#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘আরিমা পিট’পিট করে চোখ খুললো,তীব্র আলো চোখে ঠেকতেই সে আবার চোখ বন্ধ করে নিলো।
খানিক সময় বাদে চোখ খোলে চারপাশে তাকালো আরিমা,সে এখন কোথায়?ভালোভাবে তাকাতেই বুঝতে পারলো সে হসপিটালের বে’ডে শুয়ে আছে,এক হাতে ক্যানোলা।কিন্তু সে এখানে কীভাবে এলো?
‘মস্তিষ্কে চাপ পরতেই আরিমা’র সব মনে পড়ে গেলো।তার মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত। ছেলে হারানোর ভীতি এসে চেপে ধরলো আরিমার বক্ষস্থলে।
‘ক্যানোলা খোলে রেখে আস্তে আস্তে বে’ড থেকে নামলো।মাথা চক্কর দিচ্ছে তার।মাথায় ব্যান্ডেজ করা।হয়তো মাথায় আঘাত পেয়েছে সে।
‘দ্রুত পদে বের হয়ে চারপাশের করিডোরে চোখ বুলাচ্ছে আরিমা।তার ছেলে কোথায়?আশেপাশে’র কেবিনে চোখ বুলিয়ে নিলো আরিমা।নেই কোথাও আরহাম নেই।তাহলে কোথায় গেলো তার ছেলে?আরহাম’কে তার থেকে ছিনিয়ে নিলো কে?
‘আরিমা সেখানে বসেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো মুখ ঢেকে।চিৎকার করে কাঁদছে সে।একবার যেহেতু সে তার ছেলেকে নিয়ে গেছে আর ফেরত দিবে না।আরহাম তার মাম্মা’কে ছাড়া কীভাবে থাকবে?
‘আরিমার চিৎকারের শব্দে আশেপাশের স্টাফ থেকে শুরু করে সব লোকজন করিডোরে ভরপুর হয়ে গেলো।কেউ কিছু বুঝতে পারছে না।এই মেয়ে কান্না করছে কেনো?
‘আরিমা’র কোনো’দিকে খেয়াল নেই।হসপিটালে এভাবে চিৎকার করে কাঁদার রুলস নেই,তা আরিমা’র মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছে।
‘হঠাৎ কেউ এসে আরিমাকে জড়িয়ে ধরায় তার হুঁশ ফিরলো।এই ছোট ছোট হাত দুটি আরিমা’র বড্ড চেনা।সে মুখ থেকে হাত সরিয়ে আরহাম’কে জাপটে ধরলো।চোখে মুখে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিলো।তার প্রাণ’পাখি টা যেনো ফিরে এলো।অবশেষে আরহাম’কে নিজের বুকের সাথে আঁকড়ে ধরলো আরিমা।
-মাম্মাম কে রেখে চলে যাও কেনো?মাম্মা কষ্ট পায় তো।মাম্মা’মের বুকে ব্যাথা হয় আরহাম তার থেকে দূরে থাকলে।
‘আরহাম ঠোঁট ভেঙে কাঁদছে।কাঁদতে কাঁদতে উত্তর কাটলো,,
-মাম্মা তুমি ঘুমিয়ে ছিলে।তাই আঙ্কেল টা বললো তার সাথে ঘুরতে যেতে।আমি যেতেই চাই নি।কিন্তু আঙ্কেল টা জোর করেছে তাই গিয়েছিলাম।সরি মাম্মা আরহাম আর তোমায় কষ্ট দিবে না।
‘বলেই আরিমা’র মুখে চুমু খেলো আরহাম।আরিমা’র ভিতর’খানা এবার শান্ত হলো।
কিন্তু কে তাদের এখানে এনেছে?ভাবনা’টা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো।
‘ইতমধ্যে সবাই যে যার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে।মা তার ছেলে’কে ফিরে পেয়েছে।এখানে আর কিই বা বলবে তারা।শুধু কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তাদের ভালোবাসা দেখলো।
‘আরিমা চোখ তোলে একটু দূরে ফায়ান’কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকালো।পরক্ষণেই নিজেকে ধাতস্ত করে নিলো।আবার আরিমা ফায়ানের দিকে তাকালো।ফায়ান এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে।
আরিমার বেশ অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো।নেতা সাহেব এখানে কীভাবে এলেন?
-উঠো,
‘ফায়ানের আওয়াজ শুনতেই আরিমা আরহাম’কে জাপটে ধরে নিজের সাথে।এই লোকের সঙ্গে সে কিছুতেই যাবে না।উনার সাথে যাওয়া মানে নিজের বিপদ নিজে ঢেকে আনা।তাছাড়া সেদিনের অপমান ভুলেনি সে।
-উঠতে বলেছি।
-না।আমি আপনার সাথে কোত্থাও যাবো না।
‘কা’ঠ’কাঠ জবাব আরিমা’র।
-যাবে না?
‘ফায়ানের কন্ঠ শান্ত দেখে আরিমা অবাক না হয়ে পারছে না।এই লোক এভাবে শান্ত হয়ে আছে কেনো?ঝড় আসার পূর্বাভাস নয়তো?
‘ফায়ান আরহাম’কে টেনে এনে কানে কানে কিছু বললো,এতে আরহাম খুশীতে নেচে উঠলো যেনো।আরিমা শুধু ড্যাব’ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।কিছুই বুঝতে পারছে না সে।
‘ফায়ান এগিয়ে এসে আরিমা’কে কোলে তোলে নিলো।
আরিমা শকড্ ভিষণ ভাবে শকড্ সে।তার নেতা সাহেব তাকে কোলে নিয়েছে?পরক্ষণেই পাবলিক প্লেস ভেবে আরিমা হাত পা ছোটাতে লাগলো।কিন্তু শক্ত-পোক্ত কাঠের মতো শরীরটার সাথে তার এই লিকলিকে ছোট্ট শরীর’টা পেরে উঠলো না।আরিমা খানিক সময় বাদেই হাঁপিয়ে উঠলো।
-এই তোমার শক্তি?তাছাড়া এতদিন আমার সান্নিধ্যে আসার জন্য ছটফট করেছো।এবার আমি নিজ থেকে তোমার কাছে এলাম।এখন ছটফট করছো কেনো?
‘এই বলে ফায়ান আরেকটু চেপে ধরলো আরিমাকে নিজের সাথে।আরিমা না পেরে ফায়ানের পাঞ্জাবী’র কলার শক্ত করে হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।
‘আগে আগে নাদিম আর আরহাম হেঁটে চলেছে।নাদিম আরহামের হাত ধরে হেঁটে চলেছে।পিছনে সে ভুলেও তাকাবে না।এদিকে আরিমা ড্যাব’ড্যাব করে ফায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।নেতা সাহেবের হলো’টা কি?ভূত চেপেছে মাথায়?
***
‘শেখ ভীলায় আবহাওয়া গরম।রাজ ঘরের জিনিস-পত্র ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে।ফায়ান তার সম্পুর্ন প্ল্যান নষ্ট করে দিয়েছে।রাগে রাজের হাত পা কাঁপছে।
-কি হলো?এভাবে মৃগী রুগীর মতো কাঁপছো কেনো?
-বাবা,ভালো হবে না কিন্তু।
‘রায়হান শেখ কিটকিটিয়ে হাসছে,,
-কেনো বাবা ভুল কি বলেছি?ফায়ানের সাথে লাগতে গেলে এমনি হয়।
-তুমিও তো লাগতে গিয়েছিলে।আমার থেকে করুণ অবস্থা হয়েছিলো তোমার।গোটা এক দিন এক রাত জেলে ছিলে।বাহিরের হাওয়া’ও খেতে পারোনি তুমি।আবার আমাকে বুঝাতে এসেছো?
‘রায়হান শেখ কিছুটা দমে গেলো ছেলের কথায়।
-শোনো বাবা,এইবার লুকোচুরি নয়।সামনা-সামনি যুদ্ধে নামতে হবে।নাহলে পাখি হাতছাড়া হয়ে যাবে!
***
‘আরিমা বোকা বনে আছে।তার সামনে ছয় ভেড়ার ছানা গাল ফুলিয়ে বসে আছে।কি আশ্চর্য,এবার তাদের রাগ ভাঙাতে হবে নাকি?
-চলে গিয়ে ভালোই করেছিলি ফিরে এলি কেনো?
‘বেলা ফোন ঘাটতে ঘাটতে কথা’টা বললো।কারো কোনো টু শব্দ না পেয়ে এক পলক সবার দিকে তাকালো সে।তারপর বোকা বোকা হেসে বললো।
-না মানে।বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম তো তাই,,
-তাই এসব বলছিস?সারাদিন বয়ফ্রেন্ডের লুঙ্গী ধরে বসে থাকিস।এখানে কি?যা তুই।
-তাতে তোর সমস্যা কই রে অশুভ’র বাচ্চা।আমার বফ লুঙ্গী পরে না।সে অনেক স্মার্ট। তোর মতো ছাপড়ি না।
-ক…….
‘আরিমা সবাইকে থামিয়ে দিলো।আরহাম ড্যাবড্যাব করে সবাইকে দেখছে।এরা কারা?এত কথা কীভাবে বলে?
‘ফারহা দিয়াজ’কে আরহামের পাশে বসালো।আরহামের চেয়ে দিয়াজ ছোট, মাত্র হাঁটতে শিখেছে বেচারা।
‘আরহাম বাবু’টার সাথে খেলতে লাগলো।কিছু সময় পর’পর খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে আরহাম।আরিমা সেদিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।আরেকটু হলেই এই হাসি’খুশী বাচ্চা’টাকে হারিয়ে ফেলতো সে।নিজের ভুলের জন্য।ভাবতেউ বুক’টা কেঁপে উঠলো আরিমা’র।
‘সবাই একবার আরিমা’র দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার আরহামের দিকে তাকাচ্ছে।
-আচ্ছা আরু,বাচ্চাটা কার?
-কার মানে কি?বাচ্চাটা আমার।
‘ফারহা আরিমার কথা শুনে বিষম খেলো।আরিমার বাচ্চা আছে?আর সে জানলো না।
-আসলেই এই বাচ্চা তোর?
‘সিমরানের দিকে রাগী চোখে তাকালো আরিমা।
এতে সবাই চুপ।কিছুক্ষণ পর মনির শুধালো,,
-আচ্ছা বাচ্চা’টা তোর মানলাম। বাচ্চার বাবা কোথায়?তোর হাজবেন্ড?
‘আরিমা একবার আরহামের দিকে তাকিয়ে বললো,,
-মা’রা গেছেন।
-কতো বছর হবে উনি মা’রা গেছেন?
-চার বছর হবে।
-কীভাবে মা’রা গেছেন তিনি?
প্রশ্ন’টা করে সবাই একটু নড়ে’চড়ে বসলো।আরিমা যেভাবে উত্তর দিচ্ছে মনে হচ্ছে সব সত্যি।
-আ..আগুনে পুঁড়ে।
‘কথাটা বলতেই আরিমার চোখ থেকে কিছু পানি বেরিয়ে টপকে তার হাতের উপর স্থান পেলো।ততক্ষণে ফায়ান রুমে চলে এসেছে।ফায়ান এসে আরিমা’র হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো।
‘সবাই ‘থ, বোকা বনে আছে ছয় ভেড়ার ছানা’রা।ফায়ান কোথায় নিয়ে গেলো আরিমা’কে?
***
-নাদিম সব রেডি তো?
‘নাদিম মাথা নাড়ালো।এদিকে মোহনা আর সোনালী, থমথমে মুখশ্রী নিয়ে সোফায় বসে আছে।জিসান আর দিশা ফায়ানের দিকে হাবলার মতো তাকিয়ে আছে।
‘ফায়ান আরিমা’কে সোফায় বসিয়ে দিলো।তারপর আরিমা’র দিকে একটা পেপার এগিয়ে দিয়ে বললো,,
-সাইন করো।
‘আরিমা ভ্রু কুঁচকে বসে আছে।একবার ফায়ানের দিকে তাকাচ্ছে’ও না।ফায়ান তা দেখে শান্ত কন্ঠে আরিমা’র কানের কাছে গিয়ে ফিস’ফিস করে কিছু বললো।কিয়ৎক্ষণ বাদেই আরিমার চোখ খুশীতে চিকচিক করে উঠলো।এতো বড় সুযোগ সে কিছুতেই হাতছাড়া করতে পারবে না।এতো বোকা আরিমা না।
‘ফায়ানের হাত থেকে পেপার’টা নিয়ে একবার চোখ বোলালো আরিমা।রেজিস্ট্রি পেপার এটা।আরিমা ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি ঝুলিয়ে সাইন করে দিলো।
‘আরিমা’র কান্ডে ফায়ান প্রথমে ভড়কালেও নিজেকে ধাতস্ত করে নিলো ফায়ান।
আরিমার কানে কোনো মধুর বাক্য ঘুঁজে দেয়নি সে, যার কারণে আরিমা হাসবে।মেয়েটার মনে কি চলছে কে জানে?তাছাড়া ফায়ানের মনে কি চলছে তার খবর কি ফায়ান জানে?
‘সবাই পর’পর নিচে এসে এহেন কান্ড দেখেই হতবাক।ফায়ান সবাই’কে আরো চমকে দিয়ে বললো, আরিমা আর তার বিয়ে ধুম’ধাম করে হবে।আগামী শুক্রবার আমাদের বিয়ে আবার হবে।কোনো প্রেস-মিডিয়া,কেউ যেনো বাদ না যায়।আরিমা পুতুলের মতো বসে আছে।এতে তার কোনো হেলদোল নেই।
-আর হ্যাঁ,, বাচ্চাটার দায়িত্ব আমি নিতে রাজী।
‘বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে ফায়ান।
‘সবাই ভাবছে ফায়ানের হলোটা কি?তার মনে কি চলছে?যা চলছে তা কি আদৌ ভালো কিছু?এতকিছুর মাঝে কেউ খেয়ালই করেনি আফরিদ’কে।যে মাথা নিচু করে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে।চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু পানির ছাপ।
চলবে,,
(ভুল’ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ঘটনা মূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ)