(রহস্য উন্মোচন)
#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘কয়েক’বছর আগের কাহিনী।তখন পুষ্প এসএসসি দিয়ে ছুটি কাটাচ্ছে।ছুটি কাটানো বলতে সে বাড়িতেই শুয়ে বসে থাকে সারাদিন।আর বাসায় টুকটাক কাজ করে।যদিও কাজ না করলে তার বড় বোন কিছুই বলবে না তাকে।
‘শহর থেকে খানিক দূরে কম দামী একটা বাসায় ভাড়া থাকে দুই বোন।রামিশা আর পুষ্প।বাব-মা কেউ-ই নেই তাদের।রামিশা আগে গার্মেন্টসে কাজ করতো আর পুষ্পের পড়াশোনার খরচ দিতো।নিজেও টুক’টাক পড়াশোনা চালিয়ে গেছে যার জন্য একটা ছোটো’খাটো কোম্পানি’তে চাকরি হয় রামিশা’র।
‘সারাদিন গা’ধার খাটুনি খেটে রাতে বাসায় ফিরে ক্লান্ত হয়ে।কিন্তু ছোটো বোনের মুখটা দেখার সাথে সাথেই সব ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যায়।
তারপর ফ্রেশ হয়ে রান্না করা খাবার গরম করে দু বোন মিলে খেয়ে-দেয়ে জম্পেশ আড্ডা দেয়।কে কি করেছে সারাদিন এসব নিয়েই আলাপ করে।
-আপু,আজকে তোমাকে এতো চিন্তিত লাগছে কেনো?
‘রামিশা হকচকিয়ে গেলো।কিঞ্চিৎ ঘাবড়ালোও।
-কই,আমি তো চিন্তিত না।পাঁকা বুড়ি,বেশি বুঝিস।
-না না।এতো ভালো লক্ষণ নয় রে চম্পা।বলো বলো।
‘পুষ্পের অভিনয় দেখে রামিশা হাসলো।হাসতে হাসতেই বললো,,
-একটা ছেলে ক’দিন হলো পিছু লেগেছে রে।কিছুতেই ছাড়াতে পারছি না।
-বিয়ে করে নাও।ওমন ভালোবাসা আর পাবে না আপু।
-তুই বেশি বুঝিস?আজ-কাল এসব ট্রেন্ড।আমার মতো কালো মেয়েকে কে ভালোবাসতে যাবে?
-ঠা’সস করে থাপ্প’ড় মে’রে মাড়ির দাঁত ফেলে দিবো।আমার বোনের থেকে সুন্দরী কে আছে?
ওমন সোনার মুখ ক’জনের আছে।গোলগাল চেহারা টানা টানা কাজলের মতো চোখ।হাসলে টোল পরে।কোমর ছাড়ানো চুল।একদম মায়ার বক্স।আর তোমার ভয়েজ?উফফফ লা’জবাব ফাটাফাটি ।
‘আরিমার বর্ননা শুনে রামিশা হাসলো,প্রাণ’খোলা হাসি যাকে বলে।বোনের কথা শুনতে তার ভালো লাগে
মজা পায়।
-না রে,আমি বিয়ে করবো না।বেশি বেশি টাকা ইনকাম করবো।তোকে আইনের লোক বানাবো আমি।ভালো’ভাবে পড়তে থাক।তারপর দু বোন মিলে বড় একটা রাজ’প্রাসাদ তৈরি করবো।আর সেখানে আরাম’সে দিনাতি’পাত করবো মজা না?
‘পুষ্প’কে বুকে নিয়ে দুলতে দুলতে কথা গুলো বললো রামিশা!এবার নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিতে পুষ্প বললো,,
-আপু আমরা বুড়ি হয়ে যাবো তো।কে বিয়ে করবে?
‘রামিশা ফিক করে হেসে দিলো।
-আমার বোকা ফুল।এই দুনিয়ায় টাকা হলে পুরুষের অভাব হয়না সোনা।
-তোমার সপ্ন বললে,আমার টা বলি?
‘রামিশা ভ্রু কুঁচকে বললো,,
-বল দেখি,আমার বোকা ফুল’টার কি এমন সপ্ন আছে।
‘পুষ্প উঠে দাঁড়ালো।তারপর ভাষণ দেয়ার ভঙ্গিতে বললো,,
-আমার সপ্ন এটাই,তুমি বিয়ে করবে।বছর খানিক যেতেই ঘর আলো করে একটা মিষ্টি বাবুনি আসবে।আমি তাকে মায়ের মতোই আদর যত্ন করবো।সারাদিন আমার কাছেই রাখবো তাকে।
আধো’আধো বুলি’তে আমাকে মাম্মা ডাকবে।
লোকে যদি বলে তোমাকে মা ডাকে কেনো?আমি তখন বলবো আমরা দুই বোন এক ছেলেকে বিয়ে করেছি।
তখন কেউ আমাকে বিয়ে করতে আসবে না।আর সারাজীবন আমি তোমার সাথেই থাকবো।
‘কথা গুলো বলে পুষ্প দেরী না করে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
এদিকে রামিশা হা করে বোনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।কিয়দংশ পরেই উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো রামিশা।হাসতে হাসতে শুয়ে পরলো।তারপর চিল্লিয়ে বললো,,
-দু বোন এক বরের কাছে, ওটা পাপ ফুল।তোকে এমনিতেই রাখবো সারাজীবন আমার কাছে।তুই ছাড়া আর কে আছে বল?এসব বললে লোকে আরো আমাদের গণ’পিটুনি দিবে।
‘তারপর একটু থেমে আবার বললো,,
-সত্যিই তুই বোকা।বোকা ফুল।একমাত্র আমার বোকা ফুল তুই।তোকে একা বাসায় রেখে গেলে কত যে চিন্তা হয়।হাতে বেশি টাকাও থাকে না যে একটা কাজের মেয়ে রাখবো।এতো চিন্তা ভালো লাগে?
‘তারপর উঠে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো,চাঁদের আলো ঠিকরে পরছে রামিশার মুখে।যাতে তার সৌন্দর্য তিনগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।বলা যায় মায়াবী’দের চাঁদের আলোয় অপরুপ লাগে।তাদের সৌন্দর্য চাঁদের আলোয় ফোটে উঠে।
‘পুষ্পের হয়তো মনে আছে কি’না তা রামিশা জানেনা।এ ব্যাপারে তাকে কখনো জিগ্যেস করাও হয়নি।মনে থাকবে কীভাবে তখন তো পুষ্প ছোটো ছিলো।রামিশার সব মনে আছে।
‘তার বাবা মা’র সাথে যখন দু বোন ঘুরতে বের হয়েছিলো, সেদিন পুষ্প বাসা থেকে বের হতেই চায়নি।সে তার ফায়ান কে পাহারা দিবে বলে।
কারণ হলো, ফায়ানের খালাতো বোন সারাদিন ফায়ানের সাথে চিপকে থাকে যা ছোট্ট পুষ্পের সহ্য হয় না।
‘সেদিন পুষ্প বের না হলে হয়তো ধনীর দুলালি হয়ে থাকতো।সে নাহয় বাবা মায়ের সাথে ওপারে চলে যেতো।
খুব কি ক্ষতি হতো?
‘একদিন পুষ্প ছাঁদের সিঁড়িতে বসে ছিলো।মনটা খারাপ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।রাশি বোনের পাশে গিয়ে বসলো।তারপর জিগ্যেস করলো।
-কি রে,মুড অফ কেনো?
‘পুষ্প একবার রাশির দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে নিলো।
রাশি বুঝলো অবস্থা বেগতিক। গুরুতর কিছু ঘটেছে।
নয়তো রাশি একবার বলার সাথে সাথেই পুষ্প সব বলে দেয়।
-আমার ফুল।বলবি না আমাকে?
-জানো আপ, ফায়ান আছে না?সারাদিন ওই রিনার সাথে চিপকে থাকে।আমাকে তাদের মাঝে নেয় না। এমনকি ও আসলে ফায়ান ঠিক মতো কথাও বলে না আমার সাথে।
‘বলেই মুখ ঢেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো পুষ্প।রাশির বুকে মোচড় দিলো হয়তো।ছোট্টো বোনের চোখে পানি তার সহ্য হয়না।
-তারা সমবয়সী না?তাই একটু আড্ডা দেয়।রিনা তো বেড়াতে এসেছে।দুদিন বাদে চলে যাবে।ফায়ান ভাইয়া সেই তো তোকে নিয়েই মেতে থাকবে।
-এখন কেনো নয়?
-আসলেই তুই বোকা ফুল।
-ঠিক বলেছিস রাশি।ও একটা পিচ্চি বোকা ফুল।ফায়ানের ফুল।চল আমার সাথে মুখ ফুলিয়ে আর বসে থাকলে চলবে না।
‘বলেই পুষ্পকে কোলে তোলে বাহিরে চলে গেলো ফায়ান।পুষ্প এখনো মুখ ফুলিয়ে আছে।আজকে ফায়ান যতোই মজা খাওয়াক।সে কথা বলবে না।
‘এদিকে রাশি কিছুক্ষণ হ্যাবলার মতো তাকিয়ে থেকে হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে গেলো।
***
‘দীর্ঘশ্বাস ফেললো রামিশা,তার বোকা ফুল কি জানে?সে আরো কারো বোকা ফুল ছিলো?ভুলে গেছে কি সব?
হঠাৎ দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ পেয়ে চমকালো রামিশা।ইতিমধ্যে শব্দ পেয়ে পুষ্পও বেরিয়ে এসেছে।
-আপু,এত জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে কে।আমাদের দরজা কি তার কাবাডি খেলার মাঠ মনে হয়।
-জানিনা বোন,তুই থাক আমি দেখছি।
-আরে আরে,যদি ডাকাত থাকে?দাঁড়াও বটি আনি।
‘বলেই পুষ্প বটি আনতে গেলো।তারপর দু বোন একসাথে দরজা খুললো।
সাথে সাথে হুড়মুড়িয়ে কেউ রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিলো
‘পুষ্প ড্যাবড্যাব করে রক্তে রঞ্জিত ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।ইতিমধ্যেই সে এই সুদর্শন যুবকের উপর ক্রাশ নামক বাঁশ’টা খেয়ে বসে আছে।
-আ…আপনি?
‘ছেলেটাও যেনো একটু অবাক হলো।
-তুমি এখানে থাকো?থাক আমি চলে যাচ্ছি।
‘ছেলেটা যাওয়া ধরলেই পুষ্প তার হাত ধরে আটকালো।ছেলেটা একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ পুষ্পের দিকে তাকিয়ে থাকলো।তারপর দৃষ্টি নিচু করে নিলো!
-আরে মশাই।বসুন এখানে।আপনার যে অবস্থা বেশিক্ষণ হাঁটতে পারবেন না।কি হয়েছে বলুন তো।কাবাডি খেলে এসেছেন নাকি?
‘পুষ্পের মুখে এতো কথা একবারে শোনে ছেলেটা ভীমড়ি খেলো যেনো।
-না,গুন্ডা’রা ধাওয়া করেছিলো।
-দেখি,তুই গিয়ে একটু গরম পানি আর ব্যান্ডেজ খুঁজে নিয়ে আয়।ড্রয়ারে আছে।যা।
‘পুষ্পও চলে গেলো।
-আপনার সমস্যা কি?এখানেও চলে এসেছেন?
‘ছেলেটা অসহায় চোখে নির্দয় রমনীটির দিকে তাকালো।
-তোমার কি তাই মনে হচ্ছে?আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো না।তাই তো চলে যেতে নিচ্ছিলাম।
-হয়েছে।আর বলতে হবে না।কি অবস্থা করেছে হাত পা’য়ের।
‘রামিশার মুখে বেদনার ছাপ স্পষ্ট। তা দেখে ছেলেটা বাকরুদ্ধ।সে যদি জানতো তাকে ব্যাথা পেতে দেখে রামিশা এমন রিয়েকশন করবে।তাহলে সে শত’বার ব্যাথা পেতে রাজি ছিলো।
-তোমার আঘাতের কাছে এই ব্যাথা সামান্য।শরীরের আঘাত দেখানো যায় কিন্তু মনের আঘাত না।
‘রামিশা ফ্যাল্’ফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে।তারপর চোখের পানি ঝরঝর করে ফেলতে লাগলো।
-হেইই রামিশা।কাঁদছো কেনো?সরি সরি।আমি এভাবে বলতে চায়নি।প্লিজ কেঁদোনা।আমার সহ্য হয়না।
ঠিকাছে আমি চলে যাচ্ছি।
-কোথায় যাবেন ভাইয়া?আপু আপনাকে ভালোবাসে তাই কাঁদছে।এই আপু যা ভিতরে গিয়ে কাঁদ।আমি আমার হলেও হতে পারে দুলাভাই কে ট্রিটমেন্ট করি।
-পুষ্পের এহেন কথায় দুজনেই হেসে দিলো।ছেলেটা হাসতে হাসতে বললো,,
-আচ্ছা,আমার হলেও হতে পারে শালিকা,আপনার নাম কি?
-আমার নাম?আমার নাম হলো পু…
-ওর নাম আরিমা।
‘পুষ্প দাঁত দিয়ে জিভ কাটলো।রামিশা আসল নাম বলতে বারণ করেছে তাকে।সব জায়গায় তার নাম আরিমা দিয়ে রেখেছে।
‘ব্যান্ডেজ করার পর ছেলেটা চলে গেলো।তার বন্ধুকে কল দিয়ে আসতে বলেছিলো।তাই কেউ আর আটকায়নি।
-এইইইই যাহ।
-কি হলো?
-ছেলেটার নাম কি?ভুলেই গেছি জিগ্যেস করতে।
-রাজ..নিশান্ত রাজ শেখ।
-ছেলেটার নামটাও তার মতোই কিউট।
-পাকনি।আরেকটু হলেই তো নামটা বলে ফেলতি।বলেছি না এই নাম হাইড করে রাখবি?
-পুষ্প থেকে আরিমা,,রিশা থেকে রামিশা।
‘বলেই ফিক করে হেসে দিলো পুষ্প।সাথে রামিশাও হেসে দিলো।
***
‘বেশ অনেকদিন কেটে গেছে।পুষ্প কলেজে উঠে গেছে।তার এখন ব্যাস্ত সময় নতুন কলেজ আর পড়াশোনা নিয়ে।রামিশা না বললেও পুষ্প ভালোভাবেই জানে রাজ’কে মন দিয়ে বসেছে তার বোনটা।
‘অমত করেনি পুষ্প।সে চায় তার বোনটা সুখী হোক।আর কতদিন তার জন্য গাধার খাটুনি খাটবে।
তারও একটু সুখ প্রয়োজন।
‘বাড়িতে এসে এরকম একটা সারপ্রাইজ পাবে,ভাবেনি পুষ্প।বিস্ময়ে তার মুখ হা হয়ে গেছে।
-কি ব্যাপার?হলেও হতে পারে শালিকা থেকে পার্মানেন্ট শালিকা বানিয়ে নিলাম তোমায়।খুশী হওনি?
‘রামিশা মুচকি মুচকি হাসছে।
-তাই বলে আপু,একবারও আমাকে জানালে না?
‘বলতে বলতে পুষ্প কেঁদে দিলো।তারা হা করে পুষ্পের দিকে তাকিয়ে আছে।সারপ্রাইজ দিতে যেয়ে তারা আহাম্মক বনে গেল।
‘দুজনেই পুষ্পর কান্না থামাতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো।কিন্তু সে থামার লোক নয়।কেঁদেই যাচ্ছে।হেঁচকি উঠে গেছে তার কাঁদতে কাঁদতে।
শেষমেশ পুষ্প কান্না থামালো।
-আমার একটা শর্ত আছে।
‘নাক টানতে টানতে বললো পুষ্প।
-কি শর্ত?
‘দুজনেই আগ্রহ হয়ে তাকালো তার দিকে।
-আমাকে তোমরা দু’জন একটা বেবি এনে দিবে।সে আমার কাছেই থাকবে।তার নাম আমি রাখবো।আর আপু আমার সাথে এখানেই থাকবে।সাথে দুলাভাইও থাকবে।
চলবে,,,,
(ভুল’ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গঠনমূলক কমেন্ট করবেন বড় বড় কমেন্ট)