(প্রথম অংশ)
#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘কে’টে গেছে বেশ কয়েকদিন।যে যার মতো নিজেদের কাজে ব্যাস্ত।ভোড়ার ছানা গুলো ভার্সিটি নিয়ে পড়ে আছে।নাদিম ফারহা’র সামনে কম কম আসার চেষ্টা করে।কিন্তু ফায়ান তাকে কোনো না কোনো বাহানায় ফারহার সাথে সাক্ষাৎ করাবেই।বেচারা না পারে বলতে আর না পারে সইতে।
‘এদিকে আরিমা ফায়ানে বোধ হয়ে আছে।ফায়ানের মতি’গতি ঠিক ঠাহর করতে পারছে না সে।
রোজ’কার মতন ফায়ান ভোরে বেরিয়ে যায়।আর গভীর রাতে বাসায় ফিরে।আরিমা অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়েই পরে। ফায়ান নিজ দায়িত্বে তাকে রুমে দিয়ে আসে।দু’জনের একজনও রাতে খেতে পারে না।
‘বলা যায় ইচ্ছে করেই খায় না।আরিমা’র মায়াবী আদলের দিকে তাকিয়ে ফায়ান আর ঘুম ভা’ঙাতে পারে না।মায়া হয় তার।তাই নিজেও আর খায় না।
আরিমা এতে রাগ করলেও তার নেতা সাহেব’ও এক কথার মানুষ!
বেশি বাড়াবাড়ি করলে ফায়ান বলে,,
-বউ না খেলে বর কীভাবে খেতে পারে?আর তোমাকে কে বললো আমি খাই না?খাই তো।এই যে ঘুমানোর আগে তোমাকে চুমু খাই।এটার কাছে বাকি খাবার তুচ্ছ।
‘আরিমা হতাশ হয়ে তখন ফায়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে।কিচ্ছু বলার নেই।বিয়ের পর প্রচুর বদলেছে ফায়ান।
***
‘আজকে আরিমা ভার্সিটি’তে যায়নি।তার অবশ্য কারণ আছে।আরহামকে একদম-ই সময় দেওয়া হয়ে উঠে না তার।তাই আজ আরহামের সাথে সে সারাদিন আড্ডা দিবে।
‘ঘুম থেকে উঠে চুলে খোঁপা করতে করতে আরহামের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো আরিমা।
আরহাম এখন ফারহা’র সাথে থাকে।তাকে টানলেও আসে না।কি জানি ফারহা তাকে কি বুঝিয়ে’ছে।
‘আরহাম’কে রুমে না পেয়ে ড্রয়িং’রুমে এলো আরিমা।সেখানে আরহাম মনযোগ সহকারে কার্টুন দেখছে।
আরিমা আরহামের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তারপর কিচে’নের দিকে গেলো।
-এ’কি বউমা।সাত’সকালে রান্না ঘরে কি করছো তুমি?
-বউমা’রা তো রান্না ঘরেই থাকে।
-তুমি নতুন বউ।ক’দিন ভালো’ভাবে কাটাও।তারপর আমিই নিজ দায়িত্বে সংসারে’র চাবি তোমাদের দুই বউয়ের হাতে তুলে দিবো।কি বলিস ছোটো?
‘মোহনার কথায় সোনালী সায় জানালো।
তারপর বললো,,
-নাও মা।এই পায়ে’সের বাটিটা দাদু ভাইয়ের কাছে নিয়ে যাও।দাদু ভাই নাকি পায়েস বেশ পছন্দ করে?আমি নিজ হাতে বানিয়েছি।যাও
-কিন্তু,আমি একটু কাজ করে দিয়ে তারপর যাই?
-আমরা তিন’জন আছি না রান্না ঘরে?তুমি যাও তো।আমার দাদু ভাই’টা না খেয়ে আছে।
‘আরিমা একবার কাজের মেয়েটার দিকে তাকালো।সে উৎফুল্ল দৃষ্টিতে আরিমার দিকে তাকিয়ে আছে।আরিমা কিছুই বুঝলো না ব্যাপারটা।
-ভাবি’রা কোথায়?
-তারা একটু বাহিরে গেছে।
‘আরিমা ‘আচ্ছা’বলেই সেখান থেকে চলে এলো।তারপর আরহা’মকে এসে পায়েস খাওয়াতে লাগলো।
-কি’রে ওদের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
‘মোহনার কথায় সোনালী আরহামের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।
-কোনো অপেক্ষা।ঝুট-ঝামেলা ছাড়াই আমি একটা নাতি পেয়ে গেছি।দেখছো না।আমার হাতের পায়েস কতো আয়েস করে খাচ্ছে?
-ও তো তোর হাতের রান্না বরাবরই মজার হয়।
-বা’রে ভাবি।তোমার হাতের রান্না তো আমার থেকেও মজার।
‘কাজের মেয়েটা দু জা’র দ্ব’ন্দ্ব দেখে বলে উঠলো,,
-চাচি’আম্মা!আপনাদের দুজনের হাতের রান্ধন’ই লা’জাবাব!যাকে বলে বুটি’ফুল (বিউটিফুল)।
‘মোহনা এবং সোনালী একসাথে হেসে দিলো।
হাসার শব্দ পেয়ে আরিমা আর আরহাম তাদের দিকে তাকালো।তারপর তারাও মৃদু হাসলো।
***
-শুনছেন?
‘আরিমা’র মিনমিন কন্ঠে সোনালী তার দিকে তাকালো।
-হ্যাঁ মা বলো।কিছু দরকার?
-আসলে আমি একটু বাহিরে যেতে চাচ্ছি।আরহাম’কে স্কুলে ভর্তি করাবো তাই।
-হ্যাঁ যাও।সমস্যা নেই তো।
-ধন্যবাদ আন্টি।
‘বলেই মুচকি হাসলো আরিমা।
-আন্টি কেনো বলছো মা?আমাকে মা ডাকবে।
-কিন্তু।আন্টি আমি তো কাউকে মা ডাকি’নি কখনো।তাই হয়তো মনে থাকে না।পরের’বার থেকে ট্রাই করবো।
‘বলেই মোহনা আর সোনালী’র থেকে বিদায় নিয়ে ছাদ থেকে নেমে এলো আরিমা।তারপর চোখ থেকে বেয়ে আসা অশ্রু’কণা একটু আঙুলের সাহায্যে তুড়ি মে’রে ফেলে দিলো।
-শাস্তি দিবে সে।কঠোর শাস্তি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।যারা তাকে এতিম বানিয়েছে।তাকে মায়ের আঁচলে থাকতে দেয়নি।যারা বাবার আদর পেতে দেয়নি তাকে।শেষমেশ বোনটা’কেও তারা কেড়ে নিয়েছে।ছাড়বে না সে কাউকে।তার মনে এখন দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।প্রতিশোধের আগু, দাবানল জ্বলছে তার মনে।
‘এদিকে মোহনা আর সোনালী একে’অপরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।
“মেয়েটার কি বেশিই কষ্ট?
***
‘ফারহা আর বাকি’রা সহ ক্যাম্পাসে আড্ডা দিচ্ছে।আড্ডার মূল টপিক হলো,মনির আর বেলা এ নিয়ে আটত্রিশ বা’রের মতো ব্রেকআপ করলো।আর তাদের ট্রিট’ও এই নিয়ে আটত্রিশ’বার।
-দোস্ত কেউ এই ক’দিনে এতবার ব্রেকআপ করতে পারে?তোদের না দেখলে জানা হতো না আমাদের।গিনেস বুকে নাম চলে যাবে তোদের।চালিয়ে যা।
‘পিৎজার একাংশ মুখে পু’রতে পু’রতে কথাটা বললো শুভ।তারা ওয়াদা করিয়েছিলো বেলা আর মনির’কে দিয়ে।যখন ব্রেকআপ হবে।তাদের ট্রিট দিতে।কারণ রিলেশনে’র ট্রিট তারা দেয়নি।
‘তখন মনির’রা বড় গলায় বলেছিলো,”আমরা ব্রেকআপ করলে তো”
কিন্তু তাদের কথা মিথ্যা প্রমানিত হয়ে দিনে তিন/চার’বার ব্রেকআপ করে বসে থাকে এরা।তখনই বন্ধু মহল উড়ে আসে তাদের থেকে ট্রিট নেয়ার জন্য।
‘বেলা একটা কোক্ ধরতে নিলেই তার হাতে থাপ্প’ড় মারে ফারহা।খেতে খেতে ফারহা বলে,,
-এসব আমাদের জন্য। দূরে থাক মহিলা।
‘বেলা মনিরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।মনিরও তাই!তারা দু’জন চোখে চোখে কথা বলছে যেনো।
“ভাই আর জীবনেও ব্রেকআপ করবো না প্রমিজ!
***
-আপা আপা,এমপি সাহেব আইছে।
‘চম্পা খানম পানের পিক তার বরাদ্দ’কৃত স্থানে ফেললো,তারপর রহস্য’ময় হাসি দিয়ে বললো,,
-বাহ,আজকে যে এমপি ছাহেব আমার দরবারে?ব্যাপার কি এমপি ছাহেব?মা’ল লাগবো নি?
‘ফায়ান চোখ গরম করে চম্পার দিকে তাকালে চম্পা চুপ হয়ে যায়।
-নতুন কোনো মেয়ে এসেছে?
‘চম্পা ভ্রু কুঁচকে ফায়ানের দিকে তাকালো।তার জানা মতে ফায়ানের চরিত্রে কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু মেয়েদের কথা জিগ্যেস করছে কেনো?
-কি হলো,কথা কানে যায় না?
-না!নতুন কোনো মাইয়া আছে (আসে) নাই।আছবে
(আসবে)আইজ রাইত্তের বেলা।
-সব ইনফরমেশন আমার চাই।এবং এখনি।
-ক্যা’লা?আপনেরে ক্যান দিবার যাইতাম?তারা আমার ডিম পারা হাছ(হাস)।তাদের দিয়া টাকা কামা’মু মিয়া।
-যদি পুলিশের হাতে উত্তম-মাধ্যম না খেতে চাও,আমি যা বলছি করো।
-তাদের ইনফরমেশন তো আমাদের দেয় না মিয়া।তবে হ্যা,রাইত দুইটাই এইহানে আছতে পারেন।তখন-ই তারা মাইয়া লইয়া আইবো।
‘ফায়ান কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসে।ফায়ানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে চম্পা বললো,,
-এমপি ছাহেব।একদিন আপনেরে পাওয়ানের লাইগা কি করতাম পারি?আপেনেরে দেখলে যে আমি আমার মইধ্যে থাইকতে পারি না।
***
‘আরিমা আরহাম’কে ভর্তি করে স্কুল থেকে বের হলো।মাস শেষ হতে কয়েকদিন বাকি।তারপর থেকে আরহাম স্কুলে যাবে।আরহামের খুশী যেনো ধরে না।সে পড়তে যাবে।
-মাম্মা চলো আইসক্রিম খেয়ে আসি।
-আইসক্রিম খাবে?কিন্তু যদি অসুস্থ হয়ে যাও তখন কি হবে হুম?
-উফফ মাম্মা।আরহাম অনেক স্ট্রং।তার মাম্মা সাথে আছে,অসুখ আমার কাছে আসতে নিলেই ক্যারাটে করে তাকে ফিরিয়ে দিবে।কি দিবে না?
‘আরিমা হাসলো আরহামের কথায়।বেশ পাকা পাকা কথা বলে তার ছেলে।
-তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো।আমি আইসক্রিম নিয়ে আসি?
-না মাম্মা আমিও তোমার সাথে যাবো।
-না সোনা।আমি এই যাবো এই আসবো।যাও গাড়িতে গিয়ে বসো!
-মাম্মামমমম!
‘আরহাম গাল ফুলিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।
আরিমা তা থেকে মুচকি হাসলো।সে অবশ্যই আরহাম’কে নিয়ে রাস্তার উপারে যাবে না।গাড়ি লক করে রেখে গেলো সে।পাছে যদি বিপদ হয় কোনো?
ছেলেটার কিছু হলে তার বাঁচা দুঃসাধ্য।
‘আরিমা আইসক্রিম ওয়ালার সাথে কথা বলছে আর বার-বার গাড়ির দিকে তাকাচ্ছে।তাড়াতাড়ি যেতে পারলেই হলো এখান থেকে।
-ম্যাডাম বিল টা দিন!
‘আরিমা ব্যাগ থেকে টাকা বের করে বিল মিটালো।
তারপর দ্রুত পদে গাড়ির কাছে আসলো,বাবা’টা গাল ফুলিয়ে আছে নিশ্চয়।
‘কিন্তু গাড়ি তে আরহাম’কে দেখতে পেলো না আরিমা।সাথে সাথে হাত থেকে আইসক্রিম মাটিতে পরে গেলো।আর দু’জন পথচারী বাচ্চা এসে আইসক্রিম গুলো কুড়িয়ে দৌড়ে পালালো।এতে আরিমার হুঁশ নেই।
সে আশে’পাশের সবাই’কে জিগ্যেস করতে ব্যাস্ত।কিন্তু কেউ কিছুই দেখেনি।এ’ও কি সম্ভব?
‘আরিমা রক্ত’চক্ষু নিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে।আরহাম তার সব।তার শেষ স্মৃতি। সে কিছুতেই দূরে যেতে দিবে না তাকে।ইশশ কেনো সে তাকে নিয়ে গেলো না।মা হিসেবে কি ব্যার্থ সে?তখন-ই ফায়ানের কল এলো।বাজতে বাজতে কে’টে গেলো।পর’পর তিনবার রিং হবার পর আরিমা রিসিভ করলো।
-হ্যালো,কোথায় তুমি?
-আ….আরহাম,
-আরহাম?কি হয়েছে আরহামের?তুমি কোথায়?
-আমি আমি স্কুলের সা…মনে,
-সেখানেই দাঁড়াও।আসছি আমি।
‘আরিমা কল কেটে দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো সামনের দিকে।হঠাৎ হুঁশ ফিরলো তার।কোথা থেকে খোঁজবে সে তার কলিজা’টাকে।কোথায় নিয়ে যেতে পারে আরহাম কে?
‘হঠাৎ হর্ণের তীব্র আওয়াজ আরিমার কানে এসে ঠেকলো।সে চোখ ঘুরিয়ে ফায়ান’কে দেখে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো।ফায়ানও নিজের অর্ধাঙ্গিনী’কে তার প্রশস্ত বুকে ঠাঁই দিলো।
‘ফায়ান কাছে’পিঠেই ছিলো তাই কম সময়ের মধ্যেই চলে এসেছে।
-নেতা সাহেব।আমার আরহাম,আমার ছেলে।আমার সন্তান।
-শান্ত হও!আমি আছি তো বউ।তুমি,আমি থাকতে আমাদের সন্তান’কে কেউ একটা আঁচড় অব্দি দিতে পারবে না।
-আমি শান্ত’ই আছি।খালি একটু এনার্জি দরকার ছিলো।পেয়ে গেছি।এবার আমার পালা।প্রত্যাক’টা পাপের শাস্তি দিবো আমি।
‘ফায়ান ভ্রু কুঁচকে তাকালো আরিমা’র দিকে।
-আপনি কি আমার সাথে যাবেন?
-অবশ্যই।বউয়ের সাথে যাবো না?আমার ছেলেকে যে ফেরত আনতে হবে।
‘আরিমার অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো ফায়ানের দিকে।কিন্তু ফায়ান তা গ্রাহ্য করলো না।আরিমা’কে নিয়ে গাড়িতে বসালো।তারপর নিজে ড্রাইভিং সি’টে বসলো।
-লোকেশন বলো।
‘ফায়ানের মুখশ্রী মুহুর্তেই গম্ভীর হয়ে গেছে।আরিমার থেকে ঠিকানা নিয়ে দ্রুত ড্রাইভিং করছে সে।পাছে না ছেলেটার কোনো ক্ষ’তি হয়ে যায়।
”আজকে খেলা এখানেই শেষ করবো মিস্টার রায়হান শেখ।আমার দূর্বলতা দেখে়ছো তুমি।কঠোরতা দেখো নি।নিজে ওয়াদা ভ’ঙ্গ করেছো।যা তোমার উচিত হয়নি।আমি আসছি। সবকিছুর বদলা নিতে পুষ্প আসছে।রেডি থেকো শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার জন্য।
‘এসব ভাবতেই আরিমা হাত মুঠো করে নিলো।ফায়া এক পলক আরিমার দিকে তাকালো।মেয়েটার চোখ জ্বলছে,মনে হচ্ছে কিছুর তীব্র আকাঙ্খা করছে সে।ফায়ানের চোখে মুখে গম্ভীরতার ছাপ স্পষ্ট। সে এই রহস্যের শেষ দেখে ছাড়বে।
চলবে,,,
(ভুল হলে ক্ষ’মার দৃষ্টিতে দেখবেন,আর গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ!)
#আমার_নেতা_সাহেব
#পর্বসংখ্যা_২০ (দ্বিতীয় অংশ)
#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘তিনশো পয়ষট্টি দিনে একটি বছর হয়,
আমার কাছে একটি দিনকে বছর মনে হয়,
‘বড় দুঃসহ যন্ত্রণা’য় কাটে প্রতিদিনের বছর,
জীবন যেনো শান্ত দীঘির জলের মতোই নিথর,
‘জীবন যেনো চলছে না,জীবন গেছে থেমে,
জীবন আমার হারিয়ে গেছে ভুল মানুষের প্রেমে,
‘জীবনের গাড়ি থামিয়ে দিলো শুধুই একজনা,
ইসাবেলা রে ইসাবেলা।সেই ইসাবেলা রে ইসাবেলা,
‘ঘুম আসে না দু’টি চোখে,
ইসাবেলা’কে হারানোর শোকে………
‘তিন……..
-প্লিজজজজজজজ এবার থামমমম ভাইইইই।
‘মনির গান থামিয়ে সবার দিকে তাকালো।ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো সে।ফারহা আর সিমরান কানে বালিশ চেপে আছে।আফরিদ কানে হেডফোন গুঁজে আছে।শুভ বেচারা বই দিয়ে কাজ চালাচ্ছে।কিন্তু কোনো ক্রমেই হচ্ছে না।তাই না পেরে মনিরকে থামতে বললো।
-আমার ভয়েস কি এতই খারাপ?
-বিশাল খারাপ দোস্ত গান বলিস না প্লিজ।
মনে হচ্ছে গান’টাকেই ধর্ষণ করলি তুই।
-এতো বিশ্রী ভয়েস তো ভূতেদেরও হয়না।
-ধুরর,বেলার সাথে কথা হয়না।ভাল্লাগে না।তাই তো মনির খানের গান গাচ্ছিলাম।তোরা সব মাটি করে দিলি?ছা’গ’লের দল।
‘সবাই একসাথে চিল্লিয়ে বললো,,
-ভেড়ার ছানা হবে।
‘মনির হকচকিয়ে গেলো।যাক তার আর এখানে থেকে কাজ নেই।বেলা’কে খুঁজে আনবে সে।শুধুই শুধুই রেগে বোম হয়ে থাকে।আর বলে ব্রেকআপ।এবার সে বুঝেছে ওর রিলেশন কেনো টিকতো না।
-এই তুই কোথায় যাচ্ছিস?
-কোথায় আবার?নিশ্চয়ই অঞ্জনা’কে খুঁজতে।
‘ফারহা’র কথায় সবাই সমস্বরে হেঁসে উঠলো।তখনই কারো কন্ঠে তারা ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।
-কি’রে বেলা,এতো জলদি কীভাবে এলি?
-ম্যাজিক।
-মজা করিস না তো।যেতে আসতে প্রায় এক ঘন্টা লাগবে আর তুই আধা ঘন্টার মাঝে কীভাবে সব আনলি?সব ঠিক’ঠাক এনেছিস?
-আরে হ্যাঁ, আসলে কি জানিস,একটা সুন্দর হান্ডু ছেলে বাইক নিয়ে বসে আছে।পিছনে পেসেঞ্জার নেই।আমি ভাবলাম সিঙ্গেল বেডার একটু শখ পূরণ করি।তাই তাকে বলে বাইকে উঠে জিনিস গুলো নিয়ে এলাম!
‘সবাই একসাথে বলে উঠলো,,
-তার মানে মনির শেষ?
‘বেলা কিছু বলল না।একবার মনিরের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।বেচারা মনিরের কাঁদো কাঁদো অবস্থা। এই প্লে গার্লের প্রেমে সে কেনো পরেছিলো।
-এসব মেলো’ড্রামা বাদ দিয়ে কাজে লেগে পর।ওরা এসে যাবে।
-কি কাজ করবো?
‘আফরিদের প্রশ্নে বিরক্ত হলো ফারহা।
-আরে ভেড়ার বা’চ্চা।আজকে আরহামের জন্মদিন।আমরা সেটা সেলিব্রেশন করবো।তাই বেলা’কে দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র আনিয়েছি।এখন ছাদে সব সাজাবো।চল তোরা।
-কিন্তু ওরা যদি চলে আসে?
-ওরা আসলে ভাইয়া সামলাবে।
‘সবাই ছাদের দিকে রওনা দিলো।আজকে খুব মজা হবে।
***
‘আরিমার দেয়া লোকেশন অনুযায়ী একটা শুন’শান রাস্তায় এসে থামলো তারা,বিকেল পড়ে গেছে।আর কিয়ৎক্ষণ বাদেই হয়তো মাগরিবের আজান হবে।ফায়ান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আরিমার দিকে তাকালো।জায়গা’টা থেকে মনে হচ্ছে না কাউকে কিডন্যাপ করে এখানে গুম করে দিবে কেউ।
‘আরিমা ফায়ানের দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে সামনে চলতে লাগলো।ভাগ্যিস আজকে থ্রি-পিস পরে এসেছে।শাড়ি বা বোরকা পরে আসলে বিপাকে পরতে হতো।
‘কিছুদূর এগোতেই একটা পুরাতন ভবন দেখতে পেলো তারা।সামনে প্রচুর পাহারাদার। এদের ডিঙিয়ে কীভাবে যাবে এটা ফায়ান ভাবছিলো।
‘কিন্তু আরিমা যাওয়া ধরলেই ফায়ান এক টানে তাকে কাছে নিয়ে এলো।তারপর ফিসফিস করে বললো,,
-পাগল হয়েছো তুমি?কমন’সেন্সের অভাব তোমার।ওদের সামনে গেলে আস্ত রাখবে তোমাকে?
-না নেতা সাহেব।ওরা আমার জন্য’ই অপেক্ষা করছে।আপনি এখানেই থাকুন নাহয়।
-শাট আপ।চলো দেখি,তোমাকে কেমন আপ্যায়ন করে তারা?
‘আরিমা আর ফায়ান দুজনেই এগিয়ে গেলো।বাড়ির সামনে দাঁড়ানো গার্ড’রা তাদের স্ব-সম্মানে ভিতরে যেতে বললো।তারাও ভিতরে ঢুকলো।
-ওয়েলকাম,ওয়েলকাম আরিমা এহসান পুষ্প। বাহ বাহ,নিজের বরকেও দেখি সাথে নিয়ে এসেছো?
ভে’রি ব্যাড।ভেরি ভেরি ব্যাড।তোমাকে আমি এটা শিখাই নি যে নিজের বিপদের সময় অন্যকেও বিপদে ফেলবে তুমি।
-আমি কাউকে বিপদে ফেলি নি রায়হান শেখ।তুমি নিজেই বিপদে আছো।এটা মাথায় রেখো।
-আরে আরে চট’ছো কেনো মামনি।সামনের চেয়ার’টাই বসো।
-আমি এখানে বসতে আসি নি।আমার ছেলে কোথায়?তাকে এনে দাও আমার কাছে।
-তোমার ছেলে?কে তোমার ছেলে?
‘একটু ভাবার অভিনয় করে বললো রায়হান শেখ।
-ও হ্যা,রামিশা আর রাজের ছেলে’?যাকে তুমি মাতৃ’পরিচয়ে বড় করলে?ইশশ রে।
-একদম চুপ।ও আমার ছেলে।কোনো রাজের সন্তান না ও।
-আহা হাইপার হচ্ছো কেনো মামনি?
-আমি আমার ছেলে ফেরত চাই।আর সেটা এক্ষুনি।
-তার আগে আমার যে কথা আছে তোমার সাথে।বসে কথা বলি?
-আমি কিছুই শুনতে চাই না।
‘রায়হান শেখ কন্ঠ’টাকে গম্ভীর করলেন।
-তুমি বড্ড ভুল করেছো পুষ্প।
এক.আমার কোটি কোটি টাকা লস করেছো।সেদিন রাতে তুমিই আমার লোকজনকে মে’রেছিলে।
দুই.আমার সবচেয়ে কাছের লোকজনকেই তুমি কবরে পাঠিয়েছো,যারা আমার বিশ্বস্ত ছিলো।
তিন.আমার ছেলে’কে মার’ধোর করে জেলে পাঠাতে চেয়েছিলে।
চার.আমার ছেলের ভালোবাসা’কে তুচ্ছ করেছো তুমি।
পাঁচ.নিজের ওয়াদা ভ’ঙ্গ করেছো তুমি।
‘আরিমা হাসলো,উচ্চস্বরে হাসছে সে।হাসতে হাসতে ফায়ানের কাঁধে ঢলে পরছে সে।কিন্তু হাসি থামছেই না।
চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রুকণা ঝড়ে পরার সাথে সাথে ফায়ান তা ধরে নিলো।তারপর চোখ দ্বারা ইশারা করে কাঁদতে মানা করলো।আরিমাও ফায়ান’কে আশ্বস্ত করলো।আজকে কিছু একটা করবেই সে।
-আমি তোমার কথা গুলোর উত্তর দিচ্ছি।আগে বলো আমার ছেলে কোথায়।
‘আরিমা বার’বার একই গন্ডিতে ফিরে আসছে দেখে বেজায় রাগ হলো রায়হান শেখের।তারপরও নিজেকে ধাতস্ত করে নিয়ে বললো,,
-দাদু ভাই যেখানে আছে ঠিক আছে।
-আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনা মিস্টার শেখ।
‘রায়হান শেখ অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো আরিমার পানে।
-কামাল দাদু ভাইকে নিয়ে আয়।
‘ একটা লোক আরহাম’কে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।আরহাম আরিমাকে দেখেই তার কাছে যাওয়ার জন্য চিৎকার করতে লাগলো।
-মাম্মা এখান থেকে নিয়ে যাও আমাকে।বুড়ো লোকটা আটকিয়ে রেখেছে আমাকে।আর বলছে তুমি নাকি আমার মাম্মা না।মাম্মা আমি তোমার কাছে যাবো।
‘আরিমা চোখ গরম করে রায়হান শেখের দিকে তাকালো।যেনো চিবিয়েই খেয়ে নিবে সে।
-এসব কিছু না বাবাই।তুমি একটু আঙ্কেলটার কাছে থাকো।আমি তোমাকে শীঘ্রই নিয়ে যাবো।
‘আরহাম চুপ হয়ে গেলো।তার মাম্মা যেহেতু বলেছে সেহেতু তাকে নিয়ে যাবেই।
এদিকে আরহামের দিকে তাকিয়ে রায়হান শেখ বললো,,
-ভালোই হাতিয়েছো অন্যের ছেলেকে।
-হ্যাঁ, সঠিক শিক্ষা’টাই দিয়েছি।যা তোমার মতো লোকের কাম্য নয়।
-মানে?কি বলতে চাইছো তুমি?
-তোমার উত্তর দিতে চাচ্ছি,,
এক.তারা পাপিষ্ঠ ছিলো।দুনিয়াতে তাদের আয়ু এতটুকুই ছিলো তাই তারা মা’রা গেছে।আমি তো কম কষ্ট দিয়ে মে’রে’ছি।না জানি ওপরওয়ালা তাদের কি করছে।সেটা জানিনা আমি।
দুই.তোমার বিশ্বস্ত কোনো লোককে আমি মা’রি নি।তারা আমার হয়েই কাজ করতো।ভাবলাম যারা সামান্য টাকা পেয়েই দল বদলাতে পারে,তারা আবার কখন জানি আমার পিঠে ছুরি মে’রে দেয়।তাই তো আমিই তাদের মে’রেছি।
‘আর কি বললে আমি তোমার কাছের লোকদের মে’রেছি? এটা বলেই আরিমা হাসতে লাগলো।চোখে মুখে তার বেদনার ছাপ।রায়হান শেখের ঘা’ম ছুটে গেলো।পুষ্প সব জেনে যায়নি তো।?
তিন.তোমার ছেলেকে জেলে নয়,নরকে পাঠাবো আমি।খালি একবার দেখে আসুক।বে’জ’ন্মা’টাকে মে’রে এখানেই পুঁতে দেবো।
-পুষ্প
‘রায়হানের ধমকে আরিমা গা দুলিয়ে হাসলো।
চার.তোমার ছেলে ভালোবাসার যোগ্য আদৌও?।ভালোবাসাও তাকে ঘৃণা করে মিস্টার শেখ।সে একটা নর্দমার কীট।তা তুমি ভালো ভাবেই জানো।
‘এন্ড লাস্ট…ওয়াদা তো তুমি ভঙ্গ করেছিলে।আমি তো ওয়াদা’ করিই নি।ভা’ঙার প্রশ্ন আসে কোথা থেকে।আমার মনে এরকম কোনো ওয়াদা ছিলোই না।তবু তোমার হয়ে কাজ করেছি।কি বোকা আমি।আহারে।
‘রায়হান শেখ থত’মত খেয়ে গেলো।এই মেয়ে পাক্কা ধুরন্ধর। তা তার বুঝা উচিত ছিলো।
-যাইহোক,এখন তুমি আরহামকে পাবে না,তাকে আমি রাজের কাছে পাঠিয়ে দিবো।
-ফায়ান খানের হাতে ফায়ার খেতে ইচ্ছে হচ্ছে বলে দিলেই হয়।এত নাটক করার কি আছে?
-মানে?
‘ফায়ান সবাইকে চমকে দিয়ে বলে উঠলো,,
-নাদিম ভিতরে আসো।
‘সাথে সাথে নাদিম কয়েকটা পুলিশ অফিসারকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।
-রায়হান শেখ’কে আপাতত জনসম্মুখ থেকে লুকিয়ে রাখুন।আমি কাল দেখা করবো।
-ইয়েস স্যার,,বলেই পুলিশ রায়াহান শেখ আর কামাল কে নিয়ে চলে গেলো।রায়হান শেখ কোনো ঘোরের মাঝে আছে হয়তো।পুষ্প এমন বিশ্বাসঘাতকতা করবে সে ভাবেও নি।বাহিরে সব ম’রে পরে আছে।বোঝাই যাচ্ছে এদের উপর হামলা হয়েছিলো।
আবার ভুল করে ফেললো সে।
***
‘ফায়ান আরিমার সাথে রাস্তায় টু শব্দ’টি করে নি।আরিমা আরহাম’কে বুকে জড়িয়ে সি’টে হেলান দিয়ে আছে।মনে ভাবছে অন্য কথা।আজকে ফায়ান’কে সব বলে দিবে।আর কতো লুকোচুরি খেলবে সে?হয়রান হয়ে গেছে জীবনের কাছে।কিন্তু ফায়ানের কথা না বলাটা বেশ ভাবাচ্ছে তাকে।কি চলছে নেতা সাহেবের মনে?
‘খান ভীলায় এসে আরিমা সদর দরজা পেরুলো। তখনই পিছন থেকে ফায়ানের গম্ভীর কন্ঠ কানে এলো তার।
-থামো,আর এক’পা এগোবে না।কে তুমি?কি তোমার পরিচয় সত্যি করে বলবে।কোন উদ্দেশ্য নিয়ে খান ভীলায় এসেছো?উত্তর দাও।
চলবে,,
(কালকে ইনশাআল্লাহ রহস্যের জট খুলবো।সবাই গঠনমূলক কমেন্ট করবেন আর বেশি করে মেম্বার ইনভাইট দিবেন)