#লেখনিতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘ঘটেছে এক হুল’স্থুল কা’ন্ড,সারা শহর জুড়ে হরতাল জারি হয়েছে।লোকেরা সামনে পিছনে যা পাচ্ছে সব ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে,সেটা মানুষ হোক বা গাড়ি,তা তাদের দেখার বিষয় না।আর কেউ না বুঝলেও ফায়ান ঠিক বুঝতে পেরেছে এটা কার কাজ।
সে ফারহা’কে দ্রুত বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে যেনো বোনের গায়ে কোনো আঁচড় লাগতে না পারে।
‘মেইন রোডের কাছে আসতেই নাদিম’কে দাঁড়ানো দেখতে পেলো ফায়ান,দ্রুত গাড়ি থামাতে বলছে সে।
ফায়ান গাড়ি থামিয়ে নাদিমের কাছে গেলো,যাওয়ার আগে ফারহা’কে সতর্ক করে গেছে যেনো এক পা বের না হয়।
ফারহা’ও সায় জানিয়েছে।কিন্তু ভাই যাওয়ার পর একটা মানুষ’কে দেখে সে আর বসে থাকতে পারলো না।দৌড়ে তার নিকট চলে গেলো।
***
-ভাই, রায়হান শেখ এবার পা’গ’লা কু’ত্তা’র মতো ক্ষেপেছে।কোনো না কোনো ভাবে আপনার ক্ষতি করতে চাচ্ছে সে।তাই এই হরতাল ডেকে এনেছে।এবার সাধারণ মানুষ’রা আপনার কাছে বিচার চাইবে ক্ষ’তিপূরণ চাইবে।আপনি দিতে অস্বিকার করলে সবাই আপনার বিরুদ্ধে যাবে,এটাই তার ফার্স্ট ট্র্যাপ।
-সেটা আমি বুঝে নিবো নাদিম,তুমি বরং বোনকে বাড়ি পৌঁছে দাও,আমার কাজ আছে।
‘বলেই সেখান থেকে অন্য গাড়ি’তে উঠে পরলো ফায়ান।
এদিকে নাদিম বেচারা হা’হুতাশ করছে।সে কি’না ফারহা’কে বাড়ি পৌঁছে দিবে?
কেন জানি ফারহা’কে দেখলে তার ভীষণ লজ্জা পায়।
***
-আপনি?ভাইয়া কোথায়?
‘নাদিম আমতা আমতা করে বললো,,
-ভাই একটা কাজে গিয়েছে,আমাকে বলেছে আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে।
-ঠিক আছে।
-কিছু না মনে করলে একটা প্রশ্ন করি ম্যাম?
– জ্বি বলেন,আর প্লিজ বার’বার ম্যাম বলবেন না।আমি আপনার চেয়ে অনেক ছোট তাই নাম ধরে ডাকবেন।
‘নাদিম টাস্কি খেলো,ভাই যদি জানে সে ফারহা’কে নাম ধরে ডাকে,তা’কে আর আস্ত রাখবে না।একবার ঢোক গিলে অধর’জোড়া ভিজিয়ে নিলো নাদিম।
-আরিমা ম্যাম কি আমাদের সাথে’ই যাবে?
‘ফারহা ভ্রু কুঁচকে একবার নাদিমের দিকে তাকিয়ে আরিমার দিকে দৃষ্টি ফিরালো।
-কেনো?আপনার কোনো সমস্যা এখানে?
-নাউজুবিল্লাহ, কি যে বলেন না আপনি।
-তাহলে নিজের কাজ করুন।
-জ্বী।
‘মাগো মা,ভাইয়ের মতো বোনের’ও ঝাঁঝ কম না।শরীরে তো একই রক্ত বইছে।কিন্তু আরিমা মেয়েটা’কে তার সুবিধার লাগে না।কি রকম রহস্যময়ী।
***
‘খান’ভীলায় প্রবেশের সাথে সাথে ফারহা’কে ঝেঁকে ধরলো সবাই।প্রশ্ন এই মেয়েটা কে? যাকে সাথে করে এনেছে সে?
-ফারু মেয়েটা কে,তোর বন্ধু?
-নাহ গার্লফ্রেন্ড।
‘সোনালী হকচকিয়ে গেলো,দেখো মেয়ের কান্ড,মায়ে’র সাথে ফা’জলামো করে।
-আহ ছোট,এটা কি ধরনের প্রশ্ন? বান্ধবী’ই তো হবে না?
-বড় আম্মু,তুমি উনাকে বুঝাও।আর হ্যাঁ এ আমার ফ্রেন্ড আরু।কালকে আমার বার্থডে তাই ও’কে এনেছি।আসতেই চায় নি জানো?রাস্তা থেকে জোর করে ধরে বেঁধে এনেছি।
-ভালো করেছিস,এখন বোস তোদের জন্য শরবত করে আনি।যা গরম পড়েছে।
-আচ্ছা আম্মু,আব্বু আর বড় আব্বু কবে আসবে?এবারেও তারা থাকছে না?
‘সোনালী অসহায় কন্ঠো জবাব দিলো,,
-তাদের কি আর পরিবারের প্রতি খেয়াল আছে?সেই তো টাকার পিছনেই ছুটছে।
‘আরিমা এতক্ষণ যাবত চুপ হয়ে সব শুনছিলো,তার শাশুড়ী আন্টির মন খারাপ দেখে সে আর তচুপ থাকতে পারলো না।
উঠে গিয়ে সোনালী’কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,,
-উফফ আন্টি,মন খারাপ করবেন না তো।আমরা আছি তো নাকি?উনাদের কাজ আমরা’ই পুষিয়ে দিবো।নো টেনশন।
‘সোনালী বেগম হাসলেন,মেয়েটাকে তার ভালো লেগেছে।
-মন খারাপ করি’নি মা,তুমি বরং ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার বাড়ছি।
***
‘ফারহা ওয়াশরুমে ঢুকেছে,সেই সুযোগে আরিমা ভাবছে একটু নেতা সাহেবের রুম থেকে ঘুরে আসা যাক।উনি হয়তো রুমে নেই এখন।
ঝটপট রুম থেকে বেরিয়ে এলো আরিমা,মনে হচ্ছে তার নিজের বাড়ি এটা,এভাবেই পদ’চারণ করছে।সব রুম চেক করতে করতে একটা কক্ষের সামনে এলো আরিমা,ভিতর থেকে দরজা ভিড়ানো।
নেতা সাহেব তো এখন আসে’নি।আসার কথাও না।তাহলে দরজা খোলা কেন?
‘আরিমা বেশি ভাবলো না,হতে পারে দরজা খোলা রেখেই গেছেন উনি।
পা টিপে টিপে ভিতরে প্রবেশ করলো আরিমা।বাহ তার নেতা সাহেব বেশ সৌখিন মানুষ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আরিমা চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলো।একদিন এই রুমে’ই তার ঠাঁই হবে।ভাবতেই লাজুক হাসলো আরিমা।তারপর বেলকনিতে চলে গেলো।
বাহ এই জায়গা’টা তার দারুণ লেগেছে।এখান থেকে বাগানের সব দৃশ্য দেখা যায়।ফল-ফুলের অভাব নেই সেখানে।
‘লম্বা একটা শ্বাস নিলো আরিমা,নাসারন্ধ্রে কাঠ গোলাপের ঘ্রাণ এসে ঠেকছে।মুগ্ধ’তায় চোখ বুঁজে এলো আরিমা’র।
-এই মেয়ে,তুমি এখানে কি করছো?
‘হঠাৎ কারো ধমকে হকচকিয়ে গেলো আরিমা,তড়িৎ গতিতে ঘাড় ঘুরিয়ে ফায়ান’কে দেখে স্বস্তি পেলো যেনো।
-আমার কথা শোনো নি?কারো অনুপস্থিতি’তে যে রুমে আসতে নেই এই ম্যানার্স টুকুও তোমার মাঝে নেই?
‘আরিমা কিছু বলার জন্য মুখ খুলছিলো,কিন্তু তাকে থামিয়ে দিয়ে ফায়ান আবার বলতে লাগলো।
-তুমি আমার বাসায় কি করছো?কে এলাও করেছে তোমায়?সেই লাফাতে লাফাতে আমার বাসা অব্দি চলে এলে?যতসব থার্ড ক্লাস মার্কা মেয়ে।
‘আরিমা’র সরু ভ্রু কুঁচকে এলো,নেতা সাহেব তাকে অপমান করছে।
আরিমা ফায়ানের দিকে এগিয়ে এলো।এক আঙুল উঁচু করে বললো,,
-দেখুন নেতা সাহেব,এখানে আমি মোটেও আসতে চাই নি,আপনার বোন জোর করে এনেছে।আমাকে দেখে আপনার থার্ড ক্লাস মনে হয়?দেখবেন একদিন এই থার্ড ক্লাস মেয়ের পিছু পিছুই না আপনার ঘুরতে হয়।
‘ফায়ান আরিমার এক হাত মুচড়ে ধরে আরিমার পিঠ ফায়ানের বুকে ঠেকালো।আরিমা ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠেছে।কিন্তু না,তার তো নেতা সাহেবের সামনে দূর্বল হলে চলবে না।
ফায়ান আরিমা’র কানে ফিসফিস করে বললো,,
-শোনো মেয়ে,আজ পর্যন্ত কেউ সৌহার্দ্য ফায়ান খানে’র সামনে মাথা উঁচু করে তো দূরের কথা আঙুল উঁচিয়ে কথা বলার দুঃসাহস ‘ও করেনি।আর তুমি দু দিনের মেয়ে হয়ে চটাং চটাং কথা বলছো?পরবর্তীতে এই সাহস দেখিও না মেয়ে,নাহলে আঙুল উঁচানোর জন্য আঙুল আর গলা উঁচিয়ে কথা বলার জন্য তোমার সুন্দর গ’লাটা থাকবে না।
‘আরিমা ঈষৎ কেঁপে উঠলো।তবু নিজেকে সামলে উত্তর কাটলো,,
-আজ অব্দি কারো সাহস হয়নি আপনার সামনে মাথা উঁচিয়ে কথা বলার।আমার সাহস বরাবরই একটু বেশি।আর তাছাড়া গলা উঁচিয়ে যেহেতু কথা বলেছি,তাই আমি ভালো ভাবেই জানি আমার গলা’টা কীভাবে বাঁচাতে হবে আমার।
‘আরিমার ত্যাড়া জবাবে ফায়ানের রাগ তর’তরিয়ে বেড়ে গেলো,আরিমার হাত”টা আরেকটু চেপে ধরতেই আরিমা অস্ফুট স্বরে কঁকিয়ে উঠলো।ফায়ান তার হাত ধরে টেনে এনে দরজার বাহিরে ছুঁড়ে মারলো।
-তোমার জায়গা সবসময় এভাবে বাহিরেই হবে।ফারদার আমার রুমে ঢুকার সাহস যেনো না হয়।
‘বলেই মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো ফায়ান।
আরিমা একপলক দরজার দিকে অসহার দৃষ্টিতে তাকালো।তার নেতা সাহেব প্রচুর কঠিন একটা মানব।এভাবে কেউ ব্যাথা দেয়?আগের ব্যাথা’টা এখনো সারে’নি।তার’উপর নতুন করে ব্যাথা দিলো নেতা সাহেব।হাত পুরো লাল বানিয়ে ফেলেছে।নির্দয় পুরুষ।
থাকবো না আপনার জীবনে হুহ চলে যাবো।
***
‘রাতে ডাইনিং এ সবাই খেতে বসেছে,ফারহা সবসময় ফায়ানের পাশে বসেই খায়।কিন্তু সে এবার আরিমা’র সাথে বসেছে।
তারা দু’জন খাচ্ছে আর হেসে হেসে গল্প করছে,মনে হচ্ছে দিন-দুনিয়ার ধ্যান নেই বললেই চলে তাদের মাঝে।
‘বাকিরা অবশ্য অবাক হয়েছে।কিন্তু ফারহা’র হাসি মুখ দেখে কেউ আর মুখে ‘রা’ কা’টেনি।
কিন্তু ফায়ান ফুসছে,কেন জানি আরিমা’কে তার সহ্য’ই হয় না।
-আরু কালকে তুই আর আমি এক ড্রেস পরবো ঠিকাছে?
‘উৎফুল্লে’র সহিত কথা টা বললো ফারহা।
-আরে তুই বার্থডে গার্ল,সবার থেকে আলাদা থাকবি তুই,ছা’গ’ল কোথাকার।
‘ফারহা গাল ফুলালো।
-আচ্ছা,বাকিরা আসবে না?
-আফরিদ’দের বলেছি,তারা আসতে নারাজ।সন্ধ্যা’য় আসবে একেবারে।
-ঠিকাছে।
-তোরা চুপ করবি?খাওয়ার সময় বেশি কথা বলা আমি পছন্দ করি না ফারু।
‘ফায়ানের গম্ভীর মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো আরিমা।তার নেতা সাহেব’কে গম্ভীর মুখেও কত্তো কিউট লাগে।ইচ্ছা করছে খেয়ে ফেলি।
তখনই ফায়ানের কাঁশি উঠে গেলো।এক গ্লাস পানি খেয়ে সেখান থেকে
চ’ম্প’ট কাটলো ফায়ান।
‘আরিমা হা করে তাকিয়ে আছে,তার কথার জন্য উনার কাঁশি উঠেছে নাকি?কিন্তু সে যে মনে মনে বলেছে।অদ্ভুত নেতা সাহেব আর তার কান্ড’কারখানা।
***
-কি ব্যাপার রাজ,তোর কার্যক্রম কতো দূর?
-এই তো বাবা,কার্ড হাতে পেয়ে গেছি।একবার খালি খান’ভীলায় ঢুকি আমি।কিছু না করে ফিরছি না।
-দেখিস কিন্তু।ফায়ান খান তার বোনের ব্যাপারে পজেসিভ বেশি।
-আহ বাবা,না যেতেই ভয় দেখাচ্ছো?
-তুই ভয় পাচ্ছিস?
‘রাজ তার বাবার দিকে বিরক্ত’কর দৃষ্টিতে তাকালো।
তার খেলা এবার শুরু হবে,সে”ও দেখবে ফায়ান খা’ন কীভাবে তার হাত থেকে প্রাণ’প্রীয় বোনকে বাঁচায়।
চলবে,,,,
(আসসালামু আলাইকুম,ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আর গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্লিজ।)