#লেখনিতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘অন্ধকার রজনী,চারপাশে আঁধার ব্যাতিত কিছুই দেখা যাচ্ছে না।দূর থেকে ঝিঁঝি পোকা’র ডাক শোনা যাচ্ছে।
হালকা ভাবে গাড়ির হর্ণের আওয়াজ আসছে কোনো দুরবর্তী জায়গা থেকে।
এই অন্ধকারে কিছু লোক বড় বড় বক্স হাতে নিয়ে ট্রাকের দিকে এগোচ্ছে।উদ্দেশ্য ট্রাক’টা ভর্তি করে এখান থেকে মা’ল নিয়ে কে’টে পরা।
‘হঠাৎ তাদের একজন সঙ্গী’র চিৎকারে হুড়মুড়িয়ে সেদিকে ছুটলো বাকিরা।
লোকটার মাথায় গু’লি করা হয়েছে।সকলেই সতর্ক হয়ে গেলো।আর কয়েকটা বক্স আছে তাহলেই তাদের কাজ শেষ। এই লাস্ট মোমে’ন্টে কে এসব করছে?লোক গুলো বিরক্তি’র সাথে ঘাবড়াচ্ছেও।না জানি কোন আপদ এসে আবার জুটলো এখানে।
‘বার-বার কোথা থেকে গু’লি আসছে কেউ বুঝে উঠার আগেই একের পর এক লা’শ পড়ে যাচ্ছে মাটিতে।তারা গাছের পিছনের জায়গায় গিয়েও নিস্তার পাচ্ছে না।কোথা থেকে গু’লি ধেয়ে এসে একেজনের শরীর ফোঁড়ে ঢুকে যাচ্ছে।
এবার লোক গুলো বেশ ভয় পেয়ে গেলো।কারণ তারা আছেই মাত্র ৪/৫ জন।এখন কি করবে তারা?
‘হ্যাঁ,উপায় পেয়েছে,বস’কে কল করতে হবে এই মুহুর্তে। তিনিই একমাত্র তাদের রক্ষা করতে পারবেন এই বিপদের হাত থেকে।কিন্তু হঠাৎ ঠক’ঠক আওয়াজ পেয়ে সবাই মুখ তুলে সামনে তাকালো।
‘আচমকা তারা কয়েক পা পিছিয়ে গেলো।এই লোকটা কে?ছেলে না মেয়ে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।কালো রঙের হুডি’র সাহায্যে সমস্ত শরীর আবৃত করে রেখেছে।মুখে মাস্ক তার’উপর চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস।মোট কথা কিছুই বুঝতে পারছে না লোক গুলো।
‘তাদের মাঝে একজন ডায়াল লিস্টে গিয়ে কল দিয়েই ফেলবে এই মুহুর্তে লোকটা সাইলেন্সার কৃত গা’ন টা থেকে বুলেট ছুঁড়লো।সাথে সাথে মাটি’তে লুটিয়ে পরলো সে।আর তার বাকি সঙ্গী’রা ভয়ে রীতিমতো কাঁপছে।আসলে তাদের কাছে মোকাবেলা করার মতো আপাতত কিছুই নেই।তারা জানতো না সেইফ জো’নে এভাবে একজন তাদের এসে ঘায়েল করে দিতে পারে।এখানে গার্ড থাকার কথা।কিন্তু কেউ গার্ড’দের দেখতে পাচ্ছে না।কি করবে কি এখন তারা?
‘কিছু বুঝে উঠার আগেই,বাকিদের লা’শও একই ভাবে মাটিতে লুটিয়ে পরলো।যেভাবে বাকিরা শেষ হয়েছিলো সেভাবে তাদের জীবন’ও এখানে ইতি টানলো।
একে একে সবাই’কে শ্যুট করার পর লোকটা মাস্ক খোলে বন্দু’কে হালকা ‘ফু’ দিলো।যেখান থেকে এখনো ধোঁয়া বেরোচ্ছে।অতপর মাস্ক পুনরায় পরে নিজের কাজে লেগে পরলো।হাতে যে সময় বেশি নেই।
***
‘শেখ ভীলায় হুলু’স্থুল কান্ড বেঁধেছে। রায়হান শেখে’র মাথায় আইস ব্যাগ চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে তার ঘরণী রিপা শেখ।রায়হান শেখ সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে ম’রার মতো পড়ে আছে।এত বড় সর্বনাশ কে করলো তার?একদম সর্ব’সান্ত করে দিয়েছে তাকে।উত্তেজনায় প্রেশার বেড়ে গেছে রায়হান শেখে’র।
‘রাজ বাবার সামনের চেয়ারে পায়ের উপর পা তোলে বসে আছে।যেনো তার কোনো হেলদোল-ই নেই এই ব্যাপারে।তা দেখে রায়হান শেখে’র মাথায় আরো আগুন ধরে যাচ্ছে।তার মতে সে একটা গা’ধা পালছে।
-রাজ,শাহিন’কে কল দিয়ে আসতে বলো।
‘রাজ ভ্রু কুঁচকে একবার রায়হান শেখের দিকে তাকালো।
-কি?ওভাবো হা’ব’লার মতো কি দেখছো?
-তোমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট এর যে খবর ছিলো না এতদিন?ব্যাপার কি আব্বু?
-তোমার মতো তো আমি গা’ধা নই।তাই সব খবরই রাখি।ও’র মা অসুস্থ,তাই দেখতে গিয়েছিলো।
-তুমি আমাকে অপমান করো সবসময়।
-কারণ তুই অপমানের যোগ্য’ই।
‘রাজ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।
***
-ফারু,এই ফারু।ভাইয়ার সাথে কথা বলবি না?
‘ফায়ানের কন্ঠে অসহায়ত্ব ঝড়ে পড়ছে।বাহিরে সে যতোই হা’ঙ্গামা করুক।মূলত তার বোনকে মন খারাপ অবস্থায় দেখতে পারে না ফায়ান।বুকের ভিতর মনে হয় কেউ পাথর চাপা দিয়ে দিয়েছে।
সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার ফারহা’র দিকে তাকালো।যে মুখ ঘুরিয়ে বিছানায় বসে আছে।
-ফারু,চল খাবি আমার সাথে।
-না!
-না মানে?খেয়াল আছে তোর,কাল থেকে খাওয়া-নাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছিস।এভাবে চললে কীভাবে হবে?
-যখন আরুকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়ছিলে।তখন মনে ছিলো না?তুমি জানতে না আমার হাসি’খুশি থাকার পিছনে আমার বন্ধু’মহল বিশেষ করে আরিমা’ আমায় নতুন করে হাসতে শিখিয়েছে?
-চল তুই খাবি আমার সাথে।
-না আমি কোত্থাও যাবো না।আমার আরু’কে চায়।তার খোঁজ না পাওয়া অব্দি আমি কিছুতেই মুখে কিছু গ্রহন করবো না।বেরিয়ে যাও তুমি।সামনে আসবে না আমার।
‘বলতে বলতে ফারহা ফুঁপিয়ে উঠলো।
ফায়ান রাগে হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে সেখান থেকে চলে গেলো।আরিমা একবার ভাইয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বললো,,
-আমাকে মাফ করো ভাইয়া।তুমি জানো না আরু আমার কাছে কি।যেদিন জানবে,সেদিন তুমিও তাকে চোখে হারাবে।
***
‘আরিমা’র ব্যাগ প্যাক করা শেষ এবার গাড়ি আসার অপেক্ষা শুধু।তারপরই সে এখান থেকে চলে যাবে।
মোবাইল বের করে তাদের বন্ধুমহলের ছবি গুলো বের করলো আরিমা।এক চিলতে হাসি ফোঁটে উঠলো আরিমা’র ঠোঁটে।পরক্ষণেই মুখ কালো করে নিলো আরিমা।সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যে তার জন্য নয়।সে অন্যের কয়েদী।
***
‘ফারহা সবার চোখ এড়িয়ে একটা পার্কে এসেছে।এখান দিয়ে যাওয়ার সময় আরিমা প্রায় বলতো তারা এই শিশু পার্কে ঘুরে যাবে একদিন।
‘এসব ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ফারহা’র থেকে।
“কোথায় তুই আরু,আর কোথায় খুঁজলে তোকে আমি পাবো?প্লিজ দেখা দে আরু প্লিজ”
-হেই মিস,এভাবে শিশু পার্কে এসে শিশু’দের মতো কাঁদছেন কেনো?
‘ফারহা মাথা তুলে সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো,সেদিনের সেই ছেলেটা।লোকটার মুখশ্রী’টা সে ভুলবে কীভাবে। প্রথম সাক্ষাৎ’কারেই যে মন দিয়ে বসেছে সে।
-হ্যালো?
-জ..জ্বি।কিছু বলবেন?
‘লোকটা ফারহা’র থেকে কয়েক গজ দূরে ধ’প করে বসে গেলো।
-নাম কি আপনার?মাস্ক পড়ে এই গরমে আছেন কীভাবে?
‘ফারহা ভাবলো সে মাস্ক টা খোলে ফেলুক।তাহলে মানুষটা তাকে চিনতে পারবে।
-আপনি না সৌহার্দ্য ফায়ান খা’নের বোন?এখানে কি করছেন গার্ড ছাড়া? যেকোনো সময় বিপদ আসতে পারে।
-তাই তো মাস্ক পড়েছি।পাছে কেউ ভাইয়ার কাছে বিচার দিয়ে দিলে?
‘ছেলেটা হাসলো।
-আমি যদি বিচার দেই?
‘ফারহা চোখ ছোট ছোট করে ছেলেটার দিকে তাকালো।যার ফলে ছেলেটা আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো।ফারহা এক দৃষ্টি’তে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।
-আচ্ছা আপনার নাম কি?
‘ছেলেটা এবার রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বললো,,
-রাজ…নিশান্ত রাজ শেখ।
***
‘আরিমা গাড়ি স্টার্ট দেয়ার আগে ফায়ানের ছবির দিকে এক পলক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
-আমার এত পাগলামোর কোনো মানে হয় না নেতা সাহেব।আমি যে অন্যের শিকলে বন্দি।আমি চাইলেও আপনার হতে পারবো না নেতা সাহেব।এই যে আপনার থেকে কিছু ভালো ম’ন্দের স্মৃতি নিয়ে গেলাম।আর কি কোনোদিন দেখা হবে আমাদের?
‘ফায়ানের ছবি’টা বুকের সাথে চেপে ধরে আরিমা বুলি আওড়ালো,,,
-ভালোবাসি নেতা সাহেব,বড্ড ভালোবাসি।সেই ছোট কাল থেকেই আপনাকে ভালোবেসে এসেছি নেতা সাহেব।ভালোবেসে যাবো আমৃত্যু।
‘অতপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো আরিমা।আর কি এই শহরে আসা হবে?
***
-নাদিম।
-জ্বি ভাই।
-আরিমা মেয়েটার খোঁজ করো।চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তার খোঁজ চায় আমার।আর সেদিনের ছেলেটার ডিটেইলস খোঁজে বের করবে।
‘নাদিম হতভম্ব হয়ে ফায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।ভাই এসব কি বলছে।তখনই একটা লোক দৌড়ে এসে ফায়ানের সামনে হাঁপাতে লাগলো।
-রিফাত,আমি বলি’নি অনুমতি না নিয়ে আমার ডে’স্কে আসবে না?
‘ফায়ানের কপালের র’গ ফুলে উঠেছে রাগে।এদের সব’ক’টাকে ছাঁটাই করে দিবে সে।
-স্যার,,ফারহা ম্যাম এ’ক্সিডেন্ট করেছে।রাস্তা’র পাশে রক্তা’ক্ত অবস্থায় পড়ে আছে স্যার।
জলদি চলেন,নয়তো কিছু একটা হয়ে যেতে পারে।
চলবে,,,,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা’র দৃষ্টিতে দেখবেন।আর গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ)