গ্রহন করেন । সুন্দর ভাবে নীলার বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল ।
বিয়ের দিন নীলাকে পরির মতো সুন্দর লাগছিল । হাফসা বেগম মন থেকে দোয়া করলেন নীলার সুখময় দাম্পত্য জীবনের জন্য । ওয়ালিমার পর দিন নীলা ও নীলার বরের নীলাদের বাসায় আসবার কথা । নীলার মা হাফসা বেগম আর তার বোনকেও ঐদিন তাদের বাসায় নিমন্ত্রন করলেন । হাফসা বেগম আর তার বোন নীলাদের বাসায় গিয়ে দেখেন এখনো নীলা ও তার বর শশুড়াড়ী থেকে আসে নি। নীলার মা জানালো ওর শ্বশুড়বাড়ীর দিকের কিছু আত্মীয় স্বজন আজই বরিশাল ছেড়ে যার যার কর্মস্থলে চলে যাবে বলে একটু দেরী হচছে ।
নীলাদের বাসার বেশ হৈচৈ পড়ে গিয়েছে , নীলা বাসায় নেই মাত্র কটা দিন। এমন তো নয় এর আগেও নীলা দিনের পর দিন হস্টেলে থেকেছে কিন্তু এবার যেন ভিন্ন দৃশ্যপট । নীলা এই শহরেই আছে কিন্তু নীলাদের বাসা কেবল নীলার অভাবে কেবল শূন্য শূন্য লাগছে। নীলার বাবামায়ের একমাত্র সন্তান এই নীলা তাই ওর আর ওর বরের আসার খুশীতে আবার বাসাটা উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে। নীলাদের দেরী দেখে নীলার মা বেশ ক’বার নীলাকে কল করেও কোন উত্তর না পেয়ে নীলার বর আদনানকে কল করেও পেলেন না ,সবাই বলল ব্যস্ত তাই কল ধরতে পারছে না।
দুপুর ২:৩০ বেজে গেলে নীলার বাবা নীলার শশুড়কে কল দিলেন নীলার মায়ের পীড়াপিড়ীতে। নীলার শশুড় জানালেন নীলা ও আদনান বেশ আগেই বের হয়েছে । আদনানের মোটরসাইকেলেই রওনা দিয়েছে ওরা । দু’বাসার দূরত্ব তো বেশী নয় তাই এতোক্ষনে পৌছে যাবার কথা। নীলার মা জানতে চাইলেন কি বললেন নীলার শশুড়, নীলার বাবা সংক্ষেপে জানালেন নীলারা রওনা দিয়েছে । পুরো ভেঙ্গে বললে হয়ত নীলার মা চিন্তা করবে তাই আর সবটুকু বললেন না। এমন সময় নীলার বাবার মোবাইলে কল আসে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ।
তিনি রিসিভ করতেই অপর পক্ষ থেকে জানানো হয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থানার পুলিশ কল করেছে , তাকে এখনি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হবে। নীলার বাবা আবদুস সালাম কাউকে কিছু না বলে ইসহাক ইসলাম সাহেবকে জানালেন , তারা দুজন মেডিকেল কলেজের দিকে রওনা হলেন।
রিক্সায় নীলার বাবা আবদুস সালাম সাহেব ঢুকড়ে কেঁদে উঠলেন , ইসহাক সাহেব তাকে শক্ত করে ধরে রাখলেন ।
হাসপাতালে পৌঁছেই ইসহাক সাহেবই পুলিশের নাম্বারে কল দিলেন , জেনে নিলেন কোথায় যেতে হবে। নির্দিষ্ট কক্ষে গিয়ে দেখেন নীলার সারা শরীরে রক্ত আর আদনানকে সাদা কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছে ।আবদুস সালাম মানে নীলার বাবা “মা” বলে ছুটে যেতে চাইলেন নীলার কাছে কিন্তু নার্সরা বাঁধা দিলেন। পুলিশ জানালো আদনানের মোটরবাইক এর সাথে ঢাকাগামী এক বাসের সাথে সংঘর্ষ হলে নীলা ছিঁচকে রাস্তার পাশের জমিতে পরে আর আদনান বাসের চাকার নিচে পরে তৎক্ষনাত মারা যায় যাকে বলে স্পটডেথ।
নীলার ফোনটি আনলক থাকায় তারা আবদুস সালাম সাহেবকে কল দিয়েছেন আউটগোয়িং কললিস্ট দেখে। আদনানের পরিবারকে এখনো জানানো সম্ভব হয় নি কারন ওর ফোনটা ওর পকেটে থাকায় একেবারে ভেঙগে চুড়ে গেছে । ইসহাক সাহেবই আদনানের বাসায় কল দিলেন , কিছুক্ষনের মধ্যে আদনানের মা বাবা আর ওর বোনেরা এসে গেল । তাদের কান্নায় হাসপাতালের বাতাস ভারি হয়ে উঠল। এরই মধ্যে নীলার মা ,হাফসা বেগম , নীলার মামারা হাসপাতালে এসে পৌঁছল ।
নীলার পাঁজরের দুটি হাড় ভেঙগে গেছে, মাথায় বেশ বড় একটা ক্ষত তৈরী হয়েছে, আরও শরীরের নানাস্থান কেটে ছিলে গেছে । মাথায় সেলাই লেগেছে আর তীব্র ব্যাথার জন্য বেদনানাশক দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
নীলার বর আদনানের মা বোনদের নীলার মামীরা , হাফসাবেগম সান্তনা দেবার জন্য কাছে গেলেন । হঠাৎ করে নীলার বড় ননাস বলে উঠল , এই মোটর বাইক তার ভাই বহু বছর ধরে চালাচ্ছে কখনো ছোট খাট কোন দূর্ঘটনাও হয় নি আর আজ নীলা যেদিনই প্রথম আদনানের সাথে মটরসাইকেলে উঠল সেদিনই প্রথম দূর্ঘটনা আর তাতেই মৃত্যু আদনানের । কিন্তু নীলা তো দিব্যি বেঁচে আছে।
কেবল তার ভাইটাই বাঁচতে পারল না। হঠাৎ করে আদনানের মা চিৎকার করে বলে উঠলেন, নীলা অপয়া, অলক্ষ্মী, রাক্ষসী নইলে সে বেঁচে আছে আর তার ছেলেটাকে মেরে ফেলল কিভাবে! তার এমন কথার আক্রমণে নীলার পরিবারের সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেন । নীলার মামী বললেন, ” এ কি বলছেন আপা আপনি ? নীলাও তো মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছে আর জীবন মৃত্যুর মালিক তো আল্লাহ !” নীলার ননাস চিৎকার করে বলে উঠলেন নীলা তো মারা যায় নি দিব্যি বেঁচে আছে । ও অপয়া তাই তার ভাই আজ বেঁচে নেই। এ হেন কথার আক্রমণে আর ঘটনার আকস্মিকতায় নীলার মা জ্ঞান হারালেন ।
চলবে…..