#লেখনিতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘এখন সময় টা মধ্য’দুপুর,চারপাশে রোদের প্রকটে আবহাওয়া তেজস্বী হয়ে আছে।গরমে মানুষ’জন অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে তাই গালি দিয়ে ভরপুর করছে সূর্যমামা’কে!
‘এই গরমেও ফায়ানের কোনো হেলদোল নেই!বোনের জন্য যা দরকার পড়ছে সে নিজ দায়িত্বে তা পালন করছে।একবার হসপিটালের ওই মাথায় আরেকবার এই মাথায় প্রাণপণ ছুটছে ফায়ান।ঘামে শরীর ভিজে জব’জব করছে।ঘি’য়ে রঙের পাঞ্জাবি’টা ফর্সা শরীরের সাথে লেপ্টে আছে!চুল গুলো উষ্ক’খুষ্ক,চোখ দুটো ফুলে একাকার। চোখের খানিক অংশ লাল হয়ে আছে।
‘আচ্ছা আরিমা যদি এমতাবস্থায় তার নেতা সাহেব’কে দেখতে পেতো।তবুও কি তার নেতা সাহেবের উপর সে ক্রা’শ খেয়ে বসে থাকতো?তার অন্তর’স্থল কি ঢিপ’ঢিপ আওয়াজ তোলে হাতুড়ি পে’টা করতো?
হ্যাঁ করতো’ই তো।তার নেতা সাহেব যে বড্ড সুদর্শন একজন পুরুষ!
‘হসপিটালের সবার দৃষ্টি ফায়ানের পানে,একজন নেতা যে সব সময় কঠোর ভঙ্গিতে চলাফেরা করে।যার মুখশ্রী সর্বদা গম্ভীর’তার ছাপ নিয়ে বেড়ায়!সেই ফায়ান তার বোনের জন্য কতোটা আবেগী হয়ে উঠেছে।কতক দূর্বল মনের মানুষদের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।কয়েক’জন নিজ মনে আওড়াচ্ছে,,
“নিশ্চয় ফারহা খান একজন ভাগ্যবতী মেয়ে”
***
‘অপারেশন থিয়েটারের লাইট অফ হতেই ফায়ান সেদিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে ডাক্তার বের হলেই ঝাঁপিয়ে পরবে।
-ডক্টর আমার বোনের কি অবস্থা এখন?
‘ডক্টর রা ফায়ানের অবস্থা দেখে খানিক ঘাবড়ালো।আজকাল বোনের প্রতি এত সেনসিটিভ কে থাকে?যখন ফারহাকে নিয়ে এসেছে তখন কতই না পাগলামো করেছে লোকটা!
-শি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার…ভাগ্যিস তাড়াতাড়ি এনেছিলেন।আরেকটু দেরী হলেই আমাদের হাতে কিছু থাকতো না!একটু পর কেবিনে শিফট করা হবে,আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।
‘ফায়ান এবার একটু স্বস্তি পেলো যেনো।বাসার কাউকেই জানায় নি ফারহার এক্সিডে’ন্টের ব্যাপারে।
-ভাই,আপনি এবার বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট নিন,অনেল ধকল গেছে আপনার উপর।
-নাদিম,কীভাবে বাসায় যায় বলো?বোনটা যে এখানে পড়ে আছে।তাও আমার উপর অভিমান করে।আমার বোন টা সুস্থ হয়েই উঠেছিলো।আমার কারণে আবার তার এই দশা!আল্লাহ না করুক,ওর ট্রমা’র উপর যদি আবার ইফেক্ট পড়ে।আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না!
‘শক্ত’পোক্ত সুঠাম দেহী সুদর্শন যুবকের মুখে অসহায় অবস্থা মানায় না।নাদিমও ফায়ানের অসহায়ত্ব’কে দেখতে পারছে না।
-গাড়ি’টার খোঁজ করো।কে ধা’ক্কা দিয়েছে বোনকে।আর আরিমা’র খোঁজ’টাও চালিয়ে যাও।
-আমার বোনকে মা’রার চেষ্টা,সৌহার্দ্য ফায়ান খানে’র কলিজায় হাত দেবার সাহস কার আছে?তাকে বের করে আনো আমি তার কলিজা বের করে দেখবো।তার কলিজা কতো বড়!
***
‘আরিমা একটা ডুপ্লেক্স বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালো।যে কেউ বাসাটা দেখলেই বলে দিতে পারবে কারো শখের বসে গড়া এই বাড়িটা।চারপাশে শুধু ফুল আর ফুলের সমারোহ।
‘আরিমা হর্ণ বাজাতেই দারোয়ান হাসি হাসি মুখ করে গেইট খোলে দিলো।আমিরা গাড়ি পার্ক করে এসে কলিং বেল প্রেস করলো।
‘ওপাশের মানবী আরিমা’কে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে যা তার মুখশ্রী দেখেই আরিমা বলে দিতে পারছে।কিন্তু সে সেদিকে তাকালো না।গটগট পায়ে একটা রুমের ভিতর ঢুকে গেলো!
মেয়েটা সেদিকে তাকিয়ে হতাশ দৃষ্টি ফেললো।
***
-আমার বাবা’টা কি করে?
‘আরিমার কন্ঠস্বর ছোট্ট ছেলেটির শ্রবণেন্দ্রিয়ে প্রবেশ করার সাথে সাথে সে পিছু ঘুরলো।তার দৃষ্টি হতবাক।সে এ সময় কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে একদম আশা করেনি।
ছেলেটি ঝাঁপিয়ে পরলো আরিমার বুকে।
আরিমা’ও শক্ত করে ছেলেটির মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো।
এবার তার শান্তি লাগছে।মনে হচ্ছে তার সবকিছু হালকা হয়ে গেছে।আর না আছে কোনো ক্লান্তি।
-মাম্মা,তুমি কখন এলে?আমাকে জানাও নি কেন?
-জানালে কি মাম্মাম সারপ্রাইজ দিতে পারতো?
-লাভ ইউ মাম্মাম,এবার আমি তোমাকে ছাড়ছি না।হয় আমাকে নিয়ে যাবে,নাহলে আমার সাথেই থাকবে তুমি।তুমি জানো না আরহাম তোমায় কতো মিস করে?
‘আরহাম ঠোঁট উল্টে আরিমার দিকে উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে।সে জানে তার মাম্মা তাকে এবারো নিষেধ করবে।কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে তার মাম্মা রাজি হয়ে গেছে।
-ইয়ে মাম্মাম,তুমি আমার বেস্ট মাম্মাম।উম্মাহহহ।
-হয়েছে,তোমার মাম্মা’কে ফ্রেশ হতে দাও এখন।জার্নি করে এসেছে তো।
‘আরহাম আরিমাকে ছেড়ে দিলো।তার ছোট ছোট গোল গোল চোখ দুটো চিকচিক করছে।
***
‘ফারহা’কে কেবিনে শিফট করা হয়েছে।তার মাথায় কোনো চুল নেই।মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে চুল কে’টে ফেলা হয়েছে।হালকা হালকা চুল আছে এখন।
‘দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো ফায়ান।ফারহাকে এই অবস্থায় দেখে তার বুক টা ধুক করে উঠলো।
সে বোনের দিকে এগিয়ে গিয়ে তার পাশে বসলো।
বোনের এক হাত নিজের গালে ছুঁয়ালো ফায়ান।
‘ফারহা পিট’পিট করে চোখ খুলতেই ভাইয়ের বিধ্বস্ত রুপ টা তার চোখে ধরা পড়লো।সাথে সাথে চোখ ফেটে অশ্রু কণা’রা ভিড় জমালো।
-বোন কাঁদছিস কেন?ভাইয়া প্রমিজ করছে তোর আরু’কে তোর কাছে ফিরিয়ে দিবে।
‘ফারহা ঠোঁট ভেঙে কান্না করেই যাচ্ছে।ফায়ান তাকে থামানোর সর্বোচ্চ প্রয়াস চালাচ্ছে।নয়তো সমস্যা হবে।
-ভাইয়া পঁচা,জানি তো আমি।তাই বলে এভাবে কাঁদবি?আরিমা কে এনে দিবো বলেছি না?একদিন সময় দে আমায়।আর যে তোকে মা’রার চেষ্টা করেছে।তার চোখ উপড়ে নিবো আমি।আমার বোনের দিকে যে তাকাবে তার অবস্থা হবে ভয়াবহ।
‘ফারহা ঈষৎ কেঁপে উঠলো।ভাই কে কীভাবে বলবে সে আরিমাকে থামাতে গিয়েই তার এই অবস্থা। না,কিছুতেই বলা যাবে না।নাহলে ভাই আরিমার উপর আবার ক্ষে’পে যেতে পারে।
***
-শুনলাম ফায়ানের বোনের এক্সি’ডেন্ট হয়েছে?আহারে বেচারি।ছোট্ট শরীরটা হসপিটালের বে’ডে ছটফট করছে।
‘রায়হান শেখে’র কথায় রাজ অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো।কয়েক ঘন্টা আগেই তো সে ফারহা’র সাথে দেখা করে এলো।প্রানবন্ত হাসি হাসি মুখ টা মনে পড়তেই রাজের বুক কেঁপে উঠলো।
‘এর পিছনে তার বাবা’র হাত থাকতে পারে না’তো?
***
-হ্যালো,কেমন আছো?
-আলহামদুলিল্লাহ তুই কেমন আছিস পিচ্চি?
-কতদিন বলেছি পিচ্চি ডাকবা না।আমি এক বাচ্চার মা।
‘ছেলেটা হাসলো।
-ভাইয়া তুমি কি জানো আমি সব জেনে গেছি?
‘আরিমার মুখে প্রাপ্তির হাসি।
-কি জেনেছিস তুই?
-খান বাড়ির রহস্য।
‘ছেলেটা কিছুক্ষণ চুপ মেরে রইলো।সে ভাবেও নি আরিমা এত ধূর্ত।
-আমি তোকে জানাতাম সবটা।
‘আরিমা হাসতে হাসতে বললো,,,
-বাদ দাও,দেশে কবে আসছো?
-শীঘ্রই।
-আচ্ছা তবে এক সাথে সবার দেখা হচ্ছে।
‘বলেই খ’ট করে কল কে’টে দিলো আরিমা।
চলবে,,,,
(আসসালামু আলাইকু, ভুল’ত্রুটি হলে ক্ষ’মার দৃষ্টিতে দেখবেন।আর গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ।পাশাপাশি আপনার পরিচিতদের ইনভাইট দিয়েন।আমার পে’জ টা নতুন।আশা করছি সাপোর্ট পাবো।)