#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘রামিশা নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে গিয়েছে শুধু।সে ভাবতেও পারেনি,তার কাছে মানুষ’টা কীভাবে তার পিঠে ছুরি বসিয়ে দিবে।
সে তো ধন-দৌলত প্রাচুর্যে ঘেরা অট্টালিকা এসব খুব করে চায় নি।সে চেয়েছিলো তার ছোট্টো ফুলের মতো বোন’টাকে নিয়ে কোনো ভাবে বেঁচে থাকতে।তাদের সপ্ন পূরণ করতে।
‘এটাই কি তার দোষ?সে কি সুখের যোগ্য না? তার কি একটা সুন্দর জীবন পাওয়ার অধিকার নেই?খুব কি ক্ষ’তি হয়ে যেতো,যদি তার বোকা ফুলের সাথে সে বেঁচে থাকতো?
তাকে যদি সবকিছু খুলে বলতো তাহলে কি আজ তার বোন’টা কবরে শুয়ে থাকতো?
‘একটা মেয়ে কখনোই তার প্রেমিক পুরুষের নামে বদনাম গাইতে পারে না।তাই রামিশা’ও এখানে এসেই আটকে ছিলো। সে ভেবেছিলো,যদি রাজ ভালো হয়ে যায়?ইশশ যদি এসব মিথ্যে হতো।
কিন্তু না,বিশ্বাসের উপহার মৃ’ত্যু পেয়েছে।
তাহলে কি ভালোবাসার মানুষ’টাকে বিশ্বাস করা ভুল?
(পাঠকরা উত্তর দিয়ে যাবেন কথা গুলোর)
‘এক্সি’ডেন্টের পর কতো কষ্টে মেয়েটা ছোট্ট বোন’টাকে নিয়ে পালিয়ে আসে।সদ্য বাবা-মা হারানো মেয়েটা কি করবে ভেবে পায় না।
মানুষের আশ্রয় নিয়ে বোন’টাকে বাঁচানোর জন্য গার্মেন্টস কর্মীদের সাথে যোগ দেয়।
‘এটা কি সেই রামিশা?যাকে তার মা খাইয়ে না দিলে পুরো বাড়ি মাথায় তোলে নিতো?এক গ্লাস পানি নিজ হাতে খেতো না।
বড় অট্টালিকা’য় যার বাসস্থান ছিলো।দশ’টার আগে ঘুম থেকেই তোলা যেতো না?
‘বোনের জন্য রামিশা সব সুখ ত্যাগ করে।যখন দেখলো গার্মেন্টসে পোষাচ্ছে না।উল্টে একটা ষোড়শী কণ্যাকে দেখে সবার জিভ উল্টে যায়।
লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,তখন সে একটা ছোটো খাটো কোম্পানি’তে জয়েন হয়।
‘কি সুন্দর ছিলো সেই দিন গুলো। রামিশা’কি আর তার বোকা ফুলের কাছে ফিরে আসবে না?
তার ফুল অনেক চালাক হয়ে গেছে যে।তার বাচ্চা’কে সে বড় করে তুলছে।রামিশা’ কি এসব দেখবে না এসে?একটা বার কি তার বোকা ফুলের সামনে আসবে না রামিশা?
‘আরিমা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো,শত বছর,মাস,দিনের কান্না যেনো উতলে পরছে আজকে।কেনো সে নিজেও জানে না।নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না আরিমা।
‘বুক জ্বলে যাচ্ছে,মনে হচ্ছে বুকে কেউ অসংখ্য ছুরিকা’ঘাতে ক্ষত’বিক্ষ’ত করে ফেলেছে।
বুক’টা জ্বলে যাচ্ছে।ভিতর’টা পুড়ছে।প্রিয় মানুষ হারানোর বেদনা কি এইরকম?তাহলে যে আরিমা বেশিদিন বাঁচবে না।
‘ফায়ান সবে বাসায় ফিরেছে।অর্ধেক সিঁড়ি অব্দি আসতেই আরিমা’র গগনবিদারী চিৎকার তার কানে এলো।সাথে সাথে দৌড় লাগালো সে।
মেয়েটার যদি কিছু হয়ে যায়,তাহলে নিজেকে ক্ষ’মা করতে পারবে না সে।
‘দরজা বন্ধ থাকায় ফায়ান পাশের রুমে বারি দিতে লাগলো,ইতিমধ্যে বাকিরা’ও উঠে গেছে।
আরিমা’র কান্না যেনো সারা বাড়িতে তান্ডব চালাচ্ছে।
‘ভিতর থেকে দরজা খুলতেই বেলকনি থেকে লাফ দিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করলো ফায়ান।
ঘর’টা পুরো অন্ধকার। আরিমার কান্নার আওয়াজ আসছে খাটের এক কর্নার থেকে।
‘ফায়ান গিয়ে আরিমা’কে জাপটে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।এদিকে আরিমা ভরসার স্থান পেয়ে ফায়ানের পাঞ্জাবী’র কলার চেপে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।
-আমার বোনটা কি দোষ করেছিলো নেতা সাহেব?আমার বোন’টার মনে যে কোনো প্যাঁচ ছিলো না।সে কি এসব পাওয়ার যোগ্য?
আমার বোন’টা সবসময় অল্পে খুশী ছিলো নেতা সাহেব।এনে দিন নেতা সাহেব এনে দিন না।আপনি তো একজন এমপি,আমার বোনকে কি আনতে পারবেন না?
‘আরিমা কান্না’র প্রলয়ে পরে কি’সব বলছে তা তার জ্ঞা’নের বাহিরে।নাহলে যাকে আল্লাহ তাআলা তোলে নিয়েছেন,তাকে কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব? কস্মিনকালেও না।
‘আরিমা ফায়ানের কলার ঝাকাতে ঝাকাতে বললো,,
-আমার নিস্পাপ বোনটাকে কেনো তারা মে’রে ফেললো কেনো,কেনো?আমি ছাড়বো না তাদের নেতা সাহেব।ছাড়বো না আমি।
কঠিন শাস্তি দিবো আমি।তাদের লা’শ কুকুরেও খেতে ভয় পাবে।তাদের আমি ছাড়বো নাআআআ।
যারা আমার থেকে আমার ফুলের মতো বোনটাকে কেড়ে নিয়েছে।যারা রামিশার থেকে তার বোকা ফুল’কে আলাদা করেছে,তাদের আমি ছাড়বো না।
‘ফায়ান কিছুতেই আরিমা’কে শান্ত করতে পারছে না।যেনো আরিমার মাঝে কোনো দৈব’শক্তি প্রবেশ করেছে।এদিকে আরেকটু হলে ফায়ানের পাঞ্জাবী’টাও ছিঁড়ে আরিমার হাতে চলে যাবে।
‘ফায়ান আর কিছু না ভেবে আরিমার দুই গাল চেপে নিজের দিকে খানিক এগিয়ে আনলো।তারপর আরিমার শুষ্ক দুই ঠোঁটের ভাজে নিজের ভেজা ঠোঁট দুটো চেপে ধরলো।
‘বেশ খানিক সময় বাদে আরিমা শান্ত হলো।বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে মেয়েটা।এখনো বুক’টা জ্বলছে,ভিতরে মনে হচ্ছে সব জ্বলে পুঁড়ে ছাই হয়ে যাবে।
-আল্লাহ তায়ালা যাকে বেশি ভালোবাসেন তাকে তার কাছে নিয়ে নেন।এতে তোমার আর আমার কারো হাত নেই বউ।তোমাকে বুঝতে হবে।আগের থেকে দ্বিগুণ স্ট্রং হতে হবে।নাহলে তাদের শাস্তি কীভাবে দিবে বলো তো?
আমার বউ না স্ট্রং?রাশি’র বোকা ফুল অনেক স্ট্রং তাইনা বউ?
‘আরিমা মাথা তোলে ফায়ানের দিকে একবার তাকালো।তারপর আবার ফায়ানের বুকে মুখ গুঁজে ফুপাতে লাগলো।তার মন কান্না থামাতে সায় দিচ্ছে না।যেনো কান্না থামালেই কেউ তাকে গুলি করে মা’রবে।
‘অগত্যা ফ্রেশ না হয়েই আরিমা’কে কোলে তোলে নিলো ফায়ান।তারপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পরলো।
‘আরিমা’কে বুকে নিয়ে একটা ম্যাসেজ সেন্ড করে দিলো ফায়ান।যার ফলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই যে যার ঘরে চলে গেলো।
কিন্তু কারো চোখে যে ঘুম নেই।
‘ফায়ান আরিমা’র চুলে বিলি কে’টে দিচ্ছে আর একটু পর পর একটা করে চু’মু খাচ্ছে।
আরিমা আবেশে চোখ বন্ধ করে ফায়ানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে।যেনো সে ফায়ানের কর্মকান্ড গুলো মনযোগ সহকারে অনুভব করছে।
হঠাৎ আরিমা বলে উঠলো,,
-আপনি তো আমাকে সেদিন অপমান করেছিলেন।আমি সত্যি বলছি নেতা সাহেব,আমার কোনো দোষ ছিলো না।ওটা রাজ ছিলো সেদিন।আমাকে ভুল বুঝে থাকবেন না।
‘ফায়ান আরিমা’কে সরিয়ে দিয়ে তার উপরে শুয়ে পরলো।আরিমা ভীমড়ি খেয়ে গেলো।এমন কি বলে ফেলেছে সে,যার দরুন নেতা সাহেবের এমন আচরণ?
-না বউ,ওসব যদি গায়ে মাখতাম,না আমি তোমার বুকে থাকতাম না তুমি থাকতে।আমি শুরু থেকেই সব জানতাম।
‘উৎকন্ঠা’র ঝুঁকিতে আরিমা দু হাত দিয়ে ফায়ানের পাঞ্জাবী’’র কলার চেপে ধরলো।এতে ফায়ান খানিক উঠে পাঞ্জাবী’টা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।পাঞ্জাবী’টা মেঝে’র একপাশে অনাদরে পরে রইলো।
‘ফায়ানের কাজে আরিমা হকচকিয়ে গেলো।
-কি করলেন এটা?নামুন আমার উপর থেকে অসভ্য লোক একটা।
-কথায় কথায় যে খালি পাঞ্জাবীর কলার চেপে ধরো,আরেকটু হলে তো পাঞ্জাবী ছিঁড়ে তোমার হাতে চলে যাবে,এবার আমাকে খামছে ধরো।পাঞ্জাবী’র’ও সৌভাগ্য, সে আমার বউয়ের হাতের স্পর্শ পায়।খালি দুর্ভাগা আমিই পাই না।
‘আরিমা কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকলো ফায়ানের দিকে।তারপর হো হো করে হাসতে লাগলো।ফায়ান আরিমার মুখের নিস্পাপ হাসিটা মন ভরে দেখছে।যেনো তার ঘোর লেগে যাচ্ছে।
-উফফ,বউ এভাবে হেসো না।আমি যে কন্ট্রোল’লেস হয়ে পরি।আসো একটা চুমু দেই।
‘আরিমা হাত দ্বারা তার ঠোঁট ঢেকে ফেলে,তা দেখে ফায়ান ফিক করে হেসে উঠে।আরিমা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ফায়ানের দিকে।
তার মনে ঝড় তুলার জন্য নেতা সাহেবের হাসিই যথেষ্ট।
-বউউউউউউউ।
-হ্যাঁ,,হ্যাঁ।
‘আরিমা হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে গিয়ে’ছিলো।
ফায়ান আবার হাসলো।
-একটা চুমু দেই?
‘’আরিমা মনে মনে ফায়ান’কে ভয়ঙ্কর সব গালি দিলো।সে তো না করবেই।ফায়ান জোর করে দিতে পারে না?
‘আরিমা গাল ফুলিয়ে বললো,,
-না!
‘বলেই ফায়ান’কে ধা’’ক্কা দিয়ে সরিয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে পরলো।
ফায়ান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবে যেনো।সে আরিমার মনোভাব ভালো করেই বুঝতে পারছে।
আরিমা আর না পেরে ফায়ানের উপরে উঠে বসে পরলো!তারপর বুকে কিল’ঘুসি দিতে দিতে বলল,,
-আন’রোমান্টিক ছা’গ’ল কোথাকার। তোর বউ টিকবে না দেখিস।একটা চুমু দেয়ার জন্য যদি এভাবে অনুমতি নিস,তাহলে তো জীবনে বাচ্চা পয়দা’ও করতে পারবি না।
‘আরিমা ঘোরে কি বলছে তার নিজেই জানে না।এদিকে ফায়ান হা করে তাকয়ে আছে আরিমার পানে।সে নাকি আন’রোমান্টিক।বাচ্চা পয়দা করতে পারবে না।না না এটা তো মানা যায় না।
‘এবার ফায়ান আরিমা’কে শুইয়ে দিয়ে তার উপর নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দেয়।আরিমা যেনো গলে যাচ্ছে।
-মোটা কোথাকার,নামেন আমার উপর থেকে।উইমা গলে গেলাম।ম’রে গেলা…..
‘আরিমা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।ফায়ানের হলো টা কি।আরিমার সামান্য কথায় এমন রিয়েকশন?ভাবা যায়।
‘ফায়ান আরিমা’র ঠোঁট ছাড়ার নামও নিচ্ছে না।যেনো দিন দুনিয়া ভুলে আছে।আরিমার দম যায় যায় অবস্থা। কিল-ঘুসি দিয়েও যখন ছাড়াতে পারলো না,শেষে না পেরে ফায়ানের ঠোঁটে জোর’সে একটা কামর দিয়ে বসলো।
‘ফায়ান তৎক্ষণাৎ সরে এলো আরিমা’র থেকে।বেচারা ভেবেছিলো আরিমা রেসপন্স করবে।কিন্তু কে জানতো তার ঠোঁট থেকে রক্ত বের করে দিবে।
‘আরিমা হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,,
-আপনি কি মানুষ নাকি রাক্ষ’স?মাগো মা,আরেকটু হলে ম’রেই যেতাম।
‘ফায়ান অসহায় চোখে তাকালো আরিমা’র দিকে।
আহারে বেচারা নেতা সাহেব।আরিমার বড্ড মায়া হলো।তাই ফায়ানের কপালে একটা চুমু দিয়ে ওপাশ ফিরে শুয়ে পরলো।
ফায়ানও আরিমা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো পিছন থেকে।
‘আরিমা মুচকি হেসে উল্টো ঘুরে ফায়ানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরলো।
ফায়ান হাসলো।মেয়েটা বড্ড নাজুক।হালকা টুকা দিলেই যেনো গলে যাবে।
পরক্ষণেই স্বস্তির শ্বাস ফেললো ফায়ান।
যাক বাঁচা গেছে।
“বেচারি আরিমা কি জানে,ফায়ান কীভাবে কথা কাটালো?জানবে কীভাবে,সে তো সপ্নের পুরুষ’টাকে নিয়ে কল্পনার জগতে ভাসছে।
‘ফায়ান কীভাবে আরিমা’র ব্যাপারে আগে থেকে জানে?এটা আরিমা খেয়ালই করলো না।
‘রামিশা’র ব্যাপারটা একদম তার মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছে।
‘ফায়ান নিজেই এসব করেছে।নিজের ফুলের মতো আদুরে বউ’টাকে সে কাঁদতে দেখতে পারে না।বুকের ভিতর ধুক’পুক করে।
চলবে,,,,,,
(ভুলক্রটি হলে ক্ষ’’মার দৃষ্টিতে দেখবেন।গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ)