(প্রথম অংশ)
#লেখনিতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘জাঁকজমক’পূর্ণ আলোক’রশ্মি’তে ঝলমল করছে খান ভীলা।কোথাও কোনো কিছুর ত্রুটি নেই।নানান লোকদের আগমনে প্রত্যাক জায়গা’ গমগম করছে।বাহিরে কোথাও পা ফেলার’ও সুযোগ নেই বোধহয়।
‘যেদিকে তাকানো হয়,সেদিকেই বড় বড় নেতা,সেলিব্রিটি, অথবা বড় বড় বিজনেসম্যান’দের দেখা যাচ্ছে।এমপি সৌহার্দ্য ফায়ান খানের একমাত্র বোনের জন্মদিন বলে কথা,নামি-দামি মানুষদের আনাগোনা অবশ্যম্ভাবী।
‘ফায়ান সবাইকে সাদরে গ্রহণ করছে,মুখে হাসি ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে আলাপ’চারিতা করছে।তা দেখে আরিমা মুখ বাঁকালো,,”এহ ঢং দেখলে আর বাঁচি না।কীভাবে দাঁত কেলিয়ে হাসছে।আমার সাথে একটু ভালো ব্যাবহার করলে কি হয় আপনার নেতা সাহেব,কথা বলার সময় মুখে করলা ঝুলিয়ে রাখে।যখনই আমি কিছু বলবো তার উত্তরে তিতা তিতা কথা বলবে”,অভিমানে মুখ ফুলিয়ে রাখলো আরিমা।এই নেতা সাহেব’কে যদি সে তার পিছনে না ঘুরিয়েছে,তার নামও আরিমা এহসান পুষ্প না।
***
‘দশ’টাই কেক কাটা হবে,বার্থডে গার্লকে তো সবার সামনেই থাকতে হবে,কিন্তু ফারহা তার বিপরীত।নিজের রুমে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।কেউ তাকে নিচে নামাতে পারছে না।ফারহা কি মন খারাপ করেছে নাকি রাগ করেছে?এই উত্তর’টাও কেউ নিতে পারছে না তার থেকে।অবশেষে সোনালী হাল ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো,উদ্দেশ্য ছেলে’কে ডেকে এনে মেয়ের রাগ ভাঙানো।
কিন্তু তিনি কি জানেন,তার বড় ছেলের কার্যক্রমে’র জন্যই মেয়েটা মুখ ফুলিয়ে রেখেছে?
‘হুড়মুড়িয়ে কক্ষে ছয় ভেড়ার ছানা প্রবেশ করলো।ফারহা এক পলক তাদের দেখে আবার মুখ ঘুরিয়ে নিলো।সবাই গিয়ে ফারহার সামনে দাঁড়ালো।
-ওয়াও,ফারু তোকে এই লেহেঙ্গা’টাই কি দারুন লাগছে।ইশশশ,জোস ফারু জোস।
‘সিমরানের মুখ খুশী’তে চিক’চিক করছে।কিন্তু তার এই চিক’চিক করা মুখশ্রী’টা বেশিক্ষণ স্হায়ী হলো না।
-ইমরানের বাচ্চা দেখিস না ওর মুড অফ?এমন কিছু কর যাতে করে ওর মন ভালো হয়ে যায়।তা না করে ওয়াও,নাইস,জোস,,’লাস্টের’টুকু ব্যাঙ্গ করে বললো আফরিদ,সিমরান চোখ মুখ কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘আর কেউ না জানলে আরু ঠিকই না ফারু কেনো মুড অফ করে রেখেছে।সে গুটি’গুটি পায়ে ফারহা’র দিকে এগোলো।ফারহার পাশে বসে তার কাঁধে হাত রাখলো।ফারহা এক পলক তার দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে নিলো।মেয়েটার দিকে সে তাকাতেও পারছে না।
-আচ্ছা ফারু তোকে একটা প্রশ্ন করি?
‘আরিমার কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো ফারহা।
-আমি যে তোর ভাবি তুই কি জানিস?
‘এই পরিস্থিতি’তে আরিমার কথাটা কেউ মেনে নিতে পারলো না।ফারহা ছাড়া পাঁচ ভেড়ার ছানা’র কাঁশি উঠে গেছে।
-দেখ,আমাদের বিয়ে না হলেও হবে তো একদিন?তার আগে তোর বড় ভাইজানের পিছু আমি ছাড়ছি না।আমাকে তুই ভাবি বলেই সম্বোধন করবি।
-আর শোন,উনার কোনো অপমান’ই আমি গায়ে মাখি না।ভালোবাসা যখন এক তরফা তখন সেখানে একটু পরিশ্রম করতেই হবে।বুঝলি?
-ফারহা হাসলো,বাকিরা ড্যাব’ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।বুঝাই যাচ্ছে তাদের কথা পাঁচ ভেড়ার ছানা বুঝেই নি।
***
‘ফায়ান হন্ত’দন্ত করে উপরে উঠছে।দশ’টা বেজে গেছে,বোনকে নামাতে হবে।সোনালীর থেকে শুনেছে ফারহা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।কারণ টা ফায়ান ভালো ভাবেই জানে।তার জন্যই বোনটার মন খারাপ।কিন্তু তার কিছু করার নেই।নিজের সিদ্ধান্তে সে অটল।
‘ফায়ান কক্ষে ঢুকার আগেই আরিমা ফারহা’কে নিয়ে বেরিয়ে এলো।তাদের পিছনে বাকিরা’ও এসে দাঁড়িয়েছে।ফারহা একবার আরিমা আরেকবার ফারহা’র দিকে তাকালো।অতঃপর ফোস করে শ্বাস ফেললো।
‘ফায়ান একদিক দিয়ে মানলো,ফারহা তার কথার পর আরিমা’র কথা’য় বেশি শুনে।মেয়েটা একেবারেই বোনটাকে রপ্ত করে নিয়েছে।
‘***
‘নিচে নেমে ফারহা চারপাশ’টা ভালো করে দেখে নিলো,তার বাড়িটা চমৎকার ভাবে সাজানো হয়েছে।সামনে টেবিলের উপর কেক রাখা।তার পিছনে ফুল দিয়ে বড় বড় করে লিখা”হ্যাপি বার্থডে ফারু”
‘চারপাশে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলো ফারহা,কিন্তু একজনের দিকে দৃষ্টি পরতেই থমকে গেলো সে,চোখ ফিরানোর নাম-গন্ধই নেই তার মাঝে।বুকের ভিতর ঢিপ’ঢিপ করছে।ভিতর’টা জ্বলছে।কেন জ্বলছে তা ফারহা’র অজানা।
‘আরিমা সবকিছুই খেয়াল করেছে।সে মনে মনে দোয়া করছে,ফারহা এমন ভুল যেনো না করে।নাহলে তার জীবন নরক হয়ে যাবে।
**
‘ফায়ান বোনকে নিয়ে কেক কাটলো,ফারহা পরিবারের মধ্যে সর্বপ্রথম তার ভাই’কে কেক খাইয়ে দিলো।অতপর তার মা সোনালী।তারপর বড় আম্মুর দিকে এগিয়ে গেলো।মোহনা তাকে প্রাণ ভরে দোয়া করে দিলো।ফারহা’ আরিমা’র কাছে যেতে নিলে মাথা নাড়িয়ে না করে আরিমা।কারণ সে মাস্ক খুলবে না।এখানে মাস্ক খুললেই সর্বনাশ হয়ে যাবে।
ফারহা একে একে তার বন্ধুমহলে’র সবাইকে কেক খাইয়ে দিয়ে পরে দম নিলো।
***
-আফরিদ,বাসায় কখন যাবি ভাই?
-ভাইয়া,আরেকটু পর যাচ্ছি।তুমি কখন যাবে?
-আমার দেরী হবে।ভাইয়ের সাথে কাজ আছে যে।
-আচ্ছা ঠিকাছে,তুমি আমাকে বাসার চাবিটা দাও।আমি চলে যাবো ঠিক টাইমে।
-আচ্ছা,,
‘নাদিম আফরিদের হাতে চাবি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
-কি’রে এমপির পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট তোর ভাই?
‘মনিরের কথায় দু পাশে মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো আফরিদ।
-আচ্ছা তোর ফ্যামিলি’তে কে কে আছে?কোনোদিন বলিস নি এ ব্যাপারে আমাদের।
‘আফরিদ একটু নড়ে’চড়ে বসলো।গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,,
-আমি আর আমার ভাই ছাড়া কেউ নেই।আমরা এতিম।
***
‘আরিমা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে’ই ‘থ’,,যার থেকে পালানোর জন্য এতকিছু ঠিক তার সামনেই পরতে হলো তার?
‘রাজ এক পা এক পা করে আরিমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো,আরিমা বার কয়েক ঢোক গিলে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো।নাহ এই লোকটার সামনে কিছুতেই পরতে চায় নি আরিমা।
-কি ব্যাপার জান,মাস্ক টা একটু খোলো।কবে থেকে দেখি না তোমায়।
‘বলেই বাঁকা হাসলো রাজ।
-এখানে কেনো এসেছো?চলে যাও এখান থেকে।
-আহা,যাবোই তো।তোমরা কি ভেবেছিলে,আমার থেকে লুকিয়ে প্লেন করবে আর আমি সে ব্যাপারে জানবো না?আর এই তুচ্ছ মাস্ক পরে তুমি আমার সামনে নিজের সৌন্দর্য ঢেকে রাখতে পারবে ভেবেছো?
‘বলেই এক টানে মাস্ক খোলে নিলো রাজ।
-শোনো বেবি।আমি চাইলে এই মাস্ক কেনো,তোমার শরীরের কা…….
-কে ওখানে?ওখানে কে?কি করছে?এই তোমরা কে?
‘রাজ নিজের মুখ লুকিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেলো।আরিমা এখনো মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে।
-বাহ বাহ।এই তোমার আসল রূপ?বেশি দিন ভালো সাজতে পারলে না মিস আরিমা।
-ম…মানে?
‘আরিমা আশ্চর্য হয়ে ফায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
-মানে জানতে চাচ্ছো?এইযে খোলামেলা হয়ে রোমান্স করছো।তা বলি,শোনো মেয়ে,এই বাড়ি অপবিত্র না।আর না এখানে অশ্লীল কাজ চলে।তুমি এসে এই বাড়ি’টাকে অপবিত্র করে দিয়েছো।ছিঃ ফারহা’র কথাটা একটু ভাবতে।সে যদি জানতে পারে,তার প্রাণ’প্রীয় বান্ধবী এরকম নষ্টা কাজ করে,সে কতটুকু কষ্ট পাবে জানো?
‘আরিমা বাকরুদ্ধ হয়ে ফায়ানের দিকে ফ্যাল’ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।কথা বলার শক্তি’টুকুও পাচ্ছে না সে।হঠাৎ তার মনে হলো।তার নেতা সাহেব তাকে ভুল বুঝেছে।
-বিশ্বাস করুন…..
-বিশ্বাস? এই মেয়ে এখুনি বের হয়ে যাবে ছিঃ।এটা আমার বাড়ি।কোনো হোটেল না যে যা ইচ্ছে তা করবে।বাহিরে অনেক হোটেল,বাসা ফাঁকা পাবে।আমার বাসায় এসব ফষ্টি’নষ্টি চলবে না।বেরিয়ে যাও আমার বাসা থেকে।এক্ষুনি বেরোবে তুমি।গেট আউট।
-প্লিজ শোনেন……
-শাট আপ এন্ড গেট আউটটটটটটটটটট।কোনো চরিত্র’হীনা মেয়ের জায়গা খান ভীলায় হবে না।থার্ড ক্লাস বস্তির মেয়ে।
‘আরিমা কেঁপে উঠলো।তার পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেলো।সে আর দাঁড়ালো না।ফায়ান’কে একবার দেখে৷নিলো।লোকটা অন্যদিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আছে।
অতপর এক দৌড়ে মেইন গেটের দিকে ছুটলো।ফায়ান সেদিকে তাকিয়ে পরপর কয়েকটা শ্বাস ফেললো।
অবশেষে আপদ বিদায় হলো।
***
‘মাঝ রাস্তায় আরিমা পা গুটিয়ে ফুট’পাতে বসে আছে।দৃষ্টি তার আকাশের পানে।নিজ মনে বুলি আওড়াচ্ছে আরিমা।সেই বুলি কারো শোনার।বোঝার সাধ্য নয়।
‘ফায়ান ফারহা’কে ডেকে নিয়ে কঠোর নিষেধ করেছিলো।যেনো সে আরিমার সাথে কথা না বলে,সম্পর্ক না রাখে।ফারহা ভাইয়ের মুখের উপর নাকচ করতে পারেনি আবার সায় ও জানায়নি।
এবার তো ফায়ান আরো কথা বলতে দিবে না আরিমার সাথে।তার বন্ধুমহলের ছানা গুলোও কি তাকে ভুল বুঝবে?ঘৃণা করবে?আচ্ছা আরিমা কি এতই খারাপ?সবাই এক এক করে ছেড়ে চলে যায় তাকে।
‘তখনই একটা কল এলো,আরিমা সেদিকে তাকিয়ে হেসে দিলো কে বলেছে তাকে সবাই ছেড়ে যায়।সবাই ছাড়ে না।আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করে অনেকে।কিন্তু নিয়তির কাছে হেরে যায়।তবে যাওয়ার আগে একটা করে স্মৃতি রেখে যায়,,,,,।
চলবে,,,
(ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আর গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ)
#আমার_নেতা_সাহেব
#পর্ব_সংখ্যা_৯ (দ্বিতীয় অংশ)
#লেখনিতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘প্রত্যুষে যেভাবে পাখির কিচির’মিচির শব্দে চারিদিকে মুখরিত হয়।ঠিক সেভাবেই সোরগোলে’র শব্দে খান ভীলা মুখরিত হয়ে আছে।
এটা যেন’তেন শব্দ নয়।গ্লাস ভা’ঙা’র শ’ব্দ,টেবিল ভা’ঙার শব্দ,টিভি ভা’ঙা’র শব্দ,ড্রয়িংরুমের প্রত্যাক টা জিনিস ভে’ঙে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলেছে খান পরিবারের ছোট কণ্যা।কেউ তার ধারের কাছেও ঘেষতে পারছে না।ফায়ান তো আরো না।বোনের দিকে এগোতে নিলেই ছুরি দিয়ে সুইসাইডে’র হুমকি দেয়।অগত্যা সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বোনের কান্ড দেখছে।
‘বেশ খানিক সময় বাদে ফায়ান ফারহার দিকে এগোতে নিলে ভাইয়ের দিকে ছু’রি ধরে চেঁচিয়ে উঠে ফারহা,,
-খবরদার যদি আমার দিকে এক পা বাড়িয়েছো।নিজের জায়গায় থাকো।নইলে ভালো হবে না।
-কেনো অযথা বাহিরের ন’ষ্টা মেয়ের জন্য জেদ করছিস ফারু?কি পেয়েছিস ওর মধ্যে?
‘ফায়ানের কন্ঠে রাগ ঝড়ে পড়ছে,সে কিছুতেই তার বোনকে ওই বে’হায়া মেয়েটার সাথে মিশতে দিবে না।
-চুপ করো তুমি,আরুর সম্পর্কে আর একটা বাজে কথা বলে দেখো।আমি নিজেকে এখনি শেষ করে দিবো।
-ওর সাথে থাকতে থাকতে তোর মন-মানসিকতা’ও থার্ড ক্লাস হয়ে গেছে।এই মেয়েকে ফ্যামিলি কি শিক্ষা দিয়েছে কে জানে।
‘ফারহা আগের থেকে-ও দ্বিগুণ চেঁচিয়ে উঠলো,উত্তেজনায় তার হাত পা মৃদু কাঁপছে।
-জাস্ট শাট আপ।অনেক বলেছো,এমপি হয়েছো বলে মাথা কিনে নিয়েছো?মানুষ চিনতে শিখেছো?
আরে মেয়েটা এতিম।এই দুনিয়ায় ওর কেউ নেই ভাইয়া কেউ নেইইই।ওকে আমি এনেছিলাম নিজ দায়িত্বে এই বাসায়।মেয়েটা আসতে চায়নি জানো তো?আমি তার দিকে তাকাবো কীভাবে? কীভাবে তাকাবো আমি?আমাকে তুমি তার চোখে ছোট করে দিলে ভাইয়া?আমার ভাই এরকম টা কীভাবে করতে পারে?
-অধঃপতন হয়েছে তোমার ভাইয়া।আমি আরু’কে খোঁজে না পাওয়া অব্দি না তোমার বাসার এক গ্লা’স পানি মুখে তুলবো আর না তোমার সাথে কথা বলবো।
‘ফারহা দৌড়ে নিজের রুমের দিকে ছুটলো।এদিকে রেখে গেলো খান পরিবারের বিস্মিত ইয়া বড় বড় চোখ।ফায়ানের কানে এখনো বাজছে,”মেয়েটা এতিম”।
কিছুক্ষণ পর ফায়ান নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বিড়বিড় করে আওড়ালো,,
-এতিম দেখেই তো এ অবস্থা। ফ্যামিলি থাকলে ভালো শিক্ষা’টাই দিতো।
***
‘ফারহা নিজের রুমে এসে একটা ফটো ফ্রেম হাতে নিয়ে বসে আছে,তার চোখ থেকে টপ’টপ করে পানি সেই ফ্রে’মে গড়িয়ে পড়ছে।ফ্রেম’টাই তাদের সাতজনের ছবি,নিচে গুটি কয়েক শব্দে লেখা”সাত ভেড়ার ছানা”
এই ফ্রেম টা আরিমা তার জন্য বাঁধিয়ে ছিলো,তাকে দিবে বলে।বেচারি দিতেও পারে নি।তার আগেই তো ভাইয়া তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
-আমার এখানে বসে থাকলে চলবে না।আরু কে খুঁজতে হবে আমার।
***
‘নতুন বাসায় শিফট হয়েছে আরিমা,কাল রাতের মধ্যেই সে তার ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়েছে।এটাতে ভাড়ায় থাকবে সে।আরিমা ভালো’ভাবেই জানে,সকাল হলেই ফারহা সহ পাঁচ ভেড়ার ছানা ছুটে আসবে।যদি কাহিনী জানে তাহলে।আপাতত আরিমা তাদের সামনে পরতে চাচ্ছে না।
-হায়রে আমার জীবন, হায়রে প্রিয় মানুষ। ধোকা,সব ধোকা।সবাই ধোকা দেয় আমায়।
এই যে এখনো আমি একা,আমার সাথে কেউ থেকেও নেই।পরিবারের লোক এই শহরেই আছে।তবু তারা আমায় চিনে না।জানে না।আমার খোঁজ অব্দি নেই তাদের কাছে।আমি বেঁচে আছি নাকি ম’রে গেছি।
-বাবা মা না থাকলে বুঝি এরকম ভোগান্তি পোহাতে হয়?কি জানি।অতি শীঘ্রই আমি আমার মিশন কমপ্লিট করবো।তবে টার্গেট চেঞ্জ।
প্রিয় বস,আপনি যদি চলেন ডালে ডালে,আমিও চলি পাতায় পাতায়।আপনার অস্ত্র দিয়ে আপনাকেই কপোকাত করবে আরিমা।
***
-আফরিদ,এই আফরিদ।
‘আফরিদ ঘুম ঘুম চোখে ঢুলতে ঢুলতে ভাইয়ের পাশে ধপ করে বসে পরলো।তারপর নাদিমের কোলে মাথা রেখে আবার ঘুম।
নাদিম দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এই ছেলেকে মানুষ করতে গিয়ে তার অবস্থা নাজেহাল।এর থেকে ছোট বাচ্চও ঢের ভালো।
‘নাদিম আফরিদের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,,
-খবর শোনেছিস?
‘আফরিদ একবার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ফের চোখ বুঝলো,নাদিম মুচকি হেসে বললো,,
-জানিস,ভাইয়ের বোনের সাথে একটা মেয়ে পড়ে না?ওই যে আরিমা।তোদের ভার্সিটিরই তো হয়তো চিনিস।
কাল রাতে একটা ছেলের সাথে ধরা পরেছে সে।তখন ভাই তাকে অপমান করে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।আমি পাশেই ছিলাম।তাই জানতে পেরেছি।
‘আরিমা’ নামটা শুনেই আফরিদের কান সজাগ হয়ে গিয়েছিলো।এবার সে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।নাদিম হকচকিয়ে গেলো।
-কি হলো,এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?
-তুমি আমাকে রাতে বলবে না ভাইয়া?
-কেন,এখানে বলা’বলির কি আছে?হাইপার হচ্ছিস কেন?
‘আফরিদ উত্তর না কেটে রুমে ঢুকে গেলো।তারপর ফোনটা নিয়েই বেরিয়ে গেলো।
-ভাই এই সাত’সকালে কোথায় যাচ্ছিস?
‘আফরিদ শান্ত স্বরে বললো,,
-আরিমা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ভাইয়া।আর তার সম্পর্কে তোমার এমপি যা বলেছে সব মিথ্যে।আমাদের আরু ওমন মেয়েই না।
-মানে?আমি নিজ চোখে দেখেছি।
-মাঝে মাঝে কিছু জিনিস চোখের দেখা’ও মিথ্যে হয়।ওর সম্পর্কে বাজে কথা বলবে না।
‘আফরিদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে নাদিম ভাবতে লাগলো,আসলেই কি তাই?
মেয়েটার মুখে সে তীব্র আকাঙ্ক্ষা দেখেছিলো,কিছু জানানোর।কিন্তু ভাই তার একটা কথাও শোনেনি।
এমনি’তে ভাই তাকে দেখতে পারে না।তার’উপর এইসব কান্ড ঘটিয়েছে মেয়েটা।
***
‘ছয় জন আরিমার ফ্ল্যাটে’র দরজার সামনে অসহায় ভঙ্গি’তে দাঁড়িয়ে আছে।দরজায় তালা লাগানো।তাদের আর বুঝতে বাকি নেই যে আরিমা এখানে আর নেই।অবশ্য এত অপমানের পর মেয়েটা কীভাবে তার সাথে সম্পর্ক রাখবে?
‘এবার ডুকরে কেঁদে উঠে ফারহা,সে এখন কি করবে?মাফ চাইতে পারবে না আরিমা’র কাছে?মেয়েটার ফোনও অফ।
-দোস্ত কাঁদিস না।আমরা আরু’কে বের করেই আনবো।
-হ্যাঁ কান্না করিস না।আমরা আছি তো।
‘ফারহা কাঁদতে কাঁদতে বললো,,
-আমাকে রাতে কিচ্ছু জানানো হয়নি।আমি ভেবেছিলাম আরু একটু পর এসেই আমার পাশে শু’বে।তাই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।সকালে ভাইয়া আমাকে জানিয়েছে।আগে জানলে আমি কখনোই তাকে আসতে দিতাম না।
‘মেয়েরা কান্না করছে,ছেলেদের সকলের মুখেই হতাশার ছাপ।এখন একমাত্র উপায় ভার্সিটি। আরিমা কি ভার্সিটি তে আসবে?
***
‘ফায়ান গম্ভীর ভঙ্গিতে বসে আছে,একটু পর তার একটা মিটিং আছে কিন্তু এতে তার হেলদোল নেই।নাদিম এক দৃষ্টিতে ফায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।ভাইয়ের মনে চলছে কি আসলে?
-এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?আমি কি তোমার গার্লফ্রেন্ড?
‘ফায়ানের এহেন কথায় নাদিম শুকনো মাটিতে আছাড় খেলো।কাঁশি উঠে গেছে তার।ফায়ান সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বুলি আওড়ালো,,
-আচ্ছা নাদিম তোমার কি মনে হয় মেয়েটা নির্দোষ?আমার মনে হচ্ছে না।
‘নাদিম ড্যাব’ড্যাব করে তাকিয়ে আছে ফায়ানের দিকে।ভাই মানতেই চাচ্ছে না মেয়েটার যে কোনো দোষ নেই।
***
‘আরিমা বসে বসে প্রস্তুতি নিচ্ছে।আর কিছু সময়ের অপেক্ষা। রাত’টা নামুক।তার পরেই সে তার সিক্রেট মিশনে নামবে।
‘আচ্ছা ফারহা কি তাকে খুঁজছে?বাকি পাঁচ ভেড়ার ছানা’রা কি জানে তার খবর?তাকে নিশ্চয়ই ছি ছি করছে তারা?সে কিছুতেই তাদের ঘৃণা পোহাতে পারবে না।আরিমা মনে মনে কিছু ঠিক করে নিয়েছে।মিশন টা শেষ হোক,তাই করবে সে।
‘আরিমা কি জানে?ছয় ভেড়ার ছানা কীভাবে খোঁজে চলেছে তাকে?তারা কতোটা ভালোবাসে তাকে?
জানতে পারলে নিশ্চিত তাদের এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
চলবে,,,,
(এখানে অনেক প্রশ্ন উঠে আসে।আরিমা একজন এতিম হয়ে কীভাবে এত দামি ফ্ল্যাটে থাকে?তার রোজগার কি?রাতের কিছু সময়ের মধ্যে কীভাবে বাসা বদলাতে পারলো?তার পরিবার এই শহরে আছে,কিন্তু তারা কারা?মিশনই বা কি?আর তার বস কে?
এখানে অনেক প্রশ্ন আসে,সবগুলোই আস্তে আস্তে ক্লিয়ার করবো ইনশাআল্লাহ। আপনারা গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ)