#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘খান ভীলায় হতাশা’র ছাপ।বিয়ের সব জোগাড় শেষ।লোকজন আসতে শুরু করে দিয়েছে।তারা এসে সবার আগে জিগ্যেস করছে,এমপি সাহেব কোথায়?তাকে দেখতে পাচ্ছি না কেনো?
‘তাদের অনেক কষ্ট করে দমিয়ে রেখেছে জাভেদ আর ফিরোজ।তারা তাদের ছেলের কান্ডে হতাশ।কোন না কোন মেয়েকে বিয়ের জন্য উঠে’পড়ে লেগেছে।সে আবার বিয়ের দিন পালিয়েও গেছে।এখন এত গুলো লোককে যাচ্ছে তাই বোঝ দিতে হচ্ছে।
‘ফারহা চারপাশে খুঁজেও কাঙ্খিত সেই মানুষটিকে না পেয়ে হতাশ হলো ভীষণ।শেষে বন্ধু’মহলের কাছে চলে গেলো আড্ডা দিতে।
-তোরা এতো শান্ত কীভাবে?
‘বেলার কথা’তে সবাই তার দিকে তাকালো।একসাথে এত গুলো দৃষ্টি বোধহয় বেলা নিতে পারলো না।তাই তার কাঁশি উঠে গেলো।সেই সুযোগে মনির তার পিঠে ধুপ’ধাপ কয়েকটা লাগিয়ে দিলো।
বেচারি না পারছে কিছু বলতে না পারছে সইতে।
-অঞ্জ’নার বয়ফ্রেন্ড,তুই আমাকে মা’রলি কেন শা’লা?
‘রাগে বেলা হিস’হিস করছে সাপের মতো।
-এই কাল নাগিনী, এভাবে হিস’হিস করছিস কেনো?আর মোটেও আমাকে অঞ্জ’নার বয়ফ্রেন্ড বলবি না।আমি তো মনির খান না।এটা তোকে কতো বার বুঝালে বুঝবি তুইইই?
‘মনির বেলার গলা টেবিলের সাথে চেপে ধরলো।বেলা ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারছে না।এদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে সবাই জোর’সে মনিরের হাত ধরে টেনে বেলার থেকে ছাড়িয়ে আনলো।
বেলা হাপাচ্ছে,বেশ ভয় পেয়ে গেছে মনে হচ্ছে।মনির এরকম করবে সে ভাবেও নি।এদিকে মনিরের হাত আফরিদ আর শুভ ধরে আছে।সেই সুযোগে ঠা’সস করে গালে একটা থা’প্প”ড় লাগিয়ে সেখান থেকে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো বেলা।
‘সবাই হা করে বেলার যাওয়ার দিকে তকিয়ে আছে।
এতো তাড়াতাড়ি এরকম কান্ড ঘটবে,তা কেউ-ই ঠাহর করতে পারে নি।
-এটা কি করলি শা’লা।দিলি তো মেয়ে’টাকে কাঁদিয়ে।এমনিতেই মেয়ে মানুষ। তার’উপর জাঁদরেল।নে সামলা যা।
‘বলেই মনির’কে ধা’ক্কা দিয়ে সামনের দিকে ঠেলে দিলো শুভ।বেচারা মনির নিজেও ভাবতে পারেনি এরকম কিছু ঘটবে।সে মাথা চুলকে বেলার যাওয়া রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলো।
-আচ্ছা আফরিদ তোকে একটা কথা আস্ক করি?
‘আফরিদ তখন বিয়ার খাচ্ছিলো।সিমরানের কথায় বিয়ারের বোতলে ঠোঁট লাগালো,তারপর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
-আরিমা’র বিয়ের দিন দেখেছিলাম,কিছু নিয়ে তুই আপসেট ছিলি।আরিমার বিয়ে নিয়ে তো মোটেও এরকম ছ্যাকা’খোর ভাবে ছিলি না।
-শুনবি?
-অবশ্যই।
-আচ্ছা,সবাই গোল হয়ে বোস।
‘আফরিদের কথায় সবাই চেয়ার ছেড়ে মেঝে’তে বসে পরলো।
-এর জন্য ফ্ল্যাশব্যা’কে যেতে হবে।
-আমরা প্রস্তুত।
_উক্কে……
ফ্ল্যাশব্যাক
‘সেদিন তোদের সাথে দেখা করার কথা ছিলো আমার।তোদের সাথে দেখা করে বাড়ি’র দিকে রওনা হলাম।অটো করে যাওয়ার সময় আমার পাশে বসে থাকা একজন লোক আমাকে বললো,,
-ভাই,আপনার মোবাইল টা দিবেন?ব্যালেন্স শেষ আমার ফোনে।
‘আমিও আমার মোবাইল দিয়ে দিলাম।উনি মোবাইলে কাউকে কল লাগাচ্ছিলেন।কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাচ্ছিলো বারবার।আমি বেশি খেয়াল করলাম না তার দিকে।
‘গাড়ি কিছু দূর যাওয়ার পরেই আবার ইউ’টার্ন মারলো।
আমি এবার ঘাবড়ে গিয়ে পাশের লোক’টাকে কিছু বলবো তার আগেই আমার মুখে রুমাল চেপে ধরলো লোকটা।সেখানেই জ্ঞা’ন হারালাম আমি।
-তারপররররর?????
‘সবার উচ্চ আওয়াজের প্রকপে আফরিদ নিজের কান চেপে ধরলো।
-থামবি তোরা??পা’ঠা কোথাকার!
-আমরা পা’ঠা না,তুই পা’ঠা।
-ও হ্যাঁ, তোরা তো পা’ঠি।
-ইফরিত্বেরররর বাচ্চা।
-থাম তোরা।আমার কাহিনীর মাঝে কথা বলিস না’তো।আবার শোন।
Flashback
‘যখন জ্ঞা’ন ফিরলো তখন দেখলাম একটা গাছের সাথে বাঁধা আমি।মাথা’টা কেমন ঝিম’ঝিম করছে।ঝাপসা চোখে সামনে তাকিয়ে দেখলাম। ভূতের মতো একটা খাম্বা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
একবার মাথা নাড়ালাম।তারপর আবার তাকিয়ে দেখলাম ওটা খাম্বা নয়,একটা মানুষ’রূপী ভূতুড়ে খাম্বা দাঁড়িয়ে আছে।
-কে আপনি?আমাকে ধরে এনেছেন কেনো?
‘ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ আসলো না।
-কে আপনি?কথা বলছেন না কেনো?
-আমার পরিচয় জেনে তোমার কাজ নেই বাচ্চা।
আমি যা বলছি তা শোনো।
-কি বলবেন আমাকে?আমি শুনবোই বা কেনো?কে আপনি?
-আগে শোনো।
-শোনলে ছেড়ে দিবেন?
‘লোকটা হাসলো।
-অবশ্যই।
-তুমি তোমার ভাই নাদিম হাওলাদার’কে সৌহার্দ্য ফায়ান খা’নের কাছে খারাপ বানাবে।
-হোয়াট ননসেন্স। কক্ষনো না।
-হুশশশশশ!
-আগে শোনো পুরোটা।ফায়ানের কানে এই খবর পৌঁছে দিবে যে।নাদিম ফারহা’র প্রতি দূর্বল। তারপর বাকিটা ফায়ান দেখে নিবে।
‘বলেই খ্যাক’খ্যাক করে হাসতে লাগলো লোকটা।
-আপনার কথা আমি কেনো শুনবো?হু আর ইউ?
-হু আই এম?বলবো,অবশ্যই বলবো।কেনো বলবো না?
শোনো বাচ্চা।তুমি আমার কথা অনুযায়ী কাজ না করলে…..
‘লোকটা পকেট থেকে ফোন বের করলো।তারপর একটা ভিডিও প্লে করলো।
যেখানে দেখা যাচ্ছে ভাইয়া গাড়ি করে বাসায় ফিরছে আর তার পাশের গাড়ি’তে একজন লোক বন্দুক তাক করে আছে।
‘ভিডিও টা দেখে আমার ভাবনা’রা যেনো খৈ হারালো।
ঠিক তখনই লোকটা বললো,,
-দেখো বাচ্চা।তুমি যদি আমার কথা অনুযায়ী চলো তাহলে তোমার ভাই বেঁচে যাবে।ফায়ান এতটাও নির্দয় নয় যে তার বিশ্বস্ত কর্মচারী’কে একেবারে মে’রে দিবে।কিন্তু তুমি যদি আমার কথা না শোনো।
জানো তো বাচ্চা।আমি প্রচুর নির্দয়।
-আমি রাজী,প্লিজ আমার ভাইয়ার কোনো ক্ষ’তি করবেন না।সে ছাড়া আমার আর কেউ নেই প্লিজ।
-আহা বাচ্চা কাঁদে না।আমার কথা অনুযায়ী চললে তোমার ভাইয়ের কিছুই হবে না।
-আমি রাজী।
-গুড বয়।
‘তারপর লোকটা আমার গায়ের দঁড়ি খোলে দিলো।
লোকটা যেতে যেতে বললো।
-আমার কথার নড়চড় যেনো একদম না হয়,নইলে বুঝতেই পারছো?
নিশান্ত রাজ শেখ কখনো ডায়লগ মারে না।কাজ করে দেখায়।
Flashback end
‘সবাই টা’স্কি খেয়ে বসে আছে।এতকিছু ঘটে গেছে আর সে কিছু বলেই নি তাদের?আর এখন দেখো।আরাম’সে বিয়ার গিলছে।শা’লা খা’চ্চর।
-কিন্তু তুই ওই ব্যা’টাকে হামলা করিস নি কেনো?আমি থাকলে ওখানেই হাফ সেঞ্চুরি করে আসতাম।
‘আফরিদ খিক’খিক করে হাসতে হাসতে বললো,,
-হ্যাঁ,আমি সেঞ্চুরি করতে যেতাম আর ওই ভূতুড়ে খাম্বা আমাকে ছয় টা’ও মারতে না দিয়ে আমাকে মে’রেই সেঞ্চুরি করে দিতো।
-কেনো?
-উনার পাশে গার্ড ছিলো।
‘সবাই আবার নেতিয়ে গেলো।চট করে সিমরান বললো,
-তাহলে তুই এতো শান্ত কীভাবে?
-ফায়ান স্যার সব জেনে গেছিলো।তাই আরিমা’কে বিয়ে করে নিয়েছে।
-কিন্তু এর মাঝে আরিমা এলো কোথা থেকে?
-আরিমা স্যারের বউ হয়ে গেলে।ফারহা বাসা থেকে বের হবে না।বিয়ের যান’জটে সবাই ব্যাস্ত থাকবে।ফারহাও গার্ডদের সাথে থাকবে।
-কিন্তু অন্য উপায়’ও তো পাওয়া যেতো।
-আমি কি জানি?স্যার’কে বল গিয়ে।
‘সবাই আবার চুপ’চাপ।
***
‘ফারহা ওয়াশরুমে এসে মুখে পানি দিচ্ছে।ট্যাপের পানির সাথে করে চোখের পানিও ঝড়ছে।
নিজেকে কেমন অসহায় লাগছে।
-নিশান্ত রাজ, আমি আপনাকে যে মন দিয়ে বসে ছিলাম।
***
‘চারপাশে পিন’পিনে নিরবতা বিরাজ করছে।কাজী বহু সময় যাবত কাগজ কলম নিয়ে বসে আছে।এদিকে কণে রাজী হচ্ছে না।বিপদ এসে ঘাড়ে চেপেছে তার।এখান থেকে কে’টে পরতে পারলেই বাঁচা যায়।
-সাইন করবে না?
-কক্ষনো না।আমার স্বামী থাকতে তোমাকে কখনোই বিয়ে করবো না।
-তোর স্বামী?আরেকবার এই কথা বলে দেখ।
‘রাজ রাগে গড়গড় করছে।আজকে কিছু একটা করে ফেলবে সে।
-দেখ,তুই আমাকে বিয়ে করবি না?
-অফকোর্স নট।আমার স্বামী জীবিত আছে এখনো।
-মে’রে দেবো তাকে আমি।
‘আরিমা হেসে দিলো।তারপর বললো,,
-তুমি মা’রবে?নেতা সাহেব’কে?নাইস জোক্স।
-এই পাখি।তুমি না আগে আমায় চোখে হারাতে?এখন কেনো ভালোবাসো না আগের মতো?
‘বলতে বলতে রাজ আরিমার গাল হাতের আঁজলায় ভরে নিলো।আরিমা তবু ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।
-বাসো না ভালো আগের মতো আমাকে।
-ভালোবাসবো?তাও তোর মতো কীট কে?আগে আমি বড্ড বোকা ছিলা। তাই একজন খুনি’কে মন দিয়ে বসেছিলাম।তোর সাথে এখনো ভালো ব্যাবহার করছি দেখে ভাবিস না,আমি সব ভুলে বসেছি।
‘এবার রাজ তার গাল চেপে ধরলো!
-তুই আমাকে কি করবি?পুঁচকে মেয়ে একটা। তোর দূর্বলতা আমি জানিনা ভেবেছিস?খ’ত’ম করে দিবো।
যেভাবে খ’ত’ম করেছিলাম রামিশা’কে।
‘আরিমার চোখ দুটো মুহুর্তেই জ্বলে উঠলো।সে রাজের হাত দুটো ধরে পিছনে মুড়িয়ে নিলো।তারপর তার এক হাতের কনুইয়ের সাহায্যে রাজের গলা আঁকড়ে ধরলো।জোরে চেপে ধরে আছে আরিমা রাজের গলা’টা।
রাজ হাস’ফাঁস করছে।কিছুতেই ছুটতে পারছে না।আরিমার হাতে এতো শক্তি এলো কীভাবে তা বোধগম্য হলো না রাজের।
‘ঠিক তখনই ফায়ান আর নাদিম প্রবেশ করলো।আরিমার এমন রুপ দেখে নাদিম ভড়কালো।কিন্তু ফায়ান নির্বিকার।
-কুত্তার**** তুই কি ভেবেছিস।আমি কিছুই জানিনা?সব ভুলে গেছি?সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম।তোকে তিলে তিলে মা’রবো আমি।
আমার সব কষ্টের কারণ তুই।একমাত্র তুই-ই আমার জীবন ন’র’ক করে তুলেছিস।
‘পর’পর কয়েকটা পা’ঞ্চ মে’রে দিলো রাজের মুখে আরিমা।তারপর তাকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেললো।
-আমার এতকিছুর পিছনে দায়ী তোরা!তোরা-ই না আমাকে ট্রেনিং করিয়েছিলিস?ভুলে গেছিস সব?তোরা-ই আমার জীবন ন’রক করেছিস।কি ভেবেছিস আমি জানিনা?তোকে ভালোবাসা’টা আমার জীবনের প্রথম ভুল ছিলো।দ্বিতীয় ভুল হলো তোকে বাঁচিয়ে রাখা।
‘আরিমা রাজের চুল টেনে ধরলো।এদিকে কয়েকটা ঘুসি খেয়ে রাজের অবস্থা বেহাল।সে আরিমা’কে ধা’ক্কা দিয়ে পালাতে গেলে ফায়ান বলে উঠলো,,
-পালাতে চেষ্টা করো না।লাভ হবে না।
‘নাদিম এগিয়ে এসে রাজ’কে ধরে বাহিরে নিয়ে এলো,সেখানে আগে থেকেই পুলিশ দাঁড়ানো ছিলো।
নাদিম রাজ’কে দিয়ে এসে ফায়ানের পাশে দাঁড়ালো।আরিমার কথা নাদিমের মাথার উপর দিয়ে গেছে সব।একটা ব্যাপার সে বুঝতে পেরেছে,এক সময় আরিমা রাজ’কে ভালোবাসতো।
-তা বউ,আপনার কাজ শেষ হলে যেতে পারি?আমার বাচ্চা’টা অপেক্ষায় আছে আপনার।
‘আরিমা চোখ তোলে ফায়ানের দিকে তাকালো।সে এই অবস্থায় বিয়ে করবে কীভাবে?
-চিন্তা করো না বউ,ইতিহাসে এই প্রথম কোনো মেয়ে হুড়ি পড়ে কপালে রক্ত শুকিয়ে যাওয়া অবস্থায় বিয়ের পিড়িতে বসবে।
‘বলেই ফায়ান আরিমাকে কোলে তোলে হাঁটা লাগালো।
-আপনার সমস্যা কি?যখন তখন কোলে উঠিয়ে নিন কেনো?লু’ইচ্চা নেতা সাহেব।
-চুপ করবে?আমার সমস্যা হচ্ছে।কোল থেকে ফেলে দিবো একদম।
‘আরিমা ফিস’ফিস করে বলে উঠলো,,
-অন্যদের দেখি বউ পকপক করলে বর চুমু দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়,আর এই ফ’ট’কা আমাকে থ্রে’ট দিচ্ছে।
‘আরিমার কথা শেষ হতেই ফায়ান মুখ বাঁকিয়ে হাসলো।তার বউয়ের তর সইছে না।
‘এদিকে নাদিম মুচকি মুচকি হাসছে,তাদের কান্ড দেখে।অতপর একটা স্বস্তির শ্বাস ফেললো সে।যাক আপাতত পরিবেশ ঠান্ডা!
চলবে,,
(আসসালামু আলাইকুম,আজকে পর্ব বড় করে দিয়েছিগঠনমূলক বড় বড় কমেন্ট চাই,!আর আস্তে আস্তে সব রহস্য খোলাসা করবো।একটু অপেক্ষা করুন আপনারা।আর পাশে থাকবেন)