#লেখনিতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘কে’টে গেছে বেশ কয়েকদিন,এই ক’দিনে আরিমা ফায়ানের ছায়াও মাড়ায় নি।সেদিন ফায়ান যখন হসপিটাল থেকে চলে আসে আরিমা তখন জোর করেই বের হয়ে আসে হসপিটাল থেকে।আসার সময় সব বিল সে নিজেই দিয়ে আসে।কারো দয়ার দান চায় না তার।
‘সময় এখন মধ্য’দুপুর,আজকে মনে হচ্ছে সূর্য একটু বেশিই রেগে আছে।তাই’তো এতো তাপ ছড়াচ্ছে।
আজকে আবার ভার্সিটি’তে অনুষ্ঠান।নতুন’দের সংবর্ধনা জানানোর জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
‘আরিমা পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে আছে।দৃষ্টি তার ফোনে।কারো সাথে হেসে হেসে ভিডিও ক’লে কথা বলছে সে।তখনই কলিং বেল বেজে উঠে।আরিমা বিরক্তি নিয়ে উঠে দরজা খোলে।এই অসময় কে আসবে।
‘দরজা খোলার সাথে সাথে ছয় ভেড়ার ছানা তার উপর হামলে পড়ে।একেকজনে’র কত কি অভিযোগ তার প্রতি।আরিমা সেগুলো বসে বসে শুনছে।
-শা’লি তোর জামাইয়ের উপরে রাগ কইরা আমাদের সাথে কথা বন্ধ করেছিলিস কেনো?
‘আফরিদের কথায় আরিমা চোখ গরম করে বললো,,
-শা’লি বলোস কেনো?আমার বো….’থেমে গেলো আরিমা।
‘আফরিদ ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,,,
-থামলি কেন?তোর বোন কি?
-কিছু না।আমার কোনো বোন নেই,তাই শা’লি হবারও চান্স নেই আমার।
-আচ্ছা আরু,তোর বাড়ির লোক নেই?একাই এতো বড় ফ্ল্যাটে থাকিস কীভাবে?
-না,আমার কেউ নেই,আমি একা এই পৃথিবী’তে।এতিম আমি।
‘আরিমার থমথমে কথার পিঠে কেউ আর বুলি আওড়ালো না,পাছে যদি আবার তাদের বান্ধবীর মন খারাপ হয়ে যায়?
-তা,অবেলা হঠাৎ তোদের আগমন,নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে?
‘বেলা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,,
-দোস্ত,ভার্সিটি’তে আজ অনুষ্ঠান জানিস তো?
-তো??
-তো মানে কি?রেডি হয়ে আয়।আমাদের যেতে হবে।
‘আরিমা একবার ফারহার দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বললো,,
-এসবে আমার ইন্টারেস্ট নেই,তোরাই যা।
-কিন্তু তোর নাম দেয়া হয়ে গেছে।
-মানে?কিসের নাম দিয়েছিস তোরা?
‘শুভ আমতা’আমতা করে বললো,,
-চটছিস কেন?আমরা দু একজন বাদে সবাই নাম দিয়েছি।তাই তোর নামও দিয়ে এসেছি!
-কিসের?
-তুই গান করবি।
‘সাথে সাথে আরিমা চেঁচিয়ে উঠলো,চোখ বড় বড় করে সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,
-বের হো,এখনি বের হো আমার বাসা থেকে,ছা’গলের দল কোথাকার।তোদের কে বলেছে আমি গান পারি?যতসব নষ্টালজিক মার্কা কথা’বার্তা।
‘ফারহা এগিয়ে এসে আরিমার সামনে দাঁড়ালো।
-প্লিজ আরু।নাম জমা দেয়া হয়ে গেছে।বোঝার চেষ্টা কর।মানলাম আমাদের প্রতি রাগ তোর।এবার একটু বোঝার চেষ্টা কর।
-কিসের রাগ তোদের প্রতি,’ভ্রু কিঞ্চিৎ উপরে তুললো আরিমা।
-না..মানে ওই ব্যাপারটা।
-তেমন কিছু না,ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে।
-তাহলে চল না?
-গান সিলেক্ট করা হয়েছে?,’শান্ত কন্ঠে শুধালো আরিমা।
‘সবাই একসাথে বলে উঠলো,,
-ইয়েসসসসস।
-কি গান?
-প্রাক্তন।
‘কিছুক্ষণ থম মে’রে দাড়িয়ে রইলো আরিমা।লাইক সিরিয়াসলি?প্রাক্তন?
ঠোঁট দুটো গোল করে শ্বাস ছাড়লো আরিমা।
***
-ভাই আপনি কি করতে চাচ্ছেন?
‘ফায়ান শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে।কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই মিটিং শেষ করে বসেছে সে,এমতাবস্থায় নাদিমের দিকে বিরক্তি’কর দৃষ্টিতে তাকালো।
-তা-ই যদি বুঝতে তাহলে তুমি আমি হয়ে যেতে।
‘ফায়ানের এহেন কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো নাদিম।
-অনুষ্ঠানে তো রায়হান শেখ’ও আসবে তাইনা?
-জ্বি ভাই।
‘ফায়ান বাঁকা হাসলো।
***
‘রা’ত ন’টায় অনুষ্ঠান,আপাতত আট টা বাজে এখন।
বেলা বসে বসে চোখ মুছছে আর কান্না করছে।
শুভ আর মনির বিরক্তি’তে দাঁত কাটছে।
-থাম মা,আর কতো কাঁদবি?
‘বেলা নাক টেনে টেনে বললো,,
-তুই কি বুঝবি,শা’লা আমার দুঃখ’ও তোদের সহ্য হয় না।
-বা’লের বয়ফ্রেন্ড,একটা রেখে দশ’টা মেয়ের পিছনে ঘুরে,আর তুই তার জন্য কাঁদছিস?
-মুখ সামলে অশুভ’র বাচ্চা।আমারো দশ’টা বয়ফ্রেন্ড আছে,তাই সমান সমান।
‘আফরিদ এবার তেঁতে উঠলো,,
-বাহ ভালোই তো,দু’জনে সমান সমান।তুইও বারো**** ও নিজেও প্লে বয়।এখানে কান্না করার মানে কি?আবার কাঁদবি তো ঠাটিয়ে মারবো।
‘আফরিদের ব’কা খেয়ে আবারো ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লাগলো বেলা।
-তাই বলে একটু ফর্মালিটি’ও দেখাতে পারবো না তোদের জন্য।
-ঢ’ঙ্গের আলাপ রাইখা রেডি হতে যা।নয়তো বা’কিরা এসে যদি দেখে এখনো রেডি হোস নি,মাইর একটাও মাটিতে পড়বে না।বাদ বাকি তোকে রেখেই চলে যাবো।
‘বেলা উঠে আফরিদের মাথায় একটা থাপ্প’ড় লাগিয়ে সেখান থেকে চলে এলো।আফরিদ সেদিকে তাকিয়ে কয়েক’টা গালি ছুঁড়ে মারলো।
বেলা শোনতে পেলে নিশ্চয়ই এখন তার ঘাড় মটকে দিতো।
-কি’রে তুই আবার কাঁদছিস কেন?’চোখ ছোট ছোট করে জিগ্যেস করলো শুভ।
‘মনির কাঁদো কাঁদো মুখ করে উত্তর দিলো,,
-মানলাম আমার নাম মনির,তাই বলে অঞ্জনা’কে নিয়ে ব্যার্থ গান গাইবো?ইম্পসিবল।
-ভালো তো,আমরা কি করবো?আরিমা’কে বল।
-ধুর ভালো লাগে না আর।
***
‘সাত ভেড়ার ছানা ভার্সিটি প্রাঙ্গনে উপস্থিত। আরিমা চুক্তি করে এসেছে,পার্টিসিপ্যান্ট করেই সে এখান থেকে চলে যাবে।বাকিরা’ও সায় জানিয়েছে।
‘একে একে কয়েকটা গাড়ি এসে ভার্সিটি’র গে’টে থামলো,গাড়ি গুলো থামতেই প্রিন্সিপাল স্যার সহ আরো কয়েকজন লোক এগিয়ে গেলো।
গাড়ি থেকে হাস্যজ্বল মুখে ফায়ান নেমে এলো।সবার সাথে কিছুক্ষণ আলোচনা করলো।তারপর প্রিন্সিপাল স্যার তাকে নিয়ে স্টেজে আসনে বসিয়ে দিলেন।
তার সাথে নাদিমও এসেছে।গার্ড গুলো বাহিরেই অবস্থান করছে।
‘আরিমা ফায়ানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলো,মানুষটাকে অনেক সুন্দর সুপুরুষ লাগছে।বরাবরই সাদা পাঞ্জাবি’তে মানুষটাকে দারুন মানায়।
গ’লার নিচে তিল’টাও একদম ফোটে উঠেছে।আরিমা কিছুটা লাজুক হাসলো।
‘কিন্তু পরক্ষণেই গে’টের কাছে একজনকে দেখে থমকে গেলো আরিমা,তার চারপাশ’টা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে।
আবারো,আবারো সেই তিক্ত’কর স্মৃতি’র মুখোমুখি হলো সে।আবারো সেই অনুভূতি, সেই ব্যাথা,সেই ব্যার্থতা।আবারো সেই ক্ষোভ মনের কোণে প্রকাশ পাচ্ছে।আরিমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।না এটা হতে পারে না।সে কিছুতেই ধরা দিবে না লোকটার কাছে।
***
‘রায়হান শেখ আর তার ছেলে রাজ শেখ,দু’জনেই স্টেজে অবস্থান’রত।ফায়ান আর রায়হান শেখ একে-অপরের দিকে শান্ত দৃষ্টি’তে তাকিয়ে আছে।মুখে কিছু না বললেও মনে মনে বেশ রেষারেষি চলছে তাদের।
‘নতুন’দের মাঝে একে’একে সবাইকেই ফুল দেয়া হচ্ছে আর সংবর্ধনা কার্ড।
সবাই প্রায় শেষ হয়ে গেছে।এখন বাকি হলো আরিমা আর তার বন্ধুমহল।তারাও স্টেজো উঠছে।ফার’হার পালা যখন এলো,সে ফায়ানের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।ফায়ান বোনের হাসি দেখে নিজেও হালকা হাসলো।তারপর এলো আরিমা’র পালা,সে কিছুতেই এই দুই লোকের মুখোমুখি হতে চায় না।এইরকম পরিস্থিতিতে এখন কি করবে ‘ও?
‘হালকা দম নিয়ে স্টেজে পা বাড়ালো আরিমা।যায় হয়ে যাক,সে কিছুতেই ধরা দিবে না লোকটার কাছে।মুখে একবার দেখে নিলো মাস্ক ঠিকঠাক আছে কি’না।
‘ফায়ান আরিমার অবস্থা দেখে হালকা হাসলো,কিন্তু সে এটা বুঝলো না আরিমা ঘামছে কেনো?খুব বেশিই কি গরম লাগছে মেয়েটার?
***
‘অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।সবাই যে যার মতো করে পার্টিসিপ্যান্ট করে স্টেজ থেকে নেমে এসেছে।কেউ খোঁজেও আরিমার হদিস পেলো না।আশ্চর্যে’র ব্যাপার হলো আরিমা’কে কেউ স্টেজে ডাকেও নি।
‘এই সুযোগে মনিরও কেটে পড়েছে।সে কিছুতেই উদ্ভট গান গাইতে পারবে না।সব মিলিয়ে যাচ্ছে’তাই অবস্থা বাকিদের।
***
‘আরিমা ওয়াশরুম থেকে বরিয়ে এলো,চোখ তার টলমল করছে,একদম লাল হয়ে এসেছে আঁখি পল্লব।
সে কিছুদূর হেঁটে যেতেই একটা আশ্চর্য ঘটনা দেখতে পেলো।
অনেক লোকের সমাবেশ মাঠের মাঝখানে।সোরগোলে’র শব্দ’ও ভেসে আসছে।সে দ্রুত পদে সেদিকে গেলো।ভীড় ঠেলে সামনে যেতেই কারো কোমল কন্ঠ শোনতে পেলো।
-ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট মিঃ শেখ।
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)