নবোঢ়া পর্ব ১
শীত পেরিয়ে ফাল্গুনের নির্জন দুপুরে নিজ বাড়িতে ফিরেছেন সুফিয়ান ভূঁইয়া। গত দুই মাস বৈদ্ধ্য সাহা কবিরাজের চিকিৎসালয়ে ছিলেন। এতটা সময় সেখানে কাটিয়েও স্বাস্থ্যের খুব একটা উন্নতি হলো না। বুকের ভেতরটা সর্বক্ষণ ধড়ফড় করে। আয়ু ফুরিয়ে আসলে কী আর ঔষধ পথ্য কাজে আসে!
তিনি বারান্দায় গোল করে রাখা বেতের সোফায় হেলান দিয়ে বসেন।
হাঁটার লাঠিটি পরিচারক মনিরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘গৌতমের মায়ের কাছে দিয়ে বলবি ভালো করে ধুয়ে রোদে দিতে।’
মনির দ্রুত পায়ে খাসমহলে চলে গেল। বাড়িটি জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত। সুফিয়ানের পূর্বপুরুষরা ছিল ক্ষমতাধর জমিদার। তাদের দাপট কয়েকশো মাইল দূর অবধি ছড়িয়ে ছিল। এখন আর সেই জমজমাট ব্যাপারটা নেই। শুধু এই বাড়িটি, সম্মান আর জমিদার খেতাবটি রয়ে গেছে। এখন সুফিয়ান ভূঁইয়া অন্যন্য ধনী ব্যবসায়ীদের মতোই একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি মাত্র। দখিনা হাওয়া উপচে পড়ছে চোখেমুখে। তিনি দুই চোখ মেলে বাইরে তাকান। বাড়ির চারপাশে অসংখ্য শিমুল গাছ।
গাঢ় লাল রঙের পাপড়ি আর সবুজ রঙের বোঁটায় শোভিত শিমুল ফুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারিদিকে। চিকিৎসার জন্য যখন বাড়ি ছেড়েছিলেন শীতের রিক্ততায় গাছের পাতা ঝরে বাড়ির পরিবেশ হয়ে পড়েছিল শ্রীহীন। এখন বসন্তের ছোঁয়ায় গাছপালা হয়ে উঠেছে সজীব, অপরূপ। একটা বাড়িকে ঐশ্বরিক সৌন্দর্যের সম্মান একমাত্র প্রকৃতিই দিতে পারে।
সুফিয়ান চোখের চশমাটি খুলে পাশের টেবিলে রাখলেন। বুকের ধড়ফড়ানি থামছে না। কিছুক্ষণ হাঁটলেই নিঃশ্বাসে অক্সিজেনের অভাববোধ হয়। বুকের ছাতিতে চিনচিন ব্যথা করে। তিনি সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজলেন। কানে নুপুরের ধ্বনি ভেসে আসে। সুফিয়ান ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকান। অলংকারে সজ্জিত ঝাপসা অবয়বের একটি মেয়ে এসে সামনে দাঁড়ায়। তিনি কিছু বুঝে উঠার পূর্বে মেয়েটি তার পা ছুঁয়ে সালাম করল। তিনি বিস্ময়ে হতচকিত হয়ে চশমাটি দ্রুত চোখে পরে নিলেন। অল্প বয়সী মেয়েটির ফকফকে গায়ের রঙ, উচ্চতায় খাটো, গোল মুখ, জোড়া ভ্রু, শান্ত গভীর চোখ। পরনের জরির কাজ করা ফিনফিনে শাড়ি। মেয়েটির হাতে সুফিয়ানের চোখ আটকে গেল।
হাতের চুড়ি দুটো তার মায়ের। এই চুড়ি জোড়ার উত্তরাধিকারী একমাত্র জমিদার বাড়ির পুত্রবধূরা হয়। পুত্রবধূ? কার বধূ? বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলেন তিনি। শিহাব কি তবে বিয়ে করে বউ নিয়ে ফিরেছে? সুফিয়ানের ঠোঁটে হাসি ফুটল। তিনি নরম গলায় প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার নাম কী মা?’
প্রশ্নটি শুনে মেয়েটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। জোরপূর্বক হেসে বলল, ‘জুলফা খাতুন।’
‘জুলফা… বাগান।’ সুফিয়ান মন্ত্রমুগ্ধের মতো উচ্চারণ করলেন।
বহু বছর পর এই বাড়িতে নতুন বউ এসেছে! তাও শিহাবের বউ হয়ে! তিনি নিজের আনন্দ ধরে রাখতে পারছেন না। চোখ দুটি হন্ন হয়ে শিহাবকে খুঁজছে। কোথায় সেই হতচ্ছাড়া?
সুফিয়ানকে আথালিপাথালি চোখ বুলাতে দেখে জুলফা বলল, ‘কাউকে খুঁজছেন ভাইজান?’
মুহূর্তে সুফিয়ানের চোখ দুটি তীক্ষ্ণ হয়ে উঠে। মিলিয়ে যায় হাসি। তিনি অবিশ্বাস্য সুরে প্রশ্ন করলেন, ‘কে তুমি?
নিশীথবনবিলাসিনী সে। জ্যোৎস্না হোক কিংবা অমাবস্যা, রাতের বন তার কাছে স্বর্গ। জুলফা সারারাত উত্তরের বনে ঘুরে বেরিয়ে শেষ রাত্রিরে পুকুরঘাটের সিঁড়িতে এসে বসেছে। তার লম্বা চুল পিঠময় ছড়িয়ে। আঁচল ভর্তি মাধবীলতা ফুলে। সেখান থেকে তীব্র সুবাস বের হচ্ছে। মাধবীলতার মিষ্টি মাদকতাময় ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। ফুলের ঘ্রাণ অত্যাধিক তীব্র হলে তার মাথার ভেতরটা কেমন করে! শূন্য লাগে নিজেকে। জুলফা ফুলগুলো হাতে নিয়ে প্রাণভরে সুবাস নেয়। বুকের ভেতরটা স্বর্গীয় আনন্দে বিমোহিত হয়ে পড়ে। সে গুনগুনিয়ে উঠে।
সুফিয়ান ভূঁইয়া সাড়া শব্দহীন অন্ধকারকে আলিঙ্গন করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন। তার পরনে সাদা পায়জামা ও ফতুয়া, পায়ে স্যান্ডেল। চোখের দৃষ্টি পুকুরঘাটে। মুখ না দেখেই আন্দাজ করতে পারছেন সিঁড়িতে বসে থাকা মেয়েটি জুলফা। জুলফার আচরণ সুফিয়ানের কাছে অস্বাভাবিক ঠেকছে। মেয়েটির হাঁটা-চলা, কথাবার্তায় কিছু একটা আছে। হঠাৎ ললিতার মেঘের মতো গমগমে কণ্ঠস্বর শোনা গেল, ‘বাড়িতে বউ এনেছে নাকি শেয়াল একমাত্র আল্লাহ জানে। এই মেয়ে শেয়ালের মতো রাত জাগে। এদিকওদিক ঘুরে বেড়ায়।’
সুফিয়ান ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালেন। ললিতা দাঁড়িয়ে আছে। বয়স সাতচল্লিশ বা আরেকটু বেশি হবে। যদিও ললিতার বয়স ধরা যায় না। কোনো এক জাদুবলে নিজের বয়স যেন পঁয়ত্রিশেই আটকে রেখেছে। সুফিয়ান মৃদু হেসে বললেন, ‘রাতে তো পেঁচাও জাগে। শেয়ালই কেন বললে?’
‘এ মেয়ে শেয়ালের মতো ধূর্ত।’
সুফিয়ান রসিকতা করে বললেন, ‘মনে হচ্ছে গিন্নিকে খুব জ্বালিয়েছে?’
ললিতা বলল, ‘ব্যবহার ছোট লোকের মতো। ছোটো ভাই কোথা থেকে যে এই মেয়েকে তুলে এনেছে। বিশ দিন হয়ে গেল, আজও ছোটোর শ্বশুরবাড়ির কেউ এলো না।’ ললিতার কণ্ঠে ক্ষোভ।
সুফিয়ান ভ্রুকুটি করলেন। দুপুরে জুলফার হাতের চুড়ি দেখে তিনি ভেবেছিলেন, তার একমাত্র ছেলে শিহাব বউ নিয়ে ফিরেছে। ঘুণাক্ষরেও মাথায় আসেনি শব্দর এই বয়সে এসে হাঁটু বয়সী কোনো মেয়েকে বিয়ে করবে! ভাইয়ের বউকে ছেলের বউ ভেবে কী ভুলটাই না করেছিলেন! সুফিয়ান নিজ মনে ছিঃ ছি করে উঠলেন।
ললিতার মুখ থমথমে। সুফিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে কিঞ্চিৎ অভিমান হলো তার। বলল, ‘আমার কথা কি আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না ?’
সুফিয়ান ললিতার প্রশ্ন এড়িয়ে বিড়বিড় করেন, ‘মেয়েটার সাহস খুব।’ তিনি জুলফার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন। ‘ও একা বসে কী করছে?’ সুফিয়ানের কণ্ঠে রাজ্যের উৎসাহ।
ললিতার কোনো জবাব নেই। সে চেয়ার এনে স্বামীর পাশে রাখল। বলল, ‘আপনার না পায়ে ব্যথা৷ দাঁড়িয়ে থাকবেন না, বসুন।’
সুফিয়ান বসলেন। দীর্ঘ আলাপের প্রস্তুতি নিয়ে বললেন, ‘ তা বিয়ের ঘটক কে ছিল?’
‘সে আমি জানি না। হুট করে আপনার ভাই বউ নিয়ে হাজির। বাড়িতে যে দুইজন গুরুজন আছে তার মনেই ছিল না।’
‘এতো বছর বললাম বিয়ে কর, বিয়ে কর। করল না। তার নাকি সংসার ভালো লাগে না। সে ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ে থাকতে চায়। এখন কোন আন্দাজে এই বয়সে এসে বিয়ে করল বিশ-একুশ বছরের মেয়েকে?’
তিনি থামলেন, দম নিলেন। তারপর বললেন, ‘ কোথায় তোমার দেবর? বাড়িতে বউ রেখে এতো রাতে কোথায় সে?’
‘তা কী আর আমায় বলে গেছে। ‘
‘তোমাকেই তো বলে যায়। হুট করে না বলে কেন যাবে?’
‘বউ আছে, বউকেই হয়তো বলেছে। তাকেই জিজ্ঞাসা করুন।’
‘আর বেলাল…বেলাল কেমন আছে?’
‘যেমন ছিল তেমনই আছে। তার কি আর পরিবর্তন হয়?’
সুফিয়ান দুই হাত বুকের উপর ভাঁজ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। সড়সড় শব্দে বয়ে যাওয়া বাতাস শরীর জুড়িয়ে দিচ্ছে।
তিনি বেশ শান্তস্বরে ললিতাকে বললেন, ‘এই রাতের বেলা পুকুরঘাটে বাড়ির বউ বসে আছে। এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে একটু বলেকয়ে ঘরে নিয়ে যেতেও তো পারো। তুমিতো তার বড় জা। অভিভাবক।’
‘ও আমি পারব না৷ আপনি গিয়ে বলেকয়ে, তেল মাখিয়ে ঘরে নিয়ে আসুন।’
‘আহ! রেগে যাচ্ছো কেন?’
ললিতা রাগমিশ্রিত অভিমান নিয়ে ভেতরে চলে গেল। সুফিয়ান সেখানেই বসে রইলেন। শীতল বাতাসের স্পর্শে ধীরে ধীরে তার চোখ দুটি বুজে এলো।
ললিতা বাড়ির কাজের মেয়ে রেণুর ঘরের সামনে গিয়ে ডাকে, ‘রেণু? এই রেণু?’
সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর সবেমাত্রই শুয়েছিল রেণু। ললিতার ডাক শুনে তড়িঘড়ি করে উঠে বসে।
‘কী রে ঘুমিয়ে পড়েছিস?’
ললিতা দরজায় ধাক্কাচ্ছে।
রেণু দ্রুত বেরিয়ে এলো। তাকে এক নজর দেখে ললিতা বলল, ‘মাথাটা ভনভন করছে। হেঁশেলে তিলের তেল রাখা আছে। একটু বাটিতে করে নিয়ে আয়।’
রেণু হাওয়ার বেগে রান্নাঘর থেকে তেল নিয়ে ললিতার ঘরে পৌঁছায়। ললিতা হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। তার চুল মেঝে ছুঁইছুঁই। রেণু জলচৌকি নিয়ে চুলের কাছে বসে। আলতো করে তেল মালিশ করে দেয় মাথায়। ললিতার মাথা থেকে যেন দাউদাউ করে আগুন বের হচ্ছে। তিলের তেলে যদি তা ঠান্ডা হয়! রেণু ঠোঁট টিপে হাসল।
সুফিয়ান চোখ খুলে জুলফাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠেন। জুলফার অপ্রত্যাশিত উপস্থিতিতে তিনি ভয় পেয়ে গেছেন। জুলফা কিছু বলতে উদ্যত হয় তার আগে সুফিয়ান চিৎকার করে উঠলেন, ‘এতো রাতে তুমি বাহিরে কী করো? আর এভাবে চুল খুলে রেখেছো কেন? তুমি কি চুল বাঁধতে পারো না?’
জুলফা দ্রুত হাত খোঁপা করল। সুফিয়ানকে রাগতে দেখে সে বিব্রত হয়ে পড়ে। তার শাড়ির আঁচল লুটোপুটি খাচ্ছে মেঝেতে। সুফিয়ান এতোটাই ভয় পেয়েছেন যে নিজের রাগ না চাইতেই প্রকাশ পেয়ে যায়। তিনি ঢোক গিলে নিজের রাগ সংবরন করলেন। জুলফা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। সুফিয়ান শান্ত স্বরে বললেন, ‘রাত-বিরেতে বাইরে হাঁটাহাঁটি করবে না। ঘরে যাও।’
জুলফা মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল, ‘জি, যাচ্ছি।’
জুলফা পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই সুফিয়ান আপনমনে বিড়বিড় করে সূরা পড়ে বুকে তিনবার ফুঁ দিলেন।
—
‘তোমাকে আমি আরেকবার বলছি, ভাবির সাথে আর ঝগড়াঝাটি করো না। উনি তোমার শাশুড়ির মতো।’
বাইরে ঘূর্ণি বাতাসের সাথে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। জুলফা নকশিকাঁথা সেলাই করছিল। শব্দরের কথা শুনে তার হাত থেমে গেল। সে মুখ তুলে তাকাল। শব্দরের গায়ের রঙ উজ্জ্বল হলেও চেহারায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট। চওড়া বুক, চওড়া কাঁধ, লম্বা গোঁফ। যা তাকে অন্য আট-দশটা পুরুষ থেকে আলাদা করে। জুলফা প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে পুনরায় সেলাই আরম্ভ করল। শব্দর বলল, ‘মুখে কুলুপ এঁটে আছো কেন? কথা বলো।’
জুলফা না তাকিয়ে দৃঢ়ভাবে বলল, ‘আপনার ভাবিকে গিয়ে বলুন আমাকে না খোঁচাতে তাহলেই আর ঝগড়াঝাঁটি হবে না।’
‘তোমার একটু নমনীয় হওয়া উচিত। ‘
‘আমি যথেষ্ট নমনীয় আছি। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন। তাহলে আমার নমনীয়তা দেখতে পাবেন।’
জুলফা মনোযোগ দিয়ে সেলাই করছে। কাঁথার জমিনে রঙবেরঙের সুতোয় ফুটে উঠছে কারুকাজ। তার চুল এলোমেলো। চোখেমুখে এখনো ঘুম লেগে আছে৷ শব্দর জুলফার পাশে বসে রয়েসয়ে বলল, ‘দেখো জুলফা, ভাই-ভাবি আমার জন্য খুব মূল্যবান। যখন মা-বাবাকে হারাই ভাইজান ছিল তরুণ আর আমি ছোট একটা শিশু। ভাইজান…’
জুলফা শব্দরকে কথার মাঝে আটকে দিয়ে বলল, ‘কথায় কথায় ভাই-ভাবির গুণকীর্তন বন্ধ করুন। আপনার ভাই আপনাকে পেলেপুষে বড় করেছে ভাবি মায়ের মতো যত্ন করেছে অনেকবার শুনেছি, মেনেছি, মনে রেখেছি। আর প্রয়োজন নেই।’
শব্দর ধৈর্য্যহারা হয়ে পড়ে। সে বিয়ের দ্বিতীয় দিন থেকে জুলফার ঘাড়ত্যাড়ামি, জেদি কথাবার্তা সহ্য করছে। আর কত সহ্য করা যায়? শব্দর আক্ষেপের সুরে বলল, ‘ তোমার চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই মনে এতো বিষ। বিয়ে করে মস্ত বড় ভুল করে ফেললাম।’
‘আপনার বুঝেশুনে, খোঁজখবর নিয়ে বিয়ে করা উচিত ছিল।’ জুলফা দুর্বোধ হাসল। সে শব্দরের এই আক্ষেপটাই চাইছিল। শব্দর আর কথা বাড়াল না। বিছানা ছেড়ে সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পরল। আভিজাত্যের উপঢৌকন হিসেবে কাঁধে ঝুলিয়ে নিলো বাহারি কারুকাজ করা শাল। ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল, ‘গত কয়দিনে যা করার করেছো। আর করবে না। এখন ভাইজান বাড়িতে। উনি যেন তোমার কোনো কাজে কষ্ট না পায়। এবার কথার উনিশ-বিশ হলে খুব খারাপ হবে।’
জুলফা গলা উঁচিয়ে বলল, ‘ভাইজানের চোখ থাকলে উনি দেখতে পাবেন দোষটা আসলে কার। যদি দেখতে না পান আপনার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে উনার চোখের চশমাটা পরিবর্তন করে নিবেন।’
জুলফা চোখের পলক ফেলার ফুরসৎ পেল না। তার আগেই শব্দর এসে তার দুই গাল চেপে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে জুলফার হাতে সুই বিঁধে গেল। শব্দর দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘ভুলে যেও না তুমি কোথা থেকে উঠে এসেছো। যাদের নিয়ে তুমি নোংরা মন্তব্য করছো তাদের মধ্যে একজন জমিদার অন্যজন রাজবংশের মেয়ে। আর তুমি একজন… ‘
শব্দর কথা শেষ করল না। সে প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে মেঝেতে থুথু ফেলল। মুহূর্তে জুলফার চোখ দুটি জলে টইটম্বুর হয়ে উঠে। শব্দর চপল পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। জুলফা স্তব্ধ হয়ে বসে রইল।
®ইলমা বেহরোজ
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক