#লেখনিতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘ভোরের আলো ফুটতেই খান ভীলায় হুলুস্থুল আয়োজন। বাড়ির বড় ছেলে,ছেলের বউ যে দেশে এসেছে তাদের এই সামান্য আয়োজন না করলে চলে?
যদিও তাদের সামান্য আয়োজন মানেই এলাহী কান্ড।
‘ফারহা পিটপিট করে চোখ খুললো,শরীরের উপর ভারী কিছুর উপস্থিতি পেয়ে ভড়কালো প্রথমে অতপর যখন কাঙ্খিত মানুষটিকে দেখতে পেলো,খুশীতে চেঁচিয়ে উঠলো ফারহা।সে তো ভুলেই বসেছিলো আজকে ভাইয়া ভাবি আসবে।
‘ফারহা তার বুকে শুয়ে থাকা ছোট দিয়াজকে নিয়ে রুম থেকে বের হলো।ধপা’ধপ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই ভাবি’কে দেখতে পেলো মা আর বড় মা’র সাথে গল্প করছে কিছু একটা নিয়ে।ফারহা গিয়ে ভাবি’র পাশে ধ’প করে বসে পরলো।
‘দিশা যেনো অবাক না হয়ে পারছে না।তার ছোটো ননদ কি সুস্থ হয়ে গেছে?ও তো অসুস্থ ছিলো।আগেরবা’র যখন এসেছিলো,ফারহা কারো সাথে দেখা করেনি।এমনকি তার ভাই ও দিয়াজের সাথেও না।সবসময় চিৎকার করে গেছে।অবশেষে ফারহা সুস্থ হলো।ভাবতেই এক গাল হাসলো দিশা।
-ভাবি এভাবে আমাকে দেখো না’তো।ভাইয়া যদি জানে তুমি আমার উপর ক্রাশড্,একটা থা’প্প’ড় ও আমার মাটিতে পরবে না।সব গুণে গুণে পিঠে জায়গা পাবে।
-দিশা অবাক হওয়ার ভান ধরে দুই হাত গালে লাগিয়ে বললো,,
-আসলেই ফারহা?জিসান তোমাকে মা’রে?
-হ্যাঁ ভাবি,জানো না তো তুমি।তোমাকে আজ সব বলবো।তোমার জামাই ওটা ভালো না।আগে কত শত প্রেম যে করেছে জানো না তো তুমি!
‘দিশা চোখ দুটো বড় বড় করে নিলো।এবার সে ফারহার কথা বিশ্বাস করে নিয়েছে।কারণ তাদের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে।প্রেমে’র বিয়ে না।
‘ঠিক তখনই কেউ পিছন থেকে এসে ফারহা’র কান মুড়িয়ে ধরলো,ফারহা অস্ফুট স্বরে আর্তনাদ করে উঠলো।
-আমি তোকে মারি?পেঁচি কোথাকার।
‘ফারহা কান ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,,
-মা’রোই তো,এখনো তো মারছো।দেখেছো ভাবি?ভাইয়া তোমাকে দেখে ভয় পায় না।আমাকে মারছে।আমি তার সুইট একটা বোন।কিসের আদর করবে।
‘ফারহা গাল ফুলালো।জিসান হেসে ফারহা’র গা’ল দুটো টেনে দিলো।ফারহা দুম করে কি’ল বসিয়ে দিলো জিসানের পিঠে।এটা নতুন কিছু নয়।তারা দুজন একদম ফ্রেন্ড’লি।প্রথম প্রথম ফায়ান ধ’ম’ক দিলেও কাজ হয়নি।উল্টো কেঁদে কে’টে বান ভাসাতো।তাই আর কিছু বলেনি ফায়ান।
-তোর জন্যে গিফট এনেছ, যা চেক কর গিয়ে।
-ফারহা উৎফুল্ল হয়ে দিয়াজ’কে কোলে নিয়ে ছুটলো।
পিছন থেকে ভাইয়া ভাবি’রা অনেক থামতে বলেছে কিন্তু তার থামার নাম নেই।
-বোন’টা সুস্থ হয়ে গেছে,যাক আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু কীভাবে পসিবল হলো?
‘মোহনা ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো,,
-আরিমা’র জন্য’ই তো সব সম্ভব হলো বাবা।
-এই আরিমা’টা কে?
***
‘মাথা নিচু করে ড্রয়িংরুমে ভাইয়ের সামনে বসে আছে আফরিদ,মাথা তুলে ভাইয়ের দিকে তাকাতে পারছে না।কাল রা’তে সে ড্রিংক করে মাঝ’রাতে বাসায় ফিরেছে।তার জন্য নাদিমের হাতে কয়েক’টা চ’ড় থা’প্প’ড় ও খেতে হয়েছে বৈ’কি।
-কি হয়েছে?এভাবে সঙ’য়ের মতো বসে আছিস কেনো?
-ভাইয়া সরি,
‘অস্ফুট স্বরে বুলি আওড়ালো আফরিদ।
-সরি?তোকে কতোবার মানা করেছি এসব খাবি না,কল ধরিস নি ফোন অফ রেখেছিস।কিছু বলেও যাসনি।বলি কি আমাকে মা’রতে চাস তুই?এত চিন্তা’য় না ফেলে মে’রে ফেল আমায়।
‘আফরিদ এগিয়ে গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরলো।তার বড্ড ভুল হয়ে গেছে।আসলেই ভুল হয়েছে।কাল তার বেরোনো মোটেই উচিত হয়নি।
-দেখ ভাই,তুই ছাড়া আমার আর কেউ নেই।এই দুনিয়ায়।প্লিজ এমন কিছু করবি না যাতে করে তোকে হারাতে হয় আমার।আমার জন্য হলেও নিজেকে ভালো রাখ তুই।
-হুম ভাইয়া,আ’ম সরি।আর হবে না।এবারের মতো মাফ ক’রে দাও।
‘নাদিমের কি’রকম অদ্ভূত ঠেকলো আফরিদের কথা।কিন্তু সে পাত্তা দিলো না।ভাইকে ফিরে পেয়েছে এটাই অনেক।
________
‘আরিমা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে দেখে আরহাম তার দিকে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে।কি নিস্পাপ তার হাসি।কিন্তু এটা সুবিধের ঠেকছে না আরিমা’র।নিশ্চিত কোনো আ’কাম করেছে আরহাম।
আরিমা একটু দূরে রাহা’কে দেখতে পেলো।সে’ও ঠোঁট চেপে হাসছে।এবার আরিমা’র কপালের ভাঁজ গাঢ় হলো।
-কি ব্যাপার,তোমরা হাসছো কেনো?
‘আরিমা’র কথায় এবার আরহাম উচ্চস্বরে খিল’খিলিয়ে হেসে দিলো।আর তার সাথে তাল মিলিয়ে রাহা’ও হাসছে।
রাহা একটা আয়না এনে আরিমা’র হাতে দিলো।আয়নার দিকে তাকিয়ে আরিমা’র চক্ষু’চড়ক গাছ।কিছুক্ষণ ড্যাব’ড্যাব করে নিজের প্রতিবিম্ব’র দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো আরিমা।
তিন’জন সমান তালে হাসছে।
‘আরিমা অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে আরহাম’কে উদ্দেশ্য করে বললো,,
-আরহাম,যাও ড্রয়িংরুমে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।এইসব মার্কার দিয়ে কি করেছো আমার মুখে।
-মাম্মাম,আমি তো পাপা’কে দেখিনি।তাই দেখছিলাম তোমাকে পাপা বানালে কেমন লাগে।
‘আরিমা’র কলিজা’টা যেনো ছলাৎ করে উঠলো।
ভিতর টা দুমড়ে’মুচড়ে গেলো।সে অসহায় দৃষ্টিতে আরহামের দিকে তাকালো।
বোকা আরহাম কি জানে সে কি বলে ফেলেছে?
-বাবা,মাম্মাম আজ তোমাকে নিয়ে দূরে চলে যাবে।যাও নিচে।আমি আসছি।
‘বলেই ওয়াশরুমের দিকে ছুটলো আরিমা।এখানে আরেক সেকেন্ড সময় ব্যায় করলে আরহাম তার চোখের পানি দেখে ফেলতে পারে।
‘আরিমা ওয়াশরুমে গিয়ে দরাজায় পিঠ ঠেকিয়ে শূণ্যে দৃষ্টি দিলো।সে কিছুতেই পুরনো স্মৃতির মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না।কি করবে এখন সে।এদিকে বস বার’বার কল দিয়ে মাথা খেয়ে ফেলছে।
তা’র জীবন’টা কবেই না শেষ হয়ে যেতো যদি না আরহাম থাকতো।
***
-আফরিদ ফিরেছে?
-নাদিম খুশী’তে গদ’গদ হয়ে বললো,,
-জ্বী ভাই,রাতে ফিরে এসেছে।
‘ফায়ান সেদিকে তাকিয়ে ফিচেল হাসলো।নাদিম কিছুই বুঝতে পারলো না।জিগ্যেস করার সাধ্যি’ও তার নেই।
***
‘আরিমা গাড়ি চালাচ্ছে আর তার পাশের সি’টে আরহাম আরাম’সে কার্টুন দেখছে।আরেকটু পর পর খিল’খিল করে হাসছে।আরিমা সেদিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।
-আরহাম,
-জ্বি মাম্মা?
‘আরহাম ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আরিমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিলো।সে তার মাম্মার সব কথায় মনযোগ দিয়ে শোনে।তার মতে,তার মাম্মা পৃথিবীর বেস্ট মাম্মা।
তার সব কথায় গুরুত্বপূর্ণ।
-তুমি তো জানো,তোমার মাম্মা ভয়ঙ্কর লোকদের সাথে ডিসুম’ডিসুম করে।তুমি কি ভয় পাবে?
ভয় পেতে পারবে না কিন্তু।নাহলে আবার মাম্মা তোমাকে রাহা আন্টির কাছে রেখে আসবে।
‘আরহাম ছোট ছোটো ছোটো করে আরিমার দিকে তাকালো,,
-মাম্মা,আমি আরহাম।তুমি কেমন সাহসী?আমি তোমার বাচ্চা মাম্মা।তোমার মতোই সাহসী আমি।আগের’বার কয়েকটা লা’থি,উস্টা,চিমটি,কিল,ঘুসি শিখিয়ে রেখে গিয়েছিলে না?
ওগুলো আমার মনে আছে।
‘আরহামের স্টাইল করে কথা বলা দেখে আরিমা অট্টহাসি’তে ফে’টে পরলো।
আরহামও মাম্মার দিকে তাকিয়ে খিল’খিল করে হাসছে।তখনোই হলো বিপত্তি।
***
‘ফায়ান’রা স্ব পরিবারে বাহিরে বের হয়েছে।বাড়িতে শুধু সোনালী, মোহনা আর কাজের মেয়েটাকে রেখে এসেছে।ফায়ান আসতে চায়নি।ফারহা আর জিসানের জোড়া’জুড়ি’তে আসতে হয়েছে।তার কতো কাজ।এসবে সময় আছে তার?তবুও দুই পাগলে তাকে টে’নে আনলো।
‘কিছু দূর যেতেই রাস্তায় জটলা দেখতে পেলো ফায়ান,গাড়ি সে চালাচ্ছে তার পাশে জিসান।পিছনে দিয়াজ ফারহা আর দিশা।
‘জলদি গাড়ি থামালো সে।ওখানে কি এক্সি’ডেন্ট হয়েছে?ফারহা’ও বের হয়ে এলো।ফায়ান নিষেধ করা সত্ত্বেও সে মানেনি।সাথে যে জিসান আছে।তাই তার কোনো ভয় নেই।
‘তারা সবাই ভিড়’ভাট্টা এড়িয়ে সামনে গেলো।একটা গাড়ি গাছের সাথে এক্সি’ডেন্ট হয়েছে।আশ্চর্য ভিতরে লোক নেই না’কি?সবাই তামাশা দেখছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
‘ফারহা গাড়ি’টার দিকে এগিয়ে গেলো।ভিতরে উঁকি দিতেই তার বুক’টা ধ্বক করে উঠলো।কেনো জানি আত্মা’টা কু ডাকছে তার।অস্থিরতা জাপটে ধরেছে তাকে।
একটা মেয়ে উল্টো দিকে হয়ে বুকে কিছু জাপটে ধরে পরে আছে।আরিমা এক ঝটকায় মেয়েটাকে এদিকে ফেরানোর সাথে সাথে কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো।
-আরুউউউউউউউউউউউউউউ…..ফারহা’র চিৎকারে ফায়ান হুড়মুড়িয়ে গাড়ির দিকে এগুলো। দিশা এসে ফারহা’কে চেপে ধরলো।
‘ফায়ান একবার আরিমা’র দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার তার বুকে গুটি’শুটি মেরে শুয়ে থাকা বাচ্চাটার দিকে তাকাচ্ছে।কি নিস্পাপ বাচ্চা।মনে হচ্ছে মায়ের বুকে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।
‘কে এই বাচ্চা।আরিমা’কে দেখে মনে হচ্ছে কোনো বড় বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্য বাচ্চাটাকে আঁকড়ে ধরেছে।যেনো কোনো আঁচড় না লাগে বাবুটার গায়ে।
চলবে,,,,,,,
(আসসালামু আলাইকুম,ভুল’ত্রুটি হলে ক্ষ’মার দৃষ্টিতে দেখবেন।আর অবশ্যই গঠনমূলক কমেন্ট করবেন।মেম্বার ইনভাইট দিয়ে সাহায্য করবেন প্লিজ)