#লেখনিতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘কে’টে গেছে বেশ কয়েকদিন,,ফারহা’কে বাসায় আনা হয়েছে!সোনালী যখন মেয়ের এই অবস্থা জেনেছে তাকে আটকে রাখা দুঃসাধ্য হয়ে গিয়েছিলো!
উনার কোমরের ব্যাথা থাকার দরুন বেশিক্ষণ গাড়ি’তে বসে থাকতে পারবে না!তাই ফায়ান যতো দ্রুত সম্ভব বোনকে বাসায় নিয়ে এসেছে!মোহনা অবশ্য গিয়ে দেখে এসেছিলো!
‘বন্ধু’মহল যখন ফারহার এক্সি’ডেন্টের খবর শুনে,একদম হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছিলো সবাই!বেলা সিমরান কেঁদে কে’টে অস্থির!
এক বান্ধবীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।আবার আরেকজন মা’থা ফাটিয়ে বসে আছে।তাদের কি কান্না না করলে চলে?উহু এটা মোটেও ভালো কথা না।তাই তো তারা ইচ্ছে’মতো কাঁদছিলো।
কিন্তু ফায়ানের ধ’মকের ভয়ে সবার সুড়সুড় করে চলে যেতে হয়েছে!
***
‘ফারহা নিজের কক্ষে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।তার কিছুই ভাল্লাগছে না।ওইদিন পার্ক থেকে বাসায় ফেরার পথে আরিমা’কে দেখেছিলো সে।গাড়ি চালিয়ে কোথায় যেনো যাচ্ছে।ফারহা আরিমা’কে চিনতে মোটেও ভুল করবে না।
ফারহা পিছন থেকে অনেক ডাকাডাকি করার পরেও যখন আরিমা শোনলো না।তখন সে প্রাণপণে ছুটে চললো।কিন্তু ফলাফল শূণ্য। একটা আস্ত গাড়ির সাথে সে কি পেরে উঠবে?তখনই অপজিট থেকে একটা গাড়ি এসে ধা’ক্কা দিলো,আর তার মাথা গিয়ে ইটের সাথে লেগে গড়গড় করে রক্ত পড়তে লাগলো।
‘ফারহা দীর্ঘশ্বাস ফেললো,
-ফারু,এত কি ভাবিস তুই আজ’কাল?কখন থেকে ডাকছি তোকে?
‘ফায়ানের গম্ভীর কন্ঠ কর্ণগোচর হতেই ফারহা চমকে উঠলো।
-না ভাইয়া তেমন কিছু না।
-যাইহোক,একটা নিউজ দিতে এসেছি!
-কি?
-সন্ধ্যায় ভাইয়া ভাবি’রা আসবে।
‘ফারহা কিছুক্ষণ ড্যাব’ড্যাব করে তাকিয়ে থাকলো ভাইয়ের দিকে।কিছু সময় পরেই চেঁচিয়ে উঠলো।তার যেনো বিশ্বাস-ই হচ্ছে না!এবার তাকে পায় কে?সারাদিন ছুটাছুটি করবে।
‘ফায়ান দুই কানে হাত দিয়ে বিরক্তি’তে ফারহার দিকে তাকিয়ে আছে।ফারহা একবার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে ক্লোজ আপ মার্কা হাসি দিলো
বোনের অঙ্গি ভঙ্গি দেখে ফায়ান নিজেও ফিক করে হেসে দিলো!
***
‘আরিমা আড়’মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে উঠে বসলো।ফোনটা হাতে নিয়ে সময় দেখতেই তার চক্ষু চড়কগাছ। এতক্ষণ সে ঘুমিয়েছে?আরহাম কে নিয়ে দুপুরের দিকে শুয়েছিলো আরিমা,এখন বিকেল হয়ে গেছে।
তার ছেলেটা কোথায় গেলো?
-আরহাম,আরহাম,কোথায় তুমি?
‘আরহামের কোনো আওয়াজ আসছে না।আরিমা মনে মনে ভয় পেতে লাগলো।কেউ তাদের খোঁজ পেয়ে গেলো না’তো?অদৃশ্য ভয় আরিমার সর্বাঙ্গে জাপটে ধরলো।সে দ্রুত পদে বিছানা ছেড়ে নামলো।
-আরহাম বাবা,কোথায় তুমি।মাম্মা ডাকছে তো?
আরহামমমমমমমম।
‘আরিমা দ্রুত গেইটে গিয়ে দারোয়ানের কাছে জানতে চাইলো আরহাম বের হয়েছে কি’না?দারোয়ান ঘাড় নাড়িয়ে না জানালো।ঠিক তখনই বাগান থেকে খিলখিল হাসির শব্দ আরিমার কানে এসে ঠেকলো।
সাথে সাথে আরিমা ছুটে বাগানে চলে গেলো।
‘স্বস্তি’র শ্বাস ছাড়লো আরিমা।এগিয়ে গিয়ে ছেলেটা’কে জড়িয়ে ধরলো।
-বাবা,মাম্মাম তোমাকে খুঁজেছে কতো জানো?মাম্মাম কে কষ্ট দাও কেনো?চিন্তা হয় তো মাম্মামের।তুমি ছাড়া মাম্মা’র কে আছে?
‘আরহাম কিছু না বুঝে ফ্যাল’ফ্যাল করে তার মাম্মা’র দিকে তাকিয়ে আছে।তার ছোট্ট মস্তিষ্ক এটা বুঝতে পারছে তার মাম্মা কষ্ট পেয়েছে,আর কষ্ট’টা সে’ই দিয়েছে।
-স্যরি মাম্মা।আর হবে না।
‘আরিমা রাহার দিকে চোখ পাঁকিয়ে তাকালো।
-আরহাম কে নিয়ে বেশিক্ষণ বাহিরে থাকবে না।জানোনা ও আমার কি?
‘রাহা ভয়ে কথা বললো না,শুধু মাথা নিচু করে রাখলো!
***
‘ফারহা বাসা থেকে বের হয়েছে,ফায়ান এই সময় বাসায় থাকে না।এটাই সুযোগ।একটু বন্ধু’মহলের সাথে দেখা করে আসবে।বড্ড মিস করছে তাদের।শোনতে হবে না,আরিমা’কে পেলো কি’না?ফায়ান অবশ্য কোনো খোঁজ পায়নি,কে বা কা’রা ধা’ক্কা দিয়েছে আরিমা’কে।কোনো সিসিটিভি ফুটেজ’ও ছিলো না রাস্তায়।তা শোনে ফারহা’র দেহে যেনো দম আসে।
‘কিছু সময় পরেই দূরে একটা ছেলে’কে দেখতে পেলো ফারহা,কারো কাছে লিফট চাচ্ছে ছেলেটা।
আরে এটা যে রাজ।ফারহা ড্রাইভার’কে গাড়ি থামাতে বললো।কাঁচ নামিয়ে রাজের উদ্দেশ্যে বললো,,
-এই যে,আপনি কোথাও যেতে চাচ্ছেন?চাইলে আমার সাথে আসতে পারেন।
-না সমস্যা নেই।আমি অন্য গাড়ি নিয়েই যেতে পারবো।
-আরে আসুন প্লিজ।সমস্যা নেই।
‘রাজ কিছু একটা ভেবে গাড়ি’তে চেপে বসলো।
-তুমি কোথায় যাচ্ছো?
-ফ্রেন্ড’দের সাথে দেখা করতে!
-আচ্ছা,শোনলাম এক্সি’ডেন্ট করেছিলে না’কি?এখন কেমন ফিল করছো?
‘ফারহা হকচকিয়ে গেলো,তার নিস্পাপ মন ভেবে নিলো,রাজ’ও তাকে পছন্দ করে।এমনকি তার অগোচরে তার খোঁজ-খবর রাখে।
-জ্বি ভালো আছি।
-তা এই অবস্থা’তে বাহিরে না বের হলে চলতো না?
-আপনি দেখি আমার ভাইয়ের মতো।আমার ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে ভালো লাগে না।
‘বলেই মুখ ফুলালো ফারহা,রাজ তা দেখে হালকা হাসলো।
-আচ্ছা গাড়ি থামাও,আমি এসে গেছি।থ্যাংকস ফর লিফট।
-ফারহা হেসে মাথা নাড়ালো।
***
‘ফায়ান অনেকক্ষ’ণ যাবত নাদিম’কে খেয়াল করছে।নাদিম কিছু নিয়ে টেন্স।ফায়ান ঢের বুঝতে পারছে।কপালে ঘামে’র সাথে চিন্তা’র ছাপ স্পষ্ট।
ফায়ান কিছু বলছে না।অপেক্ষা করছে নাদিম কখন তাকে বলে।
-নাদিম এক গ্লাস পানি দিতে পারবে?
‘ফায়ানের সামান্য শান্ত কন্ঠের বাক্য শুনেও নাদিম চমকে গেলো।অতপর হাসি হাসি মুখ করে ফায়ানের জন্য পানি এনে দিলো।নাদিমের হাত কাঁপছে।
-পানি টুকু খাও।
‘নাদিম প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও নিজেকে ধাতস্থ করে পানি টুকু খেয়ে নিলো।
-এবার বলো,কি হয়েছে?
‘নাদিম কিছু সময় অসহায়ের মতো ফায়ানের দিকে তাকিয়ে থাকলো।তারপর হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো।
নাদিম’কে বাচ্চা’দের মতো কাঁদতে দেখে ফায়ান কিছুটা ভড়’কালো।
‘ফায়ান নাদিম’কে সময় দিলো,নিজেকে ঠিকঠাক করে নাদিম বললো,,
-ভাই,আমি আমার ছোট ভাই’কে খোঁজে পাচ্ছি না।বিকেলে বের হয়েছিলো এখন রাত হয়ে গেছে।ফোন একটু আগে অন থাকলেও এবার অফ দেখাচ্ছে।ভাই,আমার আপন বলতে ও ছাড়া আর কেউ নেই ভাই।
‘কাঁপতে কাঁপতে কথা গুলো বলে ফের ডুকরে উঠলো নাদিম।
-এতো হাইপার হচ্ছো কেনো?ছেলে মানুষ হয়তো বন্ধু’দের সাথে ঘুরতে গেছে।চলে আসবে।
-না ভাই।ও কখনো এমন করে না।আমাকে বলে যায়।চার্জ না থাকলে বন্ধু’দের ফোন থেকে কল দেয়।
-আচ্ছা আমি দেখছি চিন্তা করো না।আমি আছি না?আমি থাকতে কোনো ভয় নেই।
***
‘রাত বাজে তিনটা,নাদিম দু চোখের পাতা এক করতে পারছে না।একবার ঘরের এই কোণে যাচ্ছে তো আরেকবার ওই কোণে যাচ্ছে।চিন্তায় মূর্ছা যাচ্ছে সে।তার ভাইটা কোথায়?
কোনো বিপদ হলো না’তো?তার এই কাজের জন্য সে ভাইকে লোকের সামনে তেমন পরিচয় করিয়ে দেয় না।পাছে ভাইয়ের উপর কোনো বিপদ এলে?আর ভাবতে পারছে না সে।
‘তখনই কলিং বেলের শব্দে হুঁশ ফিরলো নাদিমের,এত রাতে কে এলো?আফরিদ নয় তো?
চলবে,,,,,
(ভুল’ত্রুটি হলে ক্ষ’মার দৃষ্টিতে দেখবেন।গঠনমূলক কমেন্ট চাই।বড় বড় কমেন্ট করবেন প্লিজ)