#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘ফারহার অপারেশন হচ্ছে,পরিস্থিতি গুমোট হয়ে আছে।ফায়ান একটা চেয়ারে চুপচাপ বসে আছে।
তার পাশে আরিমা বসে।
‘মোহনা আর সোনালী এই ব্যাপারে কিছু জানেন না,তাদের ফোন দিয়ে বলা হয়েছে সব ঠিক আছে।তোমরা একটু দোয়া করিও শুধু।
‘ফিরোজ আর জাভেদ খান দেশের বাহিরে চলে গিয়েছিলেন,ফায়ানের বিয়ের পরপর-ই।তাই তারা এ ব্যাপারে সম্পুর্ন অ’জ্ঞ।
‘বেলা,সিমরান এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে,মনির,শুভ,আফরিদ,তারা ফায়ানের থেকে কিছু’টা দূরে’র চেয়ারে বসে আছে।
সবাই আল্লাহর নাম জপছে।
‘ইতিমধ্যে একজন নার্স বেরিয়ে এসেছে,আরিমা উনাকে ডাক দিয়ে জিগ্যেস করলো,,
-পে’শে’ন্টের কি অবস্থা? সব ঠিক আছে তো?
-জ্বি ম্যাম,আমরা আমাদের সর্বোচ্চ’টা দিয়ে ট্রা’ই করে যাচ্ছি,বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে,দোয়া করুন আপনারা।
‘আরিমা পিছাতে পিছাতে ফায়ানের পাশে আবার বসে পরলো,তখনই হুড়’মুড়ি’য়ে নাদিম এলো,সবাই তার দিকে এক পলক তাকালো।
এমতা’বস্থায় ভীষণ’ভাবে চমকালো যেনো সবাই।
‘নাদিমের চোখ দুটো ফোলা ফোলা,একদম ফুটবলের মতো।গাল,নাক,একদম লাল টকটকে হয়ে আছে।
চুল গুলো উষ্ক’খুষ্ক।
‘ফায়ান উঠে দাঁড়ালো,তারপর নাদিমের হাত ধরে তাকে সাথে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
সবাই একটু অবাক হলেও পাত্তা দিলো না কেউ-ই।সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করছে যেনো ফারহা সুস্থ হয়ে তাদের সাথে ফিরে আসে।
***
‘নামাজ শেষ করে,দোয়া-ই প্রচুর কাকুতি-মিনতি করছে ফায়ান,যেনো তার বোনটা সুস্থ হয়ে যায়।
ফারহা’কে সে এই অবস্থায় দেখতে পারে না।
কলিজা’টা ছিঁড়ে যায় তার।
‘দোয়া শেষ করে নাদিমের দিকে তাকালো ফায়ান, তারপর হালকা হাসলো।
এদিকে বোকা নাদিম চোখের পানি এড়াতে ব্যাস্ত।
সে কি জানে?দ্যা গ্রে’ট সৌহার্দ্য ফায়ান খান তার মনোবাসনা জেনে গেছে?
‘ফায়ান নাদিম’কে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
নাদিম প্রথমে ভড়কালেও এবার হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো,কান্নার প্রকোপে শরীর ঝাঁকি দিয়ে দিয়ে উঠছে তার।
‘ফায়ান নাদিমের কান্না থামাচ্ছে না,কাঁদুক।তার বোনের জন্য কেউ কাঁদছে,এটা কি তার সৌভাগ্য নয়?ফায়ান আগে থেকেই জানতো,নাদিম ফারহা’র প্রতি দূর্বল।তাই নাদিম’কে বারণ করেছিলো,সে যেনো ফারহা’র থেকে দূরে থাকে।
বাধ্য নাদিম সেটাই করেছিলো।প্রথম ভালোলাগা’কে বিসর্জন দিয়ে দিয়েছিলো।কিন্তু এটা উল্টে ভালো’লাগা থেকে ভালোবাসায় কবে যে রুপ নিয়ে নিয়েছে,ছেলেটা আদৌও জানে কি’না সন্দেহ।
***
‘ফায়ান আর নাদিম দুজনেই মসজিদ থেকে বের হয়ে হসপিটালের দিকে যেতে লাগলো।
সাথে গাড়ি আনে’নি তারা,হেঁটে হেঁটে-ই এসেছিলো।যদিও মসজিদ বেশি দূরে নয়।দশ মিনিটের মতো লাগে।
‘কিন্তু হঠাৎ একটা গাড়ি এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়,তারপর দল’বল বেঁধে কয়েকজন লোক এসে পাবলিক প্লে’সেই তাদের কিডন্যাপ করে ফেলে।সব এতো তাড়াতাড়ি হলো যে আশেপাশে’র সবাই হকচকিয়ে গেলো।যে ক’জন ফায়ানের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য এগিয়ে আসছিলো তাদের পা জোড়াও থেমে গেলো।
‘মুহুর্তেই আব-হাওয়া গরম হতে লাগলো।প্রে’সের লোকেরা হুট করে দল বেঁধে কোথা থেকে এলো কেউ বুঝতে পারছে না।মানুষের ঢল বয়ে যাচ্ছে যেনো।
-এই মুহুর্তেই ঘটে যাওয়া তাজা খবর,মাননীয় তরুন এমপি সৌহার্দ্য ফায়ান খান আর তার পার্সোনাল এসি’স্ট্যা’ন্ট নাদিম হাওলাদার’কে ভরা জনস’ম্মুখ থেকে কিডন্যাপ করা হয়।কেউ কিডন্যাপার’দের দেখতে পায়নি,তাদের মুখে ছিলো কালো রঙের মাস্ক।সবাই মর্মাহত। কোন শত্রু’তার রেশ ধরে এমপি ‘কে কিডন্যাপ করা হলো?বিপক্ষ দলের নেতা রায়হান শেখ এখনো নিখোঁজ হয়ে আছে।তার খবর কেউ পাচ্ছে না।এর পিছনে উনি নেই তো?
-আরো শোনা গেছে,সৌহার্দ্য ফায়ান খানের একমাত্র বোন ফারহা খান বর্তমানে ঢাকা সিটি হসপিটালে মৃ’ত্যুর সাথে পা’ঞ্জা লড়ছে।তিনি তার বোনের ব্যাপারে অত্যান্ত পজেসিভ।এই অবস্থায় তাকে কে কিডন্যাপ করতে পারে?কি উদ্দেশ্য তাদের?কিডন্যাপার’রা কি জানতো তিনি বোনের অসুস্থতার জন্য দূর্বল হয়ে পরেছেন?
বাকি খবর জানার জন্য আমার সাথেই থাকুন,,,।
‘আফরিদ একটু বাহিরে গিয়েছিলো।তারপর টিভি’তে এই খবর দেখে দৌড়ে এলো সে।
-কি হয়েছে আফরিদ?হাপাচ্ছিস কেনো?
‘মনিরের কথায় কান দিলো না সে,হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,,
-দোস্ত জলদি আয়,
‘বলেই আরিমার হাত ধরে দৌড় লাগালো।টিভির সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো সে আরিমা’কে।
মুহুর্তেই আরিমার চোখ’মুখ শক্ত হয়ে এলো।রাগে শরীর তিঁর’তিঁর করে কাঁপছে তার।পরক্ষণেই বাঁকা হাসলো সে।খেলা তো কেবল শুরু,মাছ মাত্র বর্শি’তে আঁটকা পরেছে।এতো তাড়া কিসের?
‘এদিকে আরিমা’কে হাসতে দেখে আফরিদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো,তারপর হন্যে হয়ে বললো,,
-দোস্ত,কিছু কর।নইলে যদি তারা ফায়ান স্যার আর ভাইয়া’কে কিছু করে বসে?
‘আরিমা আফরিদের মাথায় গাট্টা মা’রলো।
-যা ভেড়া,কিছুই হবে না।চল দেখি।অপারেশন সাকসেস হতে আর কতো সময় বাকি।
***
‘ফায়ান পিট’পিট করে চোখ খুললো,একটা গ্যারেজে রাখা হয়েছে তাকে,পাশে নাদিকেও চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে।কিন্তু ফায়ান শরীরে ব্যাথা পাচ্ছে কেনো?যেনো একদম ছিঁড়ে যাচ্ছে শরীর।
-ভাই আপনার শরীরে এসব কিসের দাগ?
‘ফায়ানও হালকা চমকালো,শরীরে লাল’চে দাগ পরে গেছে।কিছু একটা ভাবলো ফায়ান,তারপর বললো,,
-কি করবে আর,এমনিতে তো গায়ে হাত রাখার স্প’র্ধা নেই।আসলেই এরা কাপুরুষের দল।
-ভাই,আপনি বেশি ব্যাথা পাচ্ছেন?
-নাহ্,অল্প।
‘নাদিম জানে,এই অল্প মানেই বেশি,কারণ,ফায়ান সহজে ব্যাথার কথা স্বীকার করে না।ফায়ান’কে এই অবস্থায় দেখতে তার ক’ষ্ট হচ্ছে।
-কিন্তু ভাই,আমাদের এখানে কে আনলো?বের হবো কীভাবে আমরা?ওদিকে ফারহা ম্যাম অপারেশন থিয়েটারে।
‘ফায়ান ভ্রু কুঁচকে নাদিমের দিকে তাকালো,,
-তোমাকে কে বলেছে আমার বোন অপারেশন থিয়েটারে?ও বাসাতেই আছে।আমাদের এখান থেকে ছাড়াতে আমার বউ আসবে।
‘বলেই ফায়ান মিষ্টি করে একটা হাসি দিলো,,
নাদিম ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ফায়ানের দিকে।লোকটার মাথা খারাপ হয়ে গেলো না’তো।
-ভাই,ফারহা’কে আমরা অপারেশন থিয়েটারে রেখে এসেছি।
-হ্যাঁ তো?
‘নাদিম ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,এটা কি আসলেই ফায়ান নাকি অন্যকেউ।
***
‘’আরিমা অপারেশন থিয়েটারে’র সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,তারপর গুণে গুণে তিনটা টুকা দিলো দরজায়। সাথে সাথে দরজা খুলে ফারহা বেরিয়ে এলো।
‘সবাই থ,মানে কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না।রুগী কীভাবে বাহিরে বের হতে পারে।
-ফারু তুই?কীভাবে? এতক্ষণে তো,তোর মাথা কে’টে ডাক্তারদের অপারেশন করার কথা।
-আব’বে শা’লা চুপ।আরু তুই জলদি গাড়ি বের করতে বল।
-বের করা আছে,চল সবাই।
-কিন্তু……
-আগে বাসায় যাই?তারপর বলছি,কুইক।
‘তারপর সবাই আস্তে’ধীরে নিচে এসে গাড়ি’তে উঠে পরলো।
-আরু,এটা তোর থার্ড টাইম আমাদের সাথে। জোরে চালা,লাগা টান।
‘ফারহা’র কথায় আরিমা হাসলো,তারপর ধূলো উড়িয়ে সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
‘এদিকে তারা যাওয়ার পরেই একটা লোক হসপিটালে প্রবেশ করলো,মুখে মাস্ক পরা।আচরণে চোর চোর ভাব দেখা যাচ্ছে।কে এই লোক?
***
-আরু,হচ্ছে’টা কি?আমরাও যেতে চাই তোর সাথে প্লিজ।
-মাথা খারাপ?তোদের নিয়ে আবার বিপদে পরি?
-কিন্তু শোন না,আমরা তোর হেল্প করবো।
-কস্মিনকালেও না,আমি যাচ্ছি,আর খবরদার,বাড়ির বাহিরে যেনো কেউ না বের হয়।আরহাম’কে দেখে রাখিস।
‘মুহুর্তেই দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো আরিমার,তার বোনও যাওয়ার সময় এভাবেই বলে গিয়ে’ছিলো।
কিন্তু সে আর ফিরে’নি।আরিমাও কি তবে ফিরবে না?না,না,তাকে যে ফিরতেই হবে।আরহামে’র জন্য হলেও তাকে ফিরতে হবে।এটা যে তার বোনের শেষ স্মৃতি।
***
-ব্যাপার কি সৌহার্দ্য ফায়ান খান, ব্যাথা করছে শরীরে?খুব ব্যাথা বুঝি?আহারে,একজন নেতা সামান্য একটা মানবের কাছে ধরা খেয়ে বসে আছে।
‘ফায়ান কিছু না বলে তাকিয়ে আছে রাজের দিকে।কোনো বাক্য-ই উচ্চারণ করছে না সে।
-কি হলো নেতা সাহেব?কথা বলছেন না কেনো?বলুন বলুন,আজকের পর তো আর চাইলেও কথা বলতে পারবেন না।
‘ফায়ান তবুও চুপ,কোনো ‘রা’ অব্দি কাটছেনা।
নাদিম একবার ফায়ান’কে দেখছে তো আরেকবার রাজ’কে।ইচ্ছে করছে এখানেই এটাকে পুঁতে ফেলতে।
-আচ্ছা,কথা না বলতে চাইলে বলো না,তোমাকে তো আর জোর করতে পারি ন আফটার’অল তুমি আমার ভালোবাসার মানুষের নেতা সাহেব।
‘বলেই খিক’খিক করে হাসতে লাগলো রাজ।
‘হুট করে ফায়ান উচ্চ’স্বরে হাসতে লাগলো,হাসতে হাসতে যেনো বেহুঁশ হয়ে যাবে।রাজ ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।ফায়ানের হলো টা কি?কোনো চাল চালছে না’তো?
-কি’রে,বোন হারানোর শোকে পা’গ’ল হলে নাকি?
-মানে?
-মানে’টা খুব-ই সহজ,ফারহা’কে মা’রার জন্য হসপিটালে লোক পাঠিয়েছি।
‘ফায়ান ফিক করে হেসে দিলো।রাজ এবার তেঁ তেঁ উঠলো।
-চুপ কর তুই,আজকে তোকে এখানেই শেষ করে দিবো আমি,তোর লা’শ’ও কেউ খুঁজে পাবে না।
‘একটু থেমে আবার বললো,,
-তারপর,তারপর আমার আরু’কে নিয়ে দূরে চলে যাবো আমি।বহু’দূরে,যেখানে আমাদের কেউ খুঁজেই পাবে না।
‘বলেই পাগলের মতো হাসতে লাগলো রাজ,তার সাথে পাল্লা দিয়ে ফায়ানও হাসছে।
তাই রাজ হাসি থামিয়ে দিলো,সাথে সাথে ফায়ানও থেমে গেলো।
‘রাজ আবার হাসতে লাগলো,ফায়ান আর নাদিমও সাথে হাসছে।
‘মনে হচ্ছে এ’রা ট্যুরে এসেছে তাই হাসাহাসি করছে।আসলে কিন্তু এখানে কিড’ন্যাপ’রের
সাথে দুজন কিডন্যাপ হওয়া মানুষ আছে।কারো কি বুঝার সাধ্য এটা?
চলবে,,,,,