অনির কলমে আদ্রিয়ান পর্ব ১
লেখিকা অনিমা কোতয়াল
সকাল থেকেই বাইরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। আকাশ মেঘলা। হালকা অন্ধকার আচ্ছন্ন চারপাশটা। খানিক বাদে বাদে বয়ে চলা মৃদু বাতাসে শিরশির করে উঠছে শরীর, জাগ্রত হয়ে উঠছে শরীরের প্রতিটি লোমকূপ। প্রতিদিনকার তুলনায় বেশ খানিকটা আগেই নিদ্রাভঙ্গ হয়েছে আজ আমার। নিজের ঘরের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছি আমি। জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাইরের শব্দহীনভাবে ধীরগতিতে পড়তে থাকা বৃষ্টি দেখছি। বৃষ্টি আমার অন্যতম দুর্বলতা। যারা আমাকে চেনে তারা আমার এই দুর্বলতাকে ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারে। তাইতো আমার পরিবার আর কাজিনমহলে আমি বৃষ্টিবিলাসী নামেও পরিচিত।
‘অনু খেতে এসো। বেলা হয়েছে।’
আম্মুর ডাকে হালকা চমকে উঠলাম। গভীর মনোযোগ দিয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে ভাবনায় বিভোর হয়ে গিয়েছিলাম। আম্মুর ডাকটা কানে পড়লেও আমি পাত্তা না দিয়ে আবার বৃষ্টি দেখায় মনোযোগ দিলাম। কিন্তু সেটা আর বেশিক্ষণ সম্ভব হলোনা। আম্মু বিরতিহীনভাবে ডেকে চলেছে আমাকে। এটা আমার আম্মুর অন্যতম একটা স্বভাব। একবার ডাকা শুরু করলে যতক্ষণ কেউ না পৌঁছবে ততক্ষণ ডাকতেই থাকবে। তাই একটা লম্বা হাই তুলে চলে গেলাম খাওয়ার জন্যে। গিয়ে দেখি আব্বু, আম্মু, আমার ছোট ভাই কাব্য সব বসে পড়েছে অলরেডি। আমিও বসে পড়লাম খেতে। চারপাশে তাকিয়ে আমার মামাতো বোন হিয়াকে খুঁজে বললাম, ‘আপি কই?’
আম্মু আমার পাতে পরোটা দিতে দিতে বলল, ‘তোমার মামার বাড়িতে গেছে। চলে আসবে শীঘ্রই।’
কাব্য আমার পাতের দিকে তাকিয়ে কিছুটা নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল, ‘মা, তুমি ওকে সবসময় বড় পরোটা টাই দাও। এটা কিন্তু ঠিক না।’
মা ভ্রু কুঁচকে তাকালো কাব্যর দিকে। ততক্ষণে আপিও চলে এসেছে। আমি বিরক্তি নিয়ে পরোটাটা ওর পাতে দিয়ে বললাম, ‘নে গেল। গিলে একটু মোটাসোটা হ। চৌদ্দ বছর হয়ে গেছে। এখনো শরীরে কঙ্কাল ছাড়া কিছুই নেই। শুধু জিরাফের মত লম্বাই হচ্ছে।’
কাব্য মুখ বাঁকিয়ে বলল,
‘ তুই কোন এঙ্গেল দিয়ে ভারতী সিং হয়ে আছিস। তোর গলার হাড় এখনো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।’
আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম,
‘ এটাকে বিউটি বোন বলে ইডিয়ট।’
আর কিছু বলার আগেই আপি চেয়ার টেনে বসতে বসতে কাব্যকে বলল,
‘ ও তো খায়ই মোটে একটা পরোটা। আর তুই তিনটা। তবুও এতো হিংসে কেন রে? চুপচাপ খা।’
কাব্য আর কথা বাড়ালো না। হয়তো বুঝে গেছে এখন কথা বললেই ঝাড় খেতে হবে। আমিও কিছু না বলে খাওয়া শুরু করে দিলাম। খাওয়ার মাঝে মা বলল, ‘ওদিকের কী খবর? মানিক ভাইয়ের ছেলে ল্যান্ড করেছে?’
বাবা বললেন, ‘হ্যাঁ ভোরবেলাতেই করেছে। এতক্ষণে শরীয়তপুর ও চলে এসেছে হয়তো।’
কাব্য খাওয়া ছেড়ে একদম উত্তেজিত হয়ে বলল, ‘ইশ! কতদিন ভাইয়াকে দেখা হয়না। এবার বছর খানেকর জন্যে চলে আসছে। একদম জোস একটা মানুষ!’
আমি কটমটে চোখে একবার কাব্যর দিকে তাকালাম। এমনিতেই লোকটাকে আমি চরম হিংসে করি। অথচ সব জায়গায় এরই গুনগান। ওরকম আস্ত উগান্ডার জীবকে কেউ জোস্ বলে? কীকরে? খাওয়া শেষ করে রুমে এসে আবার জানালার কাছে এসে দাঁড়ালাম। বৃষ্টি দেখতে দেখতে আবার ডুব দিলাম গভীর ভাবনায়। আদ্রিয়ান ভাই। আমার বাবার সবচেয়ে কাছের বন্ধু মানিক আঙ্কেলের একমাত্র ছেলে। যদিও তার দুটো ছোট বোন আছে। কেউ যদি আমায় জিজ্ঞেস করে উনি কে? আমার উত্তর হবে একটা এলিয়েন। যে ভুলে পৃথিবীতে সেট হয়ে গেছে। কারণ আমার এই আঠারো বছরের জীবনে আমি এরকম উদ্ভট মানুষ এর আগে কখনও দেখিনি। যদিও আমার জীবনের এই আঠারো বছর শরীয়তপুরেই কেটেছে। প্রয়োজনে কখনও কখনও ঢাকা, কক্সবাজার আর সুন্দরবন গিয়েছিলাম। তাই এরকম নমুনা যদি পৃথিবীতে আরও থেকেও থাকে সেটা আমার জানা নেই। ওনার আর আমার মধ্যে সবকিছুই বিপরীত। রূপ, গুণ, স্বভাব, আচরণ সবকিছুই। উনি যদি উত্তর মেরু হন তো আমি দক্ষিণ মেরু। যদিও দু একটা পছন্দ কাকতালীয়ভাবে মিলে যায়। তবে আমাদের দুজনের জীবনের সবচেয়ে বড় এবং একপ্রকার অবিশ্বাস্য কাকতালীয় মিল হচ্ছে আমাদের দুজনের জন্ম। আমরা দুজনেই প্রি-ম্যাচিউরড বেবী ছিলাম। সেটা কাকতালীয় নয়। কাকতালীয় ব্যাপার হচ্ছে দুজনের জন্মই সাত মাস আঠারো দিনের দিন হয়েছিল। একে একপ্রকার অবিশ্বাস্য কাকতলীয়তা বলা চলে। এই কথা শোনার পর আমি শুরুতে বিশ্বাসই করিনি। এরকম কাকতালীয়তাও হয়? কিন্ত পরে বিশ্বাস না করে উপায়ও ছিলোনা।
আমি ওনাকে ভালোভাবে বড় হওয়ার পর চিনলেও উনি নাকি আমাকে চেনেন জন্ম থেকেই। আমার জন্ম হয়েছিল ১৯ অক্টোবর রাতে। ঠিক তার পরেরদিন সকালে রিমা আন্টি আর উনি এসে হাজির হয়েছিলেন হসপিটালে। ছয় বছরের আদ্রিয়ান ভাই সেদিন নাকি এসেই বায়না ধরেছিলেন আমায় কোলে নেবেনই। আমার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিলোনা খুব বেশি। তবুও নাকি ওনার জেদের কাছে হার মেনে আমায় ওনার কোলে দেওয়া হয়েছিল সাপোর্ট দিয়ে। উনি আমার গাল হালকা করে টেনে সাথেসাথেই গালে একটা চুমু বসিয়ে দিয়েছিলেন। ওটাই নাকি জন্মের পর পাওয়া আমার প্রথম চুমু ছিল। এই কাহিনী সব আমার কাজিন আর বাবা মায়ের কাছেই শোনা। তখন ওনারা পরিবারসহ শরীয়তপুরেই থাকতেন। আমারও তিন বছরের পর থেকে সবই হালকা পাতলা মনে আছে। উনি আন্টি বা আঙ্কেলের সাথে প্রায়ই আসতেন আমাদের বাড়িতে। যদিও আমার সেসব দিনের কথা স্পষ্ট মনে না থাকলেও আবছা কিছুটা মনে পড়ে। আমি তাকে ‘আদ্দিয়ান বাই’ বলে ডাকতাম। ওনার একটা বোন ছিল, জাবিন। আমার থেকে প্রায় দুবছরের ছোট। আমি আর আদ্রিয়ান ভাই কলা পাতা আর চিকন বাঁশ দিয়ে ঘর বানিয়ে বর-বউ খেলতাম। খেলার ধরন ছিল যে উনি বিদেশ থাকেন আর আমার জন্যে টাকা পাঠান, আর আমি ঘরে বসে রান্নাবান্না করি। বিদেশ ছিল আমাদের বড় কাঁঠাল গাছটা, টাকা ছিল কাঠাল গাছের পাতা, আর আমার মাটির ছোট ছোট হাড়ি-পাতিল ছিল আমার রান্নার বস্তু। এই নিয়েই ছিল আমাদের ছোট্ট সংসারপাতি। ওটার ওপরে উঠেই উনি হাত দিয়ে ইশারায় আমায় ফোন করে জানাতেন উনি পৌঁছে গেছেন। মজার ব্যপার হল, ফোনের ভূমিকা পালন করেছিল ভাঙা নাড়কেলের খোলস। সেসব দিনের কথা মনে পড়লে প্রচন্ড হাসি পায় এখনো। উনি মনে করেন আমার কিছু মনে নেই। কিন্তু যদি জানতেন যে আমার কিছু কিছু ঘটনা এখনো মনে আছে তাহলে নিশ্চয়ই অস্বস্তিতে পরতেন। ইগোস্টিক মানুষ বলে কথা! কিন্তু হঠাৎই মানিক আঙ্কেলের প্রমোশান হয়ে যায়। আর ওনারা একেবারেই ঢাকা শিফট হয়ে যান। আর সেদিনের পর থেকেই ওনার সাথে আমার দেখা হওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। আদ্রিয়ান নাম ছোট্ট খেলার বন্ধুটাকে হারিয়ে ফেলি আমি। কিন্তু আমার ছোট্ট মস্তিষ্ক তাকে বেশিদিন মনে রাখল না। আমি আবার নতুন বন্ধু, নতুন খেলার সাথী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ওনার নাম চেহারা মনে থাকলেও কোন টান কাজ করতো না আর। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকি। কয়েকবছর পর বাড়িতে হুটহাট মাঝেমাঝে ওনাকে নিয়ে কথা হতো। উনি কত ভালো ছাত্র, কত ভদ্র, কী অ্যাচিভ করেছে এসব নিয়েই কথা হতো। উনি একেকবার একেকটা মারাত্মক রেসাল্ট করতেন আর আমার মা-বাবা আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে সেসব বলতেন। আর মাঝেমাঝে খোঁচাও মারতেন। যেগুলো শুরুতে তেমন খারাপ না লাগলেও একপর্যায়ে বিরক্তির কারণ হয়ে গেল। কারণ সবসময় ওনার সাথে আমাকে কম্পেয়ার করতো। যেটা আমার কোনদিনও পছন্দ না। তারসাথে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠল এই ‘আদ্রিয়ান’ নামটাও। ওনার নাম শুনলেও বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে যেতো আমার।
এভাবেই দিন যাচ্ছিল। এরমধ্যে মানিক আঙ্কেল কয়েকবার শরীয়তপুর এলেও আদ্রিয়ান ভাই কখনও পা রাখেননি শরীয়তপুরে। যার কারণ ওনার নাকি শরীয়তপুর ভালো লাগতোনা। এইচ.এস.সি কম্প্লিট করে আদ্রিয়ান ভাই ইউকে চলে গেলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। তাও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবং সেটাও স্কলারশীপ পেয়ে। সেদিনও বাবা-মা দুজনেই আমায় শোনাচ্ছিল যে মানিক আঙ্কেল কী রত্ন জন্ম দিয়েছেন। আর আমি শুধু বিরক্তি নিয়ে শুনছিলাম। উনি লন্ডন চলে যাওয়ার পর মানিক আঙ্কেল জব ছেড়ে পরিবার সহ একেবারে শরীয়তপুর চলে আসেন। আর নিজের বিজনেস দেখতে শুরু করেন। ঢাকা যাওয়ার দুবছরের মধ্যেই ওনার আরেকটা মেয়ে হয়েছে। তার নাম সারা।
দেখতে দেখতে আরও কয়েকটা বছর পার হয়ে গেল। তারপর এলো ২০১৮। আমি এসএসসি পরীক্ষাটা দিয়ে সবেমাত্র রিল্যাক্স করছি। এরমধ্যেই এলো সোহেল ভাই, মানে আমার বড় মামার বড় ছেলের বিয়ের খবর। ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে এবং সামনের শুক্রবার এনগেইজমেন্ট। এমনিতেই পরীক্ষা শেষ করে রিল্যাক্স মুডে আছি। তার ওপর সোহেল ভাইয়ের বিয়ের আনন্দে আমার খুশি ছিল দেখার মতো। বাবার কাছে শুনলাম যে আদ্রিয়ান ভাই দেশে ফিরেছেন কয়েক মাসের জন্যে। আমি শুনেও তেমন পাত্তা দেই নি। যেই লোকটার নামই সহ্য করতে পারিনা তাঁকে নিয়ে আমি কেন এতো ভাবব?
মানিক আঙ্কেলের সাথে বড় মামারও বেশ ভালো বন্ডিং ছিল। তার ওপর আদ্রিয়ান ভাই বহুবছর পর শরীয়তপুর এসেছেন। তাই সোহেল ভাইয়ের এনগেইজমেন্টে তাঁদেরও ইনভাইট করা হয়েছিল।
শুক্রবার সকাল থেকেই আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম। কারণ কাজিনদের মধ্যে সবার বড় সোহেল ভাই। ওনার বিয়ে নিয়ে আমাদের সকলেরই অনেক দিনের এক্সাইটমেন্ট। সকালের দিকে সবাই মিলে হৈ চৈ করলেও একটু বেলা পড়তেই সকলে যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অনুষ্ঠানে এমনিতেই অনেক ঝামেলা থাকে। শুধু আমিই একদম কোন কাজ ছাড়া বসে ছিলাম। সবার আদরের দুলালী কি-না। কুটু নেড়ে দুটো করিনা। গরমও ছিল প্রচুর। ভাবলাম আমাদের কাঠবাগানে গিয়ে বসি। বাতাস আছে আর গেমস খেলে সময়ও কাটাবো। কাঠবাগানটা আমার নানার ছিল। নানুবাড়ির ঘেঁষেই এই বিশাল বাগানটা। এতোএত গাছপালা, পুকুর, পাখির ডাক গেলেই মন ভালো হয়ে যায়। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। চলে গেলাম কাঠবাগানে। কাঠবাগান ঘেঁষে একটা পুকুরও আছে। সেই পুকুরপাড়ে বসে মোবাইলে গেমস খেলছিলাম নিরিবিলি। কতটা সময় পার হয়ে গেছে নিজেই জানিনা। হঠাৎ কেউ বলে উঠল, ‘আজকাল বাচ্চা মেয়েগুলোও পড়াশোনা বাদ দিয়ে যেখানে সেখানে বসে গেমস খেলছে নাকি? দেশের ছেলেমেয়ে এতো বিগড়ে গেছে জানতাম না তো?’
আমি চমকে উঠলাম হালকা। কে বলল দেখার জন্য ভ্রু কুঁচকে পেছনে তাকাতেই আমার চোখ আটকে গেল। দেখলাম কানে ইয়ারফোন গুঁজে, একটা মেরুন রঙের টিশার্ট আর কালো জিন্স পরে পকেটে হাত গুঁজে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাভাবিক ফর্সা আর বেশ লম্বা, সিল্কি চুলগুলো কপালে পড়ে আছে, গালে একদম হালকা খোঁচা খোঁচা দাড়ি। সামান্য বেবী পিঙ্ক আভা ছড়ানো পাতলা ঠোঁটটা যেন এই চেহারার জন্যেই তৈরী। ক্রাশ খেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলাম। আমি কী করব সেটা বলার ইনি কে? কোথাকার কোন উগান্ডার জীব। আশ্চর্য! কোন বখাটে ছেলে হবে ভেবে আমি উত্তর না দিয়ে আবার গেমস খেলায় মনোযোগ দিলাম। আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি বললেন, এই যে খুকি! এখান থেকে ওঠো। আমি বসবো। তোমার পাশে বসলে লোকে দেখে ভাববে আমি পিচ্চি মেয়ের সাথে প্রেম করছি। অকারণে বদনাম নেওয়া যাবেনা।’
আমি এবার চরম বিরক্ত হলাম। কে ভাই তুই? আমাদের বাগানে এসে আমাকেই বলে কি-না উঠতে? কঠিন কয়েকটা কথা শোনানোর ইচ্ছা রাখলেও যেহুতু প্রথম দেখছি তাই নিজেকে সামলে খানিকটা দাম্ভীক স্বরে বললাম,
‘এটা আমাদের বাগান। তাই আপনার কথায় আমি উঠছি নাহ।’
উনি এবার অদ্ভুতভাবে কোণাকুণি স্টাইলে ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালেন। অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল দেখে। এই জিনিসটার ওপর না চাইতেও মুগ্ধ হলাম আমি। উনি ওভাবে ভ্রু বাঁকিয়ে বললেন,
‘ তোমাদের বাগান? তুমি কী শামসুল আঙ্কেলের কেউ হও?’
আমি স্বাভাবিকভাবেই বললাম,
‘ জ্বি।উনি আমার বড় মামা। আর আমি ওনার ছোট বোনের একমাত্র মেয়ে।’
বলে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। এতো প্যাঁচাল ভালো লাগছিল না। ওনার চোখ মুখ দেখে বুঝলাম অবাক হয়েছে খুব। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘তুমি কী ময়না আন্টির মেয়ে? অনি?’
আমি অবাক হয়ে তাকালাম। আমার নাম জানল কীকরে উনি? কিন্তু ঐ মুহূর্তে প্রশ্নটা দমিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি রুমানা ভাবির ( সোহেল ভাইয়ার স্ত্রী) কেউ হন?”
উনি চমৎকার এক হাসি দিয়ে বললেন, ‘জ্বি না। তোর মানিক আঙ্কেলের সেই ছেলে আমি। আদ্দিয়ান ভাই? মনে পড়ে? বাই দা ওয়ে তুই না সেই ছিঁচকাঁদুনী? জাবিনের মোটর বাইক এর জন্যে তিনদিন অবধি কান্না করেছিলি। এখনো কাঁদিস?’
আমি পুরো বোকা বনে গেলাম। এই সেই আদ্রিয়ান? যার এতো গুনগান শুনে আমি বড় হয়েছি? ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললাম। ‘তুই’ করে বলছে। তারমানে ওনার মনে আছে আমাকে? এসব ভাবতে ভাবতেই উনি বলে উঠলেন,
” ছোটবেলায় আমার সাধের জ্যামিতি বক্স ভেঙে ফেলেছিলি। তোর জরিমানা পেন্ডিং আছে। তাড়াতাড়ি দিয়ে দিবি।’
বিরক্ত হলাম আমি। বিদেশে গিয়ে অতিরিক্ত পড়াশোনায় পাগল হয়ে ফিরেছে নাকি? আমি আবার কবে কী ভাঙলাম? যত্তসব আজাইরা প্যাঁচাল! এক মিনিটও না দাঁড়িয়ে হনহনে পায়ে চলে এসছিলাম আমি। আমার শান্তির জায়গায় এসে অশান্তি বাঁধিয়ে দিল। তখন কী আর জানতাম যে শুধু আমার কাঠবাগানের শান্তি-ই নয় আমার জীবন নাম মহাযাত্রার শান্তি বিনষ্ট করতেই আগমন ঘটেছিল এই আশ্চর্য পুরুষের!
…
সকল পর্বের লিংক একসাথে