#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই নিচে নেমে এলো আরিমা।
হাত খোঁপা করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে সে।তাকে দেখেই মোহনা চেঁচিয়ে উঠে।
-আরে পুষ্ট মা,আরেকটু ঘুমালে কি ক্ষ’তি হতো বল দেখি?মাথা ব্যাথা করবে যে।
‘আরিমা প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরবর্তী’তে নিজেকে ধাতস্ত করে নিলো।
-সমস্যা নেই আন্টি,!
-হ্যাঁ গো ভাবি,মেয়ের কান্ড দেখেছো।সাতসকালে কীভাবে উঠে গেছে?
‘সোনালীর কথায় হালকা হাসলো আরিমা।
তারপর চটপটে কন্ঠে বললো,,
-সমস্যা নেই তো আন্টি’রা।আমার কিছুই হবে না,অভ্যাস আছে।
-তাহলে টেবিলে গিয়ে বোস,আমরা খাবার আনছি,,
‘’বলেই সোনালী আরিমা’কে টেবিলে বসিয়ে রেখে কিচেনে চলে গেলো।আরিমা একবার অসহায় চোখে তাকালো তাদের দিকে।সে জলদি এসেছিলো ফায়ানের খুঁজে।লোকটা সাতসকালে কোথায় গেলো।
‘সোনালী আর মোহনা মিলে খাবার এনে টেবিল ভরে ফেললো,আরিমার চোখ কপালে,এতো এতো আইটেম।এর মধ্যে রামিশা আর তার পছন্দের খাবার’ও আছে।আরিমা একবার চোখ তোলে মোহনা আর সোনালীর দিকে তাকালো।তার চোখ দুটো ছলছল করছে।
‘মোহনা আর সোনালী এসে আরিমার দুই পাশে দাঁড়ালেন,তারপর মায়া’ভরা কন্ঠে বললেন,,
-আমাদের মাফ করে দিস মা!আমরা তোদের খুঁজতে ব্যার্থ হয়েছিলাম।
-এই হাতে তোদের কতো খাইয়েছি,কতো রাত নিজের সাথে নিয়ে ঘুম পারিয়েছি।কতো খেলেছি তোদের সাথে। এরকম হবে ভাবিও নি।
‘বলতে বলতে দুজনে মুখে আঁচল চেপে কাঁদতে লাগলেন।
-এ’কি মা,তোমরা পুষ্পের সামনে এভাবে কাঁদছো কেনো?
‘জিসানের কথা শুনে আরিমা তার দিকে তাকালো।যতোবারই সে পুষ্প নাম শুনছে,ভিতরটা কেমন চমকে চমকে উঠছে।
-আ..আমাকে তোমরা আরিমা বলেই ডাকো,পুষ্প না।
‘সবাই হয়তো ব্যাপার’টা বুঝলো।তাই আর কেউ কথা বাড়ালো না।
-সব খাবার কি মেয়েকেই খাওয়াবে তোমরা?আমি আর দিশা কি দোষ করেছি?
-সব সময় তোমার খাই খাই,মেয়েটা কাল থেকে না খাওয়া জানোনা?
‘আরিমার টনক নড়লো,নেতা সাহেবও খাননি কাল থেকে।কোথায় গেলেন তিনি।
‘মোহনা এবং সোনালী সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছেন,তখনই ফায়ান এসে ধপ করে আরিমার পাশের চেয়ারে বসে পরলো।
আরিমা এক ভ্রু উঁচিয়ে ফায়ানের কান্ড দেখে যাচ্ছে।ফায়ান পরপর খাবার দিয়েই যাচ্ছে তো দিয়েই যাচ্ছে।
-কি করছেন এসব,এতো খাবার কীভাবে খাবো আমি?মাথা গেছে?
‘ফায়ান কিছু না বলে ইশারা করলো খাওয়ার জন্য। আরিমা অসহায় চোখে তাকালো সবার দিকে।বাকিরা মিটিমিটি হাসছে।
‘হুট করে ভেড়ার ছানার দলের আগমন,এক এক করে সবাই চেয়ারে বসে গেলো।
আরিমা সবার দিকে তাকিয়ে বললো,,,
-কি’রে ভেড়ার দল।তোরা আমার শশুড় বাড়ি কেনো এসছিস?
-ওহ,সিরিয়াসলি? এটা তোর শশুড় বাড়ি?আমরা তো এমপির বাড়িতে আহার করতে এসেছি।
‘আফরিদের কথায় বাকিরা হেসে দিলো।
-এসেছো ভালো হয়েছে,এবার চুপচাপ খাও সবাই।
‘ফায়ানের কথায় সবাই তার দিকে তাকালো।তারপর সিমরান আফরিদকে ফিসফিসিয়ে বললো,,
-দোস্ত,নেতা গোসল করেছে,কিন্তু আমাদের নেত্রী করেনি কেনো?
‘আফরিদ ধরাম করে কিল বসিয়ে দিলো সিমরানের পিঠে,হুট করে আরিমার কাঁশি উঠে গেলো।তাড়াতাড়ি করে ফায়ান এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো তার দিকে।তারপর সিমরান আর আফরিদের দিকে তাকিয়ে বললো,,
-এটা খাওয়ার সময়, আলতু ফালতু পেঁচাল পারার সময় না।তাই অহেতুক বাক্য উচ্চারণ না করে চুপ’চাপ খেতে শুরু করো।
‘সিমরান আর আফরিদ নিজেদের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করলো।তারপর একসাথে আরিমার দিকে তাকালো,আরিমা তাদের দিকে রক্ত’চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে।
‘আরিমার থেকে চোখ সরিয়ে তারা সবার দিকে তাকালো,সবাই মিটিমিটি হাসছে।সিমরান বুঝে গেলো,কথা’টা সে জোরেই বলে ফেলেছে।
আফরিদের দিকে তাকিয়ে সে একটা ভ্যাবলা মার্কা হাসি দিলো।আফরিদ চোখ দিয়েই খু’ন করে ফেলবে যেনো।দুজনেই আবার সামনে তাকিয়ে দেখতে পেলো ফায়ান তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
‘সাথে সাথে দুজন তড়িঘড়ি করে খেতে নিলো,কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো।খাবার গলায় আঁটকে গেছে।দুজনেই কাঁশতে লাগলো।
‘ফায়ান দুজনকে দুই গ্লাস পানি এগিয়ে দিতেই দ্রুত খেয়ে নিয়ে হাঁপাতে লাগলো তারা।
-তাড়া’হুড়ো করা শয়তানের কাজ,যদিও তোমরা শয়তানের থেকে কম না।
‘আফরিদ মাথা দুলাতে দুলাতে সায় জানালো।পরক্ষণেই সে ঝট করে মাথা তোলে ফায়ানের দিকে তাকালো।
‘’আরেকটু আগে তাকালে হয়তো ফায়ানের ঠোঁটের কোণে ঝুলে থাকা মুচকি হাসি’টা দেখতে পেতো সে।
***
‘’সবাই যে যার মতো খেয়ে যাচ্ছে,হঠাৎ ফার’হার চিৎকারে সবার ঘোর ভাঙলো।
-বাঁচাও,ওকে মে’রো না।পুঁড়িও না ওকে প্লিজ।ভাইয়া বাঁচিয়ে নাও ওকে।মেয়েটা যে মা’রা যাবে ভাইয়া প্লিজ!
‘আরিমা আর ফায়ান একসাথে খাওয়া বাদ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।ফায়ান বোনের কক্ষের দিকে ছুটলেও আরিমা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।থেমে থেমে কেঁপে উঠছে সে।
‘আফরিদ আরিমার হাত ধরে উপরের দিকে যেতে লাগলো।ফারহা’র রুমের সামনে সবাই দাঁড়িয়ে,ফায়ান কাউকে যেতে বারণ করেছে।
‘আরিমা তবুও ঢুকে গেলো ভিতরে,ফায়ান ফারহা’র মাথা’টা বুকের সাথে চেপে ধরে তাকে শান্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছে।ফারহা’র শরীর কাঁপছে।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে মেয়েটা।
‘আরিমা গিয়ে ফারহা’র পাশে বসলো।আরিমা’কে এক পলক দেখে ফারহা তার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো,হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো ফারহা!
-আমি পারি নি আরু,আমি পারি নি আপু’কে বাঁচাতে।আমি দেখেছিলাম তাকে আরু।আমি পারলাম না তোর কলিজাটাকে বাঁচাতে।আমি পারি নি।আমি পারি নি।
‘ফারহা’রকে দু হাত দিয়ে জাপটে ধরে নিজেও কাঁদতে লাগলোআরিমা,কিন্তু তা হলো শব্দহীন কান্না।
এদিকে ফায়ানের অবস্থা নাজেহাল।
দুই কলিজার টুকরা’কে এক সাথে কাঁদতে দেখতে পারছে না সে।
-শান্ত হয়ে যা ফারু,কিচ্ছু হয়নি।দেখ আমি আছি না?
‘তারপর ফায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,,
-আপনি দ্রুত গাড়ি বের করুন,ওকে হসপিটালে নিতে হবে।
‘বলতে বলতেই আরিমা বুঝতে পারলো ফারহা জ্ঞা’ন হারিয়েছে।সে চট করে ফায়ানের দিকে তাকালো।তারপর বললো,,
-আপনি ফারহা’কে কোলে নিয়ে বের হোন,আম গাড়ি বের করছি।
‘বলেই আরিমা ফারহা’কে ফায়ানের কাছে দিয়ে দৌড়ে নিচে নেমে গেলো।ফায়ান একবার আরিমা’র যাওয়ার পথে তাকিয়ে ফারহা’কে কোলে তোলে নিলো।
‘আরিমা গাড়ি বের করে ড্রাইভিং সি’টে বসে আছে,সে জানে,ফায়ানের দুর্বলতা ফারহা।এ অবস্থায় তাকে ড্রাইভ করতে দেয়া উচিত হবে না।
‘ফায়ান আরিমা’কে ড্রাইভিং সি’টে বসে থাকতে দেখে খানিক চমকালো।
-তাড়াতাড়ি গাড়ি’তে উঠুন,ফাস্ট।
‘ফায়ান গাড়িতে উঠতেই আরিমা গাড়ি ছেড়ে দিলো।অতি দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছে সে।আর ফায়ান বোনের মাথা উরুর উপর রেখে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
“তার বোনের সুস্থ হওয়া কি দুঃসাধ্য?
***
‘’সবাই হসপিটালের করিডোরে অপেক্ষা করছে।চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে ফায়ান,বারবার এদিক-সেদিক পায়চারি করে যাচ্ছে সে।স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছে না।
‘আরিমা ফায়ানের কাছে গিয়ে তাকে ধরে নিজের পাশে বসালো।
-চিন্তা সব সমস্যার সমাধান না নেতা সাহেব।অপেক্ষা করুন,ভালো কিছু হবে।
‘ফায়ান কিছু বলার আগেই ডাক্তার বেরিয়ে এলো,,ফায়ান দৌড়ে গেলো তার কাছে।
-দেখুন এমপি সাহেব।আপনি হয়তো জানেন,মিস ফারহার ক’দিন আগে একটা এক্সি’ডেন্ট হয়েছিলো।আর তা বাজে’ভাবে প্রভাব ফেলে তার মাথায়।
‘ফায়ান একটা ঢোক গিলে ডাক্তার’কে বললো,,
-বুঝিয়ে বলুন।
-অপারেশন করতে হবে।এক্সি’ডেন্টের কারণে মাথায় ক্ষ’তর জন্ম হয়েছে আস্তে আস্তে,ওকে যে মেডিসিন দেওয়া হয়েছিলো,টাইম মাফিক নেই নি হয়তো।ইমারজেন্সি অপারেশন না করাতে পারলে রুগীর ভারসাম্য হারাতে পারে।আপনারা কি অপারেশন করাতে রাজি?
‘ফায়ান এক পা পিছিয়ে গেলো।আরিমা তাকে এক’হাতে ধরে নিয়ে ডাক্তার’কে বললো,,
-আপনি প্রস্তুতি গ্রহন করুন,আমরা রাজি।
‘ডাক্তার চলে যেতেই ফায়ান বোনের কাছে ছুটে গেলো।
অক্সি’জেন মাস্ক লাগানো ফারহা’র,তবুও দেখতে বেশ মায়াবী লাগছে।ফায়ান বোনের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।তারপর বললো,,
-কি থেকে কি হয়ে গেলো বোন,,আমি যদি সেদিন তোকে রেখে না যেতাম তাহলে হয়তো এ’দিন দেখতে হতো না।কেনো আইসক্রিমের বায়না ধরেছিলিস তুই?
‘ফায়ান একটু থেমে আবার শক্ত কন্ঠে বলতে লাগলো,,
-এসব পরিস্থিতির জন্য যারা দায়ী,আমি তাদের ছাড়বো না,কুকুরের মতো রাস্তায় পিটিয়ে মা’রবো তাদের।সৌহার্দ্য ফায়ান খান’কে তারা চিনে না।চিনবে এবার।দরকার হলে গোটা বিশ্ব দেখবে সৌহার্দ্য ফায়ান খানের হিংস্রতা।
***
-হ্যালো,
-ভাইয়া,তুমি দ্রুত দেশে আসো,বোনের অবস্থা ভালো না।
-কেনো কি হয়েছে?
-তুমি আসো প্লিজ।
‘’বলতে বলতে আরিমার গলা ধরে এলো।
-আমি এখনই ইমারজেন্সি’ টিকিটে দেশে আসছি।
‘আরিমা ফোন কেটে দীর্ঘশ্বাস ফেললো,,
তার এখনো অনেক কাজ বাকি যে,তার মধ্যে অন্যতম কাজ হলো,,ভাঙা সংসার জোড়া লাগানো।
চলবে,,,,
(ভুলক্রটি হলে ক্ষ’’মার দৃষ্টিতে দেখবেন,গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ)