#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘পরিবেশ নিস্তব্ধ, ফায়ান নিজের মতো চুপ’চাপ টেবিলের উপর বসে আছে,কারণ তার বউ যে বলেছে ভালো বাচ্চার মতো বসে থাকতে,তাহলে বাসায় ফিরে চু’মু দিবে!
‘নাদিম আরিমার কান্ড দেখছে,এসব কতো দেখা তার!নিজের হাতেও তো কম খু’ন খারাবি করে নি!তবে যাদের মে’রেছে তারা কেউ-ই ভালো ছিলো না!বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলো!
‘কিন্তু বিপত্তি হচ্ছে নিশাতের বেলায়।বেচারা গোয়েন্দা ঠিক,কিন্তু চ’ড় থা’প্প’ড় লা’ত্থি ছাড়া গভীর কিছু কখনোই করে না সে।কিন্তু এখন এসব দেখে হার্ট রিতি’মত ড্রাম বাজানোর মতো বিট হচ্ছে!এরকম কিছু দেখবে সে কখনোই ভাবেনি!আরিমা এতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো কেনো হঠাৎ?
‘এদিকে আরিমা ছুরি’র পোঁচ দিতে দিতে মুখ থেকে নিয়ে পেট অব্দি যেনো ক্ষ’তবি’ক্ষ’ত করে ফেলেছে!একটু হয়রান হয়ে সে চেয়ারে বসলো!তারপর নিশাত’কে ডাক দিলো!
‘কিন্তু কোনো সাড়া’শব্দ নেই তার,এই ছেলে গেলো কই।আরিমা রাগে সেদিকে তাকালো!
‘ওমা এভাবে চোখ মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে কেনো এ?
-এই গোয়েন্দা,তুই ভয় পাচ্ছিস?ছিহ্,শেম অন ইউ!
-ছাপ’ড়ি কোথাকার,এভাবে কেউ কাউকে মা’রে?ইশশশ,আপড়ি’ কি ছা’পড়ি!
-চুপ থাক,টিস্যু দে!
‘নিশাত টিস্যু বক্স এগিয়ে দিলো,তারপর আবার দু হাতের মাধ্যমে মুখ ঢেকে নিলো!কিন্তু রাজের দিকে আর তাকালো না,রাজ এখনো গোঙাচ্ছে।হঠাৎ আরিমার একটা কথা শোনে সেদিকে চমকে তাকালো নিশাত,তার দ্বারা কিছুতেই পসিবল না!
-কি হলো,যা ওর মুখ ধর!
-কস্মিনকালেও না,এখান থেকে পালাচ্ছি আমি,থাক তুই।
-আচ্ছা শোন শোন,একটা প্রশ্ন করবো,যদি সঠিক উত্তর কা’টতে পারিস তো ভেবে দেখবো!
-কি সেই প্রশ্ন?
-ধর কাউকে আগুনে পুড়ানো হলো।সেই আগুন’টা যদি শরীরের উপরি’ভাগে লাগে তাহলে বেশি কষ্ট,নাকি যদি আগুন’টা ভিতরে লাগে তাহলে বেশি কষ্ট!
‘নিশাত মাথা চুলকাচ্ছে,নাদিমও ভাবছে,কিন্তু ফায়ান বাঁকা হাসিতে মেতে উঠেছে।হয়তো সে বুঝতে পারছে আরিমার দ্বিতীয় পদক্ষেপ কি!
-শোন,শরীরের উপরিভাগে যদি আগুন ধরে তাহলে তো সেটা নিভানো যায়,কিন্তু ভিতরে’রটা কীভাবে নিভানো যাবে?লাইক……
-থাম তুই!নাদিম ভাইয়া একটু এদিকে আসবেন,
-হ্যাঁ হ্যাঁ ভাবি অবশ্যই,বলুন কি করতে হবে।
-আপনি ওর মুখ’ থেকে কাপড় বের করে সুন্দর করে মুখ’টা ধরবেন,বাচ্চাদের মেডিসিন খাওয়ানোর সময় যেভাবে ধরে!
-বাহ্ বউ,তুমি দেখি বাচ্চা’কে ঔষধ খাওয়ানোর প্ল্যানিং অব্দি করে ফেলেছো!জোশ জোশ।
‘ফায়ান মিটিমিটি হাসছে,আরিমা’কে জ্বালাতে তার বেশ লাগে।রেগে যখন ফোঁসস ফোঁসস করে
দেখতে একদম চড়ুই পাখির ছানার মতো লাগে।ইচ্ছে করে টুপ করে গালে টুস টুস করে চুমু খেতে!
‘নাদিম এগিয়ে এসে রাজের মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দিলো,বেচারা রাজের অবস্থা বেগতিক! সে জোরে কোনো শব্দ-ই করতে পারছে না।আরেকটু পরেই হয়তো প্রাণ’পাখি উড়াল দিবে!
‘আরিমা ব্যাগ থেকে একটা বোতল বের করলো।তারপর সেটার মুখ খুললো,,
-ভাবি,এসব কিইইইই?
-চুপ থাকেন তো,ওর মুখ ধরেন শক্ত করে!
‘নাদিম একটা ঢোক গিললো,তারপর ফায়ানের দিকে তাকালো,সে এবার বুঝলো,ফায়ান সত্যিই পাগল হয়ে গেছে,নাদিমের অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাকানো দেখে ফায়ান বেশ মজা পাচ্ছে,আরেকটু জ্বালাতে ফায়ান তার ঠোঁট দুটোকে পাপ্পি স্টাইল করলো।
নাদিমের কাঁশি উঠে গেলো,এ নাকি এমপি।কি হলো হঠাৎ ভাইয়ের?
-কি ব্যাপার ভাইয়া, কাঁশছেন কেনো?পুরো বোতল মুখে ঢেলে দিবো?দিই?
‘নাদিম চিল্লিয়ে উঠলো,,
-নাআআআ,আমি এতো জলদি ম’রতে চাই না,আমি মুখ ধরছি,আপনি ঢালুন!
‘আরিমা পুরো বোতলে যতটুকু এসিড ছিলো,সবটুকু রাজের মুখে ঢেলে দিলো,রাজ যাতে চিল্লাতে না পারে তাই মুখে আবার কাপড় পুরে দিলো।
‘রাজের যন্ত্রণা দেখে আরিমা হাসছে,তার বেশ শান্তি লাগছে।পরক্ষণেই ভাবলো,নাহ্,এতো সহজ মৃ’ত্যুর যোগ্য না সে।
‘আরিমা এদিকে সেদিক তাকালো,ফায়ান ট্রাউজার পরে আছে,নাদিমও সেম।অগত্যা নিশাতের বেল্ট ধরে টানতে লাগলো আরিমা।নিশাত হকচকিয়ে চিৎকার লাগালো!
-ছাড় শয়তান,আমার বস্ত্র’হরণ কেনো করছিস?তুই আমার দেহ পাবি কিন্তু মন পাবি না।
-আমার বউ তোমার দেহ চায়’ও না,তার জন্য আমার দেহ’মন দুটোই আছে,তাই না বউ?
আপাতত তোমার বেল্ট টা আমার বউয়ের হাতে দাও।
‘আরিমা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,কিছু বলার নেই তার।
লোকটা চরম অ’সভ্য!
‘আরিমা বেল্ট দিয়ে ইচ্ছে’মতো রাজের আধ’মরা দেহ’টা পেটাতে শুরু করলো!আর সাথে গালি’গালাজ।
-কি ভেবেছিস,তোকে এমনিতেই ছেড়ে দিবো?ভালোবাসবো তোকে আমি?হাউউউ?তুই ভালোবাসার যোগ্য-ই নোস!আমার ফুলের মতো বোন’টাকে তুই শেষ করে দিয়েছিস?তোর বুক একটুও কাঁপলো না?যে তোকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলো তাকে তুই এই দাম দিলি?তুই মানুষ না,মানুষের কাতারে পরিস না তুই!
-তো কিসের কাতারে পরে?
-জানোয়ার,নর্দমার কীট,তোকে আজ দা দিয়ে কুচি’কুচি করে কে’টে কুত্তা’কে খাওয়াবো,নিশাত রাম দা ‘টা দে!
‘রাজের জীবন এখনই বেরিয়ে যাবে হয়তো,তার চোখ মুখ বুজে আসছে।শেষ’মেশ রামিশার নিস্পাপ চেহারা’টা তার চোখের সামনে ভাসলো।
ভেসে উঠলো,তার মায়াবী আদল’খানি!তাকে অনুরোধ করার দৃশ্য,সেই কাকুতি মিনতি,তার যন্ত্র’ণা হাহাকার করা মৃ’ত্যুর দৃশ্য!
‘হঠাৎ ফায়ানের চোখ রাজের দিকে গেলো,সে ম’রে পরে আছে,তবুও আরিমার থামার নাম নেই।অগত্যা ফায়ান আরিমার কাছে এসে তাকে জাপটে ধরলো,,
-বউ,ও মা’রা গেছে,থেমে যাও!শান্ত হও,রিলাক্স!
-ছাড়ুন আমাকে আপনি,ওকে আজ টুকরো টুকরো করবো আমি।
-অনেক শাস্তি দেয়া হয়েছে,এবার শান্ত হও,তার শাস্তি সে পেয়েছে।
‘ফায়ানের স্বর গম্ভীর হতেই আরিমা বেল্ট ফেলে দিলো,তারপর ফায়ানের বুকে মুখ গুঁজে বললো,,
-আমার বোন’কে আমি ফিরে পেতে চাই নেতা সাহেব!তাকে দেখাতে চাই আমি কতো সুখে আছি!কিন্তু এর মাঝেও তাকে ছাড়া যে আমি ভালো নেই!প্রতিনিয়ত-ই তার স্মৃতি আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।আমি বাঁচবো না বেশিদিন! এনে দিন না আপুকে।
‘আরিমা কান্নায় ভেঙে পরলো,একমাত্র ফায়ান ছাড়া সবার চোখেই পানি টলমল করছে।
ফায়ান নিজেকে শক্ত করে রেখেছে,নাহলে তার বউটা যে আরো ভেঙে পরবে!সে কি তার রাশি বোনকে ভালোবাসে না?খুব ভালোবাসে।ছোটোবেলা থেকেই তাদের দুজন’কে আগলে রেখেছিলো ফায়ান।কিন্তু এখন???
‘হঠাৎ মাথায় কিছুর উপস্থিতি পেলো ফায়ান।
কেউ মাথায় কিছু একটা ঠেস দিয়ে রেখেছে।এটা যে গান,সেটা বুঝতে বাকি নেই তার।
-বাহ্,সৌহার্দ্য ফায়ান খান,আমার ছেলেটাকে এভাবে কুকু’রের মতো মা’রতে তোর হাত কাঁপলো না?
‘রায়হান শেখের কথায় ফায়ান দাঁত ক্যালিয়ে হাসলো!তারপর বললো,,
-আমি মা’রিনি তো চাচা,আপনার না হওয়া বউ’মা মে’রেছে।
‘রায়হান শেখ অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে আরিমার দিকে তাকালো।যেনো সে ফায়ানের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না!
-তুমি?
-হ্যাঁ আমিই মে’রেছি!
‘রায়হান শেখের চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি ঝরে পরলো,কিন্তু পরক্ষ’ণেই তার চোখ জ্বলে উঠলো!
-মে’রে়ছিস কারণ সময় টা তোর ছিলো,এখন সময়’টা আমার,আমি মা’র’বো তোদের!
‘আরিমা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না,গার্ড রা তাদের ধরে রেখেছে,ফায়ানের মাথায় বন্দুক!কি করবে আরিমা?
‘ফায়ান নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে,যেনো তার কিছুই যায় আসে না!
-এখনই যদি বুলেট মাথায় ঢুকিয়ে দেই?
-দেন চাচা,সাথে আমার বউ’কে সহ,কারণ আমি একা জান্নাতে গিয়ে কি করবো?আমার হুর চায় না।আমি আমার বউ’কে চাই।
‘রায়হান শেখের রাগ যেনো তর’তর করে বেড়ে গেলো।তার সাথে হেয়ালি করা হচ্ছে।
আরিমা হাত ছুটানোর চেষ্টা করেও পারছে না,নাদিম আর নিশাত’ও ছুটাছুটি করছে।কি এক বিপদ এসে দাঁড়ালো।এখন কি করবে তারা?
-তোর নেতা সাহেব তোর সর্বস্ব না?একেই আগে শেষ করবো,দেখ কীভাবে শেষ করি!
‘আরিমা চিৎকার করে উঠলো,,
-খবরদার,আমার নেতা সাহেবের গায়ে একটা ফুলের টুকা’ও যদি পরে,তাহলে তোকে ধ্বংস করে দিবো আমি।
‘আরিমা সর্বশক্তি দিয়ে হাত ছুটানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু এই মোটা লোকের থেকে ছাড়া পাচ্ছে না!রায়হান শেখ সেদিকে তাকিয়ে কটমটে হাসি হাসলো।
‘যে-ই ট্রিগারে চাপ দিতে যাবে,তখনি রায়হান শেখ ছিঁটকে দূরে গিয়ে পরলো!রক্তে তার শরীর রঞ্জিত হয়ে গেলো,তারপর মুরগীর মতো ছটফট করতে করতে সেখানেই মৃ’ত্যূর কোলে ঢলে পরলো!
আরিমা হতবাক,নাদিম নিশাত চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে,ফায়ানের পাশে দাঁড়ানো সুঠাম দেহী যুবকের দিকে!
‘নাদিম অস্পষ্ট স্বরে বুলি আওড়ালো,,
-সাহিত্য স্যার,,,,
-ভাইয়া,তুমি?
-হ্যাঁ আমি,তুই-ই তো আসতে বলেছিলি তাইনা?
-কিন্তু এখানে কীভাবে?
-সিক্রেট,
‘ফায়ানের দিকে তাকিয়ে দাঁত ক্যালিয়ে হাসলো সাহিত্য!
-যাক অবশেষে সব শয়তান শেষ হলো,
‘বলেই সব গার্ডদের উদ্দেশ্যে আবার বুলি আওড়ালো ফায়ান,,
-তোমরা এখানেই থাকো,আমরা বাহির থেকে আসছি!খবরদার এক পা নড়বে না।
‘সাথে সাথে গার্ড গুলো তাদের ছেড়ে দিলো!তারা হা করে তাকিয়ে আছে,ফায়ান কাম’ডা করলো কি?
‘সবাই এক এক করে বেরিয়ে আসার পর ফায়ান দরজা বন্ধ করে আগুন লাগিয়ে দিলো গ্যারেজ’টায়।
আরিমা চেঁচিয়ে উঠলো,,
-করলেন কি এটা?মাথা গেছে?
-এসবের কোনো সাক্ষী আমি রাখতে চাই না।ঝলসে যাক সব,পুড়ে ছাই হয়ে যাক!
না থাকুক কোনো স্মৃতি!
-ঠিক আমার বোনের মতো,
‘ফায়ানের বুক’টা কেঁপে উঠলো,সে অসহায় দৃষ্টিতে সাহিত্যের দিকে তাকালো!সাহিত্য ফোসস করে শ্বাস ছাড়লো,আর চোখ দ্বারা আশ্বাস দিলো।
‘আরিমা অন্যমনস্ক হয়ে আছে দেখে ফায়ান তাকে কোলে তোলে নিলো।সাথে সাথে আরিমা সম্বিত ফিরে পেলো,,
-নির্লজ্জ, বেহায়া মার্কা পুরুষ, ছিহ্,ছোটো ভাইয়ের সামনে এভাবে কোলে নিতে লজ্জা লাগে না?
-লজ্জা তো নারীদের থাকে বলে জানতাম আমি।দেখো বউ,এখন বেশি কথা বললে চু’ম্মি’য়ে
কথা বলার স্বাদ মেটাবো,So..no more words,,
‘সাহিত্য ফ্যাল’ফ্যাল করে ফায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে,তারপর নাদিমের দিকে তাকালো সে!
ভীষণ ঝটকা খেয়েছে সাহিত্য ফায়ান’কে দেখে।এতো পরিবর্তন?
‘নাদিম ফায়ানের দৃষ্টি দেখে দাঁত ক্যালালো,তারপর হঠাৎ দীর্ঘশ্বাস ফেললো,,
-আপনি এসেছেন মাত্র,আরো দেখবেন,আমার যে অভ্যাস হয়ে গেছে স্যার!
‘নাদিমের হতাশ ভঙ্গিতে কথা বলা দেখে সাহিত্য ফিক করে হেসে দিলো,নিশাতও তার সাথে তাল মিলালো,,নাদিম সেদিকে তাকিয়ে দায়সারা ভাবে বললো,,
-হাসেন,হাসা শরীরের পক্ষে ভালো, কিন্তু বেশি হাসা মৃ’ত্যুর কারণ!
‘বলেই নাদিম সেখান থেকে চলে গেলো,মনে মনে ভীষণ হাসছে নাদিম,যাক,ফায়ান’কে না পারুক,উনার ভাইকে তো ছাইপাঁশ বলে জব্দ করা গেছে!
‘এদিকে নাদিমের কথা শোনে দুজনেরই কাঁশি উঠে গেছে। এই মুহুর্তেই কি বলে গেলো নাদিম?তাড়াতাড়ি নিশাত আর সাহিত্য দৌড়ে সেই স্থান ত্যাগ করলো,না জানি আবার কোথা থেকে কে হামলা করে বসে!
চলবে,,,,